রহস্যময় নারীর হৃদয় ( ছোট গল্পঃ প্রথম- শেষ পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ২২ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:৩১:০০ দুপুর
চিরাচরিত সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী এবং পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন সবার সম্মতি ক্রমেই মহা ধুমধামে আবেদ আর টুমপা আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়ার পথ অনুকরণ করে ভালোবাসার যুগল বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে গত দুই থেকে তিন বছর পূর্বে। যাচ্ছে দিন মহা সুখে। কখনো একটু হাঁসি, একটু কান্না, মান অভিমান, কখনো বা উষ্ণ ভালোবাসা আর রোমাঞ্চ ভাগাভাগি দু’জনার মাঝে। একে অপরের প্রতি এতো বেশি ভালোবাসা আর বিশ্বাস ছিল যে, কেউ কখনো কারো কাছে কোন কিছু ফিডব্যাক আশা করেনা। তাদের মাঝে যেন প্রতিযোগীতা লেগে থাকে কার চাইতে কে, কাকে বেশি ভালোবাসতে পারে? দুইটি হৃদয় মিলেমিশে যেন একটি পরিপূর্ণ আত্মা। একে অপরের প্রতি ভালোবাসার বন্ধন এতোটাই অটুট যে, অনেকই হয়তো যা শতবর্ষ চেষ্টা কারোও তৈরি করতে পারেনা। আসলে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে থাকার নাম ভালোবাসা। একসঙ্গে মিলেমিশে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে থাকার নামই ভালোবাসা। কখনো কখনো সময় পরিবেশের উপর বৃত্তি করে ভালোবাসার ঋতু বদলায়। স্বপ্নেরা ভিড় করে। প্রশ্রয় চায়। কৃষ্ণচূড়ার ডালে চড়ে ভালোবাসার জয়গান গায় ফাগুনের একটি দিন। একটু সময় পেলে ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে বসে দু’জন। হূদয়ের জমানো ভালোবাসা একে অপরকে উজাড় করে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা থাকে সারাক্ষণ। তখন মনে হবে শুধু দু’জনার জন্যও যেন ভালোবাসার সূর্যোদয় ঘটেছে। সব মানুষেরই একে অপরের কাছে প্রত্যাশা থাকে। প্রতিটি দিনই প্রিয়জনকে ভালোবাসার। ভ্যালেন্টাইন্স ডে শুধু তরুণ-তরুণীদের প্রেমকে ঘিরেই নয়, বাবা-মা-ভাইবোন-বন্ধু-বান্ধব স্বামী-স্ত্রীর সবাইকে নতুন করে ভালোবাসা জানানোও ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপনের অংশ। অথচ একেক জন একেক মরু প্রান্তের মানুষ, কত অপরিচিত মুখ, মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসময় সবার কাছে হয়ে ওঠে খুব চিরচেনা প্রিয় মানুষ। চিরকালের জন্য পরস্পরের মধ্যে গড়ে ওঠে নিবিড় বন্ধন। হাঁসি, ছন্দে আনন্দে, প্রেম বিরহে ভরপুর থাকে এ জীবনটা। ভালোবাসার সূর্যোদয় ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া আর কৃষ্ণচূড়ার আকাশে উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো। দু’জনের স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরে একই বাঁধনে বেঁধেছে ভালোবাসার বন্ধন। পারিবারিক ছোট খাটো কাজ থেকে শুরু করে, একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা সবকিছুর মধ্যেই ভালোবাসা স্পর্শ। সুখি জীবনে সবকিছুকে রঙিন মনে হয়। প্রেমটা আসলেই এই রকমই হাওয়া প্রয়োজন। এই পৃথিবীতে প্রেমই শাশ্বত। পৃথিবীতে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বিরল, যার জীবনে একবারও প্রেম আসেনি। প্রেম অন্ধ মনকে করে আলোকিত। দুজনার কঠিন ভালোবাসার পরিপূর্ণতাই মহান আল্লাহ তালার ইশারায় তাদের কোল জুড়ে ফুটফুটে সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়। এইটা সৃষ্টিকর্তার মহান এক কৃপা। আর যুগল প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসার প্রতিফলন।
