চলুন মনকে বুঝার চেষ্টা করি-২

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৪ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৪:৫৬ সকাল

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

মহান আল্লাহ বলেছেন-

“ কিন্তু তা সত্ত্বেও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেলো। তা হয়ে গেলো পাথরের মতো, বরং তার চেয়েও কঠিন! অথচ এমন পাথরও আছে, যা থেকে প্রবাহিত হয় ঝরণাধারা; আর এমনও (পাথর) আছে, যা ফেটে গেলে তা থেকে বের হয়ে আসে পানি! আবার অবশ্যই এমনও (পাথর) আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে যায়! আর আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে মোটেই অনবহিত নন।”-(বাকারা-৭৪)

ঊপমাটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। পাথর আপাতঃ দৃষ্টিতে এক নির্জীব প্রাকৃতিক কঠিন বস্তু। কিন্তু তার মাঝেও রয়েছে কোমলতা, যার অনুপম বর্ণনা করেছেন স্বয়ং তার সৃষ্টিকর্তা। এই বস্তুটির সাথে মানুষের হৃদয়ের তুলনা করেছেন রাব্বুল আ’লামীন।

এখানে ৩ ধরণের পাথরের উল্লেখ করা হয়েছে:

ক. যা থেকে প্রবাহিত হয় ঝরণাধারা তথা নদী-নালা – সৃষ্ট জীবের উপকারে আসে।

খ. যা ফেটে গলে বের হয়ে আসে পানি, অর্থাৎ বাইরে কঠিন হলেও অন্তঃস্থল সুকোমল; আর

গ. কিছু পাথর, আরো সংবেদনশীল, যা যমীনে ধ্বসে পড়ে মহান আল্লাহর ভয়ে!

কিন্তু মানুষের মাঝে এমনও কিছু হৃদয় আছে, সৃষ্ট-জীবের দুঃখ-দুর্দশায়ও ঐ পাষানদের চোখ অশ্রুসজল হয় না, আল্লাহর আক্রোশের ভয়ে হৃদয়গুলো এতটুকু প্রকম্পিত হয় না, অন্তরগুলো বিগলিত হয় না আল্লাহর কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন দেখেও।

আদম সন্তানের হৃদয়, সে তো বুকের মধ্যে। কিন্তু তার সকল তৎপরতা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সক্রিয় করে কর্মুরুপে প্রকাশ পেয়ে দৃশ্যজগতে চলে আসে। মানুষের হৃদয়-মন আল্লাহতা’আলার এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি। যখন বুকের সেই হৃদয় অন্ধ হয়ে যায় তখন সবকিছু দেখতে পেলেও চোখের উপর পর্দা পড়ে যায়।

“ এই লোকেরা কি যমীনে চলাফেরা করে নাই যে, তাদের দিল বুঝতে পারতো এবং তাদের কান শুনতে পারতো? আসল কথা এই যে, চক্ষু কখনো অন্ধ হয় না কিন্তু সেই হৃদয় অন্ধ হয়, যা বুকের মধ্যে নিহিত রয়েছে।–(হজ্জ্ব-৪৬)

কোর’আনের ভাষা উন্নত সাহিত্যের ভাষা। এখানে সাহিত্যের ভাষায় আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা বরং প্রায় সবরকমের কাজকেই মস্তিষ্ক, বক্ষদেশ ও হৃদয়ের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। এমনকি কোন কথা মনে থাকার ব্যপারটিও এভাবে বলা হয়,“সেটা তো আমার বুকে সংরক্ষিত আছে।

আবূ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনু মোহাম্মদ বলেছেন (৫১৭ হিজরীতে মারা যান)-

হে ঐ ব্যক্তি ! “যে, পাপরাশির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে আনন্দ উপভোগ করছো, তুমি তোমার বার্ধক্য ও অচলাবস্থা হতে কি বে-খবর রয়েছো?

তোমার জন্য উপদেশ যদি ক্রিয়াশীল না হয় তবে তুমি দেখে শুনেও কি শিক্ষা গ্রহন করতে পারো না ? জেনে রেখো যে, চক্ষু ও কর্ণ কাজ না করলে এটা ততো দোষনীয় নয় যতো দোষনীয় হলো ঘটনাবলীর মাধ্যমে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহন না করা।

স্মরণ রেখো যে , যামানা, দুনিয়া, আসমান, সূর্য ও চন্দ্র কিছুই বাকী থাকবে না। মন না চাইলেও তোমাকে একদিন দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহন করতেই হবে, তুমি আমীরই হও বা ফকীরই হও এবং শহরবাসীই বা পল্লীবাসীই হও”।

সম্ভবত সারা জীবনে যতোবার এই হৃদয় স্পন্দন করে ততোবারই মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের তোলপাড় হতে থাকে।

আজ পর্যন্ত কোন কিছুই এই মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে নি শুধু একটি জিনিষ ছাড়া- আর তা হল আল্লাহর স্মরন।

আল্লাহতা’লা বলেন- তাদের দিল আল্লাহর স্মরনের কারনে পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে। সাবধান থেকো, আল্লাহর স্মরন আসলে সেই জিনিস যার দ্বারা দিল পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে থাকে।

সূরা রা’দ-২৮)

এ অবস্থায় মানুষ সকল অস্থিরতা থেকে চিরতরে মুক্ত হয়ে যায়।

“ ঈমানদারদের জন্য এখনও কি সেই সময় আসেনি যে, তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরনে বিগলিত হবে এবং তাঁর নাযিল করা মহাসত্যের সম্মখে অবনত হবে এবং তারা সেই লোকদের মতো হয়ে যাবে না, যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। পরে একটা দীর্ঘকাল তাদের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে, তাতে তাদের হৃদয় শক্ত হয়ে গিয়েছে এং আজ তাদের অনেকেই ফাসিক হয়ে রয়েছে।–হাদীদ-১৬

আল্লাহর কালাম এবং নবীর সংগ অথবা শিক্ষা পেলে যদি অন্তর বিগলিত হয় তবে তাকেই ঈমান বলে।



বিষয়: বিবিধ

১০০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348447
০৪ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০২
ছালসাবিল লিখেছেন : Day Dreaming অনননননেক কিচু শিখলাম Day Dreaming Rose
348546
০৫ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০২
মিশু লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File