ইতিহাসে আশুরা
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:১১:৪৮ রাত
আসসালামু’আলাইকুম
জালিম সাম্রাজ্য যত শক্তিশালী হোক না কেন, যত বর্বর ও পিশাচ হোক না কেন তার পতন হবেই। যদি আমরা সত্যিকারার্থে ঈমানদার হই ও জালেম সাম্রাজ্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ধৈর্যের সাথে অটল থাকতে পারি।
আর মুসা আ. ও তার অনুসারীরা এদিনেই তো ফেরআউনী সাম্রাজ্যেকে পরাজিত করেছিলেন আল্লাহর সাহায্যে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
মুসা তার সম্প্রদায়কে বলল, 'আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর; এ পৃথিবীতো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন এবং শেষ ফলাফল তো মুত্তাকীদের পক্ষে।
সূরা আরাফ : ১২৯
মহান আল্লাহর সাহায্য ও সত্যের বিজয়---
ফেরআউনের কবল থেকে মুসা আ. ও তার জাতির মুক্তি ছিল আল্লাহ তাআ'লার এক বড় নেয়ামত। আল কুর’আন থেকে জানা যায়-
আর (আল্লাহ বলেন): সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আর এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছিল মহা পরীক্ষা।
সূরা আল আরাফ:১৪১
যাও, তোমরা দুজন(মুসা আ. ও তাঁর ভাই হারুন আ.) ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে। তার সাথে কোমলভাবে কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে।
সূরা ত্বাহা :৪৩-৪৪
যাও তার কাছে এবং বলো, আমরা তোমার রবের প্রেরিত, বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তোমার রবের নিদর্শন এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে। আমাদের অহীর সাহায্যে জানানো হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফেরাউন বললো, আচ্ছা, তাহলে তোমাদের দুজনের রব কে হে মূসা? মূসা জবাব দিল, আমাদের রব তিনি যিনি প্রত্যেক জিনিসকে তার আকৃতি দান করেছেন তারপর তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছেন।
সূরা ত্বাহা:৪৭-৫০
আমি ফেরাউনকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখালাম কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করতে থাকলো এবং মেনে নিল না।
সূরা ত্বাহা:৫৬
আর ফেরাউন বললো, হে সভাসদবর্গ! তো আমি নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রভু আছে বলে জানি না। ওহে হামান! আমার জন্য ইট পুড়িয়ে একটি উঁচু প্রাসাদ তৈরি করো, হয়তো তাতে উঠে আমি মূসার প্রভুকে দেখতে পাবো, আমিতো তাঁকে মিথ্যুক মনে করি। সে এবং তার সৈন্যরা পৃথিবীতে কোন সত্য ছাড়াই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং মনে করলো তাদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। শেষে আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এখন এ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে দেখে নাও।
সূরা কাসাস:৩৮-৪০
দেখো, ফেরাউন যখন সে রসূলের কথা মানলো না তখন আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলাম। তোমরা যদি মানতে অস্বীকার করো তাহলে সেদিন কিভাবে রক্ষা পাবে যেদিনটি শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে? যেদিনের কঠোরতায় আকাশ মণ্ডল বিদীর্ণ হয়ে যেতে থাকবে? আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো পূর্ণ হবেই। এ একটি উপদেশ বাণী। অতএব যে চায় সে তার প্রভুর পথ অবলম্বন করুক।
সূরা মুযযাম্মীল:১৬-১৯
শেষ পর্যন্ত ফেরাউন মূসা ও বনী ইস্রাঈলকে দুনিয়ার বুক থেকে উৎখাত করার সংকল্প করলো। কিন্তু আমি তাকে ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে এক সাথে ডুবিয়ে দিলাম।
সূরা বনী ইসরাইল:১০৩
আমি মূসার কাছে অহী পাঠালাম যে, এবার রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সাগরের বুকে শুকনা সড়ক বানিয়ে নাও। কেউ তোমাদের পিছু নেয় কিনা সে ব্যাপারে একটুও ভয় করো না এবং (সাগরের মাঝখান দিয়ে পার হতে গিয়ে) শংকিত হয়ো না। পিছন থেকে ফেরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে পৌঁছলো এবং তৎক্ষণাত সমুদ্র তাদের উপর ছেয়ে গেলো যেমন ছেয়ে যাওয়া সমীচীন ছিল। ফেরাউন তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল, কোন সঠিক পথ দেখায়নি।
সূরা ত্বাহা:৭৭-৭৯
এ মুক্তির পর তিনি সাওম পালন করে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার প্রয়াস পেয়েছেন। কেননা নেক আমল হল আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের বড় মাধ্যম।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
"হে দাউদ পরিবার! শুকরিয়া হিসেবে তোমরা নেক আমল করতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শুকরিয়া আদায়কারী রয়েছে।"
সূরা সাবা: ১৩
শুকরিয়া আদায়ের অর্থ হল যে অনুগ্রহ করেছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
• পাঁচটি বিষয়ের উপর আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
সে গুলো হলঃ
এক. নেয়ামত দাতা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত হওয়া।
দুই. নেয়ামত দাতা আল্লাহকে মহব্বত করা।
তিন. নেয়ামতকে মনে প্রাণে গ্রহণ ও স্বীকার করা।
চার. মুখ দ্বারা নেয়ামত দাতা আল্লাহর প্রশংসা করা।
পাঁচ. নেয়ামতকে নেয়ামত দানকারী আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে ব্যবহার না করা বরং তাঁর সন্তুষ্টির পথে তা ব্যয় করা।
(মাদারেজুস সালেকীন)
আরবী আশারা অর্থ দশ।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন সাওম পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. সাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ স.বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি সাওম রেখেছেন এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সহিহ আল বুখারি:১৮৬৫
মুসলিমের বর্ণনায় আছে,
এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তাআলা তাতে মুসা আ. ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন।
সহিহ মুসলিম
মুসা আ. সাওম পালন করেছেন।
সহিহ বুখারি
ইমাম মুসলিম তার রেওয়ায়াতে সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন,
আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় স্বরূপ তাই আমরাও সাওম পালন করি।
বুখারির অন্য রেওয়ায়াতে আছে, আর আমরা সাওম পালন করি তার সম্মানার্থে।
আশুরার সাওম বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
পবিত্র এই মুহররম মাস মনে করিয়ে দেয় সত্যের পথে টিকে থাকার জন্য যারাই চেষ্টা চালিয়েছে মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছেন, রক্ষা করেছেন ও সফলতা দান করেছেন। আর সত্যিকার ঈমানদারেরা তখন মহান রবের কৃতজ্ঞতায় আরো বেশী ইবাদাতে মশগুল হয়ে যেতেন। মহান আল্লাহ বলেন,
আমার আয়াতের প্রতি তো তারাই ঈমান আনে যাদেরকে এ আয়াত শুনিয়ে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজেদের রবের প্রশংসা সহকারে তার মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না।
সূরা আস সাজদাহ:১৫
তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
সূরা আলে ইমরান: ১৩৭-১৩৯
মহররম মাসের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও সত্যের ধারক হয়ে সমাজে শান্তি আনার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদের চেষ্টা কবুল করুন ও আমাদের অক্ষমতাকে মাফ করে দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৯৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন