সে'কি আসবে ফিরে - - - -?( ধারাবাহিক উপন্যাসঃ পর্ব - তৃতীয়)
লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:১৮:১৭ সকাল
তৃতীয় - পর্ব
ভরা পূর্ণিমার কোন এক রাতে নিলয়ের গ্রামের বাড়িতে তসিবা বেড়াতে এসেছে। বিশেষ করে যারা ছোট বেলা থেকে শহরে বড় হয়েছে তাদের গ্রামের পূর্ণিমার রাত দেখার সৌভাগ্য তেমন একটা হয় না। এমনি একটি রাত পেয়ে তসিবার আনন্দের আর সীমা নেই। যতদূর চোখ যায়, জোছনার চাদরে যেন ঢেকে রেখেছে পুরা গ্রাম। ছোট বড় বৃক্ষের ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে জোছনার আলো। কোন এক শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা যেন সোনালী বুটিতোলা পান্না-সবুজ রঙের শাড়িতে ডেকে রেখেছে পুরো গ্রাম। সামনে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে দৃষ্টি নন্দন কর্ণফুলী নদী। প্রকৃতির এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখে প্রেমিক যুগল উন্মাদ। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দরে চলছে দুজন কর্ণফুলী নদীর দ্বারে। কি অপরূপ পূর্ণিমার চাঁদ। আকাশ জুড়ে শুধুই চাঁদের আলো। চাঁদের এত আলো তসিবা আগে কখনো দেখেনি। কর্ণফুলীর শান্ত খাল, দুই পাশে গভীর অরণ্য, ঔপাশে ছোট ছোট ঘর, দূর থেকে ভেসে আসা ভাটিয়ালী সুর। কিছুক্ষণ পর পর দুই একটা ডিঙ্গি নৌকা একূল থেকে ওকূলে মানুষ পারাপার করছে। রাতজাগা পশুপাখিদের কিসিমিছির কোলাহল। যদিও সন্ধ্যা নামার আগে সব পাখিদের নীড়ে ফিরে যাওয়ার কথা কিন্তু তারাও জোছনা স্নান করবে বলে গাছের মগ ডালে বসে মনে সুখে গান ধরছে।
তসিবাঃ আমি হাটতে হাটতে অনেক ক্লান্ত চলো কোথাও একটু বসি।
নিলয়ঃ চলো------------
কোন এক বড় বৃক্ষের নিচে দু’জন বসে পড়লো। তসিবা নিলয়ের কাধে ভড় দিয়ে খুব কাছাকাছি একে অপরের কোল ঘেঁষে বসলো। সেই স্পর্শে হাজারো ক্লান্তি এক নিমেষে মিশে গেল জোছনা আলোর সাথে।
ভালবাসার পরশে কুয়াশার ন্যায় চোখ ভিজিয়ে আসছে। চল চল করছে চার চোখ। ভেজা ভেজা চোখে একে অপরের দিকে তাকায় কিছু বলার বাক শক্তি হারিয়ে একে অপরের বুকে মুখ লুকায় । থর থর করে কাঁপছে দু’জন অজানা ভালোবাসার স্বর্গীয় সুখে। সেই প্রথম উপলব্ধি পৃথিবীর বর্গীয় সুখ। এই রকমই এক আত্মতৃপ্তির মুহূর্তের উজ্জ্বল আকাশের সবকটি তাঁরা সাক্ষী হয়ে গেল। জোছনার আলোর সাথে বইছে নির্মল মৃদু হাওয়া, তালে তালে ভেসে চলছে ভালোবাসার প্লাবন। একরাশ প্রশান্তির
আবেশ ছড়িয়ে পড়েছিল দেহ মনে । প্রচন্ড এক ভালো লাগার আবেগী কন্ঠে নিলয় রবীন্দ্রনাথের গানের কথায় বলতে লাগলো -
"হৃদয় আজি কেমনে গেল খুলি,
জগৎ আসি সেথা করেছে কোলাকুলি ।"
-কিছুক্ষণ চুপচাপ একটু নিরবতা দু’জনের মাঝে।
-গভীর ভালো লাগা আর ভালোবাসায় আচ্ছন্ন যেন পুরো পৃথিবী।
নিলয় তসিবার চোখে চোখ রাখল । সেই এক অন্য রকম চাহনী । যে চাহনীতে সবকিছুই
বদলে যায় । নিলয় ওর কাজল কালো মায়াবী আঁখিতে মুগ্ধ বিস্বয় নিয়ে চেয়ে রইল। কত কথাই যেন সে চোখে জমে রয়েছে । কত কিছুই না ও দুটি চোখ বলতে চায় । মনে হচ্ছিল সেই সারাটি জীবন সেই
মায়া ভরা চোখের দিকে চেয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে । হৃদয়ের কত আকুলতা , না বলা কথা , কিছু জমানো ব্যথা বিনিময় আর ভালোবাসার রঙ্গীন সব জাল বোনা ।
নিলয়ঃ এইবার বাড়ি ফিরে যেতে হবে অনেক হয়েছে রাত। তসিবা ছোট শিশুর মতো ঘাঁটি মেরে নিলয়ের বুকে মাথা রেখে বসে আছে।
তসিবাঃ প্লিজ আর একটু থাকি।
নিলয়ঃ তুমি থাকো আমি চললাম-----
চলবে--------
বিষয়: সাহিত্য
১৩২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন