চলুন মনকে বুঝার চেষ্টা করি --৮

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:০১:০৮ সকাল

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ.



প্রবৃত্তির অনুসরণ করা, মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর, প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা একজন মানুষের উপর ফরয এবং তাকে প্রতিহত করা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আবু হাযেম রহ. বলেন, তুমি তোমার দুশমনের সাথে যেভাবে যুদ্ধ কর, তার চেয়ে আরও বেশি যুদ্ধ কর তোমার প্রবৃত্তির সাথে।

হুলিয়্যাতুল আওলিয়াহ ২৩১/৩

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“অক্ষম সে ব্যক্তি যে তার নফসকে তার প্রবৃত্তির অনুসারী বানায়”

ইবনে মাযাহ: ৪২৬০ হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।

এ হাদিসে যে ব্যক্তি নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তাকে অক্ষম বলা হয়েছে। বাস্তবে সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সে যখন তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না তার চেয়ে দূর্বল ব্যক্তি দুনিয়াতে আর কেউ হতেই পারে না।

আজ আমরা অনেকেই নিজেদের এই অবস্থানে দূর্বলতার পরিচয় দিচ্ছি। ফলে অধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে থাকি। আমাদের মন শতদিকে শতভাবে বিচরন করতেই থাকে। এই মনকে একান্তে প্রশ্ন করে করে যদি এগুনো যায়, তাহলে নিজের কাছেই প্রবৃত্তির আসল রুপ ধরা পরে যাবে, ফলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে কোন পথে যাবো।

ঈমান একটি কাল্পনিক অবস্থা যা ধরে দেখানো যায় না। তবে অন্তরে এর অবস্থান থাকলে বাস্তব কাজ ও ব্যবহারের সাথে ঈমানের সম্পর্ক টের পাওয়া যায়। এই কাল্পনিক অবস্থার মাধ্যমে বুঝ শক্তিরও প্রকাশ ঘটে। এর কারন হচ্ছে জীবন্ত সত্তা অর্থাৎ মানুষের বিবেকের মাঝে ঈমানের অবস্থান। আর এই অবস্থাকে দিয়েই মুমিন ব্যক্তি পথ চলাকে সিরাতুল মুস্তাকীমের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।

আল্লামা ইব্ন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, মানবজাতিকে শুধু তার নফস বা প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করে কখনোই শাস্তি দেয়া হবে না, তাকে শাস্তি দেয়া হবে, প্রবৃত্তি ও নফসের অনুকরণ ও অনুসরণ করার উপর। যখন মানবাত্মা কোন কিছুর আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু সে তা না করে মানবাত্মাকে তা থেকে বিরত রাখে, তাহলে তাকে কোন প্রকার শাস্তি পেতে হবে না, বরং তার জন্য এ বিরত থাকা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত ও ইসলামী শরীয়তের নেক আমল বলে পরিগণিত হবে। মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া ৬৩৫/১০

এ হল একজন সত্যিকার মুসলিমের অবস্থা। সর্বদা তার নফস তাকে বিভিন্ন খারাপ ও মন্দ কাজের নির্দেশ দিতে থাকে। আর সে তার নফসের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে এবং নফসের নির্দেশ অমান্য ও বিরোধিতা করে আল্লাহকে ভয় করতে থাকে, যার মধ্যে এ ধরনের গুণ পাওয়া যাবে সে ব্যক্তিই হল সত্যিকার ঈমানদার ও প্রকৃত মুমিন। আর এ ধরনের ঈমানদারের জন্য রয়েছে জান্নাত ও উত্তম প্রতিদান।

আল্লাহ রাব্বূল আলামীন বলেন,

“আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল”।

সূরা নাযিয়াত: ৪০-৪১

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুটি জিনিষকে স্পষ্ট করেন,

এক-যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ভয় করে তার প্রবৃত্তির অবস্থান অনুযায়ী। শুধু ভয় করা যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহকে ভয় করতে হবে তার শান ও অবস্থান হিসেবে।

দ্বিতীয়ত- প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো হতে তাকে বিরত থাকতে হবে; মনে যা চায় তা করা হতে বিরত থাকতে হবে। নিজের নফস বা নফসের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হবে। তখন তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা হল জান্নাতই হবে তার আবাসস্থল।

মোট কথা, প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী আমল করা ব্যতীত কাউকে কোন প্রকার শাস্তি দেয়া হবে না। কোন মানুষ যখন কোন গুনাহ করার ইচ্ছা করে বা তার গুনাহ করতে মনে চায়, শুধুমাত্র এর উপর তাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না। তবে যদি লোকটি তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা অনুযায়ী আমল করে, তখন তাকে তার আমল ও প্রবৃত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“আদম সন্তানদের জন্য ব্যভিচারের একটি অংশ অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সে তার জীবদ্দশায় তা অবশ্যই অর্জন করবে। তার চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার হল, খারাপ বস্তুর প্রতি দৃষ্টি, কর্ণদ্বয়ে ব্যভিচার হল, কোন খারাপ বা অশ্লীল কথার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল, শরীয়তের পরিপন্থী কথা, হাতের ব্যভিচার হল, নিষিদ্ধ কোন বস্তুকে স্পর্শ করা আর পায়ের ব্যভিচার হল কোন নিষিদ্ধ কাজের প্রতি অগ্রসর হওয়া। অন্তর আশা করে এবং ধাবিত হয়, লজ্জাস্থান তা সত্যে পরিণত করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। মুসলিম [২৬৫৭]

হাদিস দ্বারা একটি কথা প্রমাণ হয়, মানুষের অন্তরে যখন কোন খারাপ বা নিষিদ্ধ কাজের উদ্রেক হয়, তার জন্য তাকে কোন প্রকার শাস্তি পেতে হবে না এবং তাকে তার জন্য ভালো বা খারাপ বলে মন্তব্য করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার অন্তরের কাজটিকে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা বাস্তবায়ন না করে। তার হাত পা মুখ যখন তার অন্তরের কোন কাজকে বাস্তবায়ন করবে তখন তার উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধান চালু হবে।

ইবনে কাইয়ূম রহ. ইসলামের মধ্যম পন্থার ব্যাখ্যায় বলেন, 'মানুষ কখনো প্রবৃত্তি থেকে আলাদা হতে পারবে না, যতদিন সে আছে ততদিন তার প্রবৃত্তিও আছে, এর থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব, তাই ইসলাম তাকে প্রবৃত্তি থেকে আলাদা হতে বলেনি বরং তা নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন তাকে নারীর প্রতি আসক্তি ত্যাগ করতে বলেনি, বরং তাকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণ করার বিধান দিয়েছে। এভাবেই ইসলাম মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানব জাতিকে নৈতিক পদস্খলন, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করা।

'

বিষয়: বিবিধ

১০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File