এইড্স আক্রান্ত রোহিঙ্গা নারী এবং বাংলাদেশী যুবকের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ০৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৮:৩২ সকাল
গল্পটা দিয়েই শুরু করি । প্রবাসে থাকা ছেলে প্রস্টিটিউট মেয়েদের সাথে অবাদ যৌন মেলামেশার কারনে মরণব্যাধি এইড্স আক্রান্ত হওয়ার পরে পালিত খালা ছেলেকে একটা চিঠি লিখেছিল “বাবা তু্ই দেশে আসিস না , তুই দেশে আসলে আমাদের কাজের বুয়ার এইড্স হবে, কাজের বুয়ার এ রোগ হলে তোর খালুর হবে, তোর খালুর হলে আমার হবে, আমার হলে তোর কাকার হবে, তোর কাকার মাধ্যমে এটাতে তোর কাকি আক্রান্ত হবে , আর কোন ভাবে তোর কাকির হলে মরণব্যাধি এই রোগ পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়বে” !!
গল্পটি অশ্লীল হলেও একটা চরিত্রহীন সমাজের পুরো চিত্র এর মধ্যে নিহীত ।
রোহিঙ্গাদের কে প্রচন্ড ধার্মিক মুসলিম হিসেবেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে । ঐতিহ্যগত ভাবেও তাদের ইতিহাস তাই বলে । পৃথিবীর যে কোন দেশে সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মের মধ্যে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাস করে তারা ধর্ম প্রাকটিসের দিক থেকে এগিয়ে থাকে প্রতিকুল পরিবেশে থাকার পরেও । বাংলাদেশী মুসলিম এবং বর্মার মুসলিমদের মধ্যেও সে পার্থাক্য স্পষ্ঠ ।
কিন্তু আশ্চার্য যনক বিষয় হল সেক্সচুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিস “এইড্স” রোগী হিসেবে পাওয়া গেছে অসংখ্য বোরকাওয়ালী রোহিঙ্গা নারীদের । আজকের তথ্য মতে এ সংখ্যা পত্রিকার হিসেবে ৩৩ হলেও এর সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা সম্ভব হয়নি । *১
একটা প্রশ্ন এসেই যায় বোরকাওয়ালী এই ধার্মীক মেয়েগুলো কি ভাবে এমন একটা খারাপ রোগে আক্রান্ত হল । তা হলে কি তাদের চরিত্র খারাপ ?? ধর্মের লেবাসে আসা এই মানুষগুলোকে যে বাংলাদেশের লোকজন ব্যাপক সহায়তা করেছে এই বিষয়গুলো জানলে কি তা করতো ?
বেশ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিণ্ট মিডিয়া লিখেছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামাজিক এবং একাডেমিক শিক্ষার অভাবে তারা অবাধ যৌনতায় লিপ্ত । কোন বেরিড়ি মেথড (কনডমে) তারা অভ্যস্ত না থাকায় রোগটি ছড়াচ্ছে !!
আসলেই কি তাই ?? তারা কি অবাদ যৌনতায় অভ্যস্ত ??
