প্রাইজবন্ড লটারী নিয়ে মজার একটি বাস্তব ঘটনা
লিখেছেন লিখেছেন মানবাধিকার চা্ই ০৫ মার্চ, ২০১৫, ০১:৫৫:১০ দুপুর
রাজনীতি নিয়ে লেখা কিছুটা এক ঘেয়েমি লাগে, তাই অন্য একটা বিষয় নিয়ে লিখলাম । আমরা বাংলাদেশের মানুষ ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নদেখি রাতারাতি, কোন পরিশ্রম ছাড়াই পেতে চায় অনেক কিছু । এই মানসিকতা কে পুজি করে চলছে বিভিন্ন ধরনের লটারীর রমরমা ব্যবসা । এই লটারী নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখে, থাকে নানা ধরনের মজার ঘটনা । তেমনি একটি মজার ঘটনা নিয়ে আজকের লেখা ।
রহিম বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা, দীর্ঘদিন ধরে প্রাইজবন্ড কেনে লটারীতে পুরস্কার পাবার আশায় । কখনো এক লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাগার পুরস্কারের দেখা নাই । এবার শেষ দেখা, লাগতেই হবে একটা পুরস্কার ।এবার সে কিনেছে ৬ লাখ টাকার । তার সাথে বন্ড কেনার পর আমার কথা হয়, কি অনুভুতি! এবার জানি তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মত ।
লটারীর ড্র এর ক্ষন যতই কাছে আসতে লাগলো, তার মধ্যে কি উত্তেজনা বলে বোঝানো যাবে না । লটারীর তিন দিন আগে পরিকল্পনা করলো কিভাবে ড্র চেক করবে, কারন অনেক নাম্বার, একটা একটা করে চেক করা খুবই কঠিন । তাই সে প্রত্যেকটা নাম্বার কম্পিউটারে এক্সেলে ভালো করে এন্ট্রি করে রাখলো যাতে একটা সার্স দিয়েই মুহুর্তে দেখা যায় । লটারীর ঠিক আগের দিন তাকে জরুরী প্রয়োজনে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ীতে যেতে হল, যাওয়ার আগে প্রাইজ বন্ডগুলো রেখে গেল এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে ।
লটারীর দিনতো আর সময় যেত চায় না, খুবই উত্তেজনা কি হয় কি হয় ।
এদিকে ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার বাসায় গেছে মায়ের দেখাশুনা করার জন্য । ফলাফল দেখার জন্য বড় ভাই ছোট ভাইকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে, কিভাবে এক্সেলে দেখতে হবে। ড্র হওয়ার সাথে সাথে ছোট ভাইয়ের ফোন, খাইছি প্রথম পুরস্কার, আনন্দে তো পাগল হওয়ার উপক্রম । ছয় লক্ষ টাকা ,বাসায় তো চরম খাওয়া দাওয়া হয়েছে, আরও কত পরিকল্পনা ,আয়োজনের কোন শেষ নেই, শিরাম অবস্থা।
গ্রামের বাড়ীতে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না কখন আসবে ঢাকা, নিজের চোখে মিলিয়ে দেখবে । রাত পোহাবার সাথে সাথেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেলেন, ঢাকা আসতে আসতে প্রায় সন্ধা । ইতিমধ্যে ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে বন্ধুর কাছ থেকে বন্ডগুলো নিয়ে এসেছে, সেখানে ঘটেছে আর একটা ঘটনা । রহিম তার বন্ধুকে বললো দোস্ত ছোট ভাই যাবে বন্ডগুলো একটু দিয়ে দিস । বন্ধু জানতে চাইলো কি রে বাধছে নাকি ? আরে না একটু ভালো করে মিলিয়ে দেখবো আর কি । আর ছোট ভাই যখন নিতে গেছে, তখনো ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছে, ছোট ভাইয়ের তো সহজ সরল উত্তর আমরা প্রথম পুরস্কার পেয়েছি । বন্ধু তো শুনে হতবাক এত দিনের বন্ধুত্ব সামান্য টাকার কারনে আমাকে অবিশ্বাস করলো । দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, টাকার কারনে অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, হায়রে টাকা তুইকি শুধুই টাকা ।
যাহোক অবশেষে ঢাকায় আসার সাথে সাথে রহিম নাম্বারটা বন্ডের সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য বন্ডগুলো ছোট ভাইকে নিয়ে আসতে বললো । মিলিয়ে দেখতে গিয়ে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । কারন বন্ডের সাথে প্রথম পুরস্কারের নাম্বারটা আর মেলে না । কি ব্যাপার বুঝতে পারেনা, চিন্তা করে সব ঠিক মতই এক্সেলে এন্ট্রি দিয়েছিলাম, ভুলতো হওয়ার কথা না, তা হলে হলোটা কি ?
পরে বুঝতে পারলো ছোট ভাই ভুল করে প্রথম পুরস্কারের নাম্বারটা আগেই এক্সেলে এন্ট্রি দিয়েছে এবং পরে সার্স করতে গিয়ে এই নাম্বারের সাথেই মিলে গেছে । এখন সে চিন্তা করছে কি ঘটে গেল এ কয় দিন আমার জীবনে । সব কিছু আগের মতই আছে, মাঝে একটাসম্পর্ক নষ্ট হলো ।
আসলে জীবনে বড় হওয়ার সহজ কোন রাস্তা খোজা উচিত না । নিজের যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহাবের মাধ্যমে বড় হতে হবে এ হোক আমাদের প্রত্যয় ।
বিষয়: বিবিধ
৪২৪১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদি দশ লাখের মধ্যে একজনকে জয়ী ঘোষনা করার ব্যাপার থাকে তাহলে কেউ খুব একটা আশাবাদী হবে না ।
ঠিক উল্টোভাবে , যদি বলা হয় যে লটারিতে যার নাম উঠবে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে । তখন সবাই আশংকায় থাকবে যে আমারটাই মনে হয় উঠবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন