রজব মাসে কি করা যায়?
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৩৯:১৬ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
পবিত্র রজব মাসে আমরা অবস্থান করছি। মহান আল্লাহর রহমতে আবার আমরা রমাদান পেতে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
নিশ্চয়ই আবর্তনের পথ ধরে মহাকাল আজ তার সেই প্রারম্ভিক বিন্দুতে প্রত্যাবর্তন করেছে, যেখানে সে আল্লাহ কর্তৃক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিনে ছিল। আল্লাহর কাছে মাস সুনিশ্চিতভাবেই বারোটাই। যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই তাঁর অদৃষ্ট লিপিতে মাসের সংখ্যা এভাবেই লেখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। তিনটি মাস ধারাবাহিক - জিলকদ, জিলহজ্জ ও মুহাররম। আর একটির অবস্থান একাকী অর্থাৎ রজব মাস, যা জমাদিউস সানী ও শা’বানের মাঝখানে অবস্থিত।
সহীহ আল বুখারী: ১৭৪১
পবিত্র মাসগুলো হলো — রজব, জিলকদ, জিলহজ্জ এবং মুহাররম।
এই মাসগুলোকে পবিত্র বলা হয় এই কারণে যে ---
এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষেধ, তবে শত্রুপক্ষ আগে আঘাত করলে সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিরোধ করতে পারবে।
যে কোন সময় গুনাহের কাজ করা স্বাভাবিক ভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ, কিন্তু এই মাসগুলোতে অন্য সময়ের তুলনায় আরো জোড়ালোভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ .
হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা আল্লাহ তা’লার নিদর্শনসমূহের অসম্মান করো না, সম্মানিত মাসগুলোকে না।
সূরা আল মায়েদা: ২
সুতরাং, এই পবিত্র মাসগুলোতে যেন আমরা গুনাহের কাজে না জড়িয়ে পড়ি তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে যদিও সবসময়েও গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। নেতিবাচক কাজ যা নিজের উপর যুলুম হয় তা থেকেও দূরে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ তা’লা আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।
সহীহ হাদীসের আলোকে শুধুমাত্র রজব মাসের জন্য নির্দিষ্ট কোন নামাজ, রোজা, কবর যিয়ারত এবং উমরার কোন বিশেষত্ব আলাদা ভাবে আসে নাই।
তাই এই মাসকে নির্দিষ্ট করে হাদীসের নামে যদি এই ধরনের আমল করা হয় তা বিদয়াত হিসেবেই গণ্য হবে। তবে আমলের ব্যাপারে যদি এমনিতেই অন্যান্য মাসে যে ভাবে করে থাকেন সেভাবে কেউ করেন তাতে কোন অসুবিধা নেই। সোমবার ও বৃহস্পতিবার, আইয়্যামে বীযের রোযা (আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) বা অন্য দিনে এমনি নফল রোযা রাখলে (রজব মাস হিসেবে নয়) তাতে কোন অসুবিধা নেই। উমরার ব্যাপারে কেউ যদি রজব মাসের আলাদা বিশেষত্ব হিসেবে না মনে করে এমনিতেই তার সময় সুযোগ সুবিধার জন্য ওমরা বা মক্কায় ভিজিট করতে যান তাতে অসুবিধা নেই।
অনেকে একটি দোয়া পড়ে থাকেন যা সনদের দিক থেকে যয়ীফ তা হলো হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শাবান মাসের কল্যান দাও ও রামাদান পর্যন্ত পৌছে দাও,এতা হাদীসের কথা বলে আমল করা ঠিক নয়। তবে আমরা স্বাভাবিকভাবে দোয়া করতে পারি যে, হে আল্লাহ তুমি আমাকে সুস্থ্যভাবে রামাদানের ফায়দা পাওয়ার সুযোগ করে দাও।
আমরা পবিত্র মাহে রমজান মাসকে সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেই যেন সাওমের শিক্ষাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে পারি এবং পবিত্র রামাদান মাসের সকল ফায়দাগুলো আদায় করতে সক্ষম হই। আল্লাহ তা’লা আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফীক দান করুন।
আবু বাকর আল-বালখী বলেছেন:
রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস, শা’বান মাস হল ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রামাদান মাস হল ফসল তোলার মাস। তিনি আরও বলেছেন:
রজব মাসের উদাহরণ হলো বাতাসের ন্যায়, শা’বান মাসের উদাহরণ মেঘের ন্যায়, রামাদান মাসের উদাহরণ বৃষ্টির ন্যায়, তাই যে রজব মাসে বীজ বপন করলো না, শা’বান মাসে সেচ প্রদান করলো না, সে কিভাবে রামাদান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?
ভালো ফসল পেতে হলে কৃষককে খুব পরিশ্রমী ও সজাগ সচেতন হতে হয়। জমিতে মাটি ঠিক ভাবে তৈরী হলো কিনা, আগাছা বা কীটপতঙ্গ বা পশু এসে বীজের ক্ষতি করে ফেলছে কি না তা কৃষক প্রতিনিয়ত পাহারা দিতে থাকে, নব প্রযুক্তি দিয়ে কিভাবে আরো উন্নত ফলন হতে পারে তার খোঁজ নিতে সময় ও মেধাকে কাজে লাগায়। জ্ঞানী একজনের কাছে আরো ভালো ফলনের জন্য পরামর্শ করে। সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় যেন ফলন ভালো হয়, কারণ সে জানে সব কিছু করার পরও মহান আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হবে না। সে মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ভরসা রেখে পরিশ্রম করতে থাকে।
আমরা কি এখন থেকেই আমাদের চিন্তা ভাবনাকে রামাদান মাসের ফলন ভালো পাবার জন্য মহান আল্লাহ তা’লার ঐরকম পরিশ্রমী বান্দা হতে পারি না!!
এখন থেকে আমরা যদি পরিকল্পিত ভাবে নিজেদের কাজগুলোকে প্রতিদিনের জন্য ভাগ করে তালিকাভুক্ত করে নেই তাহলে ইনশা’আল্লাহ আমাদের কাজগুলোর সাথে সময়ের সমন্বয় করতে পারবো।
একটু এইভাবে যদি চিন্তা করি যে, আমি হাশরের মাঠে হাযির হয়ে গেলাম আর আমার আমলনামা দেয়া হলো, যদি ফলাফল ফেল হয় তাহলে তখন তো আবার ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই যে আবার পূনঃপরীক্ষা দিবো।
মহান আল্লাহ বলেছেন:
হায়! সেই সময়টা যদি তুমি দেখতে যখন অপরাধী তার প্রভুর সামনে অবনত মস্তকে দাঁড়াবে এবং বলবে: হে আমার প্রতিপালক! এবার আমরা দেখে নিয়েছি এবং শুনতেও পেয়েছি, এখন আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও, আমরা ভালো কাজ করবো, এবার আমরা প্রত্যয় লাভ করেছি। কিন্তু বলা হবে, এবার তোমরা সেই অবহেলার স্বাদ গ্রহণ করো যে কারণে তোমরা এই দিন আমাদের সামনে হাযির হওয়ার ব্যাপারকে ভুলে গিয়েছিলে। আজকে আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি। সুতরাং তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে আজ চিরস্থায়ী আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। সূরা আস সাজদা: ১২-১৪
তাই আমরা এখন থেকেই নিজের আমলনামার হিসেব প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পর্যালোচনা করে দেখি, আমি ভালো-মন্দের কোন অবস্থায় আছি? প্রতিদিন একটি বেলা করে জীবন চলে যাচ্ছে মূল ঠিকানা কবরের দিকে। একেক ঘটনা/কমিটমেন্ট/সমস্যাকে পার করতে করতে আরেকটি ব্যস্ততা এসে যায়। আর এইভাবেই মাস ঘুরে বছরও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অবস্থানকে কোথায় নিতে পেরেছি? আমরা কি নিজেদের সংশোধন করে এগিয়ে নিতে পারছি মহান রবের নৈকট্য লাভের দিকে?
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ তা’লাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই যেন খেয়াল রাখে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি ব্যবস্থা রেখেছে। আর তোমরা ভয় করো আল্লাহ তা’লাকে। আল্লাহ নিশ্চিতই তোমাদের সেই সব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করতে থাকো। তোমরা সেই লোকদের মত হয়ে যেও না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা বানিয়ে দিয়েছেন। এসব লোকেরাই ফাসেক। সুরা আল হাশর: ১৮-১৯
ফাসেক সম্পর্কে কি আপনি জানেন, এরা কারা ও এদের পরিনতি কি?
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে একটি কথাঃ
ভাই এটা কি হাদিস নয়? দূর্বল হলে কি হাদীস বলা যাবে না? এটাতো কোন সহীহ হাদিসের বিপরীত হয় নাই যে, এটাকে ছেড়ে দিতে হবে? কোন মুহাদ্দিসীন কি ইহাকে জাল বা বানোয়াট বলেছেন?
