কুরবানীর শিক্ষার সাথে কি আমরা আছি? একটু ভেবে দেখুন
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৫৫:৪০ সকাল
আসসালামু'আলাইকুম
ইব্রাহীম আ. নিজের জীবনের প্রতিটা সময়ে এক আল্লাহর আনুগত্যে অটল ছিলেন। মহান আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করে আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার জীবনে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বদা ব্যকুল থাকতেন। তিনি ঈমান ও আমল নিয়ে তাওহীদের উপর অবস্থান করেছিলেন বলেই নিজ পিতৃভুমি থেকে তাঁকে হিজরত করতে হয়। আল কুরআনে এসেছে-
“ইবরাহীম বললো,আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন”।
সূরা আস সাফফাত: ৯৯
আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।
সূরা আল আন'আম: ৭৯
মানুষের মাঝে বিভিন্ন দেশে মহান আল্লাহর আনুগত্যে জীবনকে সাজানোর আহবান করে যখন ৮৬ বৎসর বয়সে উপনীত হয়ে গেলেন তখন চিন্তা হলো মৃত্যুর পর এই কাজ কে জারী রাখবে? তখন পর্যন্ত তাঁর কোন সন্তান জন্ম নেয় নি। তখন বংশীয় ধারা রক্ষার জন্য নয়, পিতা হিসেবে আনন্দ লাভের জন্য নয়, সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নয়, শুধুমাত্র মহান রবের দিকে আহবানকারীর কাজকে জারী রাখার জন্য একজন সন্তান কামনা করেছিলেন।
হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও৷
সূরা আস সাফাত: ১০০
অথচ আমাদের সমাজে ইব্রাহীম আ. যে উদ্দেশ্যে সন্তান চেয়েছিলেন সেটা ছাড়া বাকিগুলোর জন্যই আমরা সন্তান কামনা করে থাকি।
আবার এই সন্তান লাভের পর যখন সে সাবলকত্বে উপনীত হলো, সেই সন্তানকে কুরবানী দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে থেকে নির্দেশ পেলেন, তখনতো এই কথাটুকু ইব্রাহীম আ. বলতে পারতেন যে, হে আল্লাহ তোমার কাজের জন্যইতো এই সন্তান আমাকে দিয়েছো তাহলে এই সন্তানকে কুরবানী করে ফেললে, কে লোকদেরকে তোমার পথে আহবান জানাবে? কিন্তু তিনি কোন যুক্তির কথা বলেন নি এবং মনের মাঝে এক মুহুর্তের জন্য এই ভাবনাটা আসেও নাই। মনের মাঝে এই রকম ভাবনাও আসে নাই যে, বৃদ্ধ বয়সের এই সন্তানকে যখন কাজে লাগানোর বয়স হলো, তখনই আল্লাহ এই সন্তানকে কুরবানীর নির্দেশ দিলেন, এর কি কল্যাণ থাকতে পারে? মহান আল্লাহ তা’য়ালার দেয়া নির্দেশ শুনলাম ও মানলাম-এই নীতিতে ইব্রাহীম আ. জীবনের প্রতিটা পর্ব পার করে এসেছেন। আবার একই নীতিতে আমাদের প্রিয় নবী স. ও তাঁর সাহাবারাও দুনিয়ার জীবনে কাজ করে গিয়েছেন। কখনো কোন নির্দেশ আসলে পরে প্রশ্ন তুলতেন না যে আমার জন্য কতটুকু, কেন, না করলে কি হবে, পরে করলে হবে কি না ইত্যাদি। তাই দুনিয়ার জীবনেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন অনেক সাহাবা রা.। আল কুরআনে এসেছে,
হে মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার মধ্যে কোন বত্রুতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না।
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِين
বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান,আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য
لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী।
সূরা আল আনআম: ১৬১-১৬৩
আবার ইব্রাহীম আ.কে আগে জানিয়ে দেয়া হয় নাই যে সন্তানের পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানী হবে। তিঁনি কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর নির্দেশে নিজ ছেলেকে নিজের হাতে জবাই করবেন বলে ছুরি চালিয়েছিলেন সন্তান ইসমাঈল আ. এর গলায়। মহান প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার প্রতি কতটা ভালোবাসা, বিশ্বাস, নির্ভরতা থাকলে সত্যকে দৃঢ় ভাবে ধারণ করে এতো সুন্দর আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে পেরেছিলেন তিনি!
আমাদের প্রিয় নবী স. ও তাঁর সাহাবারাও ইসলামের বিজয় হবে কি না তা আগে থেকে জানতেন না বা এটাই পূর্ণ দ্বীন তাও প্রথম দিকে জানিয়ে দেয়া হয় নাই অথচ মহান আল্লাহকে একমাত্র প্রতিপালক মেনে নিয়ে আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে রাসূলের স. অনুসরণ করতে যেয়ে কখনো শারীরিক, কখনো মানসিক, কখনো ধন-সম্পদের, কখনো প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকার মতো বিভিন্ন রকম নির্যাতন পরীক্ষা দিয়েছেন, অকাতরে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে শহীদ হতে উন্মুখ হয়েছেন। এইভাবে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা-কুরবানীর মাধ্যমেই তাঁরা ইসলামকে পূর্ণ বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গিয়েছেন, আর আমরা সেই পূর্ণ জীবন ব্যবস্থাকে তৈরী হিসেবে নিজেদের কাছে পেয়েছি।
এই দীনের ধারক এখন এই মুসলিম সমাজ, আমরা কে কতটুকু নিজেদের প্রস্তুত করতে পেরেছি ইব্রাহীম আ. রাসূল সা. সাহাবা রা. আযমাঈনদের মতো, নিজেদের জান ও মালকে কুরবানী করতে?
মহান আল্লাহ বলেছেন-
প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
সূরা আত তাওবা: ১১
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেন: যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।
সূরা আল বাকারা: ১২৪
আমরা এখনো সেই আত্মসমর্পনের বাস্তব নমুনা নিজেদের মুসলিম জীবনে জারী রাখলে ইনশা’আল্লাহ আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী এই দুনিয়ার নেতৃত্ব মুসলিমদের হাতে আসবে। প্রতিটি পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সুখ শান্তি নিরাপত্তার জোয়ার বইতে থাকবে। দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও আখেরাতের জীবনে থাকবে মহান আল্লাহর দেয়া পুরষ্কার জান্নাত।
হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম সে সময় একদিন আমি দেখলাম নবী (সা) কা'বা ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না? একথা শুনে তার চেহারা আবেগে- উত্তেজনায় রক্তিমবর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেন, "তোমাদের পূর্বে যেসব মু'মিনদল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশি নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দু'টুকরা করে দেয়া হতো। কারো আংগ-প্রত্যংগের সন্ধিস্থলে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হতো, যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে। আল্লাহর কসম, এ কাজ সম্পন্ন হবেই, এমনকি এক ব্যক্তি সান'আ থেকে হাযরামাউত পর্যন্ত নিঃশঙ্ক চিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবে না।"
সহিহ আল বুখারী
এ চিত্তচাঞ্চল্যকে অবিচল ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় রূপান্তরিত করার জন্য মহান আল্লাহ মু'মিনদেরকে বুঝান, ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য অর্জনের জন্য মহান আল্লাহর দেয়া যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোন ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবীর মাধ্যমে তার অধিকারী হতে পারে না। বরং প্রত্যেক দাবীদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষার চুল্লী অতিক্রম করতে হবেই। তাকে এভাবে নিজের দাবির সত্যতা পেশ করতে হবে। এসবের জন্য তো পরীক্ষার শর্ত রয়েছে। মহান রবের পথে থাকার জন্য কষ্ট বরদাশত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হবে, বিপদ-মুসিবত ও সংকটের মুকাবিলা করতে হবে। ভীতি ও আশঙ্কা দিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং লোভ- লালসা দিয়েও। এমন প্রত্যেকটি জিনিস যা মুমিন ভালোবাসে ও পছন্দ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে উৎসর্গ করতে হবে। আর এমন প্রত্যেকটি কষ্ট যা মুমিনের জন্য অনভিপ্রেত এবং অপছন্দনীয়, মহান প্রতিপালকের জন্য তা অবশ্যই বরদাশত করতে হবে। আল্লাহ বলেন:
তোমরা কি মনে করেছো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণ। তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ- ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল। এমনকি রসূল ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে (তখনই তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল এই মর্মে যে) জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।
সূরা আল বাকারাহ: ২১৪
তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী ৷
আলে ইমরান: ১৪২
পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদণ্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়। ভেজাল নিজে নিজেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায় এবং নির্ভেজালকে বাছাই করে নেয়া হয়। এভাবে সে আল্লাহর এমনসব পুরস্কার লাভের যোগ্য হয়, যেগুলো কেবলমাত্র সাচ্চা ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত।
وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ
অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।
মূল শব্দ হচ্ছে 'ফালা ইয়া'লামান্নাল্লাহু' এর শাব্দিক অনুবাদ হবে, "আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন" একথায় কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ তো সত্যবাদীর সত্যবাদিতা এবং মিথ্যুকের মিথ্যাচার ভালোই জানেন, পরীক্ষা করে আবার তা জানার প্রয়োজন কেন। এর জবাব হচ্ছে, যতক্ষণ এক ব্যক্তির মধ্যে কোন জিনিসের কেবলমাত্র যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতাই থাকে, কার্যত তার প্রকাশ হয় না ততক্ষণ ইনসাফ ও ন্যায়নীতির দৃষ্টিতে সে কোন পুরস্কার বা শাস্তির অধিকারী হতে পারে না। যেমন এক ব্যক্তির মধ্যে আমানতদার হবার যোগ্যতা আছে এবং অন্যজনের মধ্যে যোগ্যতা আছে আত্মসাৎ করার। এরা দু'জন যতক্ষণ না পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এবং একজনের থেকে আমানতদারী এবং অন্যজনের থেকে আত্মসাতের কার্যত প্রকাশ না ঘটে ততক্ষণ নিছক নিজের অদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ একজনকে আমানতদারীর পুরস্কার দিয়ে দেবেন এবং অন্যজনকে আত্মসাতের শাস্তি দিয়ে দেবেন, এটা তার ইনসাফের বিরোধী। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন মুসলিম এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই) যাতে রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর। কাজেই নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাও। তিনি তোমাদের অভিভাবক, বড়ই ভালো অভিভাবক তিনি, বড়ই ভালো সাহায্যকারী তিনি।
সূরা আল হাজ্জ: ৭৮
আজ আমাদের সমাজ জীবনের যে চিত্র দেখা যায় তা হলো কুরবানী এলে কুরবানীর পশু কে কত দামে কিনে আনবে বা জবেহ করার পর ধনী কোন আত্মীয়ের বাসায় পশুর কোন অংশের পুরোটা পাঠাবে এবং ফ্রীজে ভরে রাখবে।
আবার কেউ কেউ এতটুকু বলেন এই কুরবানীর মাধ্যমে নিজের ভিতরের শয়তানীকে কুরবানী করতে হবে।
আসলে কুরবানীর ইতিহাস থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা আমাদের অন্তরে ধারণ করে আমল করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহর পথে অটল অবিচল থাকার জন্য ও মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য আমাদের জান ও মালকে সেভাবে কাজে লাগাতে হবে যেভাবে আমার প্রতিপালক তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদের কাছে বাস্তব নমুনা দেখিয়েছেন, যা আমরা আল কুর’আন ও সহিহ হাদীস ও রাসূলের স. জীবনী থেকে জানতে পারি।
পারিবারিক জীবনে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের এক মত, এক লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়ে কাজ করার নমুনা আজকের সমাজে খুব দূর্লব হয়ে দাড়িয়েছে। খুব কম সময়েই দেখা যায় একটি সিদ্ধান্তে সবাই সহমতে আসতে পেরেছে। অথচ ইব্রাহীম আ. এর পারিবারিক জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখুন- যখন ইব্রাহিম আ. স্ত্রী ও শিশু পুত্র ইসমাঈল আ. কে মক্কার এমন একটা উপত্যকায় রেখে চলে আসছিলেন, যেখানে কোন জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোন মানুষজন ছিল না, কোন বৃক্ষরাজি ছিল না এবং কোন পাখ-পাখালী বা পশুও ছিল না, তখন বিবি হাযেরা প্রশ্ন করেছিলেন যে, এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ? তখন ইব্রাহিম আ. হ্যা-সূচক জবাব দিলে, তিনি বলেছিলেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের বঞ্ছিত করবেন না (বুখারী ৩১৮৪ হাদীসের আলোকে)।
এই মুমিনা নারীও সেই একই চিন্তা চেতনায় দিক্ষিত ছিলেন, যা ছিল ইব্রাহিম আ. এর। সেই কারণেই তিনি কোন অস্থিরতা বা না-শোকরীমূলক কথা না বলে, মহান আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছিলেন এবং স্বামীকে আল্লাহর পথে আনুগত্য ও ত্যাগের নমুনা রাখার জন্য সাহায্য করেছিলেন। আজ তাই হজ্জের একটি ওয়াজিব কাজ সাঈ করা (সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭বার চক্কর দেয়া)। সেই মহীয়সী মুহসিনা নারীর ত্যাগের ও তাওয়াক্কুলের চিত্র স্মরন করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন-
নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তরভূক্ত।
সূরা আল বাকারা: ১৫৮
আবার যখন পুত্র ইসমাঈল আ.কে ইব্রাহীম আ. বলেছিলেন যে,
‘হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর! ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল, সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’।
তাহলে ভেবে দেখুন এই সন্তানটির মাঝেও কোন চিন্তা, উদ্বেগ বা পিতার এই আদেশের কথা শুনে কোন সন্দেহ বা কোন প্রশ্ন মনে আসে নি। সাথে সাথে জবাব এসেছে, আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।
ইব্রাহীম আ.এর পরিবারের সব সদস্যরা কোন স্বার্থের জন্য বা কি পাওয়ার জন্য একমুখী হয়েছিলেন?
মহান আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা নিয়ে আখেরাতের জীবনে মুক্তি পাওয়াই যাদের চরম ও পরম পাওয়া হয়, তাদের জন্য জীবনের সব ধরনের পরীক্ষায় ত্যাগ তিতিক্ষা, কুরবানী করে একমুখী হয়ে চলতে কোন সমস্যা হয় না।
আজ আমাদের পরিবারগুলো যদি এইভাবে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও নির্ভরতা রেখে দুনিয়ার জীবনকে পরিচালিত করত তাহলে এখনো ইব্রাহীম আ. এর পরিবারের মতো আদর্শ উপস্থাপন করতে পারতো।
আল্লাহ আমাদের সকল পরিবারকে এই দীক্ষায় কাজ করার তাওফিক দান করুন এবং পরিবারের সকলে মিলে একই কথা আমলের মাধ্যমে উচ্চারিত করার ঈমানী শক্তি ও জ্ঞান দান করুন।
“বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম”।
সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩
দয়া করে সময় নিয়ে ভিডিও গুলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
https://www.youtube.co/watch?v=XMceWzDbno0
https://www.youtube.co/watch?v=OSAXuRcEfdI
https://www.youtube.com/watch?v=3I2w6QE0l8I
https://www.youtube.com/watch?v=Yppk8jB_gJw
বিষয়: বিবিধ
৯৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন