কৃষ্ণ কলি থেকে মুহাম্মাদ আলী এবং এক টুকরো বাংলাদেশের স্মৃতি (ভিডিও)
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ০৪ জুন, ২০১৬, ০৪:২৬:৩২ বিকাল
পূর্বপুরুষ এসেছিলেন আফ্রীকা থেকে আমেরিকাতে দাস হয়ে । ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে (আলী) আফ্রিকান-আমেরিকান মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ক্যাসিয়াস মার্কাস ক্লে সিনিয়র ছিলেন সাইনবোর্ড বিলবোর্ড পেইন্টার, আর মা গৃহিণী।
বর্ণবাদী আমেরিকাতে সাদা কালোর বিভেদ যখন চরমে তখন আলীর সৈসব । একবার এক শেতাঙ্গদের হোটেলে নাস্তা করতে গেলে তাকে বলে বের করে দেয়া হয় । ইসলাম তখনও ইউএস এ সেভাবে মানুষ জানেনা খুব একটা । যারা ছিল তাদের দেখেই অনুপ্রাণিত হতে থাকেন আলী । পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই কোন বর্ণবাদে বিশ্বাস করেনা দেখে তিনি মুগ্ধ হন ।
আলী ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।
খ্রিস্টান নাম ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে ত্যাগ করে মুহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করলে অনেকেই সেসময় ভ্রুকূটি করেছিলেন। কিন্তু শুরুর দিকে মুহাম্মদ আলীর ইসলামী বিশ্বাসে একটু জটিলতা ছিল।
কিংবদন্তী বক্সার মুহাম্মদ আলীর বর্ণিল জীবনে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিলো তার ধর্মবিশ্বাস। আধুনিক যুগের ইতিহাসে মুহাম্মদ আলীই সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি যিনি খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
তবে পরবর্তীকালে তিনি তাদের সংশ্রব ত্যাগ করেন। তিনি কোরআন অধ্যায়ন করতে থাকেন এবং ১৯৭৫ সালে সুন্নি ইসলামের অনুসারীতে পরিণত হন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তিনি সূফীবাদের সাথে সম্পৃক্ত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের রোডস কলেজের ধর্ম শিক্ষা বিষয়ক প্রফেসর ইয়াসির কাদি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মার্কিন মুসলিমদের ওপর মুহাম্মদ আলীর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কাদি লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার পেছনে আলীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর নাম যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন’।
তিনি আলীর ‘রাজনীতি সচেতনতা’ ও ‘সত্যের প্রতি অবিচল আস্থা’রও প্রশংসা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখতে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মুহাম্মদ আলী। সম্প্রতি রিপাবলিক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য করলে মুহাম্মদ আলী ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন।
কিংবদন্তী এ বক্সারের বক্সিংয়ে আসাটা কিন্তু অনেকটাই নাটকীয়। ১২ বছর বয়সে আলী এক সাইকেল চোরকে ধরে ঘুসি মেরেছিলেন। আর এটা দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলেন লুইসভিল থানার পুলিশ অফিসার জো মার্টিন। তিনিই আগ্রহী হয়ে আলীকে বক্সিংয়ের কোচিং দেন।
বক্সিং রিংয়ে তাঁর হাত দুটো চলত বিদ্যুৎগতিতে। অনেকে বলেন, এর চেয়েও বেশি চলত মোহাম্মদ আলীর মুখ। গ্লাভস হাতে ঘুষি দেওয়ার আগে কতজনকে স্রেফ কথায় ঘায়েল করে দিয়েছেন কিংবদন্তি বক্সার। প্রবল পরাক্রমশালী সেই দুটি হাতের জোর হারিয়েছিলেন অনেক আগেই। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছিলেন স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তিও। এসব রোগবালাই নিয়েই হাসপাতালে নিত্য আসা-যাওয়াও চলছিল। ৭৪ বছর বয়সে ভোগান্তিই তো!
১৯৬৪ সালে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে সনি লিস্টনকে হারিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন ২২ বছরের ক্যাসিয়াস ক্লে। পরের প্রায় ২০ বছর বক্সিংয়ের রিংয়ে রাজত্ব করেছেন বিশাল দাপটের সঙ্গে, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী! জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’, ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’, জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গল’ সহ আরও কত স্মরনীয় লড়াই।
শনিবার (০৪ জুন) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর দেয় ।
মুহাম্মদ আলী ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে তার কোটি কোটি ভক্ত।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসেন। তখনকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আতিথিয়তা সংবর্ধনায় মুগ্ধ হয় বিখ্যাত মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, রূপময় বাংলাদেশের রূপ দর্শনে বিমোহিত আমি- ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশে ঘুরে আসুন!‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সাথে তিক্ততার জের ধরে তিনি বলেছিলেন- ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে তাড়িয়ে দিলে কী হয়েছে, বাংলাদেশ তো আছে!’
তাদের সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই মুষ্টিযোদ্ধা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
https://www.youtube.com/watch?v=9-NKvCj5uUM
মাঠে ও মাঠের বাইরে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন দারুণ প্রভাবশালী একজন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রাটেড তাঁকে সম্মানিত করেছিল গত শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে। বিবিসি চোখে হয়েছিলেন শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। আর সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকের কাছে তো তিনি সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদই। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ নামটা তো সে কারণেই!
মৃত্যু তাঁকে অন্য এক ভুবনে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুবনের তিনি তাঁর কীর্তি দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।
বিষয়: বিবিধ
২৬৭৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নেশন অব ইসলাম মানে ইসলাম না। ওদের বর্তমান ইমাম লুইস ফেরেকান।
কোরানের কিছু অংশ এবং বাইবেলের কিছু অংশ মিলে ওদের ধর্ম। ওদের কর্মীদের সাতে প্রতিদিনই দেখা হয়। প্রকৃত ইসলামে ফিরে আসার দাওয়াত দেই। বিরাট অংশ ফিরে এসেছে ইমাম
W. Deen Mohammed এবং Malcolm X এর মাধ্যমে। যদিও এরা দুজন না ফেরার দেশে চলে গেছেন। অনেক বছর আগে।
নেশন অব ইসলাম থেকে আলী রিয়েল
ইসলামে ফিরে এসেছেন।
০ এই একটা কথাই বাংলাদেশীদের হৃদয় জয় করার জন্য যথেষ্ট
দেশে দেশে ফায়দা লুটতে অযথা যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখতে পারঙ্গম আমেরিকা তাকে জরিমানা+জেল+ব্যান করেছিল ভিয়েতনামে মানুষ মারতে যেতে চান নি বলে ।
এটা এখন দেখার বিষয় খৃষ্টান+বর্ণবাদী+ইসলামবিদ্বেষী আমেরিকানরা কিভাবে মো'হাম্মাদ আলীকে কবরস্থ করে।
শুনলাম আন্তধর্মীয় শেষকৃত্য নাকি হবে ?
http://epaper.prothom-alo.com/
এটা তার প্রাণের ধর্ম ইসলামের প্রতি তাচ্ছিল্য স্বরুপই মনে করি এবং আমার আশংকা হচ্ছিল এরকম কিছু একটা তারা করবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন