"ফ্রীডম অফ স্পীচ" - প্যারিস - সিডনী - পেশোয়ার"
লিখেছেন লিখেছেন এইচ এম শফিক ১৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৩৭:০৪ সকাল
গত একমাসেই মুসলিমরা তিনবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে, সিডনি-পেশোয়ার-প্যারিস, কে জানে সামনে আরও কয়বার শিরোনাম হতে হবে!
প্যারিসের ঘটনা এখন পুরো পৃথিবীর মুসলমানদের দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে। একদল কোন কথা ছাড়াই ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের এইটাই সঠিক রাস্তা।
আরেকদল দাবী করছেন যা ঘটেছে তা ঠিকই ঘটেছে।
দুই একজন বললে কোন সমস্যা ছিল না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এদের সংখ্যা কোটির উপরে। তাঁরা আবার হাদিস কুরআনের উদাহরণও টানছেন।
অল্পবিদ্যা কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটার দুর্দান্ত উদাহরণ এই ঘটনা। এবং একই সাথে অত্যন্ত বেদনাদায়ক!
আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন! আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সবাই জোরে বলেন, "আমিন!"
যার বাংলা অর্থ "তাই হোক!"
শুরুতেই বলে নেই, একজন অপরাধী, সর্বাবস্থায় অপরাধী। একজন খুনি, যেকোন অবস্থাতেই খুনি। সে মুসলিম ছিল নাকি নাস্তিক, নাকি অন্য কোন ধর্মের লোক, এইটা কোন অবস্থাতেই বিচারে আসতে পারবে না। আপনার "দলিল" লাগবে? সুরাহ নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতখানা দেখে নিন, "ন্যায়ের পথে থাকো, যদি তার জন্য তোমার পরিবার, আত্মীয়, এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও যেতে হয়।"
আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ আপনাদের শুনিয়ে দিলাম, এরপরেও তর্ক করতে আসবেন?
উদাহরণ সেই ইহুদি ব্যক্তির যে এক মুসলিমের বিরুদ্ধে মুসলিম বিচারকের কাছ থেকেই ন্যায় বিচার পেয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এটাকেই প্রকৃত ইসলাম বলে। বিচারের ক্ষেত্রে "মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই" কথাটি ভয়েড।
কিন্তু না, প্রথমেই অনেকে বলবেন, "আমাদের নবীজির(সঃ) কার্টুন বানিয়েছে! ওদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড! ন্যায় বিচার না পেয়েই ওরা কাজটা করেছে, এবং ঠিকই করেছে! এইরকম ঘটনা অনেক আগেই হওয়া উচিৎ ছিল.........।"
আবার একদল আওয়াজ তুলবেন, "ফ্রীডম অফ স্পীচ সবার থাকা উচিৎ! সভ্যদেশে এটাই নিয়ম........।"
তাহলে এটা নিয়েও কিছু কথা দ্রুত বলে ফেলা যাক।
"ফ্রীডম অফ স্পীচ" যেই দেশে যেমন ভাবেই চালু থাকুক না কেন, কিছুকিছু ক্ষেত্রে আপনার মুখে তালা ঝুলিয়ে রাখতেই হয়। সভ্য দেশের এইটাই নিয়ম।
যেমন, আপনি কোন কালো মানুষকে "N...." বলে ডাকতে পারবেন না। কোন সমকামী দেখলে "F...." ডাকতে পারবেন না। নাৎজিদের হলোকাস্ট নিয়ে উল্টাপাল্টা কমেন্ট করতে পারবেন না। ভিনদেশী মানুষকে "ইমিগ্র্যান্টস" ডাকতে পারবেন না। এইসব বললে অবশ্যই তাঁরা অফেন্ডেড হবেন, যা সভ্যতার পরিপন্থী।
তেমনি মুসলিমদের সামনেও আল্লাহ অথবা নবীজিকে (সঃ) নিয়ে রসিকতা করা ঠিক না। কারণ নবীজি (সঃ) তাঁদের কাছে পার্থিব যেকোন কিছু থেকে বেশি প্রিয়। উদাহরণ দিলেই টের পাবেন।
ওহুদের যুদ্ধের শেষের দিকে মুসলমানেরা যখন দারুণ মার খাচ্ছেন এবং নবীজির(সঃ) দিকে কুরাইশদের তীর ছুটে আসছে, তখন হযরত সা'দ (রাঃ) নিজের শরীর এগিয়ে দিয়ে বলেন, "আপনি আমার শরীরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করুন (নবীজির (সঃ) ঢাল ছিল না)। তীর যদি বিধে সেটা আমার শরীরেই বিধুক, তবু আপনার শরীর যেন অক্ষত থাকে!"
হযরত খুবেইবকে (রাঃ) যখন মক্কায় কুরাইশরা বেঁধে রেখে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন আবু সুফিয়ান (রাঃ) (তখনও মুসলিম হননি) বলছিলেন, "তোমার কী আফসোস হচ্ছে না এই ভেবে যে তোমার জায়গায় এখন যদি মুহাম্মদ(সঃ) এখানে থাকতো এবং তুমি তোমার বাসায় থাকতে পারতে?"
খুবেইব(রাঃ) জবাব দিয়েছিলেন, "তোমরা আমাকে অসংখ্যবার মৃত্যু দিলেও আমি চাইবো না নবীজির(সঃ) গায়ে এতটুকু কাঁটার আঘাত লাগুক!"
এইরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।
মুসলমানদের কাছে নিজের বাবা মা, নিজের সন্তান এমনকি নিজের থেকেও নবীর(সঃ) প্রতি ভালবাসা বেশি থাকাটা Part of their ঈমান। নাহলে সে প্রকৃত মুসলিমই হতে পারবে না।
কাজেই নবীজিকে(সঃ) নিয়ে রসিকতা করাটা যদি কেউ মনে করে থাকে "ফ্রীডম অফ স্পীচ," তবে সেজন্য রাগ করাটাও তাঁর জন্মগত অধিকার।
যেমন আপনাকে যদি আপনার মাকে নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা শুনাই, গালিগালাজ করি, তাহলে আপনার রাগ করাটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই আপনার অধিকার। সেটাকে ফ্রীডম অফ স্পীচের দোহাই দিয়ে চালিয়ে দিলে একদমই চলবে না। আশা করি পয়েন্ট ক্লিয়ার করতে পেরেছি।
রাগ ওঠাটা দোষের কিছু না, রাগ কিভাবে প্রকাশ করছি - সেটার উপর দোষ-গুণ নির্ভর করে। এইটাই আমার লেখার উদ্দেশ্য।
আমরা যেহেতু নিজেদের "মুসলমান" হিসেবে দাবী করি, কাজেই আমাদের রাগ প্রকাশের ধরণটাও হওয়া উচিৎ ইসলামী নিয়মে। নাহলে লোকে শুধু আপনার দিকেই আঙ্গুল তুলবে না, আমাদের পুরো জাতটাকে নিয়েই প্রশ্ন তুলবে।
ইতিহাস বলছে নবীজিকে(সঃ) নিয়ে ফাজলামি নতুন কোন ঘটনা না। ধর্মপ্রচারের একদম শুরু থেকেই তাঁকে ওরা যাদুকর, মিথ্যাবাদী, লোভি ইত্যাদি অনেক অপবাদ দিয়ে আসছে। কোরআন পর্যন্ত সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। কিন্তু কোরআন একই সাথে নির্দেশ দিচ্ছে, কিভাবে সেগুলোকে সামলাতে হবে। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন ওরা রসিকতা করবেই, ওরা আগের নবীদের নিয়েও রসিকতা করেছে - ওদের পাত্তা দিও না। ধৈর্য্য ধরো। এদেরই একটা সুরাহ মুজ্জাম্মিলের আয়াত নম্বর ১০, মিলিয়ে দেখতে পারেন।
নবীরা (সঃ) পর্যন্ত তাদের ফাজলামি বন্ধ করতে পারেননি, আমরা সেখানে কী?
একদল কা'ব বিন আশরাফের উদাহরণ টেনে বলছেন, "এই লোকটাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল নবীজিকে (সঃ) নিয়ে রসিকতা করার জন্য।"
উদাহরণটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা হচ্ছে। নোমান আলী খানের কাছেও একজন হ্যান্ডসাম যুবক কিছুদিন আগে এই প্রশ্ন করেছিলেন।
তিনি প্রথমে প্রশ্নটা শুনে একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলেন। হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছেন।
তারপর বলেন, "কা'ব বিন আশরাফ একজন কবি ছিল, যে নবীজি(সঃ) সহ মুসলিম নারীদের নাম ধরে ধরে অশ্লীল অরূচিকর কবিতা লিখেছে। কিন্তু এই একই লোক নবীজির (সঃ) খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পর আবু সুফিয়ানের (রাঃ) বাড়িতে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তাঁকে হত্যার ব্যপারে। এখন তুমি বলো, তোমার রাষ্ট্রে, যদি কেউ তোমার প্রধাণমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে, attempt নিতে গিয়ে ধরা পড়ে - তবে তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?"
উদাহরণ আমাদের দেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা চলছে জেনেও চুপ করে ছিলেন, হত্যাকারীরা নাকি এর আগেও অভ্যুন্থান ঘটাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং তিনি তাদের মাফও করে দিয়েছিলেন - ফলাফল "অগাস্ট ট্রাজেডি।"
রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু রুলস আছে। কখনও কখনও শাসককে কঠোর হতেই হয়, নাহলে কিছুই লাইনে থাকেনা।
যাই হোক, কা'ব বিন আশরাফের উদাহরণ যারা বারবার ব্যবহার করছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে হযরত আয়েশার (রাঃ) সহিহ হাদিস বয়ান করছি, তিনি বলেছেন, "নবীজি (সঃ) জীবনেও নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে কাউকে শাস্তি দেননি।"
যেখানে তায়েফের লোকজনদের তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যেখানে মক্কার লোকেদের তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, সেখানে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কা'ব বিন আশরাফ? ভাইরে, অমুসলিম হলেই যদি কাউকে হত্যার নিয়ম থাকতো, তাহলে আপনি আমি আজকে পৃথিবীতেই আসতাম না। আমাদের পূর্বপুরুষদের কেউ না কেউ কখনও না কখনও বিধর্মী ছিলই। ফ্যাক্ট!
যেকোন কিছু অল্প জেনে, বা অর্ধেক জেনে হুটহাট করে কোন সিদ্ধান্তে উপস্থিত হওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
"জ্বর হলে প্যরাসিটামল খেতে হয়" - এই বিদ্যা নিয়ে কেউ যদি ডাক্তারি শুরু করে দেন, তাহলেতো বিপদ। কারণ শরীরের যেকোন ইনফেকশনের একটা লক্ষণ জ্বর আসা। ক্যান্সার রোগেরও একটা অন্যতম লক্ষণ জ্বর আসা। যেখানে আপনার কেমো দরকার, সেখানে আপনি প্যারাসিটামল খেলে চলবে?
সবাই কিছু ইসলামী বই পড়ে নিজেকে ইসলামিক স্কলার ভাবা শুরু করেছেন! ফতোয়া দেয়া শুরু করেছেন। কিভাবে চলবে?
ইসলাম অত্যন্ত লজিকাল ধর্ম। এটিই একমাত্র ধর্ম যা মানুষকে মুক্তচিন্তার অধিকার দিয়েছে। কুরআন নিজেই আহ্বান করছে, কারও যদি ভিন্ন দাবী থাকে, তবে সে সামনে উপস্থিত হোক, "তোমরা সত্যবাদী হলে প্রমাণ সহ উপস্থিত হও।" (২:১১১)
যুক্তি তর্কের জন্য এই ধর্ম পুরোপুরি উন্মুক্ত। ইসলাম জানে, যুক্তি তর্কে একে হারানো একেবারেই অসম্ভব। কারণ ইসলামের মূল শক্তি কোরআনের আয়াতে, তলোয়ারে নয়। এই আয়াতগুলো এতটাই শক্তিশালী যে এর মাত্র কয়েকটি নাযিল হতে না হতেই হাজার বছরের পুরনো আরব সভ্যতার ভিত্তি নড়ে উঠেছিল। তারা যে শুরু থেকেই মুসলিমদের অত্যাচার করতো, মেরে ফেলতো, সেটা এই আয়াতকে ভয় পেয়েই। ওরা জানতো, ইসলাম দাঁড়িয়ে গেলে তাদের ধর্মব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। নাহলে মুসলিমদের ভয় পাবার কী কারণ ছিল? ওদের দলে কারা ছিল? সব গরীব মানুষের দল, বেশিরভাগই যারা দাস-দাসী, এবং আবু বকর(রাঃ) উসমানদের(রাঃ) মতন সমাজের কিছু হাতে গোনা ধনী এবং শান্তিকামী নিরীহ মানুষ!
হযরত উমার (রাঃ) নবীজিকে হত্যা করতে তলোয়ার নিয়ে বেড়িয়েছিলেন। তাঁর চেয়ে বড় কাফির তখন কে ছিল? অথচ মাত্র কয়েকটি আয়াত শুনেই তাঁর জীবন উল্টেপাল্টে গেল। তিনি তলোয়ার এনে নবীজির (সঃ) পায়ে ফেলে দিয়ে কলিমা পড়লেন।
কেউ যদি হযরত উমারকে (সঃ) সেই সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই মেরে ফেলতো, তাহলে হযরত বেলাল (রাঃ) প্রথম প্রকাশ্যে আযান দিতেন কার ভরসায়?
কিন্তু আমাদের মাওলানারা এইটা বিশ্বাস করেন না। যার ফলাফল হচ্ছে আরও ভয়াবহ।
আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক। তসলিমা নাসরিন যখন প্রথম ইসলাম বিরোধী কোন লেখা লিখেছিলেন, পুরো দেশ উঠে পড়ে লেগেছিল তাঁকে হত্যা করার জন্য। তাঁকে দেশছাড়া করা হলো। এতে তাঁর মনে জেদ তৈরী হলো, তিনি ইসলামের আরও বিরুদ্ধে চলে গেলেন। একের পর এক বই লিখতে থাকলেন, মন্তব্য করতে থাকলেন।
দুই পক্ষ্যই এখন সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আমি বলে দেই ফল কী হবে। গোলশূন্য ড্র।
অথচ কেউ যদি প্রথমেই তাঁকে আহ্বান জানাতেন, "তোমার যা যা অভিযোগ আছে তুমি নিয়ে হাজির হও। আমরা তোমার ভুল শোধরাতে চেষ্টা করবো।"
তাহলে আমি নিশ্চিত ঘটনা এত দূর গড়াতো না।
তসলিমা নাসরিন ভুল বুঝেছিলেন বলেই মন্তব্য করেছিলেন। তাঁকে শুধরে দিলেই হতো। এখন তিনি যা করছেন জেদের কারণে করছেন। তাঁর শাগরেদরাও একই কাজ করছে। আর আমরা তাদের বিরুদ্ধে "জঙ্গিবাদী" ব্যবহার করে তাদের জেদ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছি।
এইটা আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা শান্তির ধর্মের লোক হয়েও শান্তভাবে কিছুই চিন্তা করতে পারিনা। অন্যকে কুৎসিত ডাকার আগে আয়নায় নিজেকে একটু দেখা নেয়া উচিৎ।
আপনি যদি বিশ্বাস করে থাকেন, ইসলাম একটি "শান্তির" ধর্ম, তাহলে প্যারিসের ঘটনা শুনেই আপনার মনে খটকা জাগবে। তখন আপনার উচিৎ হবে ব্যপারটি নিয়ে কোন বিখ্যাত স্কলারের সাথে আলোচনা করা। তাঁর মন্তব্য শোনা। দরকার হলে আরও কয়েকজন স্কলারের সাথে সেই মন্তব্য মিলিয়ে দেখা। এবং সবার উপরে এইটা বিশ্বাস রাখা, ইসলাম কোন অবস্থাতেই ভায়োলেন্সকে সাপোর্ট করে না। ফুলস্টপ!
কোন ব্যপারে নিশ্চিত না হলে চুপ করে থাকা উচিৎ। সেটাই সবার জন্য ভাল।
একজন মুসলিমকে জন্ম থেকেই নিজের কাঁধে নবীজির(সঃ) রেপুটেশনের ভার নিয়ে চলতে হয়। তাঁর প্রতিটা কাজে নবীজিকে(সঃ) জাজ করা হয়। তাই তাঁকে অনেক সাবধানে জীবন কাঁটাতে হয়। কেউ কিছু বলল আর অমনি বন্দুক নিয়ে টার্গেট প্র্যাকটিসে বেরিয়ে পড়লো, এমন পাগলামি তাঁকে শোভা পায়না।
যেখানে বিশ্বের বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে বড় বড় গবেষণা করে অন্যান্যরা মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে - সেখানে আমরা এখনও কিছু হলেই বোমা মেরে মানুষদের উড়িয়ে দিচ্ছি। গুলি করে মানুষ হত্যা করছি! স্কুলের বাচ্চারাও আমাদের হাত থেকে মুক্ত নয়। ছিঃ!
আমরা কোন কাজের আগেই এতটুকু চিন্তা করছি না আফটার ইফেক্ট কী হতে পারে।
যে কার্টুন নিয়ে এত তোলপাড়, কয়জন মানুষ সেটা দেখেছিল? আজকে এই ঘটনার পর পুরো বিশ্ব সেটা দেখলো। তারউপর মুসলিমদের সম্পর্কে আবার নতুন করে "জঙ্গিবাদী" ধারণাটা পাকাপোক্ত হলো। আলটিমেট লুজার এখানে কে? আমরা। যদি নবীজিকে (সঃ) নিয়ে ব্যাঙ্গ করা পাপ হয়ে থাকে, তবে তাঁর নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসবাদী কর্ম করাটাও পাপ। বরং বলবো, আরও জঘন্য পাপ!
যারা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে একহাতে রাইফেল, আরেক হাতে কোরআন নিয়ে ক্যামেরায় পোজ দেয়, তাদের চেয়ে জঘন্যভাবে ইসলামকে ব্যাঙ্গ আর কয়জন করতে পেরেছে?
শেষ করতে চাই একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে।
আপনাদের অনেকেই ইসলামের নামে হত্যাকে সমর্থন করে আসছেন। কোরআন হাদিসই যেখানে আপনাদের শেখাতে পারেনি, আমাদের লেখালেখি কিই বা শিখাবে।
তবে খেয়াল রাখবেন, আপনাদের ছেলে মেয়েরা কিন্তু তাই শিখে যা আপনি তাঁদের শেখাবেন। আপনি যদি বলেন নবীজিকে(সঃ) ব্যাঙ্গ করায় এই হত্যাকান্ড (যেখানে দুইজন নির্দোষ মুসলিমও মারা গিয়েছেন) সঠিক, তবে আপনার শিশুও এই ভুল ধারণা মনে নিয়েই বড় হবে। ভবিষ্যতে তারও জঙ্গী হবার সুযোগ শতকরা নব্বই ভাগ! যদি আপনার ছেলে নিউইয়র্কে আত্মঘাতী বোমা হামলা করতে গিয়ে এফবিআইয়ের হাতে ধরা খায়, তখন যেন "ওকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে" ধরণের কথা বলে কান্নাকাটি জুড়ে দিবেন না। গোড়াতেই গন্ডগোল ছিল, সেটা বুঝতে হবে।
আরেকটা উপদেশ, আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে খোলাখুলি এইসব বিষয়ে আলোচনা করুন। যদি কখনও দেখেন, কেউ একজন এইরকম ঘটনা ঘটানোর প্ল্যান করছে, তাহলে সরাসরি পুলিশকে অবহিত করুন। সে আপনার যতই প্রিয় মানুষ হোক না কেন।
মনে রাখবেন, কুরআনের আয়াত, "ন্যায়ের পথে থাকো, যদি তার জন্য তোমার পরিবার, আত্মীয়, এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও যেতে হয়।"
পৃথিবীর সবাইকে আল্লাহ সঠিক জ্ঞান দান করুন, যাতে সবাই শান্তিতে থাকতে পারে।
আবারও আস্তিক, নাস্তিক নির্বিশেষে সবাই জোরে বলেন, আমিন! যার বাংলা মানে, "তাই হোক!"
কপি পেষ্ট
বিষয়: বিবিধ
১১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন