চলুন মনকে বুঝি-১১
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০২ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৩৫:৫৬ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম
প্রবৃত্তির অনুসরণ গুনাহ, অন্যায় ও অপরাধের কারণ হয়ে থাকে।
প্রবৃত্তির অনুসরণ করা অপমান অপদস্থ হওয়ার কারণ হয়ে থাকে। যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাদের পদে পদে লাঞ্চিত হতে হয়। এ ছাড়াও প্রবৃত্তির অনুসারীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যধিতে আক্রান্ত হয়। যেমন- যারা প্রবৃত্তির অনুকরণ করে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর যখন গুনাহ ও অপরাধের কারণে অন্তর কঠিন হয়, তখন সে কোন অপরাধকে অপরাধ মনে করে না। যে কোন ধরনের গুনাহ, অন্যায় ও অপরাধ সে করতে পারে। কোন অন্যায়কে সে অন্যায় মনে করে না। কোন অপরাধকে সে বড় মনে করে না। তার নিকট সব ধরনের গুণাহ হালকা মনে হয়।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“একজন মুমিন তার গুণাহকে অনেক বড় করে দেখে। মনে হয় সে একটি বিশাল পাহাড়ের নিচে বসা, আশঙ্কা করছে যে পাহাড়টি তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। আর গুণাহগার ব্যক্তি সে তার গুণাহকে একটি মাছির মত মনে করে। অর্থাৎ, মাছিটি তার নাকের উপর বসল, আর ঝাড়া দেয়ার সাথে সাথে চলে গেল”
যদি দুনিয়ার ভালবাসা আখেরাতের ভালবাসার চেয়ে প্রাধান্য পায়, তাহলে ধীরে ধীরে অন্তর কঠিন হতে আরম্ভ করে। ফলে ঈমান কমে যায়, সৎ কাজকে ভারী মনে হয়, দুনিয়াকে ভালবাসা আরম্ভ করে এবং আখেরাতকে ভুলে যেতে থাকে।
ফলে দেখা যায় শুধুমাত্র দুনিয়ার এখনই লাভ হবে বা এখনই কোন প্রশংসা/পুরস্কার পাওয়া যাবে এই ধরনের কাজের ব্যপারে খুবই পরিশ্রমী হয়ে যেতে পারে, অনেক ত্যাগ করতেও সহজ লাগে কিন্তু মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশনাকে উপেক্ষা করতে একটুও দ্বিধা করে না।
সুদ মুক্ত থাকতে হলে একটু পরিশ্রম ও একটু ত্যাগ করতে হয় কিন্তু এটাকে অনেক কষ্টের মনে হয় অথচ সুদের সাথে সম্পর্ক থাকলে ঘরে বসে অনেক সহজে অনেক ধরনের সুবিধা আপাত দৃষ্টিতে পাওয়া যায়,ফলে অনেকে এটাকেই গ্রহন করে।
সমাজে বিদয়াত মুক্ত ও শরীয়তে সীমানায় থাকতে হলে বর্তমান সমাজে অনেক ঝলসানো আনন্দ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয়, ফলে অনেকে লোকের কাছে অপছন্দনীয় বা কমেন্ট শুনতে হতে পারে, কিন্তু যদি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা যায় তাহলে অনেক সহজ হয়ে যেতে পারে ও আনন্দ লাভও হয় সাময়িক ভাবে। তাই দেখা যায় বিভিন্ন বিদয়াতি অনুষ্ঠানে নিজেরাও যোগ দিয়ে অন্যকে বুঝাতে চান অসুবিধা নেই,আমরা সবই করি। এর ফলে বোরকা পড়া মহিলাটিও যেমন গায়ের মাহরামদের সাথে অবাধ মেলেমেশার আনন্দ লাভ করে তেমনি দাঁড়ি রাখা লোকটিও গায়ের মাহরাম নারীর সাথে অবাধ মেলেমেশা করে আনন্দ লাভ করে এবং এটাই সহজ হয়ে যায় তাদের কাছে। একসাথে ছবি তুলে হাসাহাসি করে আনন্দ করাটা অনেক সহজ লাগে। আরো বেশি করে মজাদার করে দেয় শয়তানের সহায়তায়।
অথচ প্রিয় নবীর স.এর উম্মত পরিচয়ে ভালোবাসার/অনুসরনের দাবী করি, রাসূল স. কি আরবের জাহেলী রীতি নীতির সাথে সমঝোতা করেছিলেন কখনো,নাকি মানসিক ও শারিরীক কষ্টকে মেনে নিয়েছেন তবুও তাদের নফসের অনুসরন করাতো দূরে থাক, ধারে কাছেও ঘেসেন নি। তা তে কে কি মনে করলো, ইসলামের দাওয়াত দিতে পারা যাবে না-এইরকম কি চিন্তা করেছিলেন? রাসূলের স. চেয়ে কি আমরা খুব বেশী হিকমাতওয়ালা হয়ে গেলাম? রাসূল স.কি দীনকে কায়েম করে যান নি? আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন।
ইদানিং দেখা যায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম বা পত্রিকায় নিজের পোষ্ট বা খবরটি হিট করার জন্য এমনভাবে নারীর ছবি/ভিডিও আপলোড করে থাকেন যা বেপর্দা নারী নিজে যতটুকু গোনাহের জন্য দায়ী হয় তারচেয়ে যারা আপলোড করছেন, তারা আরো বেশী গুনাহের অর্জনকারী হন প্রচারের জন্য। শরীয়তে পর্দাকে সবসময়ের জন্য ফরয ইবাদাত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই ইবাদাতের বিপরীতে যাওয়াটাই সহজ, অনেক লাইক ও শেয়ার হয়, পাশাপাশি ছবি আপলোড না করে পোষ্টটিকে কিভাবে হিট করা যায় তা কঠিন বৈকী!
এই নারীই হাসরের মাঠে আপলোডকারীকে মহান আল্লাহর কাছে আটকে দিতে পারে।
‘যদি কেউ তার ভাইয়ের ওপর যুলুম করে থাকে, হোক তা মান-ইজ্জত অথবা সম্পদ বিষয়ক, সে যেন আজই তা থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যখন কোনো টাকা পয়সার লেনদেন হবে না। সেদিন যদি তার নেক আমল থেকে থাকে তবে যুলুম পরিমাণ নেক আমল তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে তবে মাযলুম ব্যক্তির গুনাহ নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে’।
ইমাম বূখারী, সহীহ, অধ্যায়: বাদউল ওহী, হাদীস নং ২৪৪৯।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তোমরা কি জান কপর্দকহীন কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো কপর্দকহীন। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো কপর্দকহীন, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেওয়া হবে।
ইমাম মুসলিম, সহীহ, খ- ৮, পৃ. ১৭, হাদীস নং ৬৭৪৪
জনৈক সৎ বান্দা বলেছেন,
‘প্রত্যেক বান্দারই দু’টি চোখ রয়েছে। এক চোখ দিয়ে সে দুনিয়ার বিষয় দেখে। আর অন্তরে যে চোখ আছে তা দিয়ে সে আখেরাতের বিষয় দেখে। আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান, তাহ’লে তার অন্তরে যে চোখ আছে তা খুলে দেন। ফলে আল্লাহ অদৃশ্যের যে ওয়াদা করেছেন সে সেগুলি দেখতে থাকে। আর আল্লাহ যদি অন্য কিছু ইচ্ছা করেন, তাহ’লে তার অবস্থায় তাকে ছেড়ে দেন। তারপর এ আয়াতটি পাঠ করেন, ‘তাদের অন্তরকি তালাবদ্ধ করা হয়েছে’।
মুহাম্মাদ ৪৭/২৪
বিষয়: বিবিধ
১২০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুলিল্লাহ, এইসব থেকে বিরত থাকার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, দোয়া করবেন। মুমিনের কাজইতো হাজার জনে যে খারাপ কাজটা করে, কষ্টকর হলেও সে কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহকে ভালবাসতে গিয়ে মানুষের দৃষ্টিতে হলাম অসামাজিক, তবুও আল্লাহকে তো খুশি করতে পারব।
আমার অফিসেও অশ্লীল ছবি দিয়ে সংবাদ পোস্ট করে, আমি মেসেজ করে সতর্ক করলে এখন কিছুটা কমেছে।
আজকের লেখাটাও মনোযোগ দিয়ে পড়লাম এবং অনেক বেশি সৎকাজ করার জন্য অনেক বেশি প্রেরণা পেলাম। জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন