চলুন মনকে বুঝি-১১

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:০৯:১৯ সকাল

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

ইবনে তাইমিয়াহ রা. বলেন: পুরুষের হৃদয় যদি কোনো নারীর সাথে এঁটে যায়, যদিও সে নারী তার জন্য বৈধ হয়, তাহলেও তার হৃদয় থাকে ওই নারীর কাছে বন্দি। নারী তার অধিপতি হয়ে বসে, পুরুষ তার ক্রীড়নকে পরিণত হয়, যদিও সে প্রকাশ্যে তার অভিভাবক; কেননা সে তার স্বামী। তবে বাস্তবে সে নারীর কাছে বন্দি, তার দাস। বিশেষত নারী যদি জানতে পারে যে পুরুষ তার প্রেমে মুগ্ধ। এমতাবস্থায় নারী তার উপর আধিপত্য চালায়, জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক যেমন তার মাজলুম, নিষ্কৃতি পেতে অপারগ দাসের উপর শাসন চালায়, ঠিক সেভাবেই নারী তার প্রেমে হাবুডুবু-খাওয়া পুরুষের উপর শাসন চালায়। বরং এর থেকেও বেশি চালায়। আর হৃদয়ের বন্দিদশা শরীরের বন্দিদশা থেকে মারাত্মক। হৃদয়ের দাসত্ব শরীরে দাসত্বের চেয়েও কঠিনতর।

আর এটা যখন শক্তিশালী পর্যায়ে পৌঁছে, প্রকট আকার ধারণ করে তখন কখনো আল্লাহর ভালোবাসাকেও অতিক্রম করে যায় এবং ব্যক্তিকে শিরকের দিকে ঠেলে দেয়।

আজ আমাদের সমাজে মহান আল্লাহর দেয়া ভালোবাসার মাপকাঠি সম্পর্কে অনেকে জানেই না, অনেকে এটাকে জেনেও মূল্যায়ন করে না, আবার অনেকে নিজের প্রবৃত্তির কাছে হেরে যায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। ফলে দেখা যায় পিতা মাতার ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়ে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে থাকে, স্বামী, স্ত্রীর ভালোবাসায়/ স্ত্রী, স্বামীর ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়ে শরীয়তের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে, পুরুষ কর্তাটি প্রবৃত্তির দাসত্বের শৃন্খলে থেকে মা-বাবা ও স্ত্রীর হক আদায়ে সমণ্বয় সাধনে ব্যর্থ হয়ে পরিবারে অশান্তি নিয়ে আসে,আর তরুন তরুনীরা অবৈধ প্রেম ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়ে নিজের জীবনসহ পরিবার তথা সমাজ জীবনকে কলুসিত করে ফেলে।

প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয় আজ মিডিয়াগুলোতে নাটক,সিনেমা,মুভি,গান সবকিছুরই যেন একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হলো জীবনের জন্য শুধুই প্রেম যা বৈধ বা অবৈধ কোন নিয়ম নীতির প্রয়োজনীয়তা নেই। জীবনের মূল উদ্দেশ্য থেকে সবাইকে সরিয়ে শয়তানের পথে চালিত করাই এর মূল কারন।

পরকালের প্রতিদান হলো, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচারণ করবে, তার স্থান জান্নাত আর যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুকরণ করবে, তার স্থান জাহান্নাম।'

অন্তরে যখন ইমানের উপস্থিতি কম হয়, তখনই প্রবৃত্তি ও কু-কামনা বৃদ্ধি পায়, বরং তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

ইবনুল কাইয়ূম রহ. বলেন, প্রবৃত্তির প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করার চেয়ে প্রবৃত্তি দমন করাই সহজ। কারণ, প্রবৃত্তির প্রায়শ্চিত্ত খুবই নির্মম ও বেদনাদায়ক। হয়তো অফসোস, হয়তো হতাশা কিংবা অসম্মান। কখনো সম্পদ বঞ্চিত হওয়া, কখনো পদচ্যুতি কিংবা মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। আবার অধস্তন ব্যক্তিদের তিরস্কার বা নিন্দার পাত্রে পরিণত হওয়াও কম কিসের!? যা কল্পনাতেও স্থান পায়নি কখনো। অধিকন্তু অন্তরের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, বিষাদ-দুশ্চিন্তা আর ভয় ও শঙ্কা তো রয়েছেই। ন্যূনতম পক্ষে প্রবৃত্তির ফলে তুলনামূলক বিনোদন থেকে মাহরুম হওয়া, শত্রুর খুশির কারণ হওয়া, শুভাকাঙ্খীদের দুশ্চিন্তায় লিপ্ত হওয়া, অথবা কলঙ্কের চাপ মাথায় নিয়ে বেচে থাকায় মঙ্গল কোথায়! কারণ, কর্মের দ্বারাই মানুষ সৎ-অসৎ ও ভাল-মন্দ হিসেবে বিবেচিত হয়, বরং কর্মই তার ফল নির্ধারণ করে দেয়, তাই প্রবৃত্তি তাড়িত কর্মের ফলাফল চিন্তা করে প্রবৃত্তির ডাকে সাড়া না দেয়াই হচ্ছে বিবেকবান কাজ।

আজকের যুব সমাজের অবস্থা দেখলে খুবই কষ্ট অনুভূত হয়। কত মেধা, প্রতিভা, যোগ্যতাকে প্রবৃত্তির নিকট নত করে অবলীলায় নষ্ট করে ফেলছে, ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। এটার পিছনে যেমন আমাদের অসচেতনতা (ছোটবেলা থেকেই প্রবৃত্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার নীতি শেখানো) দায়ী তেমনি একটি অপশক্তি পরিকল্পিতভাবে আমাদের সমাজকে মেধাশূন্য করে উন্নত জাতি না হওয়ার চক্রান্তে কাজ করছে। তাই দেখা যায় বিভিন্ন গান, নাচের প্রতিযোগীতা, সুন্দরী প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগীতার নামে যুবক-যুবতিকে ঘরের বাইরে একান্তে সান্নিধ্যে নিয়ে যাচ্ছে, ফলে যা হবার তা আজ সমাজের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়।

ইবনে কাইয়ূম রহ. বলেন, একটি প্রবাদ রয়েছে : মেয়েদের যখন ছেলেরা ফাঁদে ফেলতে না পারে, তখন তাদের গান শোনায়, যার ফলে তাদের অন্তরে এক ধরণের দুর্বলতার সৃষ্টি হয়। কারণ, মেয়েরা আওয়াজ শোনে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল হয়, আর সে আওয়াজ গানের হলে তাদের অন্তরে দু'ভাবে বিশেষ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে : আওয়াজের দ্বারা, গানের অর্থের দ্বারা।

ইবনুল কাইয়ূম রহ বলেন, 'চোখ অন্তরের আয়না স্বরূপ, চোখ বন্ধ করলে অন্তরও তার প্রবৃত্তির ওপর পর্দা টেনে দেয়। আর চোখ উন্মুক্ত রাখলে অন্তরও তার প্রবৃত্তি উন্মুক্ত করে রাখে।' তিনি আরো বলেন, অন্তরের মধ্যে কু-দৃষ্টির প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার পর, ব্যক্তি যদি দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করে এবং সাথে সাথে তার মূল উপড়ে ফেলে, তবে এর প্রতিকার করা খুব সহজ। এর বিপরীতে যদি সে বারবার তাকাতে থাকে, তার ছবি অন্তরে বারবার স্মরণ করতে থাকে, তবে তার ভালবাসা অন্তরে প্রোথিত হয়ে যাবে। কারণ, বারবার দৃষ্টি দেয়ার অর্থ হচ্ছে কু-প্রবৃত্তির গাছটি পানি দ্বারা সিঞ্চন করা। আর এভাবেই প্রবৃত্তির গাছটি ক্রমশ বড় হয়ে একদিন তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, ভুলিয়ে দিবে তাকে নিজ দায়িত্ব। অধিকন্তু সে এর কারণে বিভিন্ন পরীক্ষা ও কষ্টের সম্মুখিন হবে, নানা অপকর্মে লিপ্ত হবে।'

আর মহান আল্লাহ আলকুর’আনে পর্দার আয়াতের প্রথম নির্দেশনাই হলো দৃষ্টি সংযমের ব্যপারে।

কতক আলেমগণ বলেন, চারটি জিনিষের মধ্যে কুফরি নিহিত থাকে।

এক- অতিরিক্ত রাগ,

দুই-প্রবৃত্তি,

তিন- অধিক আগ্রহ,

চার-ভীতি।

এক ব্যক্তি খুব রাগান্বিত হল, অতঃপর সে তার মাকে হত্যা করল। আর এক ব্যক্তি একজন মেয়ের প্রেমে পড়ে খৃষ্টান হয়ে গেল। কারণ, তার প্রতি তার আগ্রহ এত প্রবল ছিল, সে তার ঈমান আমল সবকিছু ভূলে গেল।

এক লোক বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা অবস্থায় একজন সুন্দর নারীকে দেখে তার পাশে গিয়ে তাওয়াফ করতে আরম্ভ করে। তারপর সে বলল,

“আমি দ্বীনকে মহব্বত করি। কিন্তু প্রবৃত্তির সাধ আমাকে অভিভুত করল। আমি বুঝতে পারছিনা প্রবৃত্তির সাধ আর দ্বীনের সাধ হতে কোনটিকে প্রাধান্য দেব”।

তার কথা শোনে রমণীটি বলল, তুমি যে কোন একটি ছাড়, তাহলে অপরটি অবশ্যই পাবে। প্রবৃত্তি ও দ্বীন একসাথে একত্র করতে পারবে না।

[যার প্রবৃত্তি মানুষের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে, তার কাছে আল্লাহর ঘরও তুচ্ছ হয়ে যায়। সে আল্লাহর ঘরের সামনে গিয়েও অপকর্ম করতে দ্বিধাবোধ করে না।] আল্লাহ আমাদের এ ধরনের পরিণতি হতে হেফাজত করুন! আমীন!



বিষয়: বিবিধ

১১৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355895
০১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:০৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম।

মূল্যবান লিখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। লিখাটি প্রচারের দাবি রাখে! আজকের ধ্বংষ প্রায় সমাজের জন্য অতীব জরুরী এই নির্দেশনা!

জাযাকিল্লাহ খাইর।
355979
০২ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৮:১২
মিশু লিখেছেন : সুপ্রিয়া বোনটি আমার,তোমাকে মহান আল্লাহ আরো অনেক রহমত দান করুন এবং আমাদের সমাজের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File