সে'কি আসবে ফিরে---?

লিখেছেন লিখেছেন দ্বীপ জনতার ডাক ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:৩৪:০২ সন্ধ্যা

সে'কি আসবে ফিরে----?

দ্বীপ জনতার ডাক

প্রথম----পর্ব

নিলয়ের সঙ্গে তসিবার পরিচয় নিকটতম আত্মীয় হইলেও পূর্বে কখনো এমন করে দেখা হয়নি এবং নিলয়ও কখনো এতোটা ভালো ভাবে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি। গত কিছু দিন আগে পারিবারিক একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন করে যেন দুই জন দুই জনকে প্রথম দেখলো। নিলয়ও বারবার তসিবার দিকে অবলোকন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছু একটা বলার বাক শক্তি যেন হারিয়ে ফেললো তার রূপের মোচনায়। গত কয়েকটি বছরের ব্যবধানে তসিবার শরীর চেহারা পোশাক আশাকে এক অভাবনীয় পরিবর্তন আসল অবাক না হয়ে কি পারা যায়।

নিলয়ঃ দোস্ত শোনা তাহলে- তসিবার রূপের মোচনায় কল্পনার রাজ্যে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে গেলাম নিজের অজান্তে। আর ভাবতে লাগলাম আকাশ থেকে নেমে আসা কোন ডানা কাটা নীল পরী নাতো। নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম না আমি যা দেখছি বাস্তবে দেখছি। সত্যিই সেই ছোট্ট তসিবা। অনুষ্ঠানের বাড়তি আকর্ষণ যেন তার উপস্থিতিতে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল। বারবার তাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম আর নিজের মাঝে তাকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করলাম। সেই দেখাতেই একে অপরকে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে চুপিসারে ধীরে ধীরে মন দেওয়া-নেওয়া। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় প্রাকৃতিক নিয়মে। এই দিকে দিব্যি চলছে দু'জনার ভালোবাসার স্বপ্নের নীল ডিঙ্গি নৌকা পাল উড়িয়ে। দু’জন দু’জনের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হাজারো কাল বৈশাখী জড়ে একে অপরকে ছেড়ে যাবেনা কখনো। প্রতিদিন চলছে সময়ে অসময়ে মোবাইল ফোনে কথোপকথন। হঠাৎ কখনো কখনো নাম্বারে ফোন দিলেই "ওয়েটিং" কিংবা ব্যস্ত পেয়ে উত্তেজনায় কাপে যেন পুরো পৃথিবী। বারবার নাম্বারে কল দিতে থাকি ধৈর্যের বাধ যেন ভেঙে যাচ্ছে একটু অপেক্ষা প্রাণে যে আর সয় না।ঔপাশ থেকে কেউ হয়তো কেটে দিচ্ছে মোবাইল ফোনের লাইন, তখন সন্দেহ দানা আরো প্রবল আকার ধারণ করতে থাকে। মন চাই এই মুহূর্তে উড়াল দিয়ে দেখে আসি কার সাথে কথা বলছে এতো সময় ধরে। নাকি আমার অগোচরে কারো সাথে চুকিয়ে প্রেম করছে। হাজারও প্রশ্নের দানা মনের ভিতর বাধতে থাকে। কেউ কি তাকে নিয়ে সপ্ন সাজাচ্ছে, তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নের বিকিকিনি চলছে এই মুহূর্তে মোবাইল ফোনে। খানিকটা ভারি দীর্ঘশ্বাসের আদান প্রদান। কখনও পোরা পৃথিবী স্থবির। মুহূর্তে যেন সুখের স্মৃতি গুলো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। হতাশার কষ্ট গুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে খানিকক্ষণ বাতাসে। বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ভারি করে তুলছি বালিশের তুলাগুলো। দীর্ঘশাসে কেপে উঠেছে বিছানা, কখনো বা গাল বেয়ে চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। অবশেষে সেই কাঙ্খিত ফোন, শুরু হল কৈফিয়ত, রাগারাগি, বকাবকি। বকাবকির এক পর্যায়ে তোমার আমার রিলেশান এখানে ভ্যাকাব, হঠাৎ মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেওয়া। তারই কিছু ক্ষণ পর মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস স্যরি জান আমি আমার ব্যাবহারে অনুতপ্ত। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না এবং বাঁচতে ও চাইনা পৃথিবীতে। এই পৃথিবীতে আমি তোমার জীবনে এক বিন্দু শিশির কণা হতে চাই না। সূর্যের রশ্মি পাবার আগেই আমি বিলিন হতে চাই না। বিশ্বাস কর জান আমি যেন তোমার সাথে একটু কথা না বললে অন্ধকারের ভিতর নিজেকে হারিয়ে ফেলি। যদি বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করে থাকো তা হলে আমাকে মুক্ত বিহঙ্গ পথ দেখিও। কিছু ক্ষণ চুপচাপ, ঔপাশে একটু চোখে পানি, এই পাশ থেকে চলছে মান ভাঙ্গানোর জোর প্রচেষ্টা, আরো কত যেই সব পাগলামী।

তসিবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে এই বারের মতো মাফ করে দিলাম। ভবিষ্যতে যদি আর কখনো এমন কিছু হয় তাহলে আমি আর তোমার সাথে জীবনেও কথা বলবো না।

নিলয়ঃ আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো এমন হবেনা।

আবার শুরু যত সব ক্যাচাল প্রেম কাহিনী। কখনো আকাশের বুকে, কখনো গাছতলা, কখনো কৃষ্ণচূড়ার মগডালে, কখনো বা মানব শূন্য গহীন অরণ্যে ঘর বাধার স্বপ্ন বোনা। কখনো বা উত্তর অধিকারী নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ। কখনো বা চলছে হিসাব নিকাশ একটা ছেলে, একটা মেয়ে। কখনো বা নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলেমেয়ে নাম করন। কখনো বা মেয়ে ডাক্তার, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর মহা ভবিষ্যত পরিকল্পনা । কখনো এক কথা একশ বার, কখনো বা একটু কান্না একটু হাঁসি বারবাব। সবকিছু পুরিয়া যাচ্ছে কিন্তু ভালবাসার ক্যাচাল কাহিনী যেন হয়েও হচ্ছে না শেষ। এইভাবে চলতে থাকে সারা রাত জট্টিল যত সব প্রেমের হিসাব নিকাশ প্রতিনিয়ত । রাতের অবসানে ভোরের আলো উঠবে ফোটে নতুন আলোর টানে এই কথা বিলকুল ভুলে যায় মগ্ন প্রেমের টানে। পূর্ব দিগন্তের সূর্যের আলো যখন জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মেরে রূমটাকে আলোকিত করলে তখন প্রেমের ঘোর ভাঙে এই বার বুঝি ভোর হল।

চলবে----------

বিষয়: সাহিত্য

১১৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305142
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:৫৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগলো চালিয়ে যান নিয়মিত। অনেক ধন্যবাদ
305785
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩১
দ্বীপ জনতার ডাক লিখেছেন : স্বাগতম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File