চলুন তাকওয়ার বীজতলার, বীজের খোজ নেই ও যত্ন নেই-১
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৯:৪০ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম
ব্লগে যারা অনেক সময় দিতে পারেন,তারা অনেক কিছুই শেখার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। কিন্তু আজ খুব বেশী প্রয়োজন সংগ্রামী আর সিংহ সাহসী কর্মীর।
লেখা কথা বক্তব্যে খুব বেশী আকর্ষনীয় হওয়ার চেয়ে প্রয়োজন বাস্তব আমলদার মুমিন। যাকে দেখলে আখেরাতের কথা মনে করিয়ে দিবে।
নিজের সময়ের হিসেব করে দেখি, কোথায় চলেছি আমি-জান্নাতের রাস্তায় না কি জাহান্নামের রাস্তায় নাকি আরাফের রাস্তায়?
হায়! সেই সময়টা যদি তুমি দেখতে যখন অপরাধী তার প্রভুর সামনে অবনত মস্তকে দাঁড়াবে এবং বলবে: হে আমার প্রতিপালক! এবার আমরা দেখে নিয়েছি এবং শুনতেও পেয়েছি, এখন আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও, আমরা ভালো কাজ করবো, এবার আমরা প্রত্যয় লাভ করেছি। কিন্তু বলা হবে, এবার তোমরা সেই অবহেলার স্বাদ গ্রহণ করো যে কারণে তোমরা এই দিন আমাদের সামনে হাযির হওয়ার ব্যাপারকে ভুলে গিয়েছিলে। আজকে আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি। সুতরাং তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে আজ চিরস্থায়ী আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। সূরা আস সাজদা: ১২-১৪
তাই আমরা এখন থেকেই নিজের আমলনামার হিসেব প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পর্যালোচনা করে দেখি, আমি ভালো-মন্দের কোন অবস্থায় আছি? প্রতিদিন একটি বেলা করে জীবন চলে যাচ্ছে মূল ঠিকানা কবরের দিকে। একেক ঘটনা/কমিটমেন্ট/সমস্যাকে পার করতে করতে আরেকটি ব্যস্ততা এসে যায়। আর এইভাবেই মাস ঘুরে বছরও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অবস্থানকে কোথায় নিতে পেরেছি? আমরা কি নিজেদের সংশোধন করে এগিয়ে নিতে পারছি মহান রবের নৈকট্য লাভের দিকে?
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ তা’লাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই যেন খেয়াল রাখে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি ব্যবস্থা রেখেছে। আর তোমরা ভয় করো আল্লাহ তা’লাকে। আল্লাহ নিশ্চিতই তোমাদের সেই সব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করতে থাকো। তোমরা সেই লোকদের মত হয়ে যেও না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা বানিয়ে দিয়েছেন। এসব লোকেরাই ফাসেক। সুরা আল হাশর: ১৮-১৯
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ তা’লা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি নিজেকে আমার ইবাদাতের জন্য মুক্ত করে দাও, আমি তোমার বক্ষকে ঐশ্বর্য ও অভাবহীনতা দিয়ে পূর্ণ করে দিব। তোমার দারিদ্র ও অভাব দূর করে দিব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করব না।
আল জামে আত তিরমিযী ও ইবনে মাজা
প্রতিটি মানুষই চায় দুনিয়ার জীবনে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে। মুমিন ব্যক্তি বা রহমানের বান্দারা চায় দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি। মহান আল্লাহ এইভাবে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। আল বাকারা: ২০১
বুদ্ধিমান ব্যক্তির কর্তব্য হলো তার সময়কে ভাগ করে নেয়া। কিছু সময় ব্যয় করবে তার প্রভুর প্রার্থনায়, কিছু সময় ব্যয় করবে আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল বিষয়ে চিন্তা করে, কিছু সময় রাখবে আত্মসমীক্ষার জন্য এবং কিছু সময় ব্যয় করবে জীবিকার প্রয়োজনে। (ইবনে হিব্বান)
কাজ মূলত তিন ধরনের:
১। নিজের প্রতি কর্তব্য ২। স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য ৩। সৃষ্টির প্রতি কর্তব্য
তাই সময়কে কাজের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন:
আর মানুষ ততটুকু ফল লাভ করবে যতটুকু চেষ্টা সে করেছে, তার প্রচেষ্টা শিগগীরই দেখে নেয়া হবে। অতঃপর সে পুরোপুরি ফল লাভ করবে। আর পরিশেষে সবাইকে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই পৌঁছাতে হবে। সূরা নাজম: ৩৯-৪২
যে কোন ভালো কাজের পরিকল্পনা করলেই নেকী লেখা হয়, আর সেটা বাস্তবায়ন করলে সেই নেকী বৃদ্ধি হতে থাকে। তাই আমরা আমাদের পরিকল্পনা করে নেই এবং সেটা বাস্তবায়ন শুরু করি মহান আল্লাহর নামে।
হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ তা’লা বলেন, বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক কায়া পরিমাণ এগিয়ে যাই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। সহীহ আল বুখারী
দুনিয়ার জীবনকে কাজে লাগিয়েই আখেরাতের জীবনকে শান্তিময় করতে হবে। প্রযুক্তিগত যত উন্নয়ন হবে মানুষের চিন্তাধারায় আরো বেশী জ্ঞানের আলো/বুঝার শক্তি বেড়ে যাবে যা দিয়ে সে আল্লাহ তা’লার আরো প্রিয় হবার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেজন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং তা হতে হবে পরিকল্পিতভাবে।
জীবন ক্ষণস্থায়ী। আমরা যতই মনে করি না কেন যে আরো অনেক বছর বেঁচে থাকবো বা বিভিন্ন চাওয়া পাওয়ার মাঝে সাময়িক ভুলে থাকি যে আমাকে যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে হবে এই সুন্দর মায়াময়ী সংসার ও মনভুলানো দুনিয়া থেকে। মহান আল্লাহ বলেছেন:
তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু (এসে) তোমাদের গ্রাস করবেই, এমনকি তোমরা যদি (কোনো) মজবুত দুর্গেও থাকো (সেখানেও মৃত্যু এসে হাযির হবে)। সূরা আন নিসা: ৭৮
কোন প্রাণীই আল্লাহর (সিদ্ধান্ত ও) অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না, (আল্লাহ তা’লার কাছে প্রত্যেকটি প্রাণীরই মৃত্যুর) দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট। সূরা আলে ইমরান: ১৪৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করতে শিখিয়েছেন:
১। বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে
২। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে
৩। দারিদ্র আসার পূর্বে স্বচ্ছলতাকে
৪। ব্যস্ত হয়ার পুর্বে অবসর সময়কে
৫। মৃত্যু আসার পূর্বে জীবনকে
মিশকাত শরীফ
কিন্তু দেখা যায় অবসর পেলে অনেকেই আমরা একটু শুয়ে বসে গল্প করে কাটিয়ে দেই, আবার অসুস্থ হলে তখন আফসোস করে বলতে থাকি যে, সুস্থ থাকলে ভালো আমলগুলো করতাম। এইভাবেই জীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে বিনা পারিশ্রমিকে শেষ করে দিচ্ছি। সচেতন ব্যক্তিরা কিন্তু নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সব সময়ই সাবধান থেকে সময়ের সাথে সাথে কাজকে বাস্তবায়ন করেই যাচ্ছেন। তারা কিন্তু বলেন না যে, আজ নয় আগামীকাল করবো, বরং এই ধরনের ব্যক্তিরা বলেন, কোন কাজটা এখন করব, আর অন্যটা এর পরে করে ফেলব ইনশা’আল্লাহ। আগামী দিনের জন্য কাজ ফেলে রাখে তারাই যারা অলস ও পরিকল্পনাহীন ভাবে সময় পার করেন।
পরিকল্পনা করতে হলে লক্ষ্য রাখতে হবে --
১। লক্ষ্য স্থির করুন
২। নিজের সামর্থ্য, যোগ্যতা, অবস্থা ও অবস্থান
৩। কাজের তালিকায় থাকবে প্রতিদিনের আবশ্যকীয় কাজ, অতিরিক্ত কাজ,জরুরী কাজ।
৪। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজের তালিকা তৈরী
৫। কিছু কাজ অন্যকে দিয়ে করানোর পরিকল্পনা থাকা
৬। সময়কে বাঁচাতে হলে কিছু টিপস:
· সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করা
· সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলা
· কম সময়ের কাজ ততটুকু সময়ে করে ফেলা
· যা প্রয়োজন নেই তা না করা
· যা করে লাভ নেই তা না করা
· যা করলে ক্ষতি তা না করা
· যা দায়িত্ব না, তা না করা
· অপ্রয়োজনীয় বা বাজে কথা ও কাজ না করা
· অবসর সময়কে কাজে লাগানো
· অপেক্ষার সময়কে কাজে লাগানো
· এক কাজের ফাঁকে অন্য কাজ করার সুযোগ থাকলে করে ফেলা।
· তাই চলুন সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়ানোর আগে সময়কে কাজে লাগাই কারন-
“হে লোকেরা! তোমাদের সর্বশক্তি্মান প্রভু আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার কাজ করো এবং সেইদিনটিকে ভয় করো, যেদিন কোন পিতা তার সন্তানের কোনোই উপকারে আসবে না,আর সন্তান ও পিতার কোনো উপকারে আসবে না। আল্লাহর প্র্রতিশ্রুতি সত্য।সু্তরাং দুনিয়ার জীবন যেনো তোমাদের প্রতারিত না করে।আর বড় প্রতারক শয়তান যেনো তোমাদের প্রতারিত না করে।”—লোকমান-৩৩
আগামী ৬ মাসের জন্য একটি পরিকল্পনা করে নিজেকে ও পরিবারসহ অন্যদেরকেও আত্মীক ও ব্যবহারিক উন্নতি করার উদ্যোগ নেই চলুন। এরপর আসবে রামাদান ইনশা’আল্লাহ। চলুন তাকওয়ার বীজতলার, বীজের খোজ নেই ও যত্ন নেই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১১১৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ,
জাযাকাল্লাহী খাইরান,মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে সময়ের ব্যবহারের তাওফিক দান করুন।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন