তারাবির ফজিলত

লিখেছেন লিখেছেন নার্সিসাস ১৮ জুন, ২০১৫, ০৭:৫৮:৪৫ সন্ধ্যা



মোঃ জাহিদুল ইসলাম

পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে যত নবী রাসুল এই ধরাধামে আগমন করেছে তাদের প্রত্যেকের উপরে রোযা ফরয ছিল,তার ধারাবহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)এর উপরে পবিত্র রমযানের রোযা ফরয হয়েছে । রোযা একটি শারিরীক ইবদাত এটা মানুষকে আত্মশুদ্ধি করে তোলে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ পরে রয়েছে রোযা অর্থাৎ একে অন্যের সঙ্গে আঙ্গ আঙ্গিগ ভাবে জড়িত। যে ব্যক্তির উপর নামাজ ফরজ তার উপর রোযা ফরয ,যে ব্যক্তি নিয়ামিত নামাজ আদায় করে সে ব্যাক্তি রোজা রাখে আর রোজার প্রশান্তি নিয়া আসে তারাবির নামাজের মাধ্যমে ।

রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে তারাবির নামাজ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। ইসলামের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবির নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পর পর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। মাহে রমজানে রোজাদার সুবহে সাদিক থেকে সূর্যা¯’ পর্যন্ত রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যান। তারপর রাতে এশা ও তারাবির নামাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে হয়। সেই কারণে দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘব করার জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করতে হয় এবং দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতে হয়। এ জন্য এই নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবির নামাজ বলা হয়।

রমজান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হ”েছ সালাতুত তারাবিহ। তারাবির নামাজ হলো রোজার গুরত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ নারী-পুরষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি সওয়াবের কাজ। তবে ঘরেও আদায় করা যেতে পারে। এ নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে সূরা-কিরাআতের মাধ্যমে আদায় করলেও নামাজের সব সওয়াবই পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবির নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। নবী করিম (সা.) এ নামাজ বেশির ভাগ সময় রাতের শেষাংশে আদায় করতেন এবং প্রথমাংশে বিশ্রম নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। তিনি কখনো ৮ রাকাত, কখনো ১৬ রাকাত, আবার কখনো ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। কিš‘ বিশেষ কারণবশত নিয়মিত ২০ রাকাত পড়তেন না। কেননা নবী করিম (সা.) কোনো কাজ নিয়মিত করলে তা উম্মতের জন্য ওয়াজিব তথা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। এ দৃষ্টির কারণে তিনি তাঁর আমলে প্রতিনিয়ত ২০ রাকাত পূর্ণ তারাবির জামাত হতে দেননি। যার দরুন সালাতুত তারাবিহ সুন্নত, ওয়াজিব নয়; তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা জরুরি সুন্নত। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ হওয়ার সপক্ষে সহিহ হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে ‘নবী করিম (সা.) রমজান মাসে বিনা জামাতে (একাকী) ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন।’ (বায়হাকি)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান (রাঃ) হযরত আলী ইবনে আলী আবি তালিব (রাঃ)হতে বর্ণনা করেন একদা হুজুরে পাক (সঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করেন হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) তারাবির আদায়ের ফজিলত কি ? অতপর হুজুরে পাক (সঃ) বলেন যে, ব্যাক্তি রমযান মাসের তারাবির নামাজ যথাযথ আদায় করবে সে নিম্মে বর্ণিত সওয়াবের অধিকারী হবে ।

এক: তারিখের তারাবির নামাজ আদায় কারী পূরবর্তী বছরের গুনাহ থেকে এমন ভাবে নিস্কৃতি পায় যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য প্রসূত সন্তান ।

দুই: পিতামাতার তামাম গুনা সমূহ ক্ষমাহ করে দেওয়া হয় ।

তিন: আরশের নীচে একজন ফেরেস্তা ডাক দিয়া বলেন যে, হে আল্লাহর বান্দা তোমার আমল একমাত্র আল্লাহর জন্যে খালেছ কর তোমার তামাম গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন ।

চার: আল্লাহ পাক চার খানি আসমানি কিতাব ক্ষতমের সওয়াব দান করবেন ।

পাঁচ: মসজিদে নবুবী,বায়তুল্লাহ ও বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় কারীর সমপরিমানে সওয়াব পাবে ।

ছয়: বায়তুল মামুরে তাওয়াফ কারীর সমপরিমানে সওয়াব দান করবেন এবং পৃথিবীর কাঁচা পাকা ঘর তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে।

সাত: মুছা (আঃ) কে পেয়ে তার সাথে থেকে নমরুদ ও ফেরাউনের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সমান সওয়াব পাইবে।

আট: হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর আগ্নিকান্ডে ঝাপ দেওয়ার সমতুল্য সওয়াব পাইবে।

নয়: নবী করিম (সঃ) এর একদিনের ইবদাত বন্দেগীর সমতুল্য সওয়াব দান করবেন ।

দশ: দুনিয়া ওআখেরাতের সকল কল্যান লাভ করার তাওফিক দান করবেন।

এগার: সদ্য প্রসূত সন্তানের ন্যায় নিস্পাপ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে।

বার: কিয়ামাত দিবসে ব্যাক্তির চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জল করবেন।

তের: কিয়ামাত দিবসে সকল প্রকারের অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পাবে।

চৌদ্দ: আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অনিত ফেরেশÍা নামাজের স্বাক্ষী হরে এবং সহজে হিসাব গ্রহন করবেন।

পনের: আরশ কুরছির সকল ফেরেশÍারা আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

ষোল: আল্লাহ পাক জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ করবেন।

সতের: নবী গনের সমতুল্য সওয়াব দান করবেন।

আঠার: পিতামাতার উপর আল্লাহর সš‘ষ্টির কথা এক ফেরেশÍা ডাক দিয়ে ঘোষনা দেন।

উনিশ: বেহেশতের একটি দরজা বুলন্দ করা হবে।

বিশ: শোহাদা ও ছালেহীনদের সমতুল্য সওয়াব দান করা হবে।

একুশ: বেহেশতের মধ্যে একটি নূরের ঘর তৈরি করা হবে।

বাইশ: সকল প্রকার দুঃখ দুরদশা থেকে দুরে রাখা হবে।

তেইশ: বেহেশতের মধ্যে একটি নূরের শহর তৈরি করা হবে।

চাব্বিশ: ২৪টি দোয়া কবুল করা হবে।

পঁচিশ: কবরের আযাব আমল নামা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে।

ছাব্বিশ: ৪০ বছরের এবাদাতের সওয়াব দার করবেন।

সাতাশ: বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার হবে।

আঠাশ: বেহেশতের মধ্যে আর একটি দরজা বুলন্দ করা হবে।

উনত্রিশ: একহাজার মকবুল হজ্জের সওয়াব দান করবেন।

ত্রিশ: আল্লাহ পাক ডাক দিয়ে বলেন হে ! আল্লাহর বান্দা বেহেশতের ফল ভক্ষন কর,ছালছাবিলেন পানি দ্বারা গোসল কর হাউজে কাওসারের পানি পান কর। আমি তোমার প্রভ’ তোমার প্রভ’ তুমি আমার বান্দা।

উৎস মাযালিছুল আবরার কিতাব সংগৃহিত করা হয়েছে

বিষয়: বিবিধ

২৩৪৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326653
১৮ জুন ২০১৫ রাত ১০:৪৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : ধন্যবাদ
326659
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০১:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
তবে তারাবির এত ফজিলত সম্পর্কে কেন যেন সন্দেহ জাগছে!!
এতটুকই কি যথেষ্ট নয় যে রাসুল(সাঃ) এবং তার র সাহাবিগন এটা আদায় করেছেন।
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৫
269009
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন :

রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। তবে তারাবির এত ফজিলত সম্পর্কে কেন যেন সন্দেহ জাগছে!!


ভাইজান এটা কোন হাদীস গ্রন্থ থেকে সংকলিত দয়া করে জানাবেন কি? অনেক ধন্যবাদ।
326667
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন :
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। তবে তারাবির এত ফজিলত সম্পর্কে কেন যেন সন্দেহ জাগছে!!

ভাইজান এটা কোন হাদীস গ্রন্থ থেকে সংকলিত দয়া করে জানাবেন কি? অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File