বাংলাদেশের রেলে বসে চোখ লাল করে ইন্ডিয়ার শিখ কর্মীর হিন্দীতে হুংকার "'আপকা টিকেট দিখাইয়ে'"!
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ৩০ জুন, ২০১৬, ০১:৫৫:১৪ রাত
রাজশাহী যাব, ইন্ডিয়া থেকে আমদানী করা টিনের তৈরি Rajshahi Express-এ চেপে বসলাম। ট্রেনের ভেতরে-বাইরে বগির বডিতে Indian Railway লোগো লাগানো আছে, বাংলার বদলে হিন্দিতে নির্দেশনা
আছে, ভিতরে হিন্দুস্তানি কর্মী। এইসব দেখেও আমি চুপচাপ, কারণ প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। ট্রেনের ভেতরে পুলিশকে ক্ষুব্ধ মেজাজে পায়চারী করতেও দেখলাম।
প্রতিক্রিয়া দেখালেই সাথে সাথে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবে বলে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান।
যাই হোক, বসে আছি। আধা ঘন্টা বাদে টিকেট চেকার আসলো। ভদ্রলোক শিখ, কীরকম পেঁচিয়ে থাকা গোঁফ দাড়ি, মাথায় পট্টি বাঁধা। এসেই হরমর করে বলল, । চোখ লাল করে "'আপকা টিকেট দিখাইয়ে'"! 'হিন্দি বুঝি না বাংলা বলেন'- কথাটা বলতে চাইছিলাম, কিন্তু খুব একটা সাহস পেলাম না। কারণ এটা ২০১৬'র বাংলাদেশ, বেশী হাউকাউ করলে কী না কী হয়।
জবাব দিলাম, 'আমার টিকেট আমার বন্ধুর কাছে, সে ক্যান্টিনে গেছে'। ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, 'কেয়া
বোলা, আপকা বাত সামঝা নেহি, হিন্দিমে বোলিয়ে প্লিজ।'
মেজাজ এবার প্রচণ্ড গরম হয়ে গেল, আমার দেশে ব্যাটা আমাকে বলে কিনা ভিন দেশী ভাষায় কথা বলার জন্য? আমি গালিগালাজ কিছু জানি না তা না, কিন্তু অভ্যস্ত না বলে গালি উহ্য রেখে বললাম, 'আপনি
বাংলা না বুঝলে আমার বাপের কী? যেই দেশে চাকরি করেন, সেই দেশের ভাষা শিখে আসবেন না? যত্তসব!'
ব্যাটা বেয়াদবির সীমা অতিক্রম করে এবার আমাকে পুরো বগির সব প্যাসেঞ্জারের সামনে গলা উঁচিয়ে বলল, 'আপ উঠিয়ে, নিকালিয়ে ট্রেন সে, টিকেট নেহি দেখাতা, ফির মেজাজ দিখাতা, সালা বাঙ্গালী'।
দেখলাম, পুলিশ আসছে। অবস্থা সুবিধার মনে হল না।
বন্ধুকে ফোন দিলাম, 'কই তুই? এখানে একটু ঝামেলা হচ্ছে তাড়াতাড়ি আয়'। বন্ধু ঝড়ের গতিতে আসল। ততক্ষণে পুলিশও আমার সামনে। বন্ধু আসা মাত্র তাকে ঘটনা সংক্ষেপে ব্রিফ করলাম। সে ত্বরিৎ
গতিতে টিকেট বের করে চেকারকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করতে লাগল।
কিন্তু ব্যাটা এখনো রেগে আছে, বন্ধু ভুলভাল হিন্দিতে তাকে বোঝালো, 'স্যার, হামারা বন্ধু হিন্দি নেহি বুঝতা, আর ও নানা কারণে মেন্টালি স্যাড, তাই প্লিজ এবারকার মতো মাফ কিজিয়ে'।
ব্যাটা রাখঢাক ছাড়া সরাসরি বলল, 'ইস ট্রেনমে চাড়না হোতো হিন্দি শিখকে আনা, সামঝা?'। 'জ্বী স্যার,
সামঝা সামঝা' বলে বন্ধু তাকে বিদায় করল। কিন্তু পুলিশ বিদায় হয় না, তারা 'কিছু' চায়, ঈদের সময়, তাই
ওদেরকে যেন একটু 'খুশি করে' দেয়। পরোক্ষ ভাবে এটাও বোঝালো, যদি 'খুশি করে' না দেয়, তাহলে টিকেট চেকারের সাথে বেয়াদবির বড় ধরণের মাশুল দিতে হতে পারে। বন্ধু 'খুশি করে' দিল।
কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না। সিটে বসে চোয়াল শক্ত করে শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে ভাবছি, 'এ কোন শকুনের কবলে বাংলাদেশ।'
এটি রুপক হলেও খুব শিঘ্রই এমন পরিস্থিতির সামনে পড়তে পারে প্রিয় মাতৃভুৃমি । সুতরং "জাগো বাহে, কুন্ঠে সবাই"
#A_Fictional_Story
লিখেছেনঃ Abdullah Russel
বিষয়: বিবিধ
১০৭৭৪৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই যে আমার টিকেট : यहाँ मेरा टिकट है (ইয়াহা মেরা টিকেট হ্যায়)
ভারতীয় রেল খুব চমৎকার সেবা দিচ্ছে : भारतीय रेल सेवा बहुत अच्छा है (ভারতীয় রেল সেবা বহুত আচ্ছা হ্যায় )
বাঁচতে হলে শিখতে হবে । অনেক আগে সোনার বাংলা ব্লগে জামায়াতবিরোধী দুষ্টু মেয়ে নামে একজন ব্লগার ছিলেন - জামায়াতকে প্যাঁদানী দেওয়া ছাড়াও উনি হিন্দী শেখার পোস্টও দিতেন । এরকম দূর্যোগের ঘনঘটা যখন দেখা দিয়েছে তখন ব্লগে এরকম কাউকে আশা করছি । যে কি না আমাদের হিন্দী ভাষা বুঝতে এবং বলতে শিখাবে।
শ্রিঘ্রই লোষ্ট্র ভাষায় কথা না বললে এই অবস্থাই হবে!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন