রামাদান হোক ব্যক্তির জীবনে পবিত্র পরিচ্ছন্নতার বাহক
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২১ জুন, ২০১৬, ০২:১৬:৩৫ দুপুর
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
অন্তর থেকে কেউ যদি নিজেকে মহান আল্লাহ তা’লার কাছে সমর্পণ করতে চান, আমাদের রব অবশ্যই সেই পথে চলার সহজ উপায় ও শক্তি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন। এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন।
সূরা আত তালাক: ২-৩
আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না, কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর অনুগ্রহগুলো তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে। আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন তার কথা মনে রাখো এবং তিনি তোমাদের কাছ থেকে যে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছেন তা ভুলে যেয়ো না। অর্থাৎ তোমাদের একথা - আমরা শুনেছি ও আনুগত্য করেছি। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ মনের কথা জানেন।
সূরা আল মায়েদা: ৬-৭
প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো তাওহীদকে শক্ত করে অন্তরে ধারন করতে হবে। আল্লাহর ভয় ভালোবাসা সন্তুষ্টি হবে মূল লক্ষ্য এবং এর উপর ইস্তিকামাত হয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। আমার আল্লাহ যদি আমার সাথে থাকেন তাহলে আমার আর কোন চিন্তা নেই।
কিন্তু দেখা যায় আল্লাহকে যতটা ভালবাসা ও আনুগত্য থাকার কথা তারচেয়ে কোন কোন মানুষ বা সামাজিক প্রথাকে প্রাধান্য দিয়ে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে থাকে যা একটা চরম শির্ক।
আমরা হয়তো সরাসরি দেব-দেবীর পূজা করি না কিন্তু বিভিন্নভাবে শিরক মিশ্রিত আমল করে থাকি। তাই নিজের কোন কাজগুলো এইরকম হয়ে যাচ্ছে কি না তা সনাক্ত করে শিরকমুক্ত হতে হবে এবং বেশী বেশী মহান আল্লাহর কাছে চাইতে হবে যেন শিরক থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি। উদাহরন হিসেবে কিছু তুলে ধরলাম—
রাসূল স.বলেছেন নিশ্চয় সবচেয়ে বড় ভয়, যা আমি তোমাদের উপর আশঙ্কা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন: ‘রিয়া’, [লোক দেখানো আমল]। আল্লাহ তা‘আলা [রিয়াকারীদের] বলবেন, যে দিন বান্দাদেরকে তাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া হবে, তোমরা তাদের কাছে যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোনো প্রতিদান পাও কিনা” আলবানি রহ. তার সহি হাদিস সমগ্রে হাদিসটিকে সহি বলেছেন: (৯৫১)
মানুষের খুশি প্রাধান্য দেয়া যেমন আল্লাহ চান পুরু পর্দা করুন, কিন্তু আপনার অভিভাবক চায় না, তাদের খুশির জন্য করলেন না পর্দা। এটা অনেক বড় গুনাহ।
রোগী দেখতে যাওয়া হয় এইভেবে যে, না গেলে কি মনে করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যত কতজনের থাকে?
সালাত একা যখন পড়েন তখন বেশী সুন্দর হয়, না কি মানুষের সামনে বেশী হয়,পর্যালোচনা করুন।
নেটের ষ্ট্যাটাসে কত সুন্দর আহবান থাকে, সেগুলোকি শুধু মাত্র মানুষকে নিজের পরহেজগারী বুঝানোর জন্য?
মানুষের মনতুষ্টির জন্য শরীয়তকে উপেক্ষা করা যেমন পরিচিত গায়ের মাহরাম চাচ্ছে ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকতে, কি মনে করবে ভেবে লিষ্টে তুলে দিলেন এবং যোগাযোগ শুরু হয়ে গেলো অথবা পরিচিত কারো পোষ্টে লাইক দিতে বললো যা শরীয়তে নিষেধ এমন ছবি সহ পোষ্ট, কি মনে করবে তাই লাইক দিলেন, অনেক লাইক পেতে ফেইম বাড়াতে শরীয়ত অনুমোদন করে না এমন পোষ্ট শেয়ার করলেন ইত্যাদি সবই শিরকের(রিয়া) মাঝে চলে আসে।
অন্য লোকদের সাথে সুন্দর করে করে কথা বলেন কিন্তু ঘরে পরিবারের সদস্যদের সাথে নোংরা ভাষায় কথা বলেন এটাও রিয়া কারন উদ্দেশ্য যদি তাকওয়া হতো তাহলে দুরকম রুপ থাকতো না।
গরীবের সাথে আচরন একরকম তুচ্ছভাব ও কমদামী বা ত্রুটিযুক্ত জিনিষ দেয়া কিন্তু সেই তুলনায় ধনীদের প্রতি বেশী তোয়াজ করা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এটাও তাকওয়ার পরিপন্থি।
আরো অনেক উদাহরন আছে। মুল কথা অন্তরকে শুধু মাত্র একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন কাজ করবো আর কোন কাজ থেকে বিরত থাকবো সেটা নির্দিষ্ট করে অটল থাকার মাধ্যমেই আত্মশুদ্ধি আনা সম্ভব। অন্তরকে এই অবস্থানে এনে স্থির করতে পারলেই যেকোন পরিবেশেই নিজের অবস্থান দীনের পথে রাখা সহজ হবে ইন শা আল্লাহ।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম “পিপড়ার চলার আওয়াজ থেকেও শির্ক তোমাদের মাঝে অধিক অস্পষ্ট, আমি তোমাকে একটি বিষয় বলছি, যার ফলে আল্লাহ তোমার থেকে ছোট-বড় শির্ক দূর করে দিবেন। তুমি বল:
“হে আল্লাহ, আমার জানাবস্থায় আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই, আর আমি যা জানি না তার জন্য আপনার নিকট ক্ষমা চাই”। সহি আলজামি: (৩৭৩১), আলবানি রহ. হাদিসটি সহি বলেছেন।
একটি বিষয় অত্যন্ত জরুরী যা আমাদের সমাজকে কলুসিত করে দিচ্ছে, অনেক দাম্পত্য জীবনে কলহ ও বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিচ্ছে,যবক যুবতীরা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। আর এই অবস্থা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে আপনার আমার একটু সচেতনতা। একটু মহান রবের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আনুগত্য করার মাধ্যমে এনে দিতে পারে অনেকগুলো পরিবারে শান্তি, মিটিয়ে দিতে পারে অনেক ভুল বুঝাবুঝি,কমিয়ে আনতে পারে বিচ্ছেদ,কোমলমতি যবক যুবতিরা পবিত্র পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্থ হতে পারে। আর সেই বিষয়টি হলো নারী পরুষের সাথে কথা বলার ধরন।
আজ তুলে ধরবো সেই বিষয়টি। মহান আল্লাহ বলেছেন-
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। সূরা আহযাব: ৩২
কণ্ঠস্বর হলো হৃদয়ের ভাষ্যকার। গায়ের মাহরামদের(পরপুরুষ) সাথে নরম স্বরে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ কারো অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই (আকর্ষণীয়) কণ্ঠস্বর শুনেও যিনার কামনা-বাসনা জাগ্রত হতে পারে। কত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশনা, আজকাল মোবাইলে এই কথা বলার ফিতনায় পড়ে কত ছেলে-মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়েছে তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক পরিবারের স্বামী বেচারা স্ত্রীকে হারাচ্ছে অথবা অসহায় স্ত্রী, স্বামীকে হারাচ্ছে শুধুমাত্র ফোনে নরম স্বরে কথা বলা বা কোন অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় কথা বলা বিপরীত লিঙ্গের যেনার দিকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে।
তাই মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনে সুন্দর স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যই নরম স্বরে/ইনিয়ে-বিনিয়ে/স্বাভাবিক থেকে একটু ভিন্ন আকর্ষণীয় করে বিপরীত লিংগের সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এই আকর্ষনীয় ভংগিমা থাকবে নিজ পরিবারে,কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে বিপরীতটাই দেখা যায় বেশী। এক্ষেত্রে নারীরাই অধিক অগ্রগামী বলেই তাদেরকেই সাবধান করা হয়েছে। তাই দেখা যায় মসজিদে জামায়াতে নামায আদায়কালে ইমামের ভুল হলে নারীকে মুখে কোন কথা না বলে শব্দ (এক হাতের উপর অন্য হাত মেরে) দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা এসেছে যেখানে পুরুষদেরকে সুবহানাল্লাহ বলে ইমামকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে। তাহলে একটু চিন্তা করুন, নারী শিল্পীর সুর-গান কিভাবে একজন পুরুষ শুনতে পারেন? যা একজন পুরুষ নয় নারীর অন্তরকেও প্রলুব্ধ করে অবৈধ প্রেম ভালোবাসার দিকে।
অপ্রয়োজনীয় বা বেহুদা কথা বা আড্ডা বা ফেসবুকে, ব্লগ বা মুবাইলে কোনভাবেই গায়ের মাহরাম নারী পুরুষের অপ্রয়োজনীয় আলাপ শরীয়ত অনুমোদন করে না।
আবার অনেকে বিভিন্ন প্রয়োজনকে মাধ্যম করে এই ধরনের বিপরিত লিংগের সাথে আলাপে হারাম কাজে লিপ্ত থাকেন, যা শয়তান আরো আনন্দদায়ক করে অবৈ্ধ সম্পর্ক গড়ে দেয়। এখানে প্রসংগত বলে নেই, সমাজে মুখ ডাকা ভাই বোন এর সম্পর্ক কখনই হালাল নয়, এমনকি অনেকে মা ও ছেলে সন্তান বা বাবা ও মেয়ে সন্তান মুখ ডাকা সম্পর্ক করে শরীয়তকে উপেক্ষা করে থাকেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অঘটন ঘটে।
নারী পুরুষের প্রয়োজনীয় কথা যতটুকু, ততটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে প্রয়োজনে নারী-পুরুষের সাথে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, কথা বলার ভঙ্গি ও ধরণ এমন হবে যেন পুরুষের মনে এ ধরণের চিন্তার উদয় না হয় যে, এ নারীর ব্যাপারে অন্য কিছু আশা করা যায়। বলার ভঙ্গিতে কোন নমনীয়তা থাকবে না। তার কথায় কোন মনমাতানো ভাব থাকবে না। স্বরে মাধুর্য সৃষ্টি করবে না, যা শ্রবণকারী পুরুষের আবেগ উদ্বেলিত করে সামনে পা বাড়াবার প্ররোচনা দেবে ও সাহস যোগাবে। প্রয়োজনীয় কথাটুকুই সহজ স্বাভাবিক ভাবে বলেই চলে যাবে।
আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত। নবী সা: বলেন: আল্লাহ তায়ালার আত্মমর্যাদাবোধ আছে এবং আল্লাহ তায়ালার আত্মমর্যাদাবোধে ঐ সময় আঘাত লাগে যখন মু’মিন ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক হারাম করা কোন কাজে লিপ্ত হয়। বুখারী: ৪৮৪০
https://www.youtube.com/watch?v=031Gk58fhck
https://www.youtube.c/watch?v=bkBRWS8kQnM
বিষয়: বিবিধ
৯৭০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন