চলুন মনকে বুঝি-১৬

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫৫:৩৯ দুপুর

আসসালামু’আলাইকুম

https://www.youtube.com/watch?v=uqpf3yLs3tA

https://www.youtube.com/watch?v=x3ZQnR2RdYc

আখিরাত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে সত্যিকার জ্ঞানের অভাবে প্রবৃত্তির অনুসরন করে থাকে অনেকে।

যে ব্যক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সত্যিকার মান-মর্যাদা সম্পর্কে অবগত নয় বা তাকে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারে না, সে আল্লাহকে তার বিপক্ষে দাঁড় করাতে, আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের নাফরমানি করতে এবং তাঁর আদেশ নিষেধকে অমান্য করতে সে তেমন কোন পরওয়া করে না; তার অন্তরে আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের বড়ত্ব ও তা‘জীম অবশিষ্ট থাকে না।

একজন মানুষের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্বদর ও মান-মর্যাদা সম্পর্কে জানা থাকা অতীব জরুরি। তার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে কি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তাকে কখন কি পালন করতে হবে তা অবশ্যই জানা থাকতে হবে। এ গুলো জানা না থাকলে সে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নিষেধ কিভাবে পালন করবে এবং তার হুকুমের আনুগত্য কিভাবে করবে?

মহান আল্লাহ ও আখেরাত সম্পর্কে সঠিক ধারনাই পারে দুনিয়ার জীবনে নিজের প্রবৃত্তির লাগাম নিয়ন্ত্রণ করতে। আর তাই কুর’আনে ঈমানের সবগুলো বিষয়ের সাথে বিশ্বাস রাখার কথা থাকলেও আখেরাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে দৃঢ় বিশ্বাস রাখার কথা। কারন এই বিষয়টির উপর বিশ্বাসের ধরনের উপরই দুনিয়ার জীবন যাত্রার ধরনে প্রতিফলিত রুপ দেখা যায়। আবার মহান আল্লাহ যেমন রাহমানুর রাহীম ও তেমনি শাস্তিদাতা ও ন্যায়বিচারক,এই জ্ঞানের উপর আমল করা দিয়েও জীবনের রাস্তা সহজে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে চলতে পারে ও অন্যায় থেকে দূরে থাকাটাও সহজ হয়ে যায়।

সমাজে একশ্রেনীর ঈমানদার আছেন যারা মহান রবের রহমতকেই প্রাধান্য দেন,ভুলে যান ন্যায়বিচারক আল্লাহ অন্যায়ের শাস্তি দান করবেন। ফলে নির্বিবাদে অন্যায় করেই চলেন,তওবাও করেন,আবার একই অন্যায় করেন প্রবৃত্তিকে খুশি রেখেই চলেন—এটা যেমন ঠিক না আবার একশ্রেনীর ঈমানদার আছেন যারা খুব সহজেই অন্য একজন আমলদারনা কিন্তু ঈমানের ঘোষনা দেন তাকে জাহান্নামের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন-এটাও ঠিক না।

আজ সমাজে ছেলে-মেয়ে স্বামী-স্ত্রী একজন একজনকে পাহাড়ায় রাখতে চান,কখন কি করে তা নিয়ে পেরেশান থাকতে হয়-অথচ আখেরাত ও আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান ও বিশ্বাসের আমল দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। পরিবারেও বিশ্বাস ও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে, প্রত্যেকেই সময়ের সুন্দর ব্যবহার করতে পারেন এবং যার যার প্রতিভার বিকাশ করতে পারেন শরীয়াতের মাঝে থেকে।

যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মান-মর্যাদা সম্পর্কে অবগত আছে আর যারা অবগত নয়, তারা কখনোই সমান হতে পারে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে আগত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত সে কি তার মত, যার মন্দ আমল তার জন্য চাকচিক্যময় করে দেয়া হয়েছে এবং যারা তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে?

(সূরা যুমার, আয়াত: ৬৭)

“আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন।” (আলে ইমরান ২৮ আয়াত)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।” (সূরা আবাসা ৩৪-৩৭ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; (আর জেনে রেখো যে,) নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি বড় কঠিন।” (সূরা হজ্জ্ব ১-২ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

অর্থাৎ “আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান।” (সূরা আর-রাহমান ৪৬ আয়াত)

তিনি আরো বলেন, “তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে, নিশ্চয় আমরা পূর্বে পরিবার-পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে উত্তপ্ত ঝড়ো হাওয়ার শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় আমরা পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম। নিশ্চয় তিনি কৃপাময়, পরম দয়ালু।” (সূরা ত্বূর ২৫-২৮ আয়াত)

আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগত তৈরী সম্পন্ন করলেন, তখন একটি কিতাবে লিখে রাখলেন, যা তাঁরই কাছে তাঁর আরশের উপর রয়েছে, ‘‘অবশ্যই আমার রহমত আমার গযব অপেক্ষা অগ্রগামী।’’ সহীহুল বুখারী: ৩১৯৪,

