-আশুরার রোজার ফজিলত-----

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৬:১২ সকাল



দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

আসসালামুআলাইকুম

মহান আল্লাহর এটা অশেষ রহমত ও সুন্দরতম বৈচিত্রতা যে, মুসলমানদের নিজস্ব সংস্কৃতি দিয়ে সম্মানিত করেছেন। বিভিন্ন দিনগুলোর মাঝে সুস্থ, সুন্দর পবিত্রতা বজায় রেখে আনন্দ করার মাঝে মহান রবের বড়ত্ব ও প্রশংসা করার,কৃতজ্ঞতা জানানোর বিধান রেখেছেন যেন এই জাতি ভারসাম্যভাবে চলতে পারে। আনন্দ করতে যেয়ে যেন শরীয়তের সীমা লংঘণ না হয় যা অনেকের জীবনে ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। ইবাদাতের মাঝেও অতিরিক্ততাও বর্জন করা হয়েছে যেন সেটাও অনেকের জন্য ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। ইহুদী নাসারাদের মতো এবং তথাকথিত মুসলিম নামধারীদের মতো আমরাও যেন ইবাদাতের নামে শরীয়তের বাইরে না যাই। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান ও তাকওয়া দান করুন।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি। (বোখারি:১৮৬৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম:১৯৭৬)

এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।

বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন

আল্লামা নববি রহ. বলেন, তাসুআ, আশুরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ। {আল-মজমূ}

এটি একটি ইসলামি নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না। {কাশ্শাফুল কান্না’ ২য় খন্ড, সওমুল মুহররম}

ইবনু কোদামাহ রহ. বলেন, আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত।

কারণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা-মুহররমের দশম দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। {বর্ণনায় তিরমিজি, তিনি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ}

আশুরার সাথে তাসুআর রোজাও মুস্তাহাব

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,

অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। (সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬)

ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।

এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে।

তাসুআর রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত

ইমাম নববি রহ. বলেন, তাসুআ তথা মুহররমের নয় তারিখ রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন,

এক. এর উদ্দেশ্য হল,

ইহুদিদের বিরোধিতা করা। কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখ রোজা রাখত।

দুই.

আশুরার দিনে কেবলমাত্র একটি রোজা পালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি রোজার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেমনি করে এককভাবে জুমুআর দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি আল্লামা খাত্তাবি ও অন্যান্যদের মত।

তিন.

দশ তারিখের রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ।

এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে, আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদিসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। যেমন আশুরা প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেন, { لَئِنْ عِشْتُ إلَى قَابِلٍ لاَصُومَنَّ التَّاسِعَ }আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব। { আল-ফতোয়াল কোবরা, খন্ড:৬}

আল্লামা ইবন হাজার রহ.

{ لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع }

আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব।হাদিসের তা’লিকে বলেছেন,

নবীজীর নয় তারিখে রোজা রাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে রোজার রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দশ তারিখের রোজার সাথে নয় তারিখের রোজাকে সংযুক্ত করা। সাবধানতা বশত: কিংবা ইহুদি খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য। এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত। সহিহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইংগিত করে। {ফাতহুল বারি:৪/২৪৫}

বিষয়: বিবিধ

৮২৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343584
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ্। আল্লাহতায়ালা আমাদের আদায় করার সুযোগ দিন্
343600
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১০
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
343611
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১২
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
343656
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:১১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহ!
স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য শুকরিয়া!
জাযাকিল্লাহু খাইর!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File