রামাদানে চলুন দানের মাঠে

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৪ জুন, ২০১৬, ১০:১১:০৭ সকাল

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

যাকাত হলো মালের পরিশুদ্ধি, এটা হলো নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক ১বছরের জন্য থাকলে তা অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু এছাড়া দান সাদকা আলাদা ইবাদাত যা দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল ও আরো প্রিয় হওয়া যায়।

রামাদানে নেক কাজের সওয়াব বহুগুনে বেড়ে যায়। রাসূল স. এই সময় আরো দান সাদকা করতেন।

এই ক্ষেত্রে আপনারা পরিকল্পিতভাবেও দান করতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে দান করা যেতে পারে তার কিছুদিক তুলে ধরলাম, আপনারা সাথে কিছু যোগ বিয়োগ করে নিতে পারেন।

১। এই রামাদানে প্রথমেই আপনার বাসার গৃহ পরিচারিকার ও দাড়োয়ান, ড্রাইভার, গৃহশিক্ষক এর পারিবারিক খবর নিন, জেনে নিন কোন বড় সমস্যায় পরে আছেন কিনা? যেমন-গরমে ফ্যান নাই, পানি বিশুদ্ধ করার সুযোগ নেই,সন্তানের দীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছেন না ইত্যাদি। এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন। শুকনো ইফতার দিতে পারেন।

২। নিজের আত্মীয়দের মাঝে খোঁজ নিন, তাদের ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন। শুকনো ইফতার পুরু মাসের জন্য পাঠিয়ে দিন এখনই। যেমন চিনি,সেমাই ছোলা, তেল, খেজুর ইত্যাদি

৩। প্রতিদিন গরীব মিসকীনকে ইফতার ও সেহরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন অন্তত একজন হলেও। এই রামাদানে বাসায় অনেকে ইফতার পার্টী দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে লক্ষনীয় যেন সময় নষ্ট না হয় ও ইশা তারাবী সালাতে বিঘ্ন না ঘটে। আসলে ধনীদের জন্য দাওয়াতের পর্বটা রামাদানে না রেখে বাসায় ইফতার পাঠিয়ে দিতে পারেন তাতে উভয় পক্ষের সময় বাঁচবে । দাওয়াতের জন্য আনন্দের দিন ঈদতো রয়েছেই। এই একটি মাস প্রতিটি সময়কে অর্থবহ করার চেষ্টা করেই দেখি না!!

৪। ঝটিকা ইফতার বিতরন-

সংযমের মাস রামাদানে নিজেদের ইফতার ও খাওয়াকে সংযমে এনে , কাছা কাছি কোন গরিব বস্তি বা রিকসা ষ্ট্যান্ডে বা ষ্টেশনে প্যাকেট ইফতার নিয়ে দিয়ে আসতে পারেন আসরের নামাজের পর। ইফতারের পর থেকে যাওয়া খাবার নয়,পূর্বেই দিয়ে আসি সহিহ নিয়তে।

৫। সরকারী হাসপাতালে গরীব রোগীকে দিয়ে আসতে পারেন কিছু সাহায্য। ঠান্ডা পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন কোন কোন ওয়ার্ডে বা কমনপ্লেসে।

৬। কোন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হলে,আপনি জনকল্যানে কিছু ব্যবস্থা যেমন ঠান্ডা পানির ফিল্টার বসিয়ে দিতে পারেন নির্দিষ্ট জায়গায়।

৭। আপনার এলাকার/গ্রামের মসজিদেও ইফতার দিতে পারেন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সেহরী ও ইফতারের দায়িত্ব কয়েকজন মিলে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।

৮। আপনার এলাকার মসজিদে বা পাঠাগারে সহিহ দীনী বই দিতে পারেন।

৯। আপনার গ্রামে মসজিদে বা এলাকায় একটি পাঠাগারের ব্যবস্থা করে কুর’আন হাদীসসহ কিছু সহিহ আকীদার বই পাঠিয়ে দিতে পারেন।

১০। রামাদানকে সামনে রেখে সহিহ কুর’আন শিক্ষার গ্রুপ করে দিতে পারেন এলাকায় বা পাড়ায়,এই খরচটি আপনি বহন করতে পারেন। অন্তত প্রতিজনে ১জনকে কুর’আন শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেবার পরিকল্পনা করলে ইন শা আল্লাহ আমাদের দেশের প্রত্যেকের এলাকায় তিলাওয়াত ও সালাত সহিহভাবে শিখে যাবে।

১১। প্রতিবেশীদের মাঝে ইফতার, বই পাঠায়ে সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করুন।

১২। কোন ঋনগ্রস্থ ব্যক্তিকে সহযোগীতা করতে পারেন, কিছুটা অর্থের বোঝা হালকা হওয়ার জন্য।

১৩। সহযোগীতা করতে পারেন এমন ব্যক্তিকে যে সুদে ঋনগ্রস্থ হয়েছে,কিন্তু এখন ভুল বুঝতে পেরে সে তাওবা করে ফিরে আসতে চায়।

১৪। মসজিদে মসজিদে/বস্তিতে যেখানে নারীদের সালাতের ব্যবস্থাপনা আছে সতরের জন্য বড় সালাতের ওড়না ও পায়ের মোজা দান করতে পারেন।

১৫। দীন প্রচারের ও প্রসারের কাজে সহিহ আকীদায় যুক্তদের সহযোগীতার জন্য দান করতে পারেন।

আপনি নিজে, স্ত্রী, সন্তান ও বাবা মা কে নিয়ে দান সাদকায় কোমর বেধে নেমে পড়ুন। হারাম ও সুদ থেকে পবিত্র হোন। কারো হক নষ্ট বা অন্যায় ও জুলুম করে থাকলে,সেটা আদায় করে তাওবা করে ফিরে আসুন। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা ও বেহুদা সময় নষ্ট করা থেকে দূরে থাকুন। জিহবাকে ও চোখকে সংযত করুন। মোবাইল ফোনের শরীয়াভিত্তিক ব্যবহার করুন। ক্রোধকে দমন করে সহনশীলতায় ও বিনয়ে অভ্যস্থ হোন। পরিবারে ও সমাজে আদর্শ মুসলিমের চরিত্র বাস্তবে তুলে ধরুন।

চলুন না একসাথে এই রামাদানে প্রতিযোগীতা লেগে এগিয়ে যাই মহান রবের সন্তুষ্টির পথে,নিজেদের রাংগিয়ে নেই আল্লাহর রংগে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে তাওফিক দান করুন যেন কথা ও কাজের সমন্বয় করতে পারি।

https://www.youtube.com/watch?v=Zhhv4kxSl24

মহান আল্লাহ বলেছেন-

নিশ্চয় তোমাদের কর্ম প্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব।

আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। যখন সে অধঃপতিত হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না।

আমার দায়িত্ব পথ প্রদর্শন করা। আর আমি মালিক ইহকালের ও পরকালের।

তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।

এতে নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিই প্রবেশ করবে, যে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

এ থেকে দূরে রাখা হবে খোদাভীরু ব্যক্তিকে, যে আত্নশুদ্ধির জন্যে তার ধন-সম্পদ দান করে। তার উপর কারও কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না। তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত।

বিষয়: বিবিধ

৮৮৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371908
১৪ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৩৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আমাদের মহানবী (সাঃ) এর আলোকে যাকাত বা মালের পরিশুদ্ধি লিখাটি পড়ে খুবিই ভালো লাগলো । আলহামদুলিল্লাহ্‌। সেইসাথে আপনার সুন্দর আহ্বানে সকলেই সাড়া দিক এই প্রত্যশা।
২১ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:০০
309436
মিশু লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাহ আপু। আমাকে ভাইয়া না বলে আপু বললেই প্রযোজ্য হবে। আপনার আহবান সবার কাছে আল্লাহ পৌছে দিন।
371923
১৪ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:৩৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এর পরে আর কিছু বাকি আছে বলে আমার আপাতত মনে হচ্ছেনা।
জাযাকাল্লাহু খাইর
২১ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
309435
মিশু লিখেছেন : বারাকাল্লাহী ফিক
371941
১৪ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
309434
মিশু লিখেছেন : বারাকাল্লাহী ফিক।
371952
১৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৩২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন। সকলেই দানে অনুপ্রাণিত হবে আশা করি। শেষের কথাগুলোর রেফারেন্স দিলে লেখাটি ত্রুটিমুক্ত হতো ও আরো ভালো হতো। জাযাকুমুল্লাহ।
২১ জুন ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
309433
মিশু লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বারাকাল্লাহী ফিকি সুপ্রিয়া আপু। সূরা আল লাইলের আয়াত সমূহ যা খুবই প্রয়োজনীয় ও পরিচিত।
373593
৩০ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:৫৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : একটি এলান-
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File