দাওয়াতের অজুহাতে ব্যক্তিগত আমলে ত্রুটি
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৩ জুলাই, ২০১৬, ০১:১০:০৪ দুপুর
আসসালামুআলাইকুম
দাওয়াতের অজুহাতে ব্যক্তিগত আমলে ত্রুটি
(আব্দুল আযীয বিন বায রহঃ এর লেখা থেকে নেয়া)
সঠিক জ্ঞানের অভাব ও আবেগের প্রভাবে কেউ কেউ অন্যকে ভাল করার আশায় নিজে পাপে লিপ্ত হন বা নিজের নেককর্মে অবহেলা করেন। কখনো ফরজে আইন বাদ দিয়ে ফরজে কিফায়া পালন করেন। কখনো অন্যকে ভাল করার জন্য নিজে গুনাহ করেন এবং কখনো অন্যের ভালর আশায় নিজের ব্যক্তিগত নফল মুস্তাহাব আমলে অবহেলা করেন।
ফরজে আইন বাদ দিয়ে ফরজে কিফায়া পালন করা
আমরা দেখেছি যে, দাওয়াত, আদেশ, নিষেধ বা দীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক দায়িত্ব ও ফরজে কিফায়া।
প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষ এ দায়িত্ব পালন করলে বাকীদের জন্য তা নফলে পরিণত হয়। যিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন তিনি এর মহান সাওয়াব ও মর্যাদা অর্জন করবেন। কিন্তু অন্যদের কোনো গুনাহ হবে না। পক্ষান্তরে, পিতামাতার খেদমত, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ, তাদের পূর্ণ মুসলিমরূপে প্রতিপালন, কর্মস্থলের চুক্তি পালন ইত্যাদি মুসলিমের জন্য ফরজে আইন। দাওয়াতের অগণিত সাওয়াব ও ফজিলতের কথা শুনে বা বিশ্বে ইসলামকে বিজয়ী করার আবেগে যদি আমরা আমাদের ফরজে আইন ইবাদতগুলিতে অবহেলা করে ফরজে কিফায়া বা নফল পর্যায়ের দাওয়াত, আদেশ বা নিষেধে রত হই তাহলে তা আমাদের ধ্বংস ও ক্ষতির পথ প্রশস্ত করবে।
ওয়াজিব-সুন্নাত বর্জন করা বা হারাম-মাকরুহে লিপ্ত হওয়া
নিজের ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও অপরের প্রতি আমার দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য বুঝা আমাদের জন্য জরুরি।
অনেক সময় দ্রুত ফলাফল লাভের চিন্তা মুমিনকে অন্যের ভাল করার প্রচেষ্টায় নিজে অন্যায় করতে প্ররোচিত করে। যেমন একজন মদ খাচ্ছেন। তাকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমি তার সাথে বসে কিছু মদ পান করি। অথবা একজন বেপর্দা মহিলাকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমিও নিজের পর্দা নষ্ট করি। এভাবে দাওয়াতের নামে সিনেমা ইত্যাদি দেখা, জামাতে নামাজ নষ্ট করা, দাড়ি কাটা বা অন্য কোন শরিয়ত নিষিদ্ধ বা আইন বিরুদ্ধ কাজ করা সবই এ পর্যায়ের। অনেক সময় শয়তানি প্ররোচনায় মুমিন এগুলিকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে হিকমত ও প্রজ্ঞা বলে মনে করতে পারেন। আসলে বিষয়টি বিভ্রান্তি।
হিকমতের অর্থ দাওয়াত গ্রহণকারীর মানসিক প্রস্তুতির আলোকে শরিয়ত অনুসারে দাওয়াত প্রদান। নিজে পাপে লিপ্ত হওয়া বা নিজের নেক আমল নষ্ট করা কখনোই হিকমত নয়, বরং নফসানিয়্যাত ও প্রবৃত্তির অনুসরণ।
ব্যক্তিগত নফল-মুস্তাহাব ইবাদতে ত্রুটি করা------
অনেক সময় আবেগের বশবর্তী হয়ে মুমিন দাওয়াত বা আদেশ নিষেধের জন্য তাহাজ্জুদ, জিকর, তিলাওয়াত ও অন্যান্য সুন্নাত-মুস্তাহাব ইবাদত পালনে ত্রুটি করেন। মুমিনের মনে হতে পারে, আগে দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদির মাধ্যমে দ্বীনের বিজয় ও তা প্রতিষ্ঠিত করে এরপর আমি আমার ব্যক্তিগত তাকওয়া, সুন্নাত, তাহাজ্জুদ, জিকর, তাজকিয়া ইত্যাদি বিষয়ে নজর দিব। অথবা আমি তো সবচেয়ে বড় কাজে লিপ্ত রয়েছি কাজেই অন্য নেক আমল না করলেও চলে। বিষয়টি ওয়াসওয়াসা এবং ভুল বুঝা ছাড়া কিছুই নয়।
এখানে নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার:
প্রথমত, ফরজে আইন ইবাদতে ত্রুটি করে ফরজে কিফায়া বা নফল ইবাদত বৈধ নয়। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতামাতার খেদমত ত্যাগ করে আল্লাহর পথে জিহাদে শরিক হতে অনুমতি দেননি, যদিও জিহাদের ফজিলত অকল্পনীয়।
দ্বিতীয়ত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মহান সাহাবিগণের জীবনে আমরা দেখতে পাই যে, দ্বীনের দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠার কারণে তারা ব্যক্তিগত তাজকিয়া. নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ, জিকর, ক্রন্দন ইত্যাদির সামান্যতম কমতি করেননি।
তৃতীয়ত, দ্বীনের দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফাইনাল পর্যায় বলে কিছু নেই। এটি একটি স্থায়ী ও চলমান প্রক্রিয়া। হক ও বাতিলের সংঘাত কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। বিজয়ের চাকা এদিকে ওদিকে ঘুরবে। কাজেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমার দাওয়াত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব থেমে যাবে এবং আমি অন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারব, এরূপ চিন্তা ওয়াসওয়াসা ও বিভ্রান্তি মাত্র।
চতুর্থত, অগণিত নবী-রাসূল, মুজাহিদ ও দায়ী ইলাল্লাহ, তাঁদের আজীবন কর্ম করেও জাগতিক ফলাফল দেখে যাননি। তাঁরা কখনই উপরের ওয়াসওয়াসার প্রভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত ফরজ দায়িত্ব বা ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক ও তাজকিয়ার বিষয়ে ত্রুটি করেননি।
পঞ্চমত, মুমিনের কাজ দুইটি। আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ক গভীর করা ও অন্য মানুষদেরকে দাওয়াত ও আদেশ-নিষেধের মাধ্যমে এই পথে আহ্বান করা।
প্রথম কাজটির গুরুত্ব দ্বিতীয় কাজটির চেয়ে অনেক বেশি। কারণ প্রথম কাজে বান্দা নিজের ইচ্ছায় এগোতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ফলাফল বান্দার নিজের ইচ্ছার মধ্যে নয়। কাজেই কেউ যদি দ্বিতীয় কর্মের ফলাফল লাভের উপর প্রথম কর্ম বন্ধ করে রাখেন তাহলে তার আখিরাতের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তষ্টির পথে চলার তওফিক দান করুন।
আজকের সমাজে আমাদের ধার্মীক পরিবারের সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার পিছনে উল্লেখযোগ্য একটি কারন হলো পিতা মাতা দীনের দাওয়াতী কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে পরিবারে গঠনমূলক সময় দিতে পারছেন না। পিতা মাতার নিজেদের দায়িত্ব আরেকজনের উপর ছেড়ে দিলে ভালো ফল আনে না। আমাদের সচেতন হওয়ার জন্য বর্তমানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। বেশীরভাগ সন্তান প্রেম করে ঘুড়ে বেরাচ্ছে বা ব্লগে সামাজিক মিডিয়াতে নারী পুরুষের অবাধ ব্যক্তিগত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বা নেশায় অভ্যস্থ হছে বা দীনের সঠিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এখনও সময় আছে পরিবারের দিকে সুনজর দিন ও কার্যকরী সময় দিন। সন্তানদের সাথে আলাপ করুন। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে কবুল করুন
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন