সে'কি আসবে ফিরে - - -? ( ধারাবাহিক উপন্যাসঃ চতুর্থ-পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৩:০৬:০০ দুপুর
চতুর্থ - পর্ব
তসিবা সবে মাত্র স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবনে পা রেখেছে। উড়ন্ত উদ্দীপনা মন তাই মানতে চাইনা কারো শাসন বারণ। স্কুল শিক্ষক, আর মা বাবার কঠো শাসন বারণ শুনতে শুনতে প্রায় অতিষ্ঠ। জন্মক্ষণ থেকে তাদের দেখানো পথে হাটছে এর বাহিরে কিছু করা সম্ভব নয়। কখন কোথায় যাবো, কিভাবে যাবো, কার সাথে যাবো, সবকিছু ঠিকই করে দিচ্ছে তারা। ব্যক্তি হিসেবে যে তার একটা স্বাধীন মন আছে সেইটা মানতে নারাজ তারা । ভালো মন্দ বেছে নেওয়ার অধিকার তার নেই। তাই মনের ভিতর অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন কলেজে ভর্তি হলে হয়তো একটু স্বাধীনতা পাবে । তাই ভেবে গৃহ শিক্ষক, মা বাবার কঠোর শাসন বারণের তোয়াক্কা না করে চুপিসারে নিলয়ের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতো। কখনো কলজে যাওয়ার পথে দূর থেকে একটু চোখাচোখি, কখনো রিক্সা দাড় করিয়ে একটুখানি কথা, কখনো বইয়ের ভিতর করে চিঠি দেওয়া নেওয়া দিব্যি ভালোই চলছে দুজনার প্রেমে । মোবাইলেতো হচ্ছে প্রতিদিন গোপনে গোপনে কথাবার্তা। যেদিন দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া কথা থাকতো দু’জন মাঝে সেই দিন তসিবা কলেজ যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হতো কলেজ ব্যাগ, ড্রেস পড়ে ঠিকই কিন্তু ব্যাগের ভিতরে করে আরেকটা ড্রেস নিয়ে নিতো যাতে করে কেউ সন্দেহ না করে। তসিবার কলেজের পাশে নিলয়ের এক বন্ধুর দোকান ছিলো। দোকানের পিছনে ব্যাগ রেখে, ড্রেস চেইন করে বেরিয়ে যেতে ঘুরেতে। সারাদিন দুই জন ঘুরাঘুরি করে ঠিক ফিরতে কলেজ ছুটির একটু আগে। যাতে করে কারো সন্দেহ না হয়। এভাবে বেশ কিছু দিন চলছে দু'জনার মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা সাক্ষাত । কখনো কিছু সুখ, কিছু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া দুজনার মাঝে । আরো কতদিন, কতটা সময় একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। কখনো হাতে হাত রেখে ফয়স লেকের নির্মল ঠান্ডা জলের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া । কখনো নগর দুলায় বসে পুরা শহরটা একসঙ্গে দেখা। আবার কখনো লেকের শান্ত জলে নৌকায় চড়ে ভেসে বেড়ানো । কখনো বা সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় বসে আদিগন্ত মাঠ ঘাট পেরিয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদুরে হারিয়ে যাওয়া । আবার কখনো নয়ত পতেঙ্গা সৈকতের ভেজা বালিতে পা ভিজিয়ে সমুদ্রের
বিশালতার মতো নিজেদের প্রেম কে পরিপূর্ণ দানের প্রচেষ্টা । কখনো বৃষ্টি ভেজা নগরীতে পাশাপাশি রিকশায় বসে স্নিগ্ধ প্রকৃতি উপভোগ করা এবং আরো কত কি ! ঐ মুহূর্তে গুলো তাদের কাছে স্বর্গীয় সুখের মত মনে হয়তো। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা হতো পুরা পৃথিবীর কে জানিয়ে দিতে ভালোবাসার কথা। আবার ভাবে না এখন জানাজানি হলে সমস্যা হতে পারে।
রবীন্দ্রণাথের ভাষায় -
তোমারেই যে ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার--
কত রূপ ধরে পরেছ গলায় নিয়েছ, যে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার ।
আসলে প্রেম এমনি হয় মানে না কারো শাসন, মানে না হাজারোও বারণ, ভয় করে না কারো চোখ রাঙানো , মানে না ধর্ম ,বর্ণ , জাত। ভালোবাসা অনেকটা গাছের মতো, যত যত্ন করা যাবে ততই বাড়বে৷ ভালোবাসার স্পর্শে ডালপালা ফলে ফুলে ভরে যায়। আর অযত্নে যায় শুকিয়ে। কেউ যদি মনে করে, ভালোই তো আছি, দুই তিন মাস পর পর খোঁজ খবর নিচ্ছি, এতোটা ব্যস্ত জীবনে যা সময় দিচ্ছি অনেকতো দিচ্ছি আর প্রয়োজন কি? হয়তো তার দিক থেকে ঠিক আছে কিন্তু এই কথা ভুলে গেলে চলবে না মরুভূমির বুকে যেমনি গাছে একদিন পানি না দিলে শুকিয়ে উঠে। তেমনি ভালবাসার মানুষটি কে একটু অযত্ন বা অবহেলা করলে এই সুযোগটা যে কেউ নিয়ে নিতে পারে। ঠিক যেমন করে শিকারি বিড়াল ইঁদুর শিকার করার জন্য ঘটি মেরে বসে থাকে কখন শিকারটা আসবে এই আশায় সুযোগ ফেলে গপ্প ধরে ফেলা। তাদের দু’জনের মাঝে
একে অপরের প্রতি ভালোবাসা কোন অংশে কম ছিলো না । একজন আরেকজনকে ছাড়া একটি মূহুর্তে জন্য অন্য কিছু পৃথিবীর বুকে কল্পনা করেনা। অনেক দিন গোপনে গোপনে প্রেম চালিয়ে গেলেও একদিন তা প্রকাশ হয়ে যায় । শত চেষ্টা করে ভালোবাসার কথাটি গোপন রাখার জন্য কিন্তু বাস্তবতা এমনি ভালোবাসা কখনো গোপন থাকে না । কোন না কোন ভাবে জন সম্মুখে প্রকাশ হয়ে যায়। তাদের ও ভালোবাসার কথা বেশি দিন গোপন ছিলো না । এক কান দুই কান করে একসময় সব কান হয়ে যায়। উভয় ফ্যামিলিতে তাদের দুজনার ভালোবাসার সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে যায়।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন