রোগী দেখতে যাই, রোগীর জন্য কি নিয়ে যাওয়া যায়?-2

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:২০:০৪ দুপুর

আসসালামু আলাইকুম

https://youtu.be/mhfUb7DemXc

জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষনীয়-

তার শারীরিক পবিত্রতা। এইক্ষেত্রে তার প্রাইভেট অংগের পরিচ্ছন্নতা আছে কি না লোম কাটা/নখ কাটা আছে কি না তা স্মরন রাখা।

সালাত ও পর্দার ব্যাপারে সহযোগীতা করা।

জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া রোগীর দো‘আ

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى».

(আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আলহিক্বনী বির রফীক্বিল আ‘লা)।

“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গ পাইয়ে দিন।” বুখারী ৭/১০, নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪/১৮৯৩, নং ২৪৪৪।

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় তাঁর দু’হাত পানিতে প্রবেশ করিয়ে তা দিয়ে তাঁর চেহারা মুছছিলেন এবং বলছিলেন,

« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ».

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ইন্না লিল মাওতি সাকারা-তিন)

“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, নিশ্চয় মৃত্যুর রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভয়াবহ কষ্ট।

বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ), ৮/১৪৪, নং ৪৪৪৯; তবে হাদীসে মিসওয়াকের উল্লেখও এসেছে।

«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)

“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, যাবতীয় রাজত্ব তাঁরই, তার জন্যই সকল প্রশংসা, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই।”

সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫২; সহীহ ইবন মাজাহ ২/৩১৭।

মরণাপন্ন ব্যক্তিকে তালক্বীন (কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া)

এই সময়ে বিশেষ করে ডাক্তার ও নার্সরাই কাছে থাকেন বেশী। তাই এদের অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। একজন ডাক্তার বা নার্স হিসেবে ব্যবস্থাপনা নেয়ার পাশাপাশি মুসলিম হিসেবে যে ব্যবস্থাপনা নেয়ার কথা তা স্মরন রাখা ও সেইভাবে কাজ করা প্রয়োজন।

“যার শেষ কথা হবে-

« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ».

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ)

‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই’— সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

আবূ দাউদ ৩/১৯০, নং ৩১১৬; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৫/৪৩২।

রোগী যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তার কাছে উপস্থিত ব্যক্তি যদি নিশ্চিত হয় যে, তার মৃত্যু এসে গেছে, তাহলে তার উচিৎ তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন।

ইমাম মুসলিম আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু রোগীদেরকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাও’ (‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯১৬)।

সে শুনতে পায় এমন শব্দে তার নিকট আল্লাহর যিকর করবে। ফলে সে স্মরণ করবে এবং আল্লাহর যিকর করবে। বিদ্বানগণ বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার জন্য আদেশ করা উচিৎ নয়। কেননা তার মনটা ছোট হয়ে যাওয়া এবং তার এই কঠিন অবস্থার কারণে সে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলতে অস্বীকার করে বসতে পারে। আর অস্বীকার করে বসলেই তার শেষ ভাল হবে না। সেজন্য তার শয্যাপাশে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ে তাকে এই কালিমা স্বরণ করাবে। [অর্থাৎ তাকে বলবেনা যে, হে অমুক! লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়]।

এমনকি বিদ্বানগণ বলেছেন, যদি তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে স্বরণ করে এবং ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ে, তাহলে তখন চুপ হয়ে যাবে এবং তার সাথে আর কোনো কথা বলবে না- যাতে দুনিয়াতে তার সর্বশেষ কথাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তারপর আবার অন্য কোন কথা বলে ফেলে, তাহলে আবার তাকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাবে- যাতে তার শেষ কালেমাটি হয় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।

আমাদের সমাজে একটি হাদীস প্রচলন আছে তার ব্যাপারে চলুন জানি।

আর মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতকে অনেক বিদ্বান সুন্নত বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়’।

আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৪৪৮; আহমাদ, ৫/২৬, ২৭।

তবে কেউ কেউ হাদীছটি যঈফ বলেছেন। সুতরাং যার দৃষ্টিতে হাদীছটি ছহীহ, তার নিকট সুরা ইয়াসীন পড়া সুন্নাত। পক্ষান্তরে যার দৃষ্টিতে হাদীছটি যঈফ, তার নিকট সূরাটি পড়া সুন্নাত নয়।

অনুরূপভাবে হাদীছটিকে ইমাম আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন (আলবানী, সুনানে আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১)। তিনি ‘ইরওয়াউল গালীল’-এ বলেছেন, হাদীছটিতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে:

১. (হাদীছটির একজন বর্ণনাকরী) আবূ উছমান ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত,

২. তার পিতাও ‘মাজহূল এবং

৩. হাদীছটিতে ‘ইযত্বিরাব’ রয়েছে (৩/১৫১, হা/৬৮৮)। সেজন্য শায়খ ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ)কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাদীছটিতে যেহেতু একজন ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে, সেহেতু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা উত্তম নয়।

অবশ্য তার নিকট পবিত্র ক্বুরআন পড়া ভাল। কিন্তু সূরা ইয়াসীনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৩/৯৫)।

মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করানোর দো‘আ

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفُلاَنٍ (بِاسْمِهِ) وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ

يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ».

(আল্লা-হুম্মাগফির লি ফুলা-নিন (মৃতের নাম বলবে) ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আ-লামীন। ওয়াফসাহ্‌ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাউইর লাহু ফী-হি)।

“হে আল্লাহ! আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তির নাম ধরে) ক্ষমা করুন; যারা হেদায়াত লাভ করেছে, তাদের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন; যারা রয়ে গেছে তাদের মাঝে তার বংশধরদের ক্ষেত্রে আপনি তার প্রতিনিধি হোন। হে সৃষ্টিকুলের রব! আমাদের ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য তা আলোকময় করে দিন।” মুসলিম ২/৬৩৪, নং ৯২০।

https://www.youtube.com/watch?v=VdMUnybUPIY

বিষয়: বিবিধ

৯৫৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357302
২০ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৬
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আমিন.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File