সময়ের দাবী আত্মউপলব্ধিঃ ১৮

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ১০ জুন, ২০১৫, ০২:৫১:৫১ দুপুর

আসসালামু’আলাইকুম।

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতা’আলার নামে।

বিয়ের আগেই একজন পুরুষকে পরিকল্পনা করে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, চাকরীজীবী স্ত্রী প্রয়োজন আছে কি না/ এই অবস্থা মেনে নিতে পারবেন কিনা এবং স্ত্রীকে সহযোগীতা করতে পারবেন কিনা, আবার নারীকেও আগে থেকেই বুঝে বা জেনে নিতে হবে যে, পরিবারের সহযোগীতা না থাকলে/ পরিবারের ক্ষতি করে/ অসুবিধা করে চাকরী করবে না।

আসলে আমার অভিজ্ঞতায় আমি আশে পাশের বিভিন্ন অবস্থা দেখে যা বুঝেছি তা হলো, সংসার যদি শুধু চুক্তি দিয়ে চালাতে হয় তবে পরিবার হয়ে যায় ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির/চাওয়া পাওয়ার/ হিসেব নিকেশের জায়গা সেখানে পারস্পরিক আন্তরিকতা কমে যায়, শুধুমাত্র স্বার্থপরতার ভাব থাকে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে।

দুনিয়ার লোভ লালসা,খ্যাতি যশ ইত্যাদি যদি মূল লক্ষ্য হয় তবে কখনোই পরিবারে শান্তি আসা সম্ভব নয়। স্বামীও যখন দুনিয়ার জীবনের সবকিছু পাওয়াকেই জীবনের স্বার্থকতা মনে করে একটার পর একটা ডিগ্রী নিতে ব্যস্ত থাকেন, চাকরীর সময়ের বাইরেও আরো উপার্জনের পিছনে ছুটতে থাকেন, পরিবারের ব্যাপারে কোন খোঁজ নেবার সময়টি থাকে না, সেই অবস্থায় প্রাচুর্যই ঘরে থাকবে কিন্তু সুখ ও শান্তি দুনিয়াতেও থাকে না আর পরকালেতো কিছুই থাকবে না।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

যে কেউ আশু লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যা কিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতের প্রত্যাশী হয় এবং সেজন্য প্রচেষ্টা চালায়, যেমন সেজন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং সে হয় মুমিন, এক্ষেত্রে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রচেষ্টার যথোচিত মর্যাদা দেয়া হবে। এদেরকেও এবং ওদেরকেও, দু’দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই। কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে।

সুরা বনী ইসরাঈল: ১৮-২১

এইভাবে যখন পরিবারের মূল ব্যাক্তিরা শুধু বহির্মুখী থাকেন তখন সমাজে এই ধরনের চিত্র আমরা দেখি,আজ বিভিন্ন ভালো নামকরা স্কুলের ছাত্র ও ছাত্রীরা নেশাগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে, স্ত্রীরা পরকীয়ায় ঝুঁকে পড়ছে, বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে আনন্দ পেতে চাচ্ছে, যুবক যুবতীরা একটু ভালোবাসার কথা/ একটু আদর মাখা কথা শুনার জন্য প্রেম করে, না বলে বিয়ে করে ফেলছে—আপনি যদি প্রশ্ন করেন এদেরকে, তাহলে জবাব পাবেন, অনেক কারনের মাঝে অন্যতম হলো পরিবারের পিতা/ মাতার সান্নিধ্য, ভালোবাসা,আদর মাখা শাসন থেকে বঞ্চিত থাকার কারনে এই জীবন ভালো লাগে না। এই জীবনে কোন বৈচিত্র নেই ইত্যাদি।

আমার এক কলিগের জীবন থেকে কিছু উল্লেখ করছি। বাবা মায়ের অনেক শখ ছিল মেয়েকে ডাক্তার হিসেবে মানব সেবায় নিয়োজিত করবে। কিন্তু স্বামীর ক্যারীয়ার ও সন্তানদের দুনিয়াতেও উপযুক্ত ও আখেরাতমুখী শিক্ষার চর্চায় বড় করতে যেয়ে নিজের জীবনের দুনিয়াবী ক্যারীয়ার করার সুযোগ লাভ করতে পারে নি। কিন্তু তার মনের শান্তি ও তৃপ্তি আসে এই ভেবে যে, মহান আল্লাহতা’আলার সাহায্যে সব সন্তানদের গড়ে তোলার মাধ্যমে একদিকে যেমন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের জবাবদিহীতার পথ সুগম করার চেষ্টা হচ্ছে,পাশাপাশি সদকায়ে জারিয়া হিসেবে অনেকগুলো আদর্শ পরিবারের ভিত্তি গড়ে দিয়ে যাচ্ছেন ইনশা’আল্লাহ কারন এই সন্তানেরা বিয়ের পর আলাদা আলাদা পরিবার হবে। এই কথা শুনে সেই কলিগের বাবা-মা খুশিতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন কারন উনারাও সেই সওয়াব পাবেন যা এই মেয়েটি করার চেষ্টা চালাচ্ছে তার সহযোগীতা করার জন্য।

সেই পরিবারের স্বামী শুধু নিজের ক্যারীয়ার ও চাকরী নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন ও স্ত্রীকে যেমন সহযোগীতা করেন নি তেমনি অসহযোগীতাও করেন নি। অসহযোগীতা বলতে এখানে বুঝাচ্ছি যে সেই স্ত্রী তার নিজের পরিকল্পনামতো সন্তানদের গড়তে পেরেছেন,স্বামী এই ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাড়ান নি বা উচ্চ বাচ্য করেন নি,এটাও একধরনের সহযোগীতা পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রে স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থেকে তার দায়িত্বের কৃতজ্ঞতা জানান তাহলে মহান আল্লাহর কাছে স্বামীও পূন্য পাবেন এবং স্ত্রীও আরো উদ্বুদ্ধ হবেন পরিবারে মনোযোগী হতে।

অনেক ক্ষেত্রে স্বামী পুরুষটির যোগ্যতার সীমাবদ্ধতার কারনে অনেক কাজ এক সাথে আঞ্জাম দিতে পারেন না,সেই ক্ষেত্রে যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে খুলাখুলি পরামর্শ করে নেন তাহলে পরিবারের পরিবেশ সহজ থাকে কিন্তু দেখা যায় আমিত্ববোধের কারনে স্বামী দায়িত্ব পালন না করেও খুব ভাব ধরেন ও উচ্চ বাচ্য করেন ফলে স্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করতে সমস্যায় পড়েন।

আবার এমন স্বামী আছেন যিনি একজন নারীকে এস এস সি পাশ বিয়ে করে তারপর তাকে মাষ্টার্শ ডিগ্রী, এম এড করিয়ে স্কুলে শিক্ষিকা হিসেব যোগদানে সহযোগীতা করেছেন,এর মাঝে সন্তান সন্তুতিও এসেছে ও বড় হয়েছে। পরস্পরের সহযোগীতায় দুজনেই মহান আল্লাহর সাহায্যে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের উদ্দেশ্যে।

আগামীতে চলবে ইনশা’আল্লাহ

বিষয়: বিবিধ

৯১৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325015
১০ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:১৩
ছালসাবিল লিখেছেন : বাহ বাহ বাহ Applause Applause Applause
অনেনেনেক দারুন আইডিয়া Applause এইতো সামনেই কাজে লাগবে Nail Biting Tongue

Time Out Rose Time Out Rose Time Out Rose
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৫৭
267170
ঝিঙেফুল লিখেছেন : Time Out Time Out Time Out
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:১৭
267182
ছালসাবিল লিখেছেন : Tongue Tongue Tongue
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:০৮
267188
মিশু লিখেছেন :
জাযাকাল্লাহী খাইরান। মহান আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে কোর’আনের আলো দিয়ে আলোকিত করুন।
ধন্যবাদ।
325066
১০ জুন ২০১৫ রাত ০৮:৩৭
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : জীবনঘনিষ্ঠ অথচ অনেক শিক্ষণীয় দিক আছে পোস্টটিতে। বেশ ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:১২
267191
মিশু লিখেছেন :
জাযাকাল্লাহী খাইরান। মহান আল্লাহ আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে জীবন্ত কোর’আন বানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭
267213
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমিন...
325130
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৫৭
ঝিঙেফুল লিখেছেন : Rose Rose Rose
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:১১
267190
মিশু লিখেছেন :
জাযাকাল্লাহী খাইরান। মহান আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে ইসলামের সুমহান আদর্শের ধারক বানিয়ে দিন।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File