একটু পেছনে যাই । বিশ্বের যে কয়টি দেশে এইডসের প্রবনতা বেশী তার মধ্যে মায়ানমার অন্যতম । বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার (WHO)তথ্যমতে দেশটিতে দুই লাখ ৫০ হাজারের উপরে মানুষ মরনব্যাধি এই রোগটিতে আক্রান্ত । যা দেশটির জনসংখ্যার হিসেবে প্রতি হাজারে ৮ জন !! এর মধ্যে সেনা,পুলিশ বাহিনীতেও এর সংখ্যা কম নয় । *২
কিন্তু ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে কট্টর রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই্ সেক্সুয়াল রোগটির ছড়ানোর ইতিহাসটা একটু বলে নেই ।
ধর্ষণকে যুদ্ধে ক্ষেত্রে ধরা হয় একটি অস্র হিসেবে। মায়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদেরকে সমুলে ধ্বংস করতে চায় আরাকান থেকে । আন্তর্জাতিক চাপের কারনে সেটা না পেরে তারা ভিন্ন কৌশলে আগাতে থাকে । অসংখ সেনা আর পুলিশ ঘাটি করে উন্মুক্ত জেলের মধ্যে তাদের কে বন্দী করে রাখে ১৯৬২ সাল থেকে । যেখানে ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সি সব নারীদের কেই পালা করে রাতের বেলা তাদের খোয়ারে (ক্যাম্পে) দিয়ে আসতে হত হাব্বেদের (স্থানীয় রাজাকার) মাধ্যমে । তারা সারা রাত ধরে তাদের কে গণধর্ষণ করতো । কেউ হয়ত পরের দিন ফিরতে পারতো ঘরে কেউবা শেষ নিশ্বাষটা ওই অন্ধকারেই ফেলে হারিয়ে যেত চিরতরে । প্রতি রাতেই তাদের দরকার হত নতুন মেয়ে । এ জন্য কখনবা সেনারাই রাতের বেলা হানা দিত ঘরে ঘরে, ধরে নিয়ে যেত ক্যাম্পে । *৩
এভাবে এইড্স আক্রান্ত ওই নরপশু বর্মী সেনারা মরনব্যধী এইচআইভি জীবানু রোহিঙ্গা নারীদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিত গণধর্ষণের মাধ্যমে । বর্মী সেনারা শুধু মাত্র প্রেগনেন্সি নারীদের এই ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিত যার জন্য রোহিঙ্গা নারীরা সারা বছর গর্ভবতি হয়ে থাকতো । একি ঘরে অসংখ সন্তান এটা যে শুধু তাদের শিক্ষার অভাবের জন্য বিষয়টা আমরা এভাবে জানলেও আসল সত্য টা ওখানে ।
সভ্যতা বিধ্বংসী পারমানবিক বোমার চেয়ে ভয়ংকর বলেও অভিহিত করা হয় ঘাতক ব্যাধি এইডসকে । আর সে লক্ষে নিয়েই তারা নারীদের গণধর্ষণ করতো । যা স্ল পয়েজনিং এর পরিবর্তে কুইক পয়জনিং হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস করে দিত রোহিঙ্গাদেরকে ।
ছেট্ট একটি ইতিহাস জেনে নেই । এইড্স এবং সিফিলিস দুইটা রোগের জীবানুর নামটা আলাদা হলেও প্রায় কাছাকাছি কারনে রোগ দুটি ছড়িয়ে থাকে । দুইটি রোগই উপমহাদেশে ছড়িয়েছে ইউরোপের কাছ থেকে । ষোড়শ শতকে পর্তুগীজদের (যাদের আরেক নাম ফিরিঙ্গী) মাধ্যেমে এই রোগটি ছড়ায় ঠিক তেমনি উনিশ শতকের শেষের দিকে এইড্স ছড়ায় ওই ইউরোপিয়ানদের মাধ্যমেই, *৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রতিপক্ষের নারীদের শরীরে এইচআইভি জীবানু ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ধর্ষণ করত যে কাজটাই বর্মী সেনারা করেছে রোহীঙ্গাদের সাথে ।
এখন রোহিঙ্গাদের এইড্স নিয়ে আমরা যে ভাবে আতঙ্কিত তাতে আমার একটা প্রশ্ন ঘুর পাক খায় আমরা এতটা আতঙ্কিত কেন ? এটাতো কোন ছোঁয়াচে রোগ না যে সংস্পর্শে গেলে বা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় । নাকি আমাদের চরিত্র বিদেশী সেই বাঙ্গালী যুবকের মতই……………….
নাকি বললে ভুল হবে কারণ খবরে বের হয়েছে পরিবারের সবাই হারিয়ে কোন রকম জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভোনে পতিতাবৃত্তির অফার করেছে অনেককে । এর উত্তরে ওই মেয়েদের উত্তর ছিল “জীবন বাচাতে তোমাদের দেশে আসছি দেহ বিক্রি করতে নয়” *৫। সরকার দলীয় এক যুবনেতা তো গনিমতের মাল ভেবে রোহিঙ্গা নারীর পলিথিনের ছাপড়ায় জোর করে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়ার খবরও বেড়িয়েছে *৬ । ১৪ দিন পয্জন্ত না খেয়ে পায়ে হেটে (*৭) আসা কন্যা জায়া জননীদের যখন খাবারের বিনিময়ে সেক্সের প্রস্তাব দেয় তখন করার কিছুই থাকে না । অভুক্ত মানুষের জীবন বাচাতে যখন “গু” খাওয়ার বৈধতা আছে সেখানে এটা অনেক গেীন । বৃটিশ আমলে মঙ্গাকবলিত দেশের উত্তর এলাকায় শুধু মাত্র বেঁচে থাকার অভাবে দেহ বিলানোর ইতিহাস তো আমাদের জাতী সত্তার সাথেই মিশে আছে । ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের সময় শুধু মাত্র পরিস্থিতির কারনে ১০ লাখ নারীকে প্রথমে অপহরণ এর পরে তাদের দ্বারা পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে । অনেকে দীর্ঘদিন থেকে ধর্ষণের শিকার হয়ে নিজের ইচ্ছাতেই আর নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করেনি ।
গতকাল রয়টার্সের রিপোর্ট এ দেখলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫০০ নারী দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে নিউজটির সত্যমিথ্যা নিয়ে প্রশ্ন অনেক *৮। আমাদের দেশের এত এত মিডিয়া থাকতে কেন বিদেশের নিউজে আসতে হবে । প্রশ্ন হল এই দায় কি শুধু তাদের ? আমাদের সমাজ কি মোটেও দায়ী না ? যারা খাবারের বিনিময়ে অফার করে সেক্স!! রয়টার্সের খবরে আরো পড়লাম যে তাদের যারা খদ্দের তারা বাংলাদেশী !!! এবং তারা কনডম পড়তে চায় না । তা হলে এই বাংলাদেশী যুবকরা তো ওই বিদেশী যুবকদের মতই । এই যুবকরা অনেকেই বিবাহীত তারা ওখানে যৌনতা করে তার স্ত্রী/পরিবারের কাছেও আসবে এবং এইচআভির মরণ ব্যাধি এই রোগ ছড়িয়ে দিবে পুরো সমাজে । গল্পের শুরুর সেই প্রবাসী বাংলাদেশী ছেলের মতই
তথ্যসূত্র :
*১ http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2017/10/18/131989.html
*২ http://www.bd-pratidin.com/rohingya-tragedi/2017/10/15/272275
*৩ http://pbd.news/lead-news/15691/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A3%E0%A6%A8%E0%A6%BE
*৪ বাংলাপিডিয়া
*৫ http://www.somoyerkonthosor.com/2017/09/25/171918.htm/amp
*৬ http://www.bd-pratidin.com/rohingya-tragedi/2017/10/07/270205
*৭ https://www.jugantor.com/online/country-news/2017/09/12/57757/%E0%A7%A7%E0%A7%AA-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%81%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A7%AD-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B9-%E0%A7%A7%E0%A7%A9-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE
*৮ http://www.kalerkantho.com/home/printnews/557571/2017-10-25
বিষয়: বিবিধ
৮৩৬৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুরুতেই যদি বোম্বিং করা যেত তাহলে আরাকান এখন বাংলাদেশের হয়ে যেত।
বাংলাদেশের রক্ষনাত্মক খেলার বিপরীতে মায়ানমার এখন অল আউট আক্রমনে চলে গিয়েছে।
এরা বেচে থাকে তবে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, এদের ব্লাড সেল গুলো নস্ট দিন লাগে ততদিন
জানেন তো এইডস্ বেশী ছড়ায় সমকামীতার দ্বারা (হোমোসেক্সুয়াল)?
অনেক দিন পরে এলেন ব্লগ পাড়ায়। ভালো লাগল।
আর মাথা ভন ভন করার কি কারন ভাই??
দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা নারী কিন্তু ধর্ষন এর শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে এসে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন