চলুন মনকে বুঝি-১৪
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০:১৭ দুপুর
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা
প্রবৃত্তির অনুসরণ করার কারণসমূহ জানা থাকা অতীব জরুরি। যে কোন কিছুর কারণ জানা থাকলে তা করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সহজ হয়। কারণ, যখন কোন কিছুর কারণ অস্বচ্ছ বা অসৎ হয় তার পরিণতিও হবে খারাপ ও অস্বচ্ছ। আর যখন কারণ ভালো ও স্বচ্ছ হবে তখন তার ফলাফল হবে মধুর ও আনন্দদায়ক।
যে সব কারণসমূহ মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে ডাকে সেগুলো অনেক। কেন মানুষ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তারা কেন সত্য ও সঠিক পথের অনুসরণ থেকে বিরত থাকে? তা নিম্নে আলোচনা করা হল। মনে রাখতে হবে, প্রবৃত্তির অনুসরনের অনেকগুলো কারণ আছে।
বাল্যকাল থেকে প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণের উপর অভ্যস্ত না হওয়া:
অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা মাতা-পিতার অধিক আদর-স্নেহে মানুষ হয় এবং বড় হতে থাকে। তারা যখন যা চায় মাতা-পিতা তাদের তাই দিয়ে থাকে এবং তাদের যে কোন চাহিদা পূরণ করে তাদের খুশি রাখতে চেষ্টা করে। কোনটি হারাম আর কোন হালাল তার মধ্যে কোন প্রকার তারতম্য করে না।
ছেলে মেয়ে যখন ফজরের সালাতের সময় ঘুমায়, তখন মাতা-পিতা তাকে ঘুম থেকে জাগায় না, তারা বলে তাদের উপর এখনো সালাত ফরজ হয়নি। আর যখন সে কোন খেলা-ধুলা করতে চায়, মাতা-পিতা তাকে সুযোগ দেয়। তাকে বিরত রাখতে কোন প্রকার চেষ্টা তারা করে না। এমনকি তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘরের মধ্যে তাদের জন্য গান-বাজনা, সিনেমা, নাটক ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দেয়।
অনেক সময় দেখা যায় ছেলের জন্য আলাদা ড্রাইভার এবং মেয়ের জন্য আলাদা রুম ইত্যাদি উচ্চ বিলাস ও বিলাসবহুল জীবন ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তাদের মতের বিরুদ্ধে কোন কিছুই করা হয় না, তারা যখন যা চায় তাই করে এবং তাদের খুশি রাখতে মাতা-পিতা উভয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। টাকা-পয়সা যখন যা লাগে তাদের তা দিয়ে দেয় তারা যা চায় তাই তাদের মাতা-পিতা থেকে তা পায়। ফলে তারা তাদের ইচ্ছা মত যেখানে মনে চায় সেখানে যেতে পারে, যা ইচ্ছা তা করতে পারে।
স্মার্ট ফোনের জন্য ৬-৭ বছরের শিশুটিও যখন বায়না ধরে তখন বাবা-মা দেরী না করে হাতের নাগালে দিয়ে দেন। আবার ২-৩ বছরের শিশুটিও টেব নিয়ে টিপে টিপে মিউজিক শুনতে ভালোবাসে, আর কান্না করলেই তার জন্য টেব এর ব্যবস্থা করে দেন বাবা মা।
এভাবে চলতে চলতে একটা সময় এমন আসে, ছেলে মেয়েরা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণে অভ্যস্ত হয়ে গড়ে উঠে। কোন কিছু চাওয়া মাত্রই সে তা পায় এবং যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তখন সে কারো কথা শোনে না। মাতা-পিতার কথাও তার কাছে আর ভালো লাগে না। কোন উপদেশকারীর উপদেশ তার কাছে তিক্ত মনে হয়। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কথা বললে, সে তাকে তার শত্রু মনে করে। সে যা করতে চায় তা থেকে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারে না এবং বাধা দিতে পারে না।
এরপর যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তার চাহিদাও আকাশচুম্বী হয়। তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তার প্রবৃত্তির পিছনে দৌঁড়তে থাকে। বিশেষ করে যখন ছেলে মেয়েরা তাদের বাল্যকাল অতিক্রম করে কৈশোরে পৌঁছে। তখন তাদের প্রবৃত্তি পাগলা হাতির মত লাফালাফি করতে থাকে। তখন তারা বড় বড় অন্যায়, অপকর্ম ও অপরাধ করতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ করে না। তাদের এ ধরনের অপকর্ম ও অপরাধ করা থেকে বিরত রাখার কোন উপায় থাকে না।
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা ছোট বেলা থেকেই তাদের বাচ্চাদের সু-শিক্ষা দিতেন এবং তাদের চাহিদাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা তাদের বাচ্চাদের সাওম, নামায, হজ ইত্যাদি শরিয়তের বিধান পালনে ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস করাতেন। যার ফলে তাদের সন্তানেরাও তাদের মতই বিখ্যাত ও বড় বড় জ্ঞানী।
রবি বিনতে মুয়াওয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন দুপুর বেলায় একটি জামাতকে আনসারীদের এলাকায় প্রেরণ করেন। তারা সেখানে গিয়ে তাদের এ কথার দাওয়াত দেয় যে, যে ব্যক্তি সাওম না রেখে সকাল উদযাপন করল, সে যেন বাকি সময়টুকু কোন কিছু না খেয়ে দিন অতিবাহিত করে, আর যে ব্যক্তি সাওম রাখা অবস্থায় সকাল করল, সে যেন সাওম রাখে। তার কথা শোনে একজন মহিলা বলল, তারপর থেকে আমরা আশুরার দিন সাওম রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদের সাওমের নির্দেশ দিতাম। আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য গাছের ডাল দিয়ে খেলা-ধুলার সামগ্রী বানাতাম। তারা যদি ক্ষুধার কারণে কান্না-কাটি করত, তাদের এসব খেলা-ধুলার সামগ্রী দিয়ে ইফতারের সময় পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম”।
বুখারি: ১৯৬০, মুসলিম: ১১৩৬।
বাচ্চাদেরকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী লালন-পালন করা দ্ধারা শুধু দ্বীনি ক্ষতি তাই নয়, বরং এর দ্বারা তাদের দুনিয়াও নষ্ট হয় এবং তাদের জীবন ধ্বংস হয়। দুনিয়ার জীবনে তারা বিভিন্ন ধরনের মুসিবত ও বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়, অর্থের অপচয় হয়, সাংসারিক জীবন সংকীর্ণ হয় এবং তাদের পরিবারের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়।
সুতরাং বর্তমান সময়ে আমাদের উচিত হল, বাচ্চাদের নিয়ে খুব সতর্ক থাকা, যাতে তারা নিশ্চিত ধ্বংস হতে মুক্তি পাই। মনে রাখতে হবে, তারা যা চায় তা করা যাবে না, তাদেরকে খেয়াল খুশি মত চলতে দেয়া যাবে না। তাদের চাহিদাকে ছোট থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ইচ্ছা আকাঙ্খাকে ছোট বেলা থেকেই যাচাই বাচাই করতে হবে।
তারপর এক সময় আসবে যখন ব্যক্তি জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে, তখন দেখতে পাবে, তার পরিবার তার চাহিদাগুলো ইচ্ছা থাকলেও পূরণ করতে সক্ষম নয়। বিশেষ করে যখন সে নিজেই স্বয়ং সম্পন্ন হবে, বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করবে এবং কর্ম জীবনে পা বাড়াবে, তখন বলবে আমাকে এ কাজ করতে দাও, আমাকে এ কাজ করার জন্য টাকা দাও ইত্যাদি। তখন তার চাহিদা মোতাবেক যদি তাকে সাপোর্ট দিতে না পারলে, শুরু হবে অশান্তি, ঝগড়া-বিবাদ, দু:সম্পর্ক।
অনুরূপভাবে মেয়েরা যখন বিলাস-বহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়, তখন তারাও তাদের ব্যক্তি ও সাংসারিক জীবনে অশান্তিতে পড়বে। অনেক সময় দেখা যাবে, সে এমন এক স্বামীর সংসারে আবদ্ধ হয়েছে, যে আর্থিকভাবে তার থেকে দুর্বল বা সমকক্ষ নয়, তখন সে তার স্বামীকে বাড়তি চাপ দিতে থাকবে, তাকে সার্বক্ষণিক বিরক্ত করবে এবং এটা-সেটা এনে দেয়ার জন্য বলতে থাকবে। যখন সে এনে দিতে পারবে না তখন সে তার স্বামীর উপর চড়াও হবে, স্বামীর থেকে নাক ছিটকাবে। আবার অনেক সময় দেখা যাবে সে তার স্বামীকে ফকির বলে গালি দেবে। এভাবে দেখা যাবে তাদের সংসারে সব সময় ঝগড়া-বিবাদ, মান-অভিমান ও অশান্তি লেগে থাকবে। ফলে তাদের আত্মার শান্তি ও পারিবারিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে এবং স্বামীর সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। এ ধরনের ঘটনা বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে। সুতরাং, আমরা যদি শুরু থেকে সতর্ক না হই তবে আমাদের আরো দুভোর্গ পোহাতে হবে।
https://www.youtube.com/watch?v=nESOO4kUtaA
বিষয়: বিবিধ
৯৯২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপু আমার জন্য দুয়া করবেন ।
আমাদের মা বাবা বিশেষ করে মা-দের আরো বেশী ইসলামের শিক্ষায় ও আমলে উন্নীত হয়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে পরিবার গঠনের জন্য। খুব বেশী ধৈর্য্যের অধিকারী হতে হবে।
জাযাকাল্লাহী খাইরান। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে এস্তেকামাত করে দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন