গোলাম আজমের রুপরেখা বাস্তবায়ন হল বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, তিউনিশিয়ার পর তুরস্কেও

লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ২১ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩৯:৩৫ রাত



বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নন্দিত এবং নিন্দিত একটি নাম গোলাম আজম । আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে চিনি না । খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি । তবে তার লেখা অনেক বই পড়েছি । তার মেধার তুলনা তার বই । ছোটবেলা থেকেই আর নয় জন বাংলাদেশীর মত আমিও তাকে ঘৃণা করেই বড় হয়েছি হলুদ মিডিয়ার কল্যাণে । “আর নয়জন” বললাম এ কারনে দশজনের একজন তার বা তার আদর্শের পক্ষে ছিল । ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” এর এক জরিপ ছিল এমন যে “শতকরা ২৫ জন জামায়াতের সমর্থক বাংলাদেশে” ২০০৯ এর পরে তাকে/তাদের সম্পর্কে জানার সুজুগ হয় আমার । এখনও কম বেশী জানার চেষ্টা করছি । আমি সব সময় বিতর্কিত মানুষকে পছন্দ করতাম যারা দেশ ব্যাপি বিশ্ব ব্যাপি বিতর্কিত এমন সব লোক । আমার লজিক পৃথিবীর সব বহুল বিতর্কিত ব্যক্তিরাই ছিল জ্ঞানী , স্বরণীয়, বরণীয় । সেটা হিটলার থেকে মুছোলিনী, চেঙ্গিস খান থেকে নেপোলিয়ান, শেখ মুজিব থেকে গোলাম আজম ।

আজকের বিষয় গোলাম আজম । মেধাবী চৌকস ও অভাবনীয় নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন ক্ষণজন্মা মানুষটি ১৯২২ সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সম্পৃক্ত হন ছাত্র আন্দোলনের সাথে। ১৯৪৭-৪৮ ও ৪৮-৪৯ সালে পরপর দু’বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়ে পাকিস্তান সরকার দ্বারা কারা নির্যাতিত হন। এই মহান নেতা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শেখ মুজিব কর্তৃক ’৬৬ সালের ছয় দফা দাবি তৈরিতে অংশ নেয়া ২১ সদস্যের অন্যতম।

১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে যোগদান করেন জামায়াতে ইসলামীতে এবং প্রত্যক্ষভাবে শুরু করেন রাজনৈতিক জীবন। অখ- পাকিস্তানে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কপ (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি) পিডিএম (পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট) এর সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। , ডাক (ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি) ইত্যাদি আন্দোলনে জনাব শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য সকল দলের নেতাদের সাথে অংশগ্রহণ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৪ সালেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল ।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তাকে ২৭ নবেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি সংবলিত একটি ঐতিহাসিক স্মারকলিপি প্রদান করা হয় যার নেতৃ্ত্ব দেন গোলাম আজম ।

তার ছোট্ট একটা বর্ণনা দিলাম এ কারনে তার সত্য সম্পর্কে আমরা খুব কম জেনেছি । ৯১ বছর বয়সে ৯০ বছর সাজা পাওয়া এ মানুষটি সম্পর্কে জানা উচিৎ আমাদের নতুন প্রজন্মের ।

৭১ এর মহান মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে তাকে সব চেয়ে বিতর্কিত হতে হয়েছে । যারা ৪৭ এর দেশ ভাগ দেখেছে । দেখেছে বিশাল ভারতের নোঙরামি । কিভাবে ছোট ছোট দেশ গুলোকে নপুংশুক এর মত গিলে খেতে (উদা: স্বাধীনদেশ "সিকিম") তাদের পক্ষে ৭১ এ সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল । ১৯৪ বছর ইংরেজদের কাছে পরাধীন থাকার পর যে মুসলিমরা আলাদা দেশ পেল সে দেশ আবার হাত ছাড়া হয়ে যাবে , ভাগ হয়ে যাবে । এটা মানতে পারছিল না তারা । যেমন মানতে পারছিল না সদ্য পাওয়া নতুন দেশ পাকিস্তানের সাশকদের অত্যাচার ও । ইন্দিরা গান্ধিরা যখন বার বার এ কথা বলে বেড়ােতা সভা সমাবেশে " মাথার এক পাশে ব্যাথা থাকলে বাঁচা জায় কিন্তু মাথার দুই পাশে ব্যাথা নিয়ে ঘুমানো মুশকিল" ভারতের দুই পাশে দুই মুসলিম দেশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান কে উদ্ধেশ্য করে ছিল এমন বক্তব্য

তার জানাজা নামাজের দিন গিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একজন মানুষের এমন শোক মিছিল দেখে আমার মত অবাক হয়েছিল এ দেশের সকল গনমাধ্যম, বিশ্বমিডিয়া ।

বহুল বিতর্কিত ছিল তার অভিযোগ । ট্রেয়াল দেয়া শাক্ষি । ৪৩ নাম্বার আসামির যদি ৯০ বছর সাজা হয় তা হলে বাকি ৪২ জনের নামও কেন জাতি জানেনা । নতুন প্রজন্মের কাছে আজীবন এটা কৌতুহল থেকে জাবে আ,লীগ সহ তার বিরোধীর কাছে । ২০১২ তে গোলাম আজম যুদ্ধাপরাধীর আসামি হলে । ৯৪ তে কিভাবে আ, লীগের কাছ থেকে মন্ত্রীর প্রস্তাব পাঠায় । কি ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আবদুস সাত্তার কে জায়নামাজ, তসবি দিয়ে কদমবুচি করতে পাঠায় খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা । আরো অসংখ প্রশ্ন হয়তো মাথায় আসবে নতুনদের । যার উত্তর হয়তো কেউই দিবে না ।

১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল । একটি সুষ্ঠ পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য যখন কোন ফর্মুলাই কাজে আসছিলনা । তখন গোলাম আজম কেয়ারটেকার পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন । কিছুটা বিরোধীতা থাকলেও একটা পর্যায় সকলেই বলতে বাধ্য হন এর থেকে ভাল দ্বিতীয় কোন পথ নেই । দেশে বিদেশে উচ্ছসিত প্রসংশা পায় । যারা একটা সময় এক সাথে আন্দোলন করে কেয়ারটোকার পদ্ধতি চালু করলেন আবার সেই তারাই তাদের স্বার্থে সেটার বিলুপ্তি করে দেন । যার খেসারত আজো দিচ্ছে বাংলাদেশ । যে গণতন্ত্র উত্তরণে ৯০-এ তার কেযারটেকার পদ্ধতি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির দিশা ।

কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথিকৃত মনে করা হয় বাংলাদেশকে। এ ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

আওয়ামী লীগ এ ব্যবস্থার জন্য কৃতিত্ব দাবি করলেও এই দলটিই আবার ব্যবস্থাটি বাতিল করে দিয়েছে, যার জের ধরে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

আওয়াম লীগ সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিলেও নেপাল, পাকিস্তা তিউনিশিয়া সহ বহু দেশই এখন এ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ এই তালিকায় যোগ হচ্ছে তুরস্কের নাম।

ড.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর একটি লেখা পড়ছিলাম “যে দেশে গুণিদের কদর করতে জানেনা, সে দেশে গুণি জন্মে না” ড. শহিদু্ল্লাহ নেই তার কথা আছে । গোলাম আজম নেই তার দেখানো পদ্ধতিতে আজো সমাধান খুঁজে পায় বিশ্বের বিভিন্ন্ প্রান্তে ।

বিষয়: বিবিধ

৩৭৯৭১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

337393
২১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:০৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:০২
279068
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ধন্যবাদ কষ্টকরে পড়ার জন্য , বন্ধুদের ও জনিয়ে দিন অজানা সব তথ্য
337395
২১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:২৫
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম।
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:০৩
279069
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ধন্যবাদ কষ্টকরে পড়ার জন্য এ,এস,ওসমান
২২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
279207
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : ভাই এবার মওদুদী সম্পর্কে লেখলে একটু খুশী হতাম।
337415
২২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:২৭
মুক্ত কন্ঠ লিখেছেন : ভুলে যাওয়া কিছু বিষয় আবারও জানলাম। কিছু সত্য নতুন করে জানলাম।
অনেক ধন্যবাদ তথ্যবহুল লেখার জন্য।
২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৭
279189
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ধন্যবাদ
337440
২২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৮:২৪
রক্তলাল লিখেছেন : বাংলাদেশের আর কতজন রাজনীতিবিদ আছেন যারা গোলম আযমের মত বই লিখতে পেরেছেন?
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা "যদি" বিতর্কিতও ধরি, তারপরও অন্যান্য সময়ে তার রাজনৈতিক ভূমিকা কত সমৃদ্ধ তাকে নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করলেই পাওয়া যায়।
নীচের ছবিতে ১৯৭০ সালে মুজিবের সাথে মওদুদীকে দেখা যাচ্ছে -


২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৮
279190
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে , এমন একটা ছবি খুজছিলাম
337462
২২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৮
279191
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
337466
২২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:৪১
মোঃ আবদুর রহিম লিখেছেন : ড.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর একটি লেখা পড়ছিলাম “যে দেশে গুণিদের কদর করতে জানেনা, সে দেশে গুণি জন্মে না” ড. শহিদু্ল্লাহ নেই তার কথা আছে । গোলাম আজম নেই তার দেখানো পদ্ধতিতে আজো সমাধান খুঁজে পায় বিশ্বের বিভিন্ন্ প্রান্তে ।
২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৯
279192
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : একদম তাই , ধন্যবাদ ভাই
337484
২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:২৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওনার চিন্তা-চেতনা জাতির কল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিল। আল্রাহ উনাকে জান্নাতে দাখিল করুন..
২২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৯
279193
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : আমিন , আল্রাহ উনাকে জান্নাতে দাখিল করুন..
337579
২২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২
আবু মারইয়াম লিখেছেন : I stayed in Nepal more than3 years. I Did't see a single activity of JI or any islamic party something like this.
337643
২৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:৩০
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : বাইরে যতই গ্রহণ করুক লাভ নেই.....! দেশে????

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File