এই ধরনের প্রেম ভালবাসা দেখে প্রেম নিয়ে যুগে যুগে কালের বুকে রচিত হয়েছে প্রেমকাব্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। শিল্পীর তুলিতে নানান রঙে-ঢঙে অঙ্কিত হয়েছে প্রতিকৃতি, কবির লেখনীতে কবিতা আর ঔপন্যাসিকের লেখনীতে উপন্যাস।
কোন একদিন "আবেদের" বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রীকে খুশি কিংবা অতিবিশ্বাস থেকে আবেদের সারা জীবনের অর্জিত অর্থ সম্পদ স্থাবর অস্থাবর সকল সয় সম্পত্তি স্ত্রীর নামে উইল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিদের মাঝে ঘোষণা করলেন আবেদ- আমার স্থাবর অস্থাবর সকল সয় সম্পত্তি আমার স্ত্রীর নামে উইল করে দিবো। আবেদের মুখ থেকে স্ত্রী( টুমপা) এই কথা শোনার পরতো প্রায় স্থির হয়ে গেল। তারও টাকা পয়সা ধনসম্পত্তি বাড়ি গাড়ি এইসবের প্রতি লোভ লালসা নাই। স্বামী তাকে খুব ভালোবেসে এইটুকু তেই সুখি। এর বাহিরে আর কিছু সেই প্রত্যাশা করেনা। সেই কোন মতে ও উইলে সিগনেচার করতে রাজি না । এতো বড় দায়িত্ব কোন মতে সেই নিবেনা।
আবেদ টুমপাকে বুঝেছে-- আমি পুরুষ মানুষ সারাদিন বাইরে গাড়ি গোরাতে চলাফেরা করি । কখন কি হয়ে যায় বলতো যায় না? কারণ হায়াত মৃত্যু সবিই তো আল্লাহ হাতে। তোমার কাছে থাকা মানেতো আমার কাছে থাকা একি কথা।
টুমপা বলতেছে-- তোমার মন এতো বিশাল কেন? তুমি মানুষ নাকি দেবতা? তাদের ভালোবাসার বন্ধন এতোটাই সুদৃঢ় যে, যেই কেউ দেখলে ঈশানীত হবে। যাচ্ছে দিন মহা সুখে। ফ্যামিলিতে বৃদ্ধ মা, স্বামী স্ত্রী আর দুই আড়াই বছরের এক শিশু সন্তান মিলে তারা সদস্য সংখ্যা চার জন। এর মাঝে আবেদের ছোট বেলার এক বন্ধু জিকো গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চাকরি সন্ধানে । শহরে কোথায় থাকার ব্যবস্থা নাই তার। আবেদ কে বলার পর আবেদ কিছু দিনের জন্য তার বাসায় থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিল। আবেদ বলল- যতদিন চাকরি ব্যবস্থা করতে পারবি না ততদিন আমার এখানে থাক। জিকোর একটা থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল আবেদের বাসায়। আবেদ ব্যাবসা বানিজ্যের কাজে সারাদিন বাইরে ব্যস্ত থাকে, বাসায় যতটুকু সময় পাই স্ত্রীকে মন প্রান উজাড় করে ভালোবাসে। স্ত্রীও তা নিয়ে আবেদের প্রতি কোন মান অভিমান, রাগ অনুরাগ অভিযোগ নাই। জিকোও তাদের ফ্যামিলিতে খুব তাড়াতাড়ি অনন্য সদস্য মত সবাই সাথে মিশে গিয়েছে । বাহির থেকে দেখে বুঝা যাবেনা সেই যে এই ফ্যামিলির কাছের কেউ নয়। দিন যায় মাস যায় যাচ্ছে নিয়মের গতিতে।
জিকোঃ ভাবী তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
টুমপাঃ ধন্যবাদ।
জিকোঃ আমার জীবনে প্রথম যদি কোন সুন্দর নারী দেখি সেইটা তুমি।
টুমপাঃ হয়েছে! হয়েছে! ভালো হয়েছে! খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে।
জিকোঃ সত্যি তুমি একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারাটা একবার দেখ। তখন বুঝবা তুমি আসলে কত সুন্দর। তুমি যেমনি রূপবতী তেমনি গুণবতীও বটে। একজন নারী হিসেবে তোমার কাছে সব গুনগুন পরিপূর্ণ।
টুমপাঃ আচ্ছা! আচ্ছা!! ঠিক আছে। চা দিবো।
জিকোঃ তোমার হাতের চা খেতে পারা আমার মত কপাল পোরা সৌভাগ্য।
টুমপাঃ এতো প্যাঁচিয়ে না বললে হয়।
জিকোঃ আচ্ছা ভাবী তোমার যেই শিক্ষকতার যোগ্যতা আছে তুমিতো একটা চাকরি করতে পারো।
টুমপাঃ আমার তো ছোট বেলা থেকে খুব ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করবো কিন্তু আপনার বন্ধুতো আমাকে চাকরি করতে না করে দিলো।
জিকোঃ না-না-না আবেদ শিক্ষিত ছেলে হয়েও তোমার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না । আর তোমার যেই প্রতিভা তুমি সেখানে ও ভালো করবা। আচ্ছা আবেদ আসলে আমি তাকে বুঝিয়ে বলবো।
টুমপাঃ আপনি একটু ওকে বুঝিয়ে বলিলেন আমার খুব ইচ্ছা ছোট বেলা থেকে পড়ালেখা করে চাকরি করার।
একটু সময় পেলে জিকো আর টুমপা কথার ডালি সাজিয়ে বসে। একে অপরের সুখের দুখের কথা হয়। যাচ্ছে দিন ভালোই। একে অপরের প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বলতা বাড়তে থাকে। একদিন কথার ফাঁকে জিকো টুমপার হাত ধরে বলে ফেলো আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। টুমপা কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে রইল কিছুক্ষণ। হঠাৎ কিছু না বলে চলে গেল। এই দিকে জিকো বিষণ টেনশনে আছে। কি হতে কি হয়ে গেল? সেই ভাবছে টুমপা যদি আবেদ কে এই সব কথা বলে দেয় কিংবা টুমপা যদি মাইন্ড করে তাহলেতো অবস্থা বিষণ খারাপ হয়ে যাবে। দুই তিন দিন আর দুইজন সাথে দেখা কিংবা কথাবার্তা হচ্ছে না। এই দিকে জিকোর টেনশনে ঘুম নেই। দুই তিন দিন পর---------
টুমপাঃ কি জিকো ভাই টেনশনে আছেন মনে হয়?
জিকোঃ টেনশনেতো আপনি রেখেছেন---
টুমপাঃ টুমপা কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেল।
জিকোঃ একটু ভরসা ফেলে-----
কিছু দিনের মধ্যেই একে অপরের মাঝে ভালোবাসার মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে গেলে।
চলেছে গোপনে তাদের প্রেম ভালোবাসা।
জিকোঃ চলো আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
টুমপাঃ আমার বাচ্চাটার কি হবে?
জিকোঃ তোমার বাচ্চা মানেতো আমার বাচ্চা। তাকেও আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
এই দিকে আবেদ ব্যাবসা বানিজ্যের কাজে দেশের বাইরে গিয়েছে। এই সুযোগে জিকো টুমপাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে টুমপার নামে প্রায় সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে আগে টাকা পয়সা সব হাত করে ফেলেছে। যেদিন পালিয়ে যাওয়ার ডেড ঠিক হলো সেইদিন গভীর রাতে জিকো টুমপা ও তার বাচ্চাটাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে পালিয়ে যায় সকল টাকা পয়সা নিয়ে।
(বিঃদ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক লেখকের একান্ত কাল্পনিক চিন্তাধারা থেকে কারো সাথে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ মিলে গেলে লেখক দায় নয়।)
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন