সে'কি আসবে ফিরে - - - -? ( ধারাবাহিক উপন্যাসঃ পর্ব - পঞ্চম )

লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৫৫:৩৯ দুপুর

অপরিচিত কোন এক নম্বর থেকে ফোন-----

নিলয়ঃ হ্যালো কে?

ঔপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে আমি তসিবা---

নিলয়ঃ তোমার মোবাইল বন্ধ কেন?

তসিবাঃ আব্বু আমার ফোন নিয়ে ফেলেছে।

নিলয়ঃ কেন?

তসিবাঃ তারা নাকি আমার বিয়া ঠিক করে ফেলেছে। আগামী চব্বিশ তারিখ আমাকে দেখতে আসবে?

নিলয়ঃ তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামি করছো?

তসিবাঃ তোমার কি তাই মনে হয় ? আমি এতোক্ষণ যায় বলেছি সিরিয়াসলি বলছি। প্লিজ কিছু একটা কর তাড়াতাড়ি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। রাগ করে

মোবাইলের লাইন কেটে দিলাম।

মুহূর্তে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বাক শক্তি হারিয়ে বোবা হয়ে গেলাম। এমন নিষ্ঠুর কথা শুনতে হবে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, এক নিমেষে ভালোবাসার সাজানো বাগান জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে । পায়ের নিচের মাটি গুলো অভিমানে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। সুখের স্মৃতি গুলো মুহূর্তে হৃদয় ভাঙ্গার বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর প্রচন্ড ব্যথায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন অনাকাঙ্খিত কথাটি শুনার জন্যে কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। বোবা কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছে। প্রচণ্ড ধাক্কায় মন হলো হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে । ঐ মুহূর্তে মনে হলো এই পৃথিবীতে ভীষণ আমি একা। এতো কষ্ট কষ্ট আর প্রানে সহে না । আমি আর পারলাম না, মুখের উপর বালিশ চেপে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। একাকি নিঃসঙ্গ জীবনে এতোটা পথ পারি দিবো কিভাবে? বার বার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে কেন বা

ভালবাসার মায়াজালে জড়িয়ে মরুর বুকে ভালোবাসার বীজ বুনে, হাজারটা স্বপ্ন দেখিয়ে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, আমাকে একা অন্ধকারে রেখে, তুমি চলে যাবে অদৃশ্য এক ভালোবাসার আশায়, এবং অন্য কারো হৃদয় রাঙাতে। তাও কি সম্ভব ? এই সব চিন্তা করতে করতে ভোর হয়ে গেলো। খুব ভোরে উঠে ছুটে গেলাম বন্ধু বাবুর কাছে। একটা উপায় বের করার জন্য। বাবু সহ আরো দুই তিন জন বন্ধুর সাথে শলাপরামর্শ করে নিলাম। সবার একি কথা আগে আমার বাবা মাকে রাজি করাতে হবে বাকি কাজ পরে হবে। বাবু আমার বাসায় আসলো আমার আম্মার সাথে কথা বলার জন্য ।

বাবুঃ আস্সালামু আলাইকুম আন্টি।

আন্টি: ওয়াল্লাইকুম সালাম কেমন আছো বাবা।

বাবুঃ আলাহামদ্দুল্লিলা আপনাদের দোয়াতে ভালো আছি আন্টি।

আন্টিঃ তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছে।

বাবুঃ আলাহামদ্দুল্লিলা ভালো আছে। আন্টি আমি আপনার সাথে একটু কথা বলার জন্য এসেছি।

আন্টি: কি কথা বল ?

বাবুঃ আন্টি আপনারা তো সবিই মোটামুটি জানেন নিলয়ের সাথে তসিবার একটা সম্পর্ক আছে। তারা দুইজন দু’জনকে খুব ভালোবেসে। একটু আগে শুলাম তসিবার বাবা নাকি তসিবাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছে । এখন যদি আপনারা তার বাবার সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে হয়তো ওরা দু’জন সুখে থাকতো।

আন্টি : দেখো বাবা নিলয়ের এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি। তার পর সেই এখনো কিছু করতেছে না । এখনো আমরা তার বিয়ে টিয়ার ব্যাপারে কিছুই ভাবতেছি না। পড়াশোনাটা শেষ হক তারপর না হয় ভেবে দেখা যাবে।

বাবুঃ ঠিক আছে আন্টি আপনার কথা। এখন যদি আপনারা দুই ফ্যামিলিতে কথাবার্তা বলে রাখেন প্রয়োজনে বিয়েটা আরো এক দুই বছর পরে হবে।

আন্টিঃ দেখ বাবা তসিবার ফ্যামিলি আমাদের এমনিতেই পূর্বের নিকটতম আত্মীয় তার পর আরেকটা আত্মীয় না---না---না----- এইটা সম্ভব নয়। কোন ফয়সালা হলো না সেইদিন মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। সত্যি সত্যি ওকি চলে যাবে অন্যের ঘরে একি সম্ভব। তাহলে আমার কি হবে ? চার/পাঁচ বছরের যে অসংখ্য স্মৃতি তার কি হবে? আমার স্বপ্ন গুলোর কি হবে? আমার জীবনটা কি তাহলে অর্ধেকে এসে থেমে যাবে? সহস্রাব্দের নিষ্ঠুরতা আমাকে সারাক্ষণ ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়ে যাচ্ছে। আমি ঘুমুতে পারি না। আমার দুটো শ্রান্ত আঁখি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, মুহূর্তেই বীভৎস স্বপ্ন দেখে আতঙ্কে উঠি । দুই চোখ বুঝলে তার স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। ব্যস্ত নগরী অনেকটা চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো । এর মাঝে শুধু জেগে আছি আমি। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে রাত পার করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কষ্টরা কতটা ভয়ঙ্কর আমি ছাড়া আর কেউ বুঝে না। প্রতিটি দীর্ঘশাসে ভারি হচ্ছে আমার চারপাশ। কখনও সব কিছু স্থবির।

জীবন যুদ্ধে লেং খাওয়া মানুষ গুলোর ভীরে আমি। প্রতিটি দীর্ঘশাসে গাল বেয়ে চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। সারা রাত জেগে জেগে মিছে স্বপ্ন দেখি। দেখি আর ভেঙে যায়, ভেঙে যায় আবার শুরু করি। স্বপ্নের এই ভাঙা-গড়াতেই দিন চলে যায় রাত চলে যায়। আমি ঘুমাতে পারি না। খাইতে পারি না । সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে রুমে শুয়ে শুয়ে দিন রাত পার করতেছি।

দুই তিন দিন পর আমার করুন আবস্থা দেখে আমার বাবা মা সিদ্ধান্ত নিলেন তারা যাবে তাদের বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে। প্রচণ্ড প্রখরতাই হৃদয় ফেটে যখন চুরির ঠিক ঐ মুহূর্তে এক ফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত মনে একটু অস্থির নিঃশ্বাস।

চলবে - - - - - - -

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

306576
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
306751
০১ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:১৪
দ্বীপ জনতার ডাক লিখেছেন : শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না কি বলা যায় বলবেন কি একটু?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File