তাহলে হাদীসের কথা বলে আমল করা ঠিক নয় কেন ভাই??
আশাকরি বিস্তারীত জানাবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
জাযাকাল্লাহ খাইর
The hadeeth “O Allah, bless us in Rajab and Sha‘baan, and let us reach Ramadan” is da‘eef (weak) and not saheeh (sound)
I would like to know whether it is Sunnah to say a particular du‘aa’ on the first night of the month of Rajab?
The du‘aa’ is as follows: “O Allah, bless us in Rajab and Sha‘baan, and let us reach Ramadan”.
I ask Allah, may He be glorified, to make us steadfast in acting upon the saheeh (sound) Sunnah.
Published Date: 2014-05-03
Praise be to Allah.
Firstly:
There is no saheeh hadeeth from the Prophet that speaks of the virtues of the month of Rajab. Please see the answers to questions no. 75394 and 171509
Ibn ‘Uthaymeen (may Allah have mercy on him) said:
There is no saheeh hadeeth that speaks of the virtues of Rajab. The month of Rajab is no different from the month of Jumaada al-Aakhirah that comes before it, except that it is one of the sacred months only. Otherwise there is no fast that is prescribed in this month, and no prayer or ‘umrah or anything else that is prescribed. It is like all other months. End quote.
Liqa’ al-Baab al-Maftooh (174/26).
Secondly:
It was narrated by ‘Abdullah, the son of Imam Ahmad, in Zawaa’id al-Musnad (2346), at-Tabaraani in al-Awsat (3939), al-Bayhaqi in ash-Shu‘ab (3534) and Abu Nu‘aym in al-Hilyah (6/269) via Zaa’idah ibn Abi ar-Ruqaad who said: Ziyaad al-Numayri told us, from Anas ibn Maalik who said: When Rajab began, the Messenger of Allah (blessing and peace of Allah be upon him) said: “O Allah, bless us in Rajab and Sha‘baan, and let us reach Ramadan.”
This isnaad is da‘eef. Ziyaad al-Numayri is da‘eef and was classed as such by Ibn Ma‘een. Abu Haatim said: He cannot be quoted as evidence. Ibn Hibbaan mentioned him in ad-Du‘afa’ and said: It is not permissible to quote him as evidence.
Mizaan al-I‘tidaal (2/91)
Zaa’idah ibn Abi ar-Ruqaad is more da‘eef than him. Abu Haatim said: He narrated from Ziyaad al-Numayri, from Anas, odd marfoo‘ hadeeths, which we know only from him or from Ziyaad. Al-Bukhaari said: His hadeeths are odd. an-Nasaa’i said: His hadeeths are odd. It says in al-Kuna: He is not trustworthy. Ibn Hibbaan said: He narrates odd hadeeths from well known people and his reports cannot be quoted as evidence or written down, except for the purpose of giving an example (of a weak hadeeth). Ibn ‘Adiyy said: al-Miqdami and others narrated from him obscure hadeeths, and some of his hadeeths contain odd material.
Tahdheeb at-Tahdheeb (3/305-306).
The hadeeth was classed as da‘eef by an-Nawawi in al-Adhkaar (p. 189) and Ibn Rajab in Lataa’if al-Ma‘aarif (p. 121). It was also classed as da‘eef by al-Albaani in Da‘eef al-Jaami‘ (4395). Al-Haythami said:
It was narrated by al-Bazzaar, and its isnaad includes Zaa’idah ibn Abi ar-Ruqaad. Al-Bukhaari said: His hadeeth is odd, and a number of scholars regarded him as ignorant.
Majma‘ az-Zawaa’id (2/165)
Moreover, the hadeeth – in addition to being da‘eef – contains nothing to indicate that this should be said on the first night of the month of Rajab; rather it is a du‘aa’ that asks for blessing during that month in general terms, which is something that is valid to do in Rajab and also before Rajab.
Thirdly:
With regard to the Muslim asking his Lord to let him reach Ramadan, there is nothing wrong with that.
Al-Haafiz Ibn Rajab (may Allah have mercy on him) said:
Ma‘alla ibn al-Fadl said: They used to pray to Allah for six months, may He be exalted, asking Him to cause them to reach Ramadan, and they used to call upon Him for six months asking Him to accept it from them. Yahya ibn Abi Katheer said: One of their du‘aa’s was: “O Allah, keep me safe until Ramadan, keep Ramadan safe for me, and accept it from me.”
End quote from Lataa’if al-Ma‘aarif (p. 148)
Ends.
https://islamqa.info/en/202017
মন্তব্য করতে লগইন করুন