গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় : তিন সিটিতেই জিতবে বিএনপি
লিখেছেন লিখেছেন আশাবাদী যুবক ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:৫৫:০৯ দুপুর
22 Apr, 2015 সোমবার দুপুরে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে একজন বিশেষ বার্তা
বাহকের মাধ্যমে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুনের
কাছে একটি গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণে এগিয়ে আছেন বিএনপি সমর্থিত
মেয়রপ্রার্থীরা। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সুবিধাজনক
অবস্থানে রয়েছেন।
এই গোপান বার্তায় বলা হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী নিগ্রহের
ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এই প্রতিবেদন যাওয়ার পরপরই সোমবার বিকালে ঘটে যায়
অঘটন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করে বসে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ
সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রকাশ্য দিবালোকে রড, কাঠ নিয়ে হামলা করে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িসহ পাঁচটি
গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তার গাড়ির চালক ও দুজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীসহ ১১ জন
আহত হন।
খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সম্বয়ক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর
সাংবাদিকদের সামনে দাগ দেখিয়ে দাবি করেছেন খুব কাছ থেকে খালেদ জিয়াকে লক্ষ্য করে
গুলি করা হয়েছিল। তার গাড়িটি বুলেট প্রুফ হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
এই ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় চলছে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তারা
সব কিছুর ওপর নজর রাখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের
কূটনীতিকরা খালেদার বাড়িতে গিয়ে ভাঙা গাড়ি ও গুলির দাগও দেখে এসেছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসরকারি টেলিভিশন ও ভিডিও দেখার মাধ্যম ইউটিউবে হামলার
ভিডিও চিত্র দেখে ও নিউজ পোর্টালগুলোতে প্রচারিত ছবি দেখে অনেকটাই হতভম্ব হয়ে
গেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ।
তবে কপালটা বেশি পুড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্তিত মেয়র
প্রার্থী আনিসুল হকের। যারা রড-লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়াকে মারতে গিয়েছিলেন তাদের
কারো কারো সাথে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ছবিও রয়েছে।
আক্রমণকারী আল আমিন আর আনিসুল হকের ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে জনে জনে
ঘুরছে। বিএনপি সমর্থকরা কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় হামলার ছবি দেখে অনেক আক্রমণকারীর
নামধাম পরিচয়ও বের করে ফেলেছে।
এতে দেখা গেছে হামলাকারীরা হয় মূল দল আওয়ামী লীগ করেন অথবা তারা ছাত্রলীগ,
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ বা শ্রমিক লীগের সদস্য। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এরা
আনিসুল হকের নির্বাচনী প্রচারণাতেও সম্পৃক্ত আছে।
ফলে ধারণা করা যাচ্ছে, সোমবার দুপুর পর্যন্ত আনিসুল হক সুবিধাজনক অবস্থানে
থাকলেও তার ভোটের মানচিত্র বদলে গেছে। এর মাত্রাটা কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারে
হয়তো তার একটা শঙ্কা আনিসুল টের পাচ্ছেন।
যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারওয়ান বাজারের ঘটনাকে ‘নাটক’ আর তার তনয়
সজীব ওয়াজেদ জয় ‘ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির উত্তাপ
টেরে পেয়ে আনিসুল বলেছেন, ‘যে বা যারা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছেন, তারা
অবশ্যই অন্যায় করেছেন। এসব বন্ধ করা উচিত।’
কিন্তু মঙ্গলবার বিকালে দেখা গেল হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নতুন স্তরে
পৌঁছেছে। কূটনীতিকদের বাসায় রেখেই খালেদা জিয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে
নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে রাস্তায় জনস্রোত নামে।
আগের দুদিন যেখানে তিনি কয়েকশ’ নেতাকর্মী নিয়ে ভোট চেয়েছেন, সেখানে গতকাল
তিনি হাজার হাজার নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত ছিলেন। এই চিত্রকে অনেকে ২৮ এপ্রিলের
নির্বাচনের পূর্বাভা মনে করছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটিতেই পষ্ট ব্যবধানে জয়ী
হতে যাচ্ছে বিএনপি ও ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীরা। ফলে আনিসুল হকের পুড়ছেই।
এসবির গোয়েন্দা প্রতিবেদন
এসবি থেকে পাঠানো এক গোপন প্রতিবেদনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
নির্বাচনের আগাম ফলাফলের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়।
এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আ জ ম
নাসির উদ্দিন অনেক পিছিয়ে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি
হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনিসুল হক অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে
রয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে, এক হাজার ৯৮২ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৪৭৪ কেন্দ্রকে
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে গোলযোগ বা সংঘর্ষের আশঙ্কা
করছে এসবি পুলিশ।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে তারা সাধারণ কেন্দ্রের চেয়ে বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য
মোতায়েনের পরামর্শ দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব কেন্দ্রকে পুলিশ
বলছে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণগুলোকে বলছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এই গোপান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী
নিগ্রহের ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনি প্রচারণায়
নামায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছেন।
হামলা পূর্ব পরিকল্পিত, জড়িতরা সরকারি দলের
কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনের পেছনে ৩ ঘন্টা আগে থেকে অবস্থান নিয়ে সোমবার
বিকালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ,
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা।
খালেদা জিয়া প্রচারণা চালাতে আসবেন জেনে তারা সকাল থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু
করেন। ওই সময় সিদ্ধান্ত ছিল খালেদা জিয়াকে শান্তিপূর্ণভাবে কালো পতাকা দেখানো
হবে। কিন্তু ঘটনার একপর্যায়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে খালেদা
জিয়ার গাড়িবহরে ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা।
হামলার স্থির ও ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি
জহিরুল হক জিল্লু, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর
রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাকির, তেজগাঁও থানা ছাত্রলীগের
দু্ই কার্যনির্বাহী সদস্য তুহিন মাহমুদ ও আল আমিন, রাহিম রহমান, তেজতুরি বাজার
ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন, স্থানীয় বাউলবাগ ইউনিট ছাত্রলীগের সভাপতি রনি
খন্দকার, কর্মী নাহিয়ান ও রাজু, শ্রমিক লীগের হাত কাটা কাশেম গ্রুপের নেতা সামসু ও
স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা খোকন হামলায় জড়িত আছেন।
তিন সিটির ভোটের হিসাব
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে নারী
১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন।
এখানে মেয়র প্রার্থী ১৬ জন। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৭২ জন।
এই সিটিতে নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র হবে এক হাজার ৯৩টি। এর মধ্যে সাধারণ
২০৭টি, ঝুকিঁপূর্ণ ৪৩৩টি এবং অতিঝুকিঁপূর্ণ ৪৫৩টি।
ঢাকা দক্ষিণে ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। নারী ভোটার আছেন ৮ লাখ ৬১
হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা দক্ষিণে ২০ জন মেয়র এবং ২১৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এখানে মোট ভোট কেন্দ্র ৮৮৯। ঝুঁকিপূর্ণ ৩৬১টি এবং অতিঝুঁকিপূর্ণ ২৫৬টি।
চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থী ১২ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলার ২১৬ জন। ভোটার সংখ্যা ১৬
লাখ ৯০ হাজার ৫৩ জন।
(সংগৃহীত)
বিষয়: রাজনীতি
১৪৩৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জিতলে পরের দিনই মামলা দিয়ে দৌড়ানির উপরে রাখা হবে ।
হায়রে হতভাগাদের দেশপ্রেম!!!!!
জিতলে পরের দিনই মামলা দিয়ে দৌড়ানির উপরে রাখা হবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন