রামাদান কোরআন নাযিলের মাস
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৮ জুন, ২০১৬, ০১:১৮:১৯ দুপুর
আসসালামু'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
রামাদান কোরআন নাযিলের মাস
আমরা প্রত্যেকেই একটি শান্তির সংসার, সুন্দর ঘর, উপার্জনের সম্মানজনক ব্যবস্থা এবং সন্তানাদির জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে চেষ্টার সফল ফলাফল পেলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই,বিভিন্নভাবে সেই আনন্দের প্রকাশ করে থাকি কিন্তু মহান আল্লাহ আমাদের কাছে এমন এক ভাণ্ডার দিয়েছেন যা দিয়ে কিন্তু পুর্বে উল্লেখিত জিনিষ সহ আখেরাতের সফলতা পাওয়া সম্ভব সেই ভাণ্ডার পেয়ে আমরা মানসিকভাবে কতটা পুলকিত হঈ এবং এর প্রকাশ কিভাবে করি বা করছি তা পর্যালোচনা করে সেইভাবেই অনুপ্রানিত হওয়া প্রয়োজন।
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন,
হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে নসীহত (বিশিষ্ট কিতাব) এসেছে, মানুষের অন্তরে যে সব ব্যাধি রয়েছে, (এটা) তার প্রতিকার এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।
হে নবী, বলুন, মানুষের উচিত আল্লাহর এই অনুগ্রহ ও রহমতের কারণে আনন্দ প্রকাশ করা, কারণ এটা সেই সব জিনিষ হতে উত্তম তারা যা কিছু (জ্ঞান ও সম্পদ) জমা করেছে।
সূরা ইউনুস: ৫৭-৫৮
কিন্তু আমরা কি সেইভাবে মনের মাঝে আনন্দ অনুভব করি এবং আমার মহান রবের কাছ থেকে পাওয়া উপদেশ যা আমার জীবনের জন্যই প্রয়োজন তা বুঝার জন্য কতটুকু উদ্যোগী হই?
আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
অতঃপর আমার নিকট থেকে যে জীবন বিধান তোমাদের নিকট পৌঁছুবে যারা আমার সেই বিধান মেনে চলবে তাদের জন্য কোন চিন্তা ও ভাবনার কোন কারণ থাকবে না। সূরা আল বাকারা: ৩৮
(এই) সেই (মহান) গ্রন্থ আল কোরআন তাতে কোন সন্দেহ নেই, যারা আল্লাহ তা’লাকে ভয় করে, এই কিতাব তাদের জন্যই ভয় প্রদর্শক। সূরা আল বাকারা: ২
যে উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য এই নিয়ামতটি(কুর’আন) দান করা হয়েছিল তাকে পুর্ণ করার জন্য নিজেকে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত করা দরকার। কুর’আন আমাদেরকে এই উদ্দেশ্যে দান করা হয়েছে যে, আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তষ্টির পথ জেনে নিয়ে নিজেরা সেই পথে চলবো এবং অন্যদেরকেও সেই পথে চলার আহবান জানাবো। এভাবে নিজেদের তৈরী করার সর্বাত্মক মাধ্যম হচ্ছে রোযা। কাজেই কুর’আন নাযিলের মাসে আমাদের রোযা রাখা কেবল ইবাদত ও নৈতিক অনুশীলনই নয় বরং সেই সাথে কুর’আন রূপ নিয়ামতের যথার্থ শুকরিয়া আদায়ও এর মাধ্যমে সম্ভব।
আল্লাহ বলেছেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿2:185﴾
রমযান মাস এতেই নাযিল করা হয়েছে কুর’আন, মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে পাবে মাসটি, সে যেন এতে রোযা রাখে। বাকারা: ১৮৫
হা-মীম। এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, আমি এটি এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছি। কারন, আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। ইহা ছিল সেই রাত যাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারের বিজ্ঞতাসূচক ফয়সালা আমাদের নির্দেশে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। দুখান: ১-৫
লক্ষ্য করুন এখানে বরকতপূর্ণ রাত হলো সেটা যে রাতে কুর’আন নাযিল হয়েছিল। আর এই রাতই হলো ভাগ্যরজনী। আমরা সুরা ক্বদর থেকে জানি -
আমরা ইহা (কুর’আন) কদরের রাতে নাযিল করেছি। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রাত্রি হাজার মাস হতে উত্তম। ফেরেশতা ও রূহ এই রাত্রিতে তাদের আল্লাহর অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি পুরোপরি শান্তি ও নিরাপত্তার - ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। ক্বদর: ১-৫
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন –
কুর’আন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি (আখেরাতে) সম্মানিত নেককার লিপিকার ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কুর’আন পড়ে এবং এটা তার পক্ষে খুবই কঠিন ও কষ্টকর, সে দু’টি পুরস্কার পাবে। বুখারী, তিরমিযী: ২৮৩৯
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুর’আন শিখে এবং অপরকে তা শিখায়। বুখারী, তিরমিযী: ২৮৪৩
কিয়ামতের দিন কুর’আন হাযির হয়ে বলবে, হে আমার রব! একে (কুর’আনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। অতঃপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে পুনরায় বলবে, হে আমার রব! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার রব! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পড়তে থাকো এবং উপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে নেকী বাড়ানো হবে। তিরমিযী: ২৮৪৬
যার অন্তরে কুর’আনের কিছুই নেই সে পরিত্যক্ত ঘরতুল্য। তিরমিযী: ২৮৫০
বুঝে পড়ার সাথে সাথে অত্যন্ত জরুরী বিষয় হচ্ছে কুর’আনকে নিজের মধ্যে আত্মীকরন করা, কুর’আনের সাথে মন ও রূহের সম্পর্ক গভীর করা এবং লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলা।
কুর’আনে আল্লাহ বলেছেন –
প্রকৃত ঈমানদারতো তারাই যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে কেঁপে উঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা তাদের আল্লাহর উপর আস্থা এবং নির্ভরতা রাখে। আনফাল: ২
এটি এক বহু বরকতসম্পন্ন কিতাব যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন লোকেরা এর আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন লোকেরা তা হতে সতর্কবানী গ্রহন করে। সা’দ: ২৯
তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে রৌশনী এসেছে, এমন একখানি সত্য প্রদর্শনকারী কিতাব যা দিয়ে আল্লাহ তা’লা তাঁর সন্তোষ-সন্ধানকারী লোকদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথ বলে দেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং সঠিক পথে তাদেরকে পরিচালিত করেন। মায়িদা: ১৫-১৬
মহান আল্লাহর এই কথাগুলো অবশ্যই সত্য। আসলেই কেউ যখন কুর’আনের ইতিহাস পড়ে দেখবেন এবং অতীতে যারা কুর’আন বিশ্বাস করেছিলেন তাদের ওপর কুর’আনের কি প্রভাব পড়েছিল সে সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করবেন – তখন যে কেউ অনুধাবন করবেন যে কুর’আনের উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বর্ণিত কথাগুলো তাঁদের জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
রাসূল(স বলেছেন: মহান রাব্বুল ইজ্জত বলেন, কুর’আন(চর্চার ব্যস্ততা) যাকে আমার যিকির ও আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করতে বিরত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাদের চেয়ে অনেক উত্তম পুরস্কার দিব। সব কালামের উপর আল্লাহর কালামের মর্যাদা এত অধিক যত অধিক আল্লাহর মর্যাদা তাঁর সকল সৃষ্টির উপর।
তিরমিযী, আবওয়াবু ফাদাইলিল কুর’আন: ২৮৬১
আর যে ব্যক্তি আমার যিকির (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে। সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন? আল্লাহ বললেন, “হাঁ, এভাবেই তো। আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে - এভাবেই আমি সীমালংঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর আখেরাতের আযাব বেশী কঠিন এবং বেশীক্ষণ স্থায়ী। সুরা ত্বাহা: ১২৪-১২৭
তাই কুর’আন তেলাওয়াতে, অধ্যয়নে আমাদের গোটা দেহ ও মন নিয়ে পুরোপুরিভাবে জড়িত হতে হবে। কেবলমাত্র এভাবেই আমরা আমাদের সত্ত্বাকে উন্নীত করতে পারি কুর’আনের কাংখিত স্তরে, যেখানে পৌঁছলে আমরা সত্যিকারের বিশ্বাসী হিসাবে অভিহিত হবো।
কুর’আনের হক আদায় করার জন্য যা করনীয়-
১। সহিহভাবে পাঠ করা
২। অর্থ বুঝে পাঠ করা
৩। অন্তরে ধারন করা
৪। বাস্তব জীবনে তা আমল করা
৫। অন্যের কাছে এর বানী পৌছে দেয়া
এই সবকিছুর পিছনে খালেস নিষ্ঠাপুর্ণ একটি অন্তর থাকা যে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথোপযুক্তভাবে পড়ে, তারা তার প্রতি নিষ্ঠা সহকারে ঈমান আনে। তার প্রতি যারা কুফরী করে মূ্লতঃ তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। বাকারা: ১২১
আজ সমাজে কুর’আনকে শুধু খতম,তাবীজ ও বক্তব্যের সুন্দর উপস্থাপন, রিসার্চ করে বিজ্ঞানময়ী যুক্তি বের করে বড় জ্ঞানী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ ইত্যাদি বিভিন্নভাবে কুর’আনের প্রচার বা পড়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু হযরত উমর রাঃ বা হযরত আবু বকর রাঃ এর মত ঈমানী বলিয়ান ব্যক্তি দেখা যায় না। কারো বাহ্যিক জীবন সুন্দর হলেও দেখা যায় ব্যক্তিজীবনে বা পারিবারিকজীবনে আদর্শ নেই আবার এর বিপরীত হয়ে থাকে। জীবনের প্রতিটি অংগনে কুর’আনের অনুসরন করার প্রয়োজনীয়তাকে অনেকটাই হালকা করে ফেলেছে। আজ তাই খুবই প্রয়োজন সেইরকম একটি কুর’আনের জনসমষ্ঠি যারা শক্ত করে আকড়ে ধরে কুর’আনের আলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিবে নিজেদের চরিত্রের বাস্তব আমল দিয়ে। তাগুতের সাথে কোনভাবেই আপষ না করে কুর’আনের শিক্ষার ঈমানী চেতনায় অটল থাকবে ও নবপ্রযুক্তির ব্যবহারও শরিয়তের মাঝে করে দেখিয়ে দিবে। আল্লাহ আমাদের এই রামাদানে কুর’আনকে অন্তরের সাথে বাস্তবজীবনে অনুশীলন করার প্রশিক্ষন দিন।
বিষয়: বিবিধ
১২১৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
So, you will know her as a female blogger from right now
Barakallahi Fiki, May Allah guide us to follow the teachings.
কাল রাতে তারাবিতে ইমাম সাহেব পড়াচ্ছেন, 'তোমাদের উপর জিহাদকে ফরজ করা হয়েছে....' এই আয়াতের বাংলা পড়লে কি কঠিন অবস্থা হতো ইমামের। প্রতিক্রিয়াশীল বলে বের করে দিতো।
সবাই যদি কুরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করতো, তাহলে এমন ইমাম সাহেবদের এমন আয়াত পাঠের সাথে বাংলা অর্থটাকেও শ্রোতাদের কাছে ভালো লাগতো। শুধু তিলাওয়াট করে সওয়াব কামানোর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে না পারার জন্য সাধারণ মুসলমানদের পাশাপাশি আলেমরাও দায়ী। তারা মানুষকে তিলাওয়াতের কথাই বেশি বলে।
যথার্থই বলেছেন, কুরআন অধ্যায়নের সাথে সাথে তা আত্মীকরণ করতে হবে।
জাযাকাল্লাহু খাইর
ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সুপ্রিয় আপু। জাযাকাল্লাহী খাইরান ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। পেষ্ট করতে গিয়ে বাদ পড়ে গিয়েছিল। রিভিউ করার সময় পাইনি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন