চলুন মনকে বুঝার চেষ্টা করি-৩
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:০৫:৩২ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
নাফস ও রুহ মূলত একই বস্ত। তবে পারিভাষিক ভাবে ভিন্ন ভিন্ন অর্থেও ব্যবহার হয়। এর অর্থ আত্মা বা প্রান।
নাফস আরবী শব্দ নাফীস থেকে উদ্ভূত।
নাফীস অর্থ সুন্দর ও আকর্ষনীয় বস্ত।
আরেকটি অর্থ বলা হয়। আরবী তানাফফুস থেকে উদ্ধৃত।
তানাফফুস অর্থ শ্বাস গ্রহন। শ্বাস যেমন দেহ থেকে বের হয় এবং দেহে ফিরে আসে ঠিক তেমনি রুহও একবার দেহ থেকে বের হয় আবার ফিরে আসে। যেমন –ঘুম ও কবরে।
গুনগত ও অবস্থানগত দিক দিয়ে নফসের ৩ অবস্থা।
১। মুতমায়িন্নাহ ২। আম্মারাহ ৩। লাওয়ামাহ
নফসে মুতমায়িন্নাহ
যখন নফস আপন প্রভু আল্লাহর প্রতি ভালবাসায়, ইবাদত, ক্ষমা-প্রার্থনায়, তাঁর অভিমূখী হওয়া, সব কাজে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে প্রশান্ত হয়ে উঠে।
প্রকৃ্তপক্ষে ইতমিনান বা প্রশান্তি আল্লাহর পক্ষ থেকেই মানুষের অন্তরে অবতীর্ণ হয়।
চিত্তের প্রশান্তি এমন এক জিনিষ যা দ্বারা মনের যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও দুঃখব্যথা দূর হয়ে যায়।
জেনে রেখো আল্লাহর যিকরের মাধ্যমেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।
সূরা রাদ:২৮
আল্লাহ তাঁর নামসমূহ ও গুনাবলী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে যা বলেছেন বান্দা সেগুলোর প্রতি মনে প্রানে বিশ্বাস স্থাপন করে আনুগত্য প্রকাশ করে, ওযর-আপত্তি ছাড়াই মেনে নেয়—এ থেকেই তার অন্তরে আনন্দের ধারা নামে।
দুনিয়ার প্রতিকূল অবস্থায় এই প্রশান্তির সামান্যতম বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। এটাই প্রশান্তির প্রথম স্তর।
এরপর যতই কোর’আন শুনবে ততই প্রশান্তি বৃদ্ধি পাবে। এ প্রশান্তি হলো ঈমানের মুল শিকর বা ভিত্তি যার উপর ঈমানের প্রাসাদ গড়ে উঠে।
প্রশান্তি দু প্রকার।---
১। আল্লাহর উপর ঈমান ও ইতিকাদ সূদৃঢ় হবে এবং তার চাহিদা অনুযায়ী বন্দেগীর প্রভাবসমূহ দ্বারা চিত্তের প্রশান্তি অর্জিত হবে।
২। ইহসান বিষয়ক আন্তরিক প্রশান্তি-অর্থাৎ আন্তরিক ও নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহতায়ালার নির্দেশাবলী পালনের মাধ্যমে শান্তি।
আত্মার প্রশান্তি দুটি জিনিষের মধ্যে কেন্দ্রীভূত।
১। জ্ঞান ও বিশ্বাসের মধ্যে
২। ইরাদা (সংকল্প) ও আমলের মধ্যে।
এইরুপ ব্যক্তি বুঝতে পারে যে নফস সব খারাপের উৎস।
সে বলে-
হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস, আমি তো ঠাট্টাকারীদের মধ্যে ছিলাম।
সূরা যুমার:৫৬
অতঃপর এ ভাবে বাকী জীবন সে সুন্দর সংশোধনে এগিয়ে চলে। প্রকৃ্তপক্ষে তার যাবতীয় পূন্যাদি অর্জনের ক্ষমতা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ ভাবেই সে আসহাবে ইয়ামীনে উন্নিত হতে পারে।
আর যদি সে ডানদিকের একজন হয় তাকে বলা হবে, হে দক্ষিন পার্শ্ববর্তী, তোমার প্রতি শান্তি।
সূরা ওয়াকিয়া:৯০-৯১
আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে আমার নিকটবর্তী হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। আর আমি যখন ভালোবাসে ফেলি, তখন আমি তার সেই কান হই যা দিয়ে সে শুনে, আমি তার চোখ হই যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার মুখ হই যা দিয়ে সে কথা বলে।
(হাদীসে কুদসী)
তাই বান্দা আল্লাহর এত প্রিয় হয়, তখন সে, আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা ই করে।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন-
হে প্রশান্ত আত্মা। তোমার আল্লাহর দিকে চল, এরুপ অবস্থায় যে, তুমি (তোমার ভালো পরিনতির) সন্তষ্ট এবং (তোমার আল্লাহর নিকট ) প্রিয়পাত্র। আমার বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও এবং প্রবেশ কর জান্নাতে।
(ফজর:২৭-৩০)
যে লোক নিজের নফসের খাহেশকে নিজের আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে এবং আলাহর ইলম থাকা সত্ত্বেও তাকে গোমরাহীতে ফেলে রেখেছে, তার দিল ও কানের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের চোখের উপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন। আল্লাহ ছাড়া তাদিগকে হেদায়াত দেয়ার আর কে-ই –বা আছে? তোমরা কি শিক্ষা গ্রহন করবে না ?
সূরা জাসিয়াঃ২৩
এমনটা কি কখনও হতে পারে যে, যে লোক তার আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত এক সুস্পষ্ট পরিচ্ছন্ন হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত , সে সেই লোকদের মত হয়ে যাবে যাদের জন্য খারাপ কাজ সমূহ মনোহর বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা নিজেদের কামনা বাসনার অনুসারী হয়ে গিয়েছে ?
সূরা মুহাম্মদঃ১৪
বিষয়: বিবিধ
১০৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন