সে'কি আসবে ফিরে - - -? ( ধারাবাহিক উপন্যাসঃষষ্ঠ-পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ১০ মার্চ, ২০১৫, ১০:০৪:২৬ সকাল
নিলয়ঃ তার পরে দিন আমার বাবা মা তসিবাদের বাড়িতে গেল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তসিবার বাবা সরাসরি আমার বাবা মার মুখের উপর প্রস্তাব নাখোশ করে দিল। তারা কল্পনাও করতে পারেনি তাদেরকে এইভাবে আপমানিত হতে হবে। আমার বাবার বিশ্বাস ছিল তসিবার বাবার বর্তমানে যত ধনসম্পত্তি আছে আমার বাবার অবদানে হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন তার প্রস্তাব তারা সদরে গ্রহন করবে। আমাদের যত আত্মীয় স্বজন আছে অপেক্ষাকৃত একটু দূর্বল সবাই কে কমবেশি আমার বাবা অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে । কিন্তু আজ সবাই যার যার অবস্থানে ভালো আছে । কেউ আর এখন আমার বাবা খোঁজ খবর রাখে না। সবাই তাদের অতীত ভুলে গিয়েছে। তারা যখন আপমানিত হয়ে ফিরে আসলো। তখন আমি আমার আত্মীয় স্বজন কমবেশি সবার কাছে এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু সহযোগিতা জন্য সবার ধারে ধারে ধরনা দিয়েছি । কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্যতো করেনি বরং আমার বিপক্ষে আমার পরিবারের বিপক্ষে তসিবার বাবাকে বুঝিয়েছে। আত্মীয় স্বজন কারো সহযোগিতা না পেয়ে দুই তিন জন বন্ধু নিয়ে যার সাথে তসিবার বিয়ের কথাবার্তা চলছে তার কাছে ছুটে গেলাম । তাকে কত সুন্দর করে বুঝিয়ে বললাম তসিবার সাথে আমার পাঁচ ছয় বছর ধরে প্রেম চলছে আমার একে অপরকে খুব ভালোবাসি একে অপরকে ছাড়া পৃথিবীতে সুখি হতে পারবো না । বললাম-- আপনি তসিবার বাবাকে তসিবাকে বিয়ে করতে পারবেন না বলে দেন । কিন্তু তিনিও আমাদের কারো কথা শুনলেন না। তিনি নাকি পণ করেছে তসিবাকে বিয়ে করবে করবে। এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই আজব। তারা মানুষ নাকি ফানুষ তাও এখন আর বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি না। সব ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে দিন যাচ্ছে নির্জনে। নির্জনে থাকি নিজের সাথে। ধীরে ধীরে নির্জনতা প্রিয় মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছি। হয়তো হয়েও গেছি। ইদানিং চলাফেরা, কথাবার্তা বলতে ভয় হয়। চারিপাশে মানুষ দেখি ঠিকই কিন্তু মানুষ রূপে আড়ালে দেখি শুধু মুখোশ। মুখোশে-মুখোশে ছেয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। নিজের বিভৎস চেহারা সামনে একটি মসৃন আবরন। সেটাই মুখোশ। নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো মানুষি মুখোশটাকে ইদানিং দেখা যায় বেশী। স্বার্থ এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্বার্থ ফুরালেই সব শেষ। মুখোশটা ঠিক তখনই উন্মোচন হয়। বিভৎস সেই চেহারা দেখে এখন বমি চলে আসে। থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ করতেও উদ্ধত হই। কিন্তু তাও পারি না। এত কাছের মানুষকে তাও করা সম্ভব হয় না। তাইতো নির্জনে চলে গেছি। একদম নির্জনে। হাজার অবিশ্বাস নিয়ে এখন আমিও মুখোশধারীদের মতো হয়ে গেছি। মুখোশটাই হয়ে গেছে জীবনের মূলমন্ত্র। কারণ, জীবন একটি মুখোশ। মাঝে মাঝে মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে আজব জিনিস মানুষের মন। মানুষ কি তার নিজের মনকে সবসময় বুঝতে পারে? বলা হয় মেয়ে মানুষের মন বোঝা সৃষ্টিকর্তার কাছেও খুব কঠিন। কিন্তু পুরুষদের মন বোঝা কি খুব সহজ? জটিল এই মনের গঠন তারচেয়েও জটিল একে বোঝা। আবেগ, বাস্তবতা, ভালোবাসা, খারাপবাসা, ভালো, মন্দ, বিচার বিশ্লেষন, রাগ, বুদ্ধির প্রয়োগ, ইচ্ছা প্রভৃতির স্বমন্বয়ে মানব মন। মানুষ তার মনকে আটকাতে পারে না কোন আনন্দের হাসি থেকে, দুঃখের কান্না থেকে, ভালোবাসা থেকে, রাগ থেকে, সুচিন্তা বা দুঃচিন্তা থেকে। ক্ষনস্থায়ী এ জীবনের অনভূতি কত বিচিত্র। কত তুচ্ছ কারনে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, আবার কখনো কখনো সহজ সরল সমীকরণ টা ওলট-পালট হয়ে জটিল আকার ধারণ করে। ভালবেসে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিলাম যে আমি এই পৃথিবীর কাছ থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম । আজ আমি ভালোবাসা থেকে মুক্ত, কিন্তু সত্যি বলছি এমন মুক্তি আমি কখনোই চাইনি । এ কেমন মুক্তি দিলে বিধাতা তুমি ? অদৃশ্য এক মায়ার বাধঁনে প্রতিক্ষন বেধেঁ রেখেছো আমায় ? শত চেষ্টায় ও আমি দূরে যেতে পারিনা আবার কষ্ট পাবার ভয়ে ভালবাসার কাছেও যেতে পারিনা। এটাকে যদি মুক্তি বলে তাহলে এমন মুক্তি আমি চাইনা । রাত যত গভীর হয় , পুরোনো স্মৃতি গুলো যেনো ফিরে ফিরে ডাকে। মনে করিয়ে দেয় নিষ্ঠুর ভাবে চলে যাওয়া কথা । যে তুমি ছিলে একদিন আমার মনের আঙিনায় । আজ জানিনা তুমি কোথায় ? আড়াল করেছো নিজেকে কোন অজানায় ? তবুও আমি আছি তোমারই প্রতীক্ষায় ! আমি জানি না তুমি আমায় কতটুকু ভালবাসতে। শুধু দূর থেকে আমি তোমাকে ভালোবেসে যাব । মাঝে মাঝে হয়ত খুব ইচ্ছে হবে তোমার সাথে কথা বলতে, দূর থেকে একটুখানি দেখতে । কিন্তু না, তোমার রঙিন জীবনে আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না । যেদিন তুমি অন্যের গলায় মালা পড়ালে সেদিন থেকে তোমাকে আমার জীবন থেকে মুক্ত করে দিয়াছি। তোমাকে মুক্তি দিতে আমার কষ্ট হয়েছে কিন্তু তোমার কথা ভেবে পরাজয় টুকু মেনে নিয়েছি। অভিশাপ তো তোমাকে কখনো আমি দিতে পারবো না শুধু আশীর্বাদ টুকু রইল যেখানে থেকো ভাল থেকো সুখে থেকো। এখনো তোমার কথা মনে পড়ে প্রতিদিন। রাত যায় দিন আসে, রাত আসে রাত বাড়ে আর রাত যত বাড়তে থাকে ততই তোমার কথা মনে পড়ে । পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠা। তোমার ওই উচ্ছল চেহারা। সেই স্মৃতিগুলো মনে করে আমি হাসি আর সেই স্মৃতির শেষ দিকের কথাগুলো মনে করে আমি কাঁদি । রাত বাড়ে, দিন আসে, আমার দিনগুলো এভাবেই কেটে যায়। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে মনের ভিতর।
সেই তুমি ! এক সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ছিলে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ? সেই তুমি ! এখনোও বেঁচে আছো কিভাবে এতটা সময় ধরে? এক সময় তুমি আমাকে বলতে। আমার সাথে কথা না বললে আমার দিনটা কাটতে চায় না। আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ? আজ অনেকটা বছর হলো তোমার সাথে কথা হয়না, তোমার দিনগুলো কিভাবে কাটেছে? সেই তুমি! এক সময় আমাকে বলতে। আমি নিজেকে ভুলে যেতে পারি, কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারব না।আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ?আমার কথা তোমার মনে আছে কি ?সেই তুমি! এক সময় আমাকে বলতে।তোমাকে ছাড়া আমার জীবন মূল্যহীন।আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ?তোমার কাছে ভালোবাসার মূল্য এখন কত টাকা ? সেই তুমি! এক সময় আমায় বলতে। তোমার সাথে দেখা না করে আমি থাকতে পারবো না। আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ? এতটা বছর না দেখে তুমি কিভাবে আছো? সেই তুমি! এক সময় আমাকে বলতে। তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি! আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে ? এই কথাটা এখন কি তোমার স্বামীকে বলেছো? আমি কেমন আছি বলতে পারব না তবে এইটুকু বলতে পারি তোমার জন্য এখন আর চোখের জল ঝরে না, মাঝরাতে তোমার কথা ভেবে এখন আর ঘুম ভাঙ্গে না,
তোমার জন্য বুকের ভিতর সেই চিনচিনে ব্যাথাটা এখন আর অনুভব করিনা, তোমাকে ছাড়া একা একা পথ চলতে এখন আর ভয় লাগে না। আর এর নাম যদি হয় ভালো থাকা তবে ভালো আছি তোমাকে ছাড়াই আমি ভাল আছি। এখন আমি হাঁসতে কিংবা কান্না করতে ভুলে গিয়েছি । একাকী নিঃসঙ্গ জীবন আমার কাছে সুখের মনে হয়। জগত সংসার কোলাহল আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে। আমি আমার মত করে থাকতে ভালোবাসি। কারো শাসন কারো বারণ আমার কাছে বিরক্তি কারণ। আমার গোপন ব্যাথা আমি একা সহে যাবো কাউকে ভাগ দিবেনা। আমার গোপন ব্যাথা কেউ বুঝতে ও পারবেনা। এখনো আমি তোমার প্রতীক্ষায় আছি প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে দুই চোখে এখন অন্ধকার দেখি। তখন মনে হয় পৃথিবী আমার আন্ধার হয়ে গেছে। চারদিক আমার আন্ধার চেয়ে গিয়েছে। এই জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে ভালোবাসার যন্ত্রণায় কেঁদেছি। কিন্তু এখন আর যখন তখন দুই চোখে কান্না আসে না। এখন আর এতো বেশি জীবন নিয়ে চিন্তা করিনা এবং চিন্তা করার সময় ও পাইনা। এখন রাত শেষে দিন আসে দিন শেষে রাত এইটাই এখন আমার জীবনের বাস্তবতা। কষ্টে কষ্টে হৃদয় আমার পাথর হয়ে গিয়েছে। পাথর হৃদয়ের আবার কান্না কিসের । জীবনের সব চাওয়া হয় তো পাওয়া হয় না। কিছু কিছু চাওয়া অপূর্ণ থেকে যায়। আমার জীবনে না হয় অপূর্ণ থেকে গেল। তোমার জীবনে পূর্ণতা পাক এই প্রার্থনা করি।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন