হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাতকে জানি।

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২৫ জুন, ২০১৬, ০৮:৫৭:৪০ রাত

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

আমরা সুরা ক্বদর থেকে জানি:

আমরা ইহা (কোরআন) ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি।

তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি?

ক্বদরের রাত্রি হাজার মাস হতে উত্তম।

ফেরেশতা ও রূহ এই রাত্রিতে তাদের আল্লাহর অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়।

সেই রাত্রি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার - ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।

সূরা আল ক্বদর: ১-৫

প্রিয় নবী সা. বলেন:

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রামাদানের রোযা রাখল, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাতে (ইবাদাতে) দাঁড়াল, তার আগেকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

সহীহ আল বুখারী: ১৮৭১

এখানে ঈমান সহকারে বলতে বুঝায় যে এই রাতের মর্যাদা ও তাতে আমল করা শরীয়ত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা। প্রতিদানের আশায় বলতে বুঝায় মহান আল্লাহ তা’লার জন্য নিয়্যাতের ব্যাপারে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা পোষণ করা।

• এই রাতে ফেরেশতাদের নেতা জিবরাঈল আ. যাকে রূহ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, তিনি অন্যান্য ফেরেশতাদের নিয়ে এই দুনিয়াতে আগমন করেন।

• এই রাত ফজর পর্যন্ত শান্তির থাকে, যাবতীয় ভীতিপ্রদ বস্তু থেকে নিরাপদ থাকে।

https://www.youtube.com/watch?v=ah4bKnVB2jY

জীবনের কত রাত আমরা কতভাবে জেগে কাটাতে সক্ষম হই। এমন যদি হয় যে কোন বড় একটি কোম্পানী বা অফিসের বস যদি এই কথা বলেন যে আগামী তিন দিনের কোন এক রাতে কোটি টাকার চেক, কোম্পানীর লাভের ফান্ড থেকে ১০ জনকে দেয়া হবে তবে ঐ তিন রাত এই কোম্পানীর বা অফিসের রুমে সারারাত কাজ করতে হবে। তাহলে দেখবেন কতজন হুমড়ি খেয়ে লেগে যাবে এই রাতগুলো জাগ্রত থেকে কাজ করার জন্য। মানুষের চরিত্রের এই দিকটি হলো যে, সে এই মুহূর্তে যে লাভটা দেখতে পায় সেটার ব্যাপারে সে খুব পরিশ্রমী হয়ে যায়। অথচ আমরা ঈমানদারদের দাবীই হলো আমার রব যা বলছেন তা এই মুহূর্তে লাভ করার চেয়েও শতভাগ নিশ্চিত যে আমি সেটা পাবোই বরং দুনিয়ার অনেক কিছুই যেমন ঐ কোম্পানীর দেয়া পুরস্কার অনিশ্চিত হতে পারে।

অনেকে নতুন বছরকে বরন করার জন্য সারা রাত জেগে কত মূল্যবান সময়কে নষ্ট করে ফেলেন। বন্ধুদের নিয়ে,আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সারা রাত বেহুদা গল্প করে লুডু /তাস খেলে পার করে দেন। নাটক সিনেমা, মুভি দেখেও অনেকে অনেক রাত পার করে দেন, আবার অনেকে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে বসে রাতের মূল্যবান অংশ পার করে দেন অনেক শরীয়ত বিরোধী কাজ দ্বারা।

অথচ প্রতিরাতে এই বিশ্বের যিনি শাসক, আমার যিনি পালন কর্তা, যাঁর হাতে আমার জীবন, রিযিক, সুখ-শান্তি, পরিণতি ফয়সালা সেই মহান রব রাতের শেষ প্রহরে প্রথম আসমানে এসে আহবান করেন দেয়ার জন্য।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূল সা. বলেছেন, মহান ও কল্যাণময় আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, যে নিজের অভাব-অনটন দূর করার জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে তা প্রদান করবো এবং কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।

সহীহ আল বুখারী: ১১৪৫

চিন্তা করুন রাতের সেই সময়ে আমরা কে কি অবস্থায় থাকি? আর এই ক্বদরের রাত তো আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং বছরে একবারই আসে। মহান আল্লাহ দেখতে চান আমরা কারা এই ক্বদরকে পেতে পেরেশান তথা মহান আল্লাহর কথার গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই নির্দিষ্ট একটি রাতকে না বলে শেষ দশ রাতে খোঁজ করতে বলেছেন। মহান আল্লাহই ভালো জানেন ক্বদরের রাত কোনটি তা কেন নির্দিষ্ট করে বলে দেননি।

একজন মুসলিমের উচিত গোটা রামাদান জুড়েই আনুগত্য ও ইবাদাতের কাজে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করা এবং শেষ দশকে আরো বেশী তৎপর হওয়া।

আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে রামাদানের শেষ দশ দিনে যে রকম চেষ্টা-সাধনা করতেন, অন্য কোন সময়ে তা করতেন না।

সহীহ মুসলিম

পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে এই রাতে ইবাদাতের পরিকল্পনা দিয়ে দেই বা করতে বলি। ঘুম তাড়ানোর জন্য ইবাদাতের ফাঁকে সবাই একসাথে কোরআনের আলোচনায় শরীক হতে পারি কিছু সময়ের জন্য। আবার নিজেরা একান্তে ইবাদাতে মশগুল হয়ে যাই।

ইতেকাফে বসার সুযোগ করে নিয়ে মসজিদে বসে যেতে পারলে সেটা উত্তম।

লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আমরা যা করতে পারি তা হলো:

• নফল নামাজ পড়া

• কোরআন তিলাওয়াত

• যিকির: তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ইত্যাদি।

• তওবা ও ইসতিগফার

• দু’আ করা

আয়েশা রা. বলেছেন: হে রাসূলুল্লাহ! যদি আমি জানি কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর তবে আমি সেই রাতে কি বলবো? তিনি সা. বললেন, বল:

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা’ফু আ’ন্নী

(আরবী দেখে উচ্চারন করুন অনুগ্রহ করে)

হে আল্লাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাকারী, বড়ই অনুগ্রহশীল।

মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর।

তাই তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও।

আল জামে আত তিরমিযী

হায়েজ/নিফাস অবস্থায় একজন নারী নামাজ ছাড়া বাকী সবই করতে পারেন। প্রসঙ্গত জানা থাকা প্রয়োজন যে তাওবাহ শুধুমাত্র আস্তাগফিরুল্লাহ বললেই হয়ে যায় না।

সত্যিকার তাওবাহ করার শর্তসমূহ:

১। ইখলাসের (একনিষ্ঠতা) সাথে তাওবাহ করা।

২। কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

৩। গুনাহের কাজ চিরতরে ত্যাগ করা।

৪। সেই গুনাহের কাজে আবার ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।

৫। সময় শেষ হওয়ার আগে তাওবাহ করা (মৃত্যুকালে রূহ কবযের আগে, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবার আগে)।

৬। কারো হক থাকলে তা ফিরিয়ে দেয়া ও ক্ষমা চাওয়া।

রাসূল সা. বলেছেন: কোন মুমিন যখন কোন গুনাহের কাজ করে, তখন তার ক্বলবের উপর একটি কালো দাগ বসে যায়। তারপর সে যদি তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তার ক্বলবটি পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যদি গুনাহ করা অব্যাহত রাখে তবে ক্রমশঃ দাগটি বাড়তে বাড়তে তার সমস্ত ক্বলব আচ্ছন্ন করে ফেলে।

আল জামে আত তিরমিযী

রাসূল সা. আরো বলেছেন: হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা নিশ্চয়ই আমি দিনে একশ’বার আল্লাহর কাছে তাওবা করি।

সহীহ মুসলিম

মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:

হে নবী! বলুন, হে আমার বান্দাহগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুদয় গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। অতএব তোমরা তোমাদের মালিকের দিকে ফিরে এসো এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পন করো, তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসার আগেই, অতঃপর তোমাদের আর কোন রকম সাহায্য করা হবে না।

সূরা আয যুমার: ৫৩-৫৪

আল্লাহ আমাদের অন্তরের চাওয়া পাওয়া দেখেন, জানেন, বুঝেন। তিনি একমাত্র অন্তর্যামী। যিনি আমাদের সব দিতে পারেন। তাঁর ক্ষমা, দয়া, করুণা, রহমত, বরকত দিয়েই আমরা শান্তি, সুস্থতা, বিপদ থেকে উদ্ধার, রিযিকে বরকতলাভ করে থাকি।

হেদায়ায়েতের আলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে কায়েম রাখা তিনিই করে দিতে পারেন।

একমাত্র মহান রাহীম ও রাহমানই আমাদের জান্নাতের উত্তরাধীকার বানিয়ে দিতে পারেন।

মহান আল্লাহর কাছে তাই আমরা মন খুলে চোখের পানি ফেলে চলুন না আবার তওবা করে মুমিন হওয়ার অংগীকার করি যেন সব গুনাহ থেকে নিজেদের পবিত্র করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এবং হাজার মাসের সওয়াব নিজেদের আমলনামায় যোগ করে নিতে পারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

https://www.youtube.com/watch?v=JZn6hVgC4Wg

বিষয়: বিবিধ

১০২৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373184
২৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:২০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

হেদায়ায়েতের আলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে কায়েম থাকার দোআ প্রার্থী ।

জাযাকিল্লাহ ।
373362
২৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:২৬
মিশু লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
বারাকাল্লাহী ফিকি সুপ্রিয় আপু।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করে নিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File