একটা মেয়ের কথা জানি, হঠাৎ একদিন স্কুল মাঠে...

লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ০২ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৩০:০৫ রাত



একটা মেয়ের কথা জানি, তার হঠাৎ একদিন ঋতুস্রাব হয় স্কুল মাঠে।

পিটি স্যার সবাইকে দাঁড় করিয়ে লেফট রাইট করাচ্ছেন, হঠাৎ মেয়েটি টের পায় কিছু একটা ঘটে যাচ্ছে। বিব্রতকর অবস্থাটি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যখন তার সাদা কামিজের উপর থেকেই রক্ত দেখা যাচ্ছে !

অন্য একটি মেয়ের কথা বলছি। শীতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে হঠাৎ গাড়িতে প্রথমবারের মত ঋতুস্রাব ঘটে গেল ! তার পরনে ছিল নীল শর্ট স্কাট। বয়স ছিল ১৩।

প্রচণ্ড ভয় প্রচণ্ড কেঁদে ফেলার মত অস্বস্তিততা নিয়ে সে চুপচাপ গাড়িতে বসে ছিল। মা' কে কিছু না বলার পরেও মা বুঝে ফেলেছিলেন। তিনি গাড়ি সাইড করে তার ওড়না দিয়ে মেয়েটিকে ঢেকে রাখলেন। সবার সামনে কেমন লজ্জায় মরে যাবার মত একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতা হল - এটি মনে করে এখনও তার শরীর কেঁপে উঠে !

একটি ছেলে হঠাৎ এরকম কোন ঘটনার সন্মুখিন হলে অবশ্যই সে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিত। মেয়েরা এরকম না। তারা আগলে রাখতে জানে। ধৈর্য ধরতে জানে। কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের কথা নিজেকে বলার এক অদ্ভুদ নিয়ম শিখে ফেলে তারা !

...প্রত্যেকটি মেয়ের এরকম অসংখ্য ইতিকথা থাকে। সব কথা বলে ফেলার পরও এরকম অসংখ্য কথা তারা বলতে পারে না।

একটি জিনিস মাঝে মাঝে আমাকে খুব লজ্জায় ফেলে দেয়। যে ব্যাপারটি নিয়ে মেয়েদের গর্ব করার কথা ছিল - বুক চিতিয়ে বলবার কথা ছিল - আমরা নারীরাই জন্ম দেই পুরুষদের ! সেই ব্যাপারটিই কিনা তাদের লজ্জায় মেরে ফেলে !

ফার্মেসীতে ভিড়ের হেলায় এক গাঁদা পুরুষের মাঝে একটি মেয়ে স্পষ্ট গলায় বলতে পারে না - সে ন্যাপকিন কিনতে এসেছে। সে অপেক্ষা করে ; কখন মানুষ কমবে। দোকানদার ( সবাই না ) যখন জানে সে এই জিনিস কিনতে এসেছে তখন কেমন করে যেন তাকায় ! কীভাবে যেন শুয়রের মত করে হাসে !

ঋতুস্রাবের মত সাধারণ একটি বিষয়কে আমরা খুব নিষিদ্ধ মনে করি। বাংলাদেশের প্রায় মেয়েদের রমজানে পিরিয়ড হবার পরেও সবার সাথে এক সাথে বসে সেহেরী খেতে হয়। যেন কেউ বুঝতে না পারে। রোজা রাখতে না পেরেও সারাদিন না খেয়ে থাকে এরকম মেয়ের সংখ্যা প্রচুউউর !

এরপরেও মেয়েটিকে আমরা মুক্তি দেই না। 'রোজা কয়টা রেখেছো' জাতীয় প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করতে আমরা ছাড়ি না।

কী সাংঘাতিক একটি অপরাধ আমরা দিনের পর দিন করে যাচ্ছি ভাবা যায় ? ঋতুস্রাব এখানে নিষিদ্ধ ; খৎনা হলে কমিউনিটি সেন্টারে লোকজন নিয়ে উৎসব করা হয়।

নুনুর অগ্রভাগের চামড়া কেটে ফেলার মত ঘটনা হয় উৎসবের !! আর একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেবার অংশবিশেষ ঋতুস্রাবের মত ঘটনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে - সেটি হয় গোপন লজ্জাকর !

আমরা ভাবি ব্যাপারগুলো একান্ত মেয়েদের। ছেলেদের না জানলেও চলবে। মেয়ের মা এক সময় মেয়েকে আড়ালে ডেকে বুঝিয়ে বলবে। ব্যাস কাজ শেষ। আসলে ব্যাপারটি এরকম না।

আপনার ছেলে কিংবা ছোট ভাইকেও এই ব্যাপারটি বোঝাতে হবে। তা নাহলে তারা এই নিয়ে চুপিচুপি কথা বলবে। এবং তারাই আশে পাশের কোন মেয়েকে বিব্রত করতে ছাড়বে না।

তাকে জানাতে হবে - দেখো একটি মেয়েকে মা হবার জন্য কত সংগ্রাম করে যেতে হয়। কোন মেয়ের পিরিয়ড হয়েছে এটা জেনে যদি তোমার বন্ধুরা হাসাহাসি করে তাহলে তুমি তোমার বন্ধুদের জানিয়ে দিবে - তাদের মা দেরও মাসের একটি সময় এরকম হয়।

মানসিক দিক দিয়ে কেউই নারী হয়ে জন্ম নেয় না - অজস্র লজ্জা অজস্র বিব্রতবোধ আর সংকীর্ণতা দিয়ে আমরা একটা মানুষকে নারী বানিয়ে ফেলি।

Anatomy is her destiny শরীরই তার নিয়তি

(written by Zunayed Evan)

বিষয়: বিবিধ

১৭৬০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328257
০২ জুলাই ২০১৫ রাত ০৪:২২
মহিউদ্দিন মাহী লিখেছেন : ভালো লাগলো
০২ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৫:৪৪
270541
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ধন্যবাদ
328279
০২ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:৩৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : একটা বিষয় মাথায় ঢুকেনা। আমরাও তো ছোট থেকে বড় হয়েছি,কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে তো টিজিং মিজিং করতে দেখলাম না। এটা সত্য যে ওই সময় মেয়েরা লাজুক হয়ে প্রকাশ করেনা যে তার পিরিয়ড। সেহরী খায় আবার গোপনে রোজা ভাঙ্গে। কিন্তু এটা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়েছে বলে দেখিনি। তবে নারীরা সেই সময় প্রকাশ্যেই রোজা ভাঙতে পারে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে,আমার পিরিয়ড চলছে অথবা আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের মত এ সংক্রান্ত শিক্ষা বাচ্চাদের দিতে গিয়ে তারা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে। কিছু শিক্ষা প্রদানের ক্ষত্রে প্রকাশ্যতা ক্ষতির কারন হতে পারে। এটা প্রমানিত হয়েছে। এসব বিষয়ে মানুষ পরিনত বয়সে এমনিতেই বুঝে যায়। আর যে সব লোক টিজ করে,তাদের এটা করার কারন এই নয় যে-তারা এই সংক্রান্ত এডুকেশন জানেনা। বরং ওটা জানলেও তারা এই কাজই করত।

একটি সত্য বিষয় জানিয়ে রাখি। সেক্সুয়াল এডুকেশন প্রাপ্ত হওয়ার কারনে পাশ্চাত্যের শিশুদের লজ্জা নামক পর্দাটা নষ্ট হয়ে গেছে,আর এতে তারা শিক্ষা পেয়েছে বটে,কিন্তু সমাজ এর ঠেলা হজম করতে পারছে না। অবস্থা কি ঘটছে সেটা জানতে এসব দেশের রিপোর্টগুলোতে একটু চোখ বোলাতে পারেন......তবে লেখার অধিকাংশ পয়েন্টে আমি একমত।
০৩ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:০৫
270728
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : আপনার কথাতেও যুক্তি আছে , ধন্যবাদ
328282
০২ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:০৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : নারীবাদী লেখা, সবার সচেতন হওয়া দরকার।
328283
০২ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:২২
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
328287
০২ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৩
হতভাগা লিখেছেন : ছেলেদের যেহেতু ''সুন্নতে খাতনা'' এর নামে বেশ সরগরম করে একটা অনুষ্ঠান করা হয় , তেমনি মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হবার ব্যাপারটাকে সেরকম ঘটা করে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করা উচিত - হাজার হোক সম অধিকার বলে কথা ।

নারীদের গর্ভ হতে শুধু পুরুষেরাই আসে না , নারীরাও আসে। আর নারী গর্ভে সন্তান আসার জন্য পুরুষ থেকে শুক্রানু আসা লাগে ।

নারীরা সেনিটারী ন্যাপকিন ফার্মেসী থেকে নিজেরা না কিনে মা/স্বামীদেরকে দিয়ে কেনায় । পুরুষদের কনডম কিন্তু তাদের স্ত্রীরা কিনে দেয় না , নিজেদেরই কিনতে হয় ।

রান্নাঘর থেকে মহাশূন্যে - সর্ব জায়গায় বিচরণ করা নারী এই সামান্য , স্বাভাবিক জিনিস নিয়ে যে শেকিনেস ফিল করে এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার। তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এই আচরনের ফলে।

ঋতুস্রাব শুরুর রক্ত দেখে মেয়েদের জায়গায় ছেলেরা হলে চিতকার চেঁচামেচি করে দিত জানলেন কি করে? একই র‍্যাংকের ছেলেদেরকে না পাঠিয়ে যদি মেয়েদেরকে দূর দূরান্তে পোস্টিং দেওয়া হয় , রাতে বিরাতে ডিউটিতে পাঠানো হয় তখন কি মেয়েরা সয়ে থাকে ?
০৩ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:০৭
270729
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : Don't Tell Anyone
328304
০২ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:০১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেককাংশেই সমর্থন করি। পিরিয়ড একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই নিয়ে বেশি লজ্জার কিছু যেমন নাই তেমনি এটি নিয়ে বেশি প্রকাশ এর কিছুও নাই। পিরিয়ড চলাকালিন নারিরা অশুচি বলে নয় বরং শারিরিক দুর্বলতা থাকে বলেই ফরজ নামাজ ও রোজা থেকে নারিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
০৩ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:০৭
270730
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : হুম....।
328776
০৫ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫০
মাটিরলাঠি লিখেছেন : "মানসিক দিক দিয়ে কেউই নারী হয়ে জন্ম নেয় না - অজস্র লজ্জা অজস্র বিব্রতবোধ আর সংকীর্ণতা দিয়ে আমরা একটা মানুষকে নারী বানিয়ে ফেলি।" -একমত হতে পারলাম না।

পোষ্টটিতে চিত্রটিকে বেশী ভয়াবহ করে তোলা হয়েছে। ৬নং কমেন্টে @রিদওয়ান ভাই সারসংক্ষেপটাই বলে দিয়েছেন।


০৮ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
271467
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : :Thinking
328968
০৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪
জলন্ত শিখা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য
329180
০৮ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File