সময়ের দাবীঃ আত্মউপলব্ধি-১৪
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২৮ মে, ২০১৫, ১২:০৯:১৩ দুপুর
আসসালামু’আলাইকুম।
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতা’আলার নামে।
অঙ্গীকার মতো স্বামীর অবস্থান সম্পর্কে কলম ধরলাম ইনশা’আল্লাহ।
ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম,আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি।
সহীহ জামে আত তিরমিযীঃ৩৮৯৫
আমি যতবার হযরত ইব্রাহীম (আঃ)এর জীবনী নিয়ে চিন্তা করি ততবারই মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই এবং খুঁজে পাই সেই সুখ-শান্তির বাস্তব চিত্র যা মহান আল্লাহর বিধান দ্বারাই একমাত্র সম্ভব।
আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বের জায়গা দখল করে আছেন হযরত ইবরাহী(আঃ) ও আমার প্রিয় রাসূল(সঃ)। আমরা যারা ঈমানের ঘোষনা দিয়েছি এবং ইসলাম প্রচারের ধারক হয়ে চলছি তাদের দিকে তাকিয়ে ও সমাজ সংসারের অশান্তি,মিথ্যা পাপ পঙ্কিলতার ও অবিশ্বাস প্রতারনা দেখে যখন হতাশ হতে যাই তখনই এই দুই ব্যক্তিত্ব জাগিয়ে তুলে আমার অন্তরকে। আশাবাদী হই আবার যদি আমাদের ভাই-বোনেরা এইভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা সেই শান্তির সুখের সত্য বিশ্বাসের বাতাস সমাজ সংসারে বয়ে যাবে ইনশা’আল্লাহ। এই ভিত্তি দিয়ে একেকজন মজবুত ঈমানদার হয়ে আল্লাহর পথের সৈনিক হয়ে দ্বীনের ধারক হতে পারবে। আমাকে সহ সবাইকে মহান আল্লাহ বুঝার ও আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন।
আপনারা বলতে পারেন? বৃদ্ধ বয়সে সন্তান থেকে আনন্দ লাভের জন্য নয়/সম্পদের উত্তরাধীকার হওয়ার জন্য নয়/মানুষ ভাববে বন্ধ্যা সেতার জন্যও নায় শুধুমাত্র দ্বীনের আলোকে সম্প্রসারিত করার তাগাদায় সন্তান লাভের জন্য আর্জি পেশ করেন মহান রবের কাছে, মরুভূমিতে একা স্ত্রী সন্তানকে রেখে আসা, অনেক চাওয়ার পর পাওয়া সন্তানকে কুরবানীর জন্য আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?
কোন্ ভালোবাসার শক্তি দিয়ে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান একটি সিদ্ধান্তে কোন প্রশ্ন বা দ্বিধা ছাড়াই ঐক্যে থেকেছেন?
কোন্ বিশ্বাসের এতো মজবুতি যে, পরিবারের তিনজনই একই নীতির উপর অটল ছিলে্ কোন অপশক্তি তাদের টলাতে পারে নি?
কোন্ লাভের প্রত্যাশায় এতোখানি ত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখাতে চিন্তা করার সময়টুকু নিতে হই নি?
সব কিছুর মূলে ছিল ইব্রাহীম (আঃ)এর ব্যক্তিত্ব যা মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া যা দয়াময় আল্লাহকে গভীর ভালোবাসা,মহান রবকে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মেনে নেয়া এবং মহান প্রতিপালকের ফয়সালাই সত্য, পরকালীন জীবনই একমাত্র স্থায়ী বাসস্থান এই বিশ্বাসকে দৃঢ় ভাবে অন্তরে ধারন করেই বাস্তবে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করে দেখিয়েছেন এবং সেই চরিত্রের প্রতিফলন করেই গড়ে তুলেছিলেন আদর্শ পরিবার।
আজ এমন পরিবার কয়টি আছে যে কোন বাঁধ-বিবাধ ছাড়া / অসন্তুষ্টি চিত্ত ছাড়া কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে একমত হতে পেরেছে পরিবারের প্রতিটা সদস্য??
আমি এখন স্বামী হিসেবে আমাদের প্রিয় রাসূল(সঃ) কেমন ছিলেন সেই দিকে একটু ফিরে যাই।
রাসুল(সঃ)এর ব্যক্তিত্ব এমনই উচ্চ মানের ছিল যে প্রথম যখন ওয়াহী নাযিলের পর বিবি খাদীজা(রাঃ)এর কাছে কম্বল জড়িয়ে দিতে বললেন তখন খাদীজা(রাঃ) স্বামীর চরিত্রের যে মানপত্র তুলে ধরেছিলেন তা ছিল অসাধারন। স্বামীর পবিত্র, সত্য ও ন্যায়নীতির ব্যক্তিত্বের কারনে স্ত্রী ইসলাম গ্রহনেও বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন করেননি।
হযরত আয়েশা(রাঃ) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,সাধারন মানুষের মতই তিনি ছিলেন। নিজের কাপড় চোপড়ের তদারকী তিনি নিজেই করতেন।ছাগলের দুধ নিজেই দোহন করতেন এবং নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজেই করতেন। কাপড়ে তালি নিজেই লাগাতেন,জুতা মেরামত করতেন, ভৃত্যের সাথেও কাজ করতেন,বাজারে যেতে লজ্জাবোধ করতেন না। কখনো একাই পরিশ্রম করতেন।
আচরন কেমন ছিল প্রশ্নের উত্তরে আয়েশা(রা) বলেন,সবচেয়ে বিনম্র স্বভাবের, হাসিমুখে প্রফুল্ল আচরন তিনি করতেন। কখনো কোন ভৃত্যকে ধমক পর্যন্ত দেন নি,আপন পরিজনের সাথে সহৃদয় আচরনে রাসূল(সঃ) এর কোন জুড়ি ছিল না।
সহীহ মুসলিম
আয়েশা(রাঃ) বলেন তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগীতা করতেন আর যখন নামাজের সময় হতো তিনি নামাজে চলে যেতেন।
সহীহ বুখারীঃ৬০৩৯
আমার এক আত্মীয়ের বাসায় গেলে সেই মুরুব্বী বলা শুরু করলেন,ছেলেটা আমার অফিস করে এসেও বউকে সহযোগীতা করে অনেক কাজ করে। বিয়ে করালাম কি বউ এর কাজ করে দেবার জন্য? তখন আমি তাকে বুঝালাম যে আপনার ছেলেতো রাসূল(সঃ)এর সঠিক উম্মত তাই অনুসরন করে চলেন প্রিয় নবী(সঃ) কে। সংসারের কাজতো বউদের এই ধারনাটা একপেশে। সবাই সুযোগমত কাজ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আসলে এই ধারনাটা আমরা আমাদের ছেলে সন্তানদের এইভাবে দিয়ে থাকি যে, মেয়ে সন্তান দিয়ে ঘরের কাজ করাই আর ছেলে সন্তানকে দিয়ে সুযোগ থাকলেও কাজ করার মাধ্যমে পরিবারে সহযোগীতার শিক্ষাটা দেই না। এই ব্যাপারে মা হিসেবে দায়িত্ব পর্বে উল্লেখ করবো ইনশা’আল্লাহ।
সামষ্টিক জীবনে আমাদের সমাজে অনেক স্বামীরা কৃত্রিম একটি মুখোশ পরে থাকেন-যার ফলে বাইরের লোকেরা খুব প্রশংসা করে থাকেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে এসে সেই মুখোশ খুলে ফেলে আসল রুপ বের করেন। বাইরে প্রচুর মহৎ আচরন ও উদারতার মহড়া দেখান কিন্তু ঘরোয়া জীবনে যেয়েই নেমে যান পশুর চেয়েও অধম আচরনে।বাইরের জীবনে সরলতা ও বিনয়ের চরম পরাকাষ্ঠা দেখান আর ঘরে বিলাসিতায় ও আরাম আয়েশে মেতে উঠেন। কিন্তু রাসূল(সঃ) এর ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন ছিল একই রকম।
নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।
সূরা আহযাবঃ৩৩
চলবে ইনশা’আল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১১৯২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন