চলুন মনকে বুঝি-১২
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:২৪:২৫ সকাল
আসসালামুআ’লাইকুম
যখন কোন বান্দা প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে থাকে, তখন তাকে ভালো কাজের তাওফীক দেয়া হয় না। সে সব সময় খারাপ, অন্যায়, অশ্লীল ও অপকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ভালো কাজ করা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। ভালো কোন কাজের কথা বললে বা ভালো কাজের উপদেশ দিলে তা তার নিকট অসহ্য লাগে। সে সব সময় পাগলা হাতির মত ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে।
সমাজে এই ধরনের অনেক উদাহরন দেখতে পাই। হৈ চৈ, গান বাজনা ও অপ্রয়োজনীয় কথা, জোকস দিয়ে আড্ডা দিতে ভালোবাসে, এমনকি ঘণ্টার পর ঘন্টা চলে গেলেও কোন কষ্ট বা অসুবিধা হয় না। কিন্তু জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কুর’আন হাদীস থেকে গল্প করুন তাহলে সেখানে সময় দেয়াটা এদের জন্য অনেক কষ্টের হয়ে দাড়ায়, বিভিন্ন কাজের কথা মনে পড়ে যায়, ভালো কথা শুনার আগ্রহ থাকে না।
টিভি বা কম্পিউটারেও তেলাওয়াত বা ইসলামিক লেকচার শুনার আগ্রহ থাকে না,অন্য কিছু যা দিয়ে সে তার প্রবৃত্তিকে নিয়ে উত্তেজিত থাকতে চায়।
আল্লাহ রাব্বূল আলামীন বলেন,
“তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে তাকে হিদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?”।
সূরা জাসিয়া: ২৩
যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করে না। তারা দ্বীনকে তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী সাজায়। তাদের কাছে যদি সঠিক দ্বীন কোনটি তা তুলে ধরা হয়, তখন তারা প্রবৃত্তিকেই প্রাধান্য দেয়, দ্বীনকে তারা প্রাধান্য দেয় না।
হাম্মাদ ইব্ন আবি সালমা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাফেজীদের একজন শাইখ তাব, আমাকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন কোন বিষয়ে একমত হতাম এবং বিষয়টিকে সুন্দর মনে করতাম, তখন তাকে হাদিস বলে চালিয়ে দিতাম। হাদিস আমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হতে হবে এমন কোন শর্ত ছিল না।
প্রবৃত্তির অনুসারিরাই যুগে যুগে দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি সাধন করে। বিদআত সৃষ্টি তারাই করেছে, যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে।
হযরত ইবনে আব্বাস র. থেকে বর্ণিত। রাসূল স. বলেছেন,
আল্লাহর নিকট তিন শ্রেনীর লোক অত্যধিক ঘৃণ্য। তারা হলো-
১। যারা হারাম শরীফে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে।
২। ইসলামী আদর্শে যারা জাহিলিয়াতের নিয়ম-প্রথাকে চালু করতে ইচ্ছুক।
৩। যারা কোন কারন ব্যতিতই মুসলমানের রক্তপাত করতে উদ্ধত হয়।
সহিহ বুখারী
বিদয়াত চালু হওয়ার কারনের মাঝে একটি কারন হলো সমাজের তথাকথিত আলেমদের প্রবৃত্তির অনুসরনের ফলে অনেক প্রথা চালু করে দিয়েছেন সুন্নাত বলে যা তাদের দুনিয়াবী সুবিধা লাভের কারন হতে পারে। আবার সাধারন জাহিল লোকেরা কিছু শরীয়ত বিরোধী কাজ শুরু করেছে নিজেদের প্রবৃত্তির দাবী পূওরনের জন্য এবং সমাজের আলেম সমাজ সেই ব্যাপারে নিরবতা পালন করেছেন,ফলে এরা ধরে নিয়েছে এই কাজগুলো করা জায়েয। এইভাবে প্রবৃত্তির অনুসরনের মাঝে অনেক বিদয়াতি অনুষ্ঠান চালু হয়েছে বিশেষ করে এশিয়ার অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোতে। যেমন, মিলাদ, কুলখানী, চল্লিশা, নামাজের পর বা কোন অনুষ্ঠানে একসাথে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা হাত তুলে।
মানুষ স্বভাবতই চিরন্তন শান্তি ও সুখ বেহেশত লাভের আকাঙ্খী। আর এ কারনে বেশী বেশী নেক কাজ করতেও চায়। দ্বীনের হুকুম আহকাম যথাযথ পালন করা কঠিন বোধ হলেও সহজসাধ্য সওয়াবের কাজ করার জন্য লালায়িত হয় খুব বেশী। আর তখন কোন কোন ব্যক্তি শয়তান ও প্রবৃত্তির ষড়যন্ত্রে পড়ে যায়।
ফলে তাড়াহুড়া করে কিছু সওয়াবের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেগুলো সহিহ মানদণ্ডে যাচাই করার যোগ্যতাও নেই, অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকলেও প্রবৃত্তির দাসত্বে্র কারনে যাচাই করে না এবং যাচাই করার ইচ্ছাও পোষন করে না। এই সাথে সমাজের কিছু তথাকথিত লেবাসধারী সঠিক জ্ঞানের অভাব ব্যক্তিরাও জড়ো হয়ে এটাকে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতের নামে চালিয়ে দেয়। যেমন অনেক ক্ষেত্রে সোয়া লাখ খতম করলেই হবে, মাজারে মানত করলেই হবে, পীরের খুশি আদায় করতে পারলেই হবে, তাসবিহদানা গুনতে থাকলেই হবে ইত্যাদি। অথচ জীবনের হারাম ও শরীয়ত বিরোধী কাজ ও আদর্শের মাঝে এদের সবসময়েই অবস্থান থাকে। যারা সঠিকভাবে দীনকে পালন করতে চায় তাদের তখন শত্রু মনে করে। এইভাবে সমাজে বিভিন্ন গ্রুপিং শুরু হয়ে যায় যা একটি সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন