চলুন মনকে বুঝি-১৭
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৩৮:৩৫ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম
প্রবৃত্তির পূজারীদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা দরকার তা পালন করা হতে বিরত থাকার কারনে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে যায়।
যারা প্রবৃত্তির পূজা করে ঘুরে বেড়ায়, তাদের প্রতি সমাজের মানুষের একটি বড় দায়িত্ব হল, তারা তাদেরকে ভালো পথে আনার চেষ্টা করবে এবং বিপথগামী হতে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। কারণ, ভালো কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালনে অবহেলা মানুষকে প্রবৃত্তির পূজারি বানিয়ে দেয়।
আর মানুষ যখন ভালো কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন প্রবৃত্তির পূজারী যারা তাদের শয়তানি, হঠকারিতা ও অপরাধ প্রবণতা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। তারা কোন অপরাধকে আর অপরাধ মনে করে না। যে কোন ধরনের অপরাধ করতে তারা কাউকে পরওয়া বা ভয় করে না। তারা অন্যায় অপরাধ করতে করতে তাদের স্বভাব নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি ধীরে ধীরে তাদের প্রবৃত্তি তাদের অন্তরে স্থান করে নেয় এবং তাদের চলা ফেরা ও যাবতীয় কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ তাদের প্রবৃত্তিই করতে থাকে। মানবিক কোন গুণ তাদের মধ্যে আর অবশিষ্ট থাকে না। তাদের মধ্যে পাশবিক চরিত্র ও জীব-জন্তুর চরিত্রই প্রভাব বিস্তার করে।
আজ এই সমাজে যে ধরনের অন্যায় ঘটাচ্ছে, এরা আপনার আমার কারো না কারো আত্মীয়। কতজন এই অন্যায়কারীকে সুন্দর করে সংশোধন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন? নিজের চোখের সামনেই সন্তান অশ্লীল কাপড় পড়ে বের হয়ে যাচ্ছে অথচ মা বা বাবা কিছুই বলছেন না। অথবা ছেলেটি মারামারিতে জড়িয়ে যাচ্ছে জেনেও কোন প্রতিকার করছেন না। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় বরং এটাকে বাহবা দিচ্ছেন।
আমাদের সমাজে অনেক মুসলিম আছেন যারা ব্যক্তিজীবনে কিছু আমল করলেও সামাজিক জীবনের অনেক আমল থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। অনেক কারনের মাঝে একটা কারন হলো প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত রাখা।
বিশেষ করে আত্মীয়দের সাথে বা কলিগদের মাঝে এই অবস্থা দেখা যায়। যেমন, উত্তরাধিকার আইন একটি আল্লাহ প্রদত্ত আইন। অথচ এই ব্যাপারে আত্মীয়দের মাঝে অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ করতে বা সুন্দর করে আল্লাহর আইনের কথা জানিয়ে দিতে দ্বিধা করেন, কিন্তু অন্যায়কারীর সামনেই খুব প্রশংসা সহকারেই কথা বলে প্রবৃত্তিকেই প্রকারান্তে উৎসাহিত করে থাকে।
কোন আত্মীয় খুব সুন্দর করে নিজের কোন ঘটনা বলছেন যা শরীয়তে কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা, কিন্তু দেখা যায় যিনি শুনছেন, তিনি খুব আনন্দ লাভ করেই যাচ্ছেন। তিনি সেই ভুলটি তখনই বুঝিয়ে দিবেন,তা না করে তাল মিলিয়ে গল্প করেই যাচ্ছেন,ফলে সেই ব্যক্তিটি মনে করে তার সেই অন্যায় কাজটি ঠিকই আছে। অনেকে ভাবেন পরে বলবো,আবার পরে সংশোধনের চিন্তা করাটাও ঠিক নয় এই জন্য যে, হতে পারে আমার সেই সুযোগ নাও আসতে পারে এবং এর মাঝে সে আরো অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। হাশরের মাঠে ঠিকই এই ব্যক্তি পাওকড়াও করবে যে, কেন তাকে সংশোধনের কথা বলা হয় নাই, যদিও দুনিয়ার জীবনে একটু বিরক্ত হলে হতেও পারতো।
ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ কাজ কলিগ বা আত্মীয়রা করলেও নিজেকে তথাকথিত ভালো মানুষ (অন্যায়কারীর কাছে) থাকার জন্য প্রবৃত্তি পূজারীকে সংশোধন করার চেষ্টা করে না। আর এইভাবেই সমাজে অন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। এবং একসময় ব্যক্তিজীবনে আমলকারী ব্যক্তিটিও সেই প্রবৃত্তি পূজারীদের দলে ভিড়ে যায়।
এ কারণেই ইসলাম মানুষকে ভালো কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা নির্দেশ দেন। আল্লাহ রাব্বূল আলামীন বলেন,
“আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম”।
(আল-ইমরান: ১০৪)
আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, সমাজে একটি জামাত থাকতে হবে যারা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে বারণ করার দায়িত্ব পালন করে।
আর যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারাই হল, সফল। সমাজে যখন এ ধরনের দায়িত্বশীল লোক থাকবে তখন সমাজিক অপরাধ কমে যাবে এবং প্রবৃত্তির অনুসারীরা ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে যাবে। তবে যারা মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহ্বান করবে তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিভাবে তারা মানুষকে অন্যায় অনাচার থেকে ফিরাবে। মানুষের অন্তরে খারাপ বা মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে ওয়াজ নসিহত ও সুন্দর কথা বলে এবং উত্তম বিতর্ক দ্বারা বুঝাতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার মূলনীতি আলোচনা করে আল্লাহ রাব্বূল আলামীন আরও বলেন,
“তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন”।
(সূরা নাহল: ১২৫)
আল্লাহ রাব্বূল আলামীন আরও বলেন,
ওরা হল সে সব লোক, যাদের অন্তরে কি আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং তাদেরকে সদুপদেশ দাও। আর তাদেরকে তাদের নিজদের ব্যাপারে মর্মস্পর্শী কথা বল।
(সূরা নিসা: ৬৩)
আর যখন মানুষ অন্যায় ও অপরাধকে প্রতিহত করতে অভ্যস্ত হয়, তখন তাদের দ্বারা কোন প্রকার অন্যায় সংঘটিত হয় না এবং যারা প্রবৃত্তির পূজারী তাদের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় না। আর তাদের চলার পথে কোন প্রকার হোঁচট খেতে হয় না।
বিষয়: বিবিধ
১০২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মোদ্দা কথা হল, মানুষের সাথে সম্পর্ক ঠিক, উত্তম কথার মাধ্যমে সঠিক পথে আনার চেষ্টাতো থাকবেই, তবুও যদি না আসে, এবং সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, সে অবস্থায় নির্দেশ অর্থাৎ অসৎ কাজ থেকে ফেরানোর দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।
“তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যে বিধান নিয়ে এসেছি তার অনুকরণ না করে”।
জাযাকাল্লাহী খাইরান। আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন