সময়ের দাবী-আত্মউপলব্ধিঃ ১৫
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৪ জুন, ২০১৫, ০২:৩২:৩২ দুপুর
সময়ের দাবী-আত্মউপলব্ধিঃ ১৫
আসসালামু’আলাইকুম।
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতা’আলার নামে।
রাসুল(সঃ) বলেছেন,তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহন করবে।কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে সব সময়ই তা বাঁকাই থেকে যাবে।কাজেই নারীদের সাথে কল্যান করার উপদেশ গ্রহন করো।
সহিহ আল বুখারীঃ৩৩১
আমাদের সমাজের পুরুষেরা এই হাদীসটি নিয়ে স্ত্রী,বোনদের বিদ্রুপ করে থাকে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যা পরহেজগার লোকদের জন্য অত্যন্ত অশুভনীয় ও গুনাহের কারন।
এই হাদিস থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার যে নারীর সাথে খুবই যত্নের সাথে গুরুত্ব দিয়ে নরম আলতোভাবে লেন দেন করা। অনেক দামী ও সূক্ষ্ম জিনিষকে আমরা কত যত্নের সাথে ধরি যেন ভেঙ্গে না যায়। আবার ফেলে রাখি না কারন সে জিনিষে ধূলা বালি পড়তে থাকবে।আবার নারীকেও সাবধান হতে হবে যেন একগুয়েমী না থাকে চরিত্রের মাঝে। পুরুষ ব্যক্তিটিকে সহযোগীতা করাই সম্পর্কের আলোকে দাবী রাখে।
কিন্তু দেখা যায় স্বামী অনেক ক্ষেত্রেই এর অনুসরন করেন না। আমাদের সমাজে আজ সবচেয়ে প্রকট আকার ধারন করেছে দুটি ব্যপার যা অনেক ক্ষেত্রেই সংসার ভাংগনের কারন হয়ে দাঁড়ায় অথবা অশান্তিপূর্ণ পরিবার গঠন হয় অথবা মানসিক রোগী হিসেবে চিকিৎসার দ্বারগ্রস্ত হতে হয়।
১। মা ও স্ত্রীর মাঝে আচরনে ভারসাম্যতা না থাকা।
২। চাকরীজীবি নারীর সাথে সমন্বয় করতে না পারা।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী মায়ের দিকে ঝুকে পড়ে স্ত্রীর সাথে অন্যায় আচরন করেন আবার অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর দিকে ঝুকে পড়ে মায়ের সাথে অন্যায় আচরন করে ফেলেন। আমরা বাঙ্গালী জাতি বিশেষ ভাবে বেশী আবেগপ্রবন। এই আবেগপ্রবনতা পারিবারিক বন্ধনকে যেমন আগলে রাখে আবার এর কারনে বন্ধনগুলোতে রহমত থাকে না কারন আবেগের আতিশয্যে অনেকেই শরীয়তের নাজায়েজ কাজ করে ফেলেন।
একজন স্বামীর চরিত্রে শুধুমাত্র মুমিনের বৈশিষ্টের অনুশীলন দ্বারাই এই ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ আমাদের অনেক ভাইরা ব্যক্তিগত আমল কিছু করলেও এই ধরনের লেন দেনে দৃঢ় ঈমানীয়াতের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হোন,আবেগের কাছে নতজানু হয়ে যান, শয়তানের চক্রান্তে আটকে যান। মহান আল্লাহ আমাদের ভাইদের হেফাজত করুন।
একজন স্বামীকে এটা জানা থাকা প্রয়োজন যে বিয়ের পর মায়ের দায়িত্ব কমে যায় না বরং এর পাশাপাশি আরেকটি নতুন (স্ত্রীর) দায়িত্ব কাধে নিয়েছেন। যদিও পিতামাতার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব কমে আসে। একটি পরিবারে এই স্বামীকেই দায়িত্বে্র মাঝে ভারসাম্যতা,ন্যায়পরায়নতা ও সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে।
দেখা যায় মা তার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন বলে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোকে সামনে রেখে সন্তানের সাথে বউএর ব্যাপারে অনেক অভিযোগ তুলে ধরেন,আবার স্ত্রী রান্না করেন না বলেও অভিযোগ তুলেন। স্ত্রীও সেই ধরনের নানা অভিযোগ তুলেন এই বলে যে আমার সংসারকে নিজের মতো সাজাতে পারলাম না ইত্যাদি। আরো অনেক ছোট ব্যাপার যা অনেক জটিল হয়ে দেখা দেয়, অনেক বড় ব্যাপারও হয় সেগুলো আমাদের আশে পাশে পরিবারগুলোতে দেখতে পাই। সব ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। একজন ইসলামী আন্দোলনের নেতা বলেছিলেন অভিযোগের জবাবের পিছনে সময় নষ্ট না করে দীনের মূল কাজ চালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ,কারন জীবনের সময়ের চাকা যা একমুখী হয়ে ঘুরে চলছে কবরের দিকে সেই সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি বলবো স্বামীরা যদি মহান রাসূল(সঃ)কে অনুসরন করেন তাহলে কোন সমস্যা হয় না। চরিত্রে যদি এই জিনিষগুলো না থাকে-
১। দ্বিমুখী নীতি ও সিদ্ধান্ত হীনতা:
অনেক স্বামী পরিবারে মায়ের কাছে একরকম কথা ও বউ এর কাছে আরেকরকম এই ভাবে সমাধান করতে চান। কিন্তু এই ভাবে সাময়িক সমস্যাকে আড়াল করা যায়,সমাধান হয় না বরং মা ও বউ এর কাছে বিশ্বাস হারাতে বসেন। সিদ্ধান্তহীনতা চরম দূর্বলতার একটি বৈশিষ্ট্য, এর ফলে স্ত্রী নির্ভরতা করার সাহস পান না যা স্বামীর ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে সিদ্ধান্তে অটল থাকা মুমিনের ব্যক্তিত্ব।
আল্লাহ তা‘লা দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে বলেন,
তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না।
সূরা নিসা: ১৪৩
২। মিথ্যা কথা বলা ও গালি গালাজ করাঃ আমাদের অনেক শিক্ষিত পরিবারেও অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার অভ্যাস আছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রাগ বা ক্রোধ আসতে পারে কিন্তু তার ফলে জিহবা দিয়ে খারাপ গালি দেয়া কি ভাবে সম্ভব একজন মুমিনের পক্ষে? যে জিহবা দিয়ে আল্লাহর যিকির হয়, যা দিয়ে ভালোবাসার কথা হয়,কিভাবে সম্ভব তা দিয়ে খারাপ ভাষা ব্যবহার করা? আবার কোন কিছু লুকাতে যেয়ে স্বামী মিথ্যার আশ্রয় নেন । সত্য বললে হয়তো সাময়িকভাবে স্ত্রী বা মা কষ্ট পেতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস বহাল থাকবে। এই বিশ্বাস হলো একটি সংসারের জন্য ভিত্তি।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন, চারটি গুণ যার মধ্যে একত্র হবে, সে সত্যিকার মুনাফেক। আর যার মধ্যে এ তিনটি গুনের যে কোন একটি থাকবে সে যতদিন পর্যন্ত তা পরিহার না করবে তার মধ্যে নেফাকের একটি গুণ অবশিষ্ট থাকল। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। আর যখন কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা লঙ্ঘন করে, আর যখন ওয়াদা করে তা খিলাফ করে, যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, সে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে।
সহীহ বুখারী-৩৪
৩। অশ্লীল কথা বলাঃ অনেক স্বামী দেখা যায় নিজের আত্মীয়দের সাথে অশ্লীল গল্প গুজব করেন অকপটে,আবার নিজ পরিবারে বা শ্বশুর বাড়িতে ভিন্ন ভাব দেখান, এটাই অশান্তি নিয়ে আসে।
আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সঃ বলেন, লজ্জা ও কথা কম বলা, ঈমানের দুটি শাখা আর অশ্লীলতা ও অতিকথন নেফাকের দুটি শাখা।
জামে আত তিরমিযীঃ২০২৭
৪। নিজের জন্য যা পছন্দ স্ত্রীর বেলায় তা না করাঃ একজন মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্য ভাইএর বেলায় তা না করবে। এই নীতি না থাকার কারনে দেখা যায় স্বামীর সাথে মনোমালিন্য।
আমার একজন রোগী বলছিলেন ,আচ্ছা,আপা বলেনতো,আমার স্বা্মী দেবর ননদের বেলায় প্রয়োজন বুঝে উপহার দেন কিন্তু আমার বেলায় সে বুঝে না,এটা কি ভণ্ডামী না? আমি তাকে বললাম,সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো,আত্মীয়ের হক আদায় করতে হবে সেটাও গুরুত্ব রেখে বলো নিজের কথা।
আসলে একজন নারী কখনোই এইভাবে চেয়ে আদায় করতে চান না। স্ত্রীকে তাই পড়তে দিতে হবে যা সে নিজে পড়েন অর্থাৎ মানগত দিক বজায় রাখতে হবে।
আবার স্ত্রীর পছন্দে,স্ত্রীর আত্মীয়ের দিকে উপহার দিতেও বাধা দেন অনেকে,এটাও সমস্যা হয়,এই সব কিছুই চরিত্রের দুই রকম ধারা থাকাতেই দেখা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে পরিবার চালান তিনি এই সব ঝামেলায় সাধারনত পড়েন না।
সূরা ইউসুফে মহান আল্লাহ জানিয়েছেন, স্বপ্নে ইউসুফ আঃ যা দেখেছিলেন সেই কথা, সূর্য,চাঁদ সহ ১১টি তারা ইউসুফ আঃ কে সেজদাহ করছে।
এখানে সূর্য কে তুলনা করা হয়েছে পিতার সাথে, চাঁদকে মায়ের সাথে ও তারাকে ভাইদের সাথে। খুব সুন্দর উপস্থাপন। পরিবারের স্বা্মী সেই সূর্যের মতো দীপ্ত যার আলো স্ত্রী ও সন্তানেরা ধারন করে চলে। কিন্তু যখন সূর্য গ্রহন বা চন্দ্র গ্রহন হয় তখন রাসূল সঃ নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন যতক্ষন না এই গ্রহন শেষ হয়ে আসে কারন এই অবস্থাটা কল্যানমূলক নয়। আমাদের পরিবারগুলোতে স্বা্মীকে সেই চরিত্রের ধারক হয়ে চলতে হবে যেন অকল্যান থেকে হেফাজত থাকে পরিবারগুলো।
আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন
চলবে
ইনশা’আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবসময়ই ছেলে বা স্বামীকে কেন ব্যালান্স করতে হবে ? উনারা ক্যাচাল বাঁধাবেন আর সামাল দিতে হবে ছেলে বা স্বামীকে ?
স্ত্রীরা কি কখনও একজন স্বামী যেরকম খাওয়া দাওয়া করে বা পোশাক পড়ে সেরকম দাবী করে নাকি তার চেয়েও বেশী ? বেশীর ভাগ সময়ই দেখা যায় যে স্ত্রীর দাবী পূরণ করতে গিয়ে স্বামীকে হিমশিম খেতে হয় এবং একসময়ে বাধ্য হয়ে সে বিপথে পা বাড়ায়।
চাকুরীজীবী স্ত্রীর এটা মনে রাখা উচিত যে তার স্বামী অনেক উদার বলে তাকে চাকরি করার অনুমতি দিয়েছে । সে তার সংসারের ক্ষতি হবে বুঝেও স্ত্রীর চাওয়াটাকে প্রায়রিটি দিয়েছে ।
একজন স্ত্রীর চাকরি করা মানে সে তার স্বামীর সংসারের ফাঁকি দিচ্ছে । কারণ সে তার স্বামীর সংসারের দেখভাল করার চার্জে আছে যেহেতু স্বামী তার জন্য ব্যয় করছে । তার চাকরির সময় যদি তার স্বামীর চাকরির সময়ের সাথে মিলে যায় তাহলে সে কিভাবে স্বামীর অবর্তমানে তার সংসারের হেফাজত করছে ?
কোন প্রতিষ্ঠান কি তার কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তাদেরই ওয়ার্কিং আওয়ারে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে সাইড বাই সাইড চাকরির অনুমতি দেবে ? অথচ স্বামী তার স্ত্রীকে তার সংসারের টাইমে বাইরে চাকরিতে যাবার অনুমতি দিচ্ছে তার সংসারের টাইমেও। একজন স্ত্রী কি বিপরীতভাবে এমনটা কখনও করবে যে , তার স্বামী তাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করলো , তার কাছ থেকে সেবা নিলেও দেয় আরেকজন স্ত্রীকে । কোন স্ত্রী কি এরকমটা কখনও টলারেট করে ?
অথচ বছরের পর বছর স্বামীর এরকমই বিষয় টলারেট করতে হয় ।
ক্বুরআন শরীফের এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে স্ত্রী অবাধ্য হলে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে তাকে প্রহার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে স্বামীকে ( তা যতই মৃদু হোক না কেন ) ।
অথচ আমাদের অতি নারীবান্ধব সমাজ শরিয়তের বিপরীতে গিয়ে এটাকে নারী নির্যাতনের মামলায় ফেলেছে । এর ফলে সংসারে স্বামীর যে কর্তৃত্ব যা শরিয়ত তাকে দিয়েছে সেটা বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে ।
সংসারের বসিং স্বামীর থেকে সরে গিয়ে তা স্ত্রীর কাছে এসে গেছে এবং এসব সংসারে সন্তানরা কখনও সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না যে সব সংসারে স্ত্রীরা বসিং করে।
নারীদের প্রতি এতটা গদ গদ হয়ে গেলে পরিনতি এরকম হবে
জীবনের প্রতিটি কাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উত্তম আদর্শ! স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য শিক্ষা রয়েছে রাসুলের জীবনে! আমাদের আজ সেখান থেকেই শিক্ষা গ্রহন করা উচিত!
জাযাকিল্লাহু আপু! ভালো লেগেছে
মন্তব্য করতে লগইন করুন