রোগী দেখতে যাই, রোগীর জন্য কি নিয়ে যাওয়া যায়?-১

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫৬:২০ সকাল

আসসালামু আলাইকুম

https://www.youtube.com/watch?v=nxqoLEhjA6g

https://www.youtube.com/watch?v=H6uDDUPBlk8

রোগী দেখতে যাওয়ার ফযীলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো লোক তার মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তখন সে না বসা পর্যন্ত যেন জান্নাতে ফল আহরণে বিচরণ করতে থাকে। অতঃপর যখন সে (রোগীর পাশে) বসে, (আল্লাহ্র) রহমত তাকে ঢেকে ফেলে। সময়টা যদি সকাল বেলা হয় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা ও কল্যাণের দোআ করতে থাকে বিকাল হওয়া পর্যন্ত। আর যতি সময়টা বিকাল বেলা হয় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য রহমতের দোআ করতে থাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত।” তিরমিযী, নং ৯৬৯; ইবন মাজাহ্, নং ১৪৪২; আহমাদ, নং ৯৭৫।

রোগী দেখতে যাওয়া মুসলিমদের পারস্পরিক অধিকার। আর যে রোগী দেখতে যাবে, তার জন্য উচিৎ হবে রোগীকে তওবা, জরূরী অছিয়ত এবং সর্বদা আল্লাহর যিকর করার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া। কেননা রোগী এ সময় এ জাতীয় বিষয়ের খুব বেশী মুখাপেক্ষী থাকে।

কোন রোগী দেখতে গেলে আমাদের কিছু করনীয় থাকা দরকার। রোগীর ভালো ও কাজে লাগবে এমন কিছু নিয়ে যাওয়া (হাদিয়া) সুন্নাত। কিন্তু শুধুমাত্র ফল বা কোন খাবার নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ নয়। এই কাজটিও যেন আমার ইবাদাত হয় তার জন্য সচেতন থাকা প্রয়োজন। রোগী দেখতে যাওয়া সেটা আত্মীয় অনাত্মীয়,মুসলিম অমুসলিম যে কারোর জন্যই হতে পারে। আমাদের সমাজে দেখা যায় কে কি মনে করবে এই চিন্তাটা সামনে রেখে রোগী দেখতে যায়,যা ইবাদত কবুল হওয়ার অন্তরায়। আবার অনেকে রোগী দেখতে যেয়ে শুধুমাত্র কিছু অপ্রয়োজনীয় গল্প গুজব করে চলে আসেন।

সাধারন ভাবে একজন ব্যক্তিকে নিজের অবস্থান মানুষ > মুসলিম > আত্মীয়/অনাত্মীয় হিসেবে দায়িত্ব পালন বা ভূমিকা রাখতে হয়।

একজন ডাক্তার হলে দুটি অবস্থান নিয়ে সচেতন হতে হবে।

১- ডাক্তার হিসেবে রোগীর প্রতি আমার ভূমিকা

২- মুসলিম হিসেবে রোগীর প্রতি ভুমিকা

প্রতিটি ভুমিকার পিছনে যে শর্ত থাকা দরকার তা হলো

১-একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যত থাকা।

২-মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতার অনুভূতি রাখা.

৩-শরীয়তের সীমারেখার ব্যপারেও সচেতন থাকা।

কতগুলো বিষয় একজন মুসলিম হিসেবে খেয়াল রাখা দরকার যা রোগীকে বা রোগীর সাথে অবস্থানকারীকে স্মরন করিয়ে দেয়া প্রয়োজন---

১। রোগীর পবিত্রতার সহজদিক বজায় রাখা

২। সালাতের ও পর্দার ব্যবস্থাপনার কথা স্মরন করিয়ে দেয়া

৩। সবর ও দুয়া যিকিরের কথা স্মরন করিয়ে দেয়া

৪। মানসিক দুশ্চিন্তার লাঘবের জন্য পরামর্শ দেয়া

৫। কোন ধরনের সহযোগীতা করার আগ্রহ পোষন করে প্রস্তাব করা

৬। আর্থিক সহযোগীতার প্রয়োজন থাকলে সাহায্য করা।

৭। নিজ অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৮। রোগীর জন্য দুয়া করা

أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفيَكَ»

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন রুগ্ন মানুষকে সাক্ষাৎ করবে, যার এখন মরার সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট সাতবার এই দো‘আটি বলবে, ‘আসআলুল্লাহাল আযীম, রাব্বাল আরশিল আযীম, আঁই য়্যাশ্ফিয়াক’ (অর্থাৎ আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য প্রার্থনা করছি), আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সূত্রে, হাকেম, বুখারীর শর্তে সহীহ সূত্রে)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ মৃত্যু আসন্ন নয় এমন কোনো রোগীকে দেখতে গেলে, সে তার সামনে এই দোআ সাতবার পাঠ করবে, এর ফলে আল্লাহ তাকে (মৃত্যু আসন্ন না হলে) রোগমুক্ত করবেন। এ দো‘আ সাতবার পড়বে। তিরমিযী, নং ২০৮৩; আবূ দাউদ, নং ৩১০৬। আরও দেখুন, ২/২১০; সহীহুল জামে‘ ৫/১৮০

لاَ بأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّه

উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পীড়িত বেদুঈনের সাক্ষাতে গেলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগীকেই সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তাকে বলতেন, ‘‘লা-বা’স, ত্বাহুরুন ইনশাআল্লাহ।’’ অর্থাৎ কোন ক্ষতি নেই, (গোনাহ থেকে) পবিত্র হবে ইন শাআল্লাহ। (বুখারী)

আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জিবরীল তখন এই দো‘আটি পড়লেন, ‘বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীকা, অমিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু য়্যাশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা।’

অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং প্রত্যেক আত্মা অথবা বদনজরের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)

বিষয়: বিবিধ

১১৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File