‘‘নিশ্চয় আল্লাহর একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে একটি মাত্র রহমত তিনি মানব-দানব, পশু ও কীটপতঙ্গের মধ্যে অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই (সৃষ্টজীব) একে অপরকে মায়া করে, তার কারণেই একে অন্যকে দয়া করে এবং তার কারণেই হিংস্র জন্তুরা তাদের সন্তানকে মায়া করে থাকে। বাকী নিরানববইটি আল্লাহ আখেরাতের জন্য রেখে দিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের উপর রহম করবেন।’’ সহীহ বুখারী: ৬০০০

বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী স. বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হয়, তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। এই অর্থ রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীতে, ‘যারা মু’মিন তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রতিষ্ঠা দান করেন।’’ (সূরা ইব্রাহীম: ১৭ -বুখারী ও মুসলিম)

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাফের যখন দুনিয়াতে কোনো পুণ্য কাজ করে, তখন বিনিময়ে তাকে দুনিয়ার (কিছু আনন্দ/খাবার জাতীয়) উপভোগ করতে দেওয়া হয়। (আর আখেরাতে সে এর কিছুই প্রতিদান পাবে না)। কিন্তু মু’মিনের জন্য আল্লাহ তা’আলা আখেরাতে তার প্রতিদানকে সঞ্চিত করে রাখেন এবং দুনিয়াতে তিনি তাকে জীবিকা দেন তাঁর আনুগত্যের বিনিময়ে।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহান আল্লাহ কোন মু’মিনের উপর তার নেকীর ব্যাপারে যুলুম করেন না। তাকে তার প্রতিদান দুনিয়াতেও দেওয়া হয় এবং আখেরাতেও দেওয়া হবে। কিন্তু কাফেরকে ভাল কাজের বিনিময়--যা সে আল্লাহর জন্য করে--দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়। এমন কি যখন সে আখেরাতে পাড়ি দেবে, তখন তার এমন কোনো পুণ্য থাকবে না যে, তার বিনিময়ে তাকে কিছু (পুরস্কার) দেওয়া যাবে।’’ (মুসলিম)

মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এত কাছে করে দেওয়া হবে যে, তার মধ্যে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে।’’

মিক্বদাদ থেকে বর্ণনাকারী সুলাইম ইবন আমের বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মীল’ শব্দের কী অর্থ নিয়েছেন, যমীনের দূরত্ব (মাইল), নাকি (সুরমাদানীর) শলাকা যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়? ‘‘সুতরাং মানুষ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবতে থাকবে। তাদের মধ্যে কারো তার পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত (ঘাম হবে) এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও হবে যাদেরকে ঘাম লাগাম লাগিয়ে দেবে।’’ (অর্থাৎ নাক পর্যন্ত ঘামে ডুববে।) এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের দিকে ইশারা করলেন। মুসলিম ২৮৬৪, তিরমিযী ২৪২১,

আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোন আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল। বামদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়।’’ সহীহ বুখারী ১৪১৩

এই জ্ঞানের অভাবেই প্রবৃত্তি তার জ্ঞানের বহর নিয়ে এসে দাঁড়ায় ও শয়তান আরো যুক্তি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের অন্তরে অহীর জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করে দিন।

বিষয়: বিবিধ

৯২৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356805
১২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪০
আফরা লিখেছেন : এই জ্ঞানের অভাবেই প্রবৃত্তি তার জ্ঞানের বহর নিয়ে এসে দাঁড়ায় ও শয়তান আরো যুক্তি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের অন্তরে অহীর জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করে দিন। আমীন
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:২৩
296153
মিশু লিখেছেন : আজ আমাদের অনেক বেশী সচেতন হওয়া প্রয়োজন যেন নিজেকে সঠিক পথে রেখে স্থায়ী জীবনে যেতে পারি। জাযাকাল্লাহী খাইরান পড়ার জন্য।
356810
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:১২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অসাধারন ভাই,জাজাকাল্লাহ

এই জ্ঞানের অভাবেই প্রবৃত্তি তার জ্ঞানের বহর নিয়ে এসে দাঁড়ায় ও শয়তান আরো যুক্তি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের অন্তরে অহীর জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করে দিন। আমীন
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:২৩
296154
মিশু লিখেছেন : আজ আমাদের অনেক বেশী সচেতন হওয়া প্রয়োজন যেন নিজেকে সঠিক পথে রেখে স্থায়ী জীবনে যেতে পারি। জাযাকাল্লাহী খাইরান পড়ার জন্য।
356827
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৮:৩৭
কাঁচের বালি লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের দোষ , ভুল ক্ষমা করুন। আমিন ।
১৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:২৪
296155
মিশু লিখেছেন : আমিন। জাযাকাল্লাহী খাইরান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File