চলুন মনকে বুঝি-১৩

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:১৩:১৯ সকাল

আসসালামু’আলাইকুম



মানুষের সবচেয়ে বড় দুশমন হল, তার শয়তান, যে মানুষকে খারাপ পথের দিকে ডাকে। আর মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু হল, তার জ্ঞান যা তাকে ভালো উপদেশ দেয়। আর মানুষের অপর বন্ধু হল, ফেরেশতা যে তাকে ভালো কাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করে।

তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে আসেন, তিনি মু’মিনদের প্রতি বড়ই মেহেরবান।

সূরা আহযাব:৪৩

যারা ঘোষণা করেছে, আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে দৃঢ় ও স্থির থেকেছে নিশ্চিত তাদের কাছে ফেরেশতারা আসে এবং তাদের বলে, ভীত হয়ো না, দুঃখ করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শুনে খুশি হও তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আমরা এই দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু এবং আখেরাতেও। সেখানে তোমরা যা চাবে তাই পাবে। আর যে জিনিসেরই আকাঙ্খা করবে তাই লাভ করবে।

সূরা হামীম আস সাজদাহ: ৩০-৩১

যখন কোন ব্যক্তি তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তখন সে তার আত্মাকে নিজ হাতে দুশমনের কাছে সোপর্দ করে এবং নিজেকে শয়তানের বেড়াজালে আবদ্ধ করে। যখন কোন ব্যক্তি শয়তানের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়, তখন তার পরিণতি হয় খুবই করুণ। আর একেই বলা হয়, মহা বিপদ ও করুণ পরিণতি, যার থেকে রাসূল সা. আল্লাহর দরবারে মুক্তি কামনা করেন। এছাড়া একে খারাপ ফায়সালা ও দুশমনদের খুশি করাও বলা হয়ে থাকে। এ দুটি থেকেও রাসূল সা. আল্লাহর দরবারে মুক্তি চান।

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন,

আসলে শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্রুই মনে করো। সে তো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এজন্য ডাকছে যাতে তারা দোজখীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

সুরা ফাতের: ৬

اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطانِ وَشَرَكِهِ، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءاً، أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ».

(আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্‌শাহা-দাতি ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাই’ইন ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আ‘উযু বিকা মিন শাররি নাফ্‌সী ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়াশিরকিহী/ওয়াশারাকিহী ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্‌সী সূওআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিম)।

“হে আল্লাহ! হে গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা, অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।”

তিরমিযী, নং ৩৩৯২; আবূ দাউদ, নং ৫০৬৭।

أَعُوذُ بكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لاَ يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلاَ فَاجِرٌ: مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَبَرَأَ وَذَرَأَ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلاَّ طَارِقاً يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ».

(আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্-তা-ম্মা-তিল্লাতী লা ইয়ুজাউইযুহুন্না বাররুন ওয়ালা ফা-জিরুম মিন শাররি মা খালাক্বা, ওয়া বারা’আ, ওয়া যারা’আ, ওয়ামিন শাররি মা ইয়ানযিলু মিনাস্ সামা-য়ি, ওয়ামিন শাররি মা যারাআ ফিল আরদ্বি, ওয়ামিন শাররি মা ইয়াখরুজু মিনহা, ওয়ামিন শাররি ফিতানিল-লাইলি ওয়ান-নাহা-রি, ওয়ামিন শাররি কুল্লি ত্বা-রিকিন ইল্লা ত্বা-রিকান ইয়াত্বরুকু বিখাইরিন, ইয়া রহ্‌মানু)।

“আমি আল্লাহ্‌র ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই যা কোনো সৎলোক বা অসৎলোক অতিক্রম করতে পারে না— আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে, যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে তার অনিষ্ট থেকে, দিনে-রাতে সংঘটিত ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাত্রিবেলা হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে, তবে রাতে আগত যে বিষয় কল্যাণ নিয়ে আসে তা ব্যতীত; হে দয়াময়!”

আহমাদ ৩/৪১৯, নং ১৫৪৬১, সহীহ সনদে।

আজকের আমাদের সমাজে মানবরুপী শয়তানের কাজে প্রলুব্ধ হয়ে, নিজের প্রবৃত্তির কাছে হার মেনে নিজেকে শয়তানের কাছে সঁপে দেয়, একবারও তার মনে আসে না, মহান আল্লাহ যিনি আমাকে ভালোবেসে, সুন্দর করে যত্নের সাথে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, এই দুনিয়ার এতো নিয়ামত যা আমাকে ভোগ করার জন্য (বিধি বিধানসহ) দিয়েছেন যা আমারই কল্যানের জন্য এবং বলে দিয়েছেন আমারই কল্যানের জন্য যে, শয়তান তোমার প্রকাশ্য শত্রু। আর সেই আমরাই কি না কোন কষ্ট ছাড়া সহজেই নিজেকে শয়তানের কাছে তুলে দিতে পারি এবং কোন কষ্টও অনুভূত হয় না, কারো কারো মনে হলেও প্রবোধ দেয় নিজেকে যে, সমাজ নিয়ে চলতে হবেতো….,আল্লাহ রাহমানু রাহীম –মাফ করে দিবেন…, এই ছোট ছোট গুনাহ কিছু হবে না ইত্যাদি নানাভাবে যুক্তি দাড় করিয়ে প্রবৃত্তি ব্যক্তিকে শান্ত করে রাখে।

একটু চিন্তা করে দেখুন এর পরিনতি আজ সমাজ ও ঘরে ঘরে প্রতিফলিত হচ্ছে কিভাবে?

মা বাবা চোখের পানি ফেলছেন যে তার সন্তান ছেলে মেয়ে বন্ধু নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়,নেশাগ্রস্ত হয়ে বাসায় ফিরে, অনেক স্ত্রী বা স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, অনেক দূর্নিতি হাসপাতাল,অফিস,শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে পড়েছে,আর সবচেয়ে বড় অশ্লীলতা চলে এসেছে আমাদের সংস্কৃতির মাঝে যা মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে ঘরে চলে গিয়েছে।

আর এইভাবে আমরা ইসলামের শত্রুদের মাথা চাড়া দিয়ে উঠার সুযোগ করে দিয়েছি।আর আজ তাই বিশ্বে মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে।

ক্ষুদ্র থেকেই বড় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ছোট ছিদ্র বন্ধ না করলে এইভাবেই বড় ছিদ্র হতে থাকবে। তাই ব্যক্তির প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সবাইকে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

বিষয়: বিবিধ

১০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File