১৫ই শা’বান একটি পর্যালোচনা
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ২০ মে, ২০১৫, ১০:০২:৫২ সকাল
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহতা’আলার নামে
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আমাদের সমাজে অনেকে কোর’আনের একটি আয়াতকে শবে-বরাত এর পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করেন।
আর সেই আয়াতটি হলো—
ইহা ছিল সেই রাত যাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারের বিজ্ঞতাসূচক ফয়সালা আমাদের নির্দেশে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
সূরা আদ দুখানঃ৪-৫
এখানে সেই রাত যে রাতে আল্লাহতায়ালা সকলের ভাগ্যের ফয়সালা ফেরেশতাদের কাছে দিয়ে দেন। অনেকে এটা শাবানের ১৫তারিখের রাতের কথা বলে থাকেন।
কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতনভাবে কোরআন পাঠ করি তা হলে দেখতে পাবো এই সূরার ১-৩ নং আয়াতে কি বলা হয়েছে---
হা-মীম। এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, আমি এটি এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছি। কারন, আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম।
এখন আমরা একসাথে যদি পড়ি—
হা-মীম। এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, আমি এটি এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছি। কারন, আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। ইহা ছিল সেই রাত যাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারের বিজ্ঞতাসূচক ফয়সালা আমাদের নির্দেশে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
সূরা আদ দুখান-১-৫
লক্ষ্য করুন এখানে বরকতপূর্ণ রাত হলো সেটা যে রাতে কোর’আন নাযিল হয়েছিল। আমরা সুরা ক্বদর থেকে জানি—
আমরা ইহা (কোর’আন) কদরের রাতে নাযিল করেছি।
তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি?
ক্বদরের রাত্রি হাজার মাস হতে উত্তম।
ফেরেশতা ও রুহ এই রাত্রিতে তাদের আল্লাহর অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাত্রি পুরাপরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।
সূরা ক্বদরঃ১-৫
সুতরাং আপনারা নিজেরা কোর’আন খুলে উক্ত সুরার আয়াত ও এর তাফসির পরে দেখুন কোর’আনের কোথাও শাবানের রাতের কথা আসে নাই। রমজান মাস ও ক্বদরের রাত সম্পর্কে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বরকতপূর্ন রাত বলতে ক্বদরের রাতকেই বুঝায়।
তিরমিযী শরিফের একটি হাদীসে উল্লেখ আছে
আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূল(সঃ)কে হারিয়ে ফেললাম(বিছানায় পেলাম না)। আমি (তাঁর খোঁজে) বের হলাম। এসে দেখি তিনি বাকী গোরস্থানে আছেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি আশংকা করছো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোন অন্যায় করবেন? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারনা করলাম আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের(১৫তারিখের রাতে) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতীর্ণ হন। অতঃপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে দেন।
আবওয়াবুস সাওম—৬৮৭)
কিন্তু এই হাদিসের উল্লেখের পর একথা উলেখ আছে যে—আবু ঈসা বলেন- আমি মুহাম্মদ আল-বুখারীকে উক্ত হাদীসকে দুর্বল হাদিস বলতে শুনেছি। তিনি বলেন এই রকম হাদিস অন্য রাবী থেকে শুনেননি।
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূল(সঃ) বলেছেন---মহান ও কল্যানময় আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, যে নিজের অভাব-অনটন দূর করার জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে তা প্রদান করবো এবং কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।
(বুখারী-অধ্যায় তাহাজ্জুদ-১১৪৫)
তা হলে এখান থেকে বুঝা যায় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন প্রতি রাতেই এভাবে ক্ষমা করার জন্য আহবান করতে থাকেন। আর তাহাজ্জুদের নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ যা হাসরের মাঠে ফরয নামাজের ঘাটতি পুরনে সহায়ক হবে।
আর আমাদের সমাজে ১৫ই শা’বানকে ঘিরে যে ভাবে রুটি হালুয়া আরো না না আয়োজনে ব্যস্থ থেকে --ফরজ নামাজ আদায়ে সময় কম দেয়া অথবা যত্নশীল না থাকা আবার অনেকের ফজরের নামাযটাও আদায় করতে সক্ষম থাকে না—এগুলো সবই নবউদ্ভাবন যা বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করা হয়। রাসুল(সঃ) বা সাহাবা, তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈনদের জীবনে এই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায় নাই। এটা শয়তানের একটি চালাকি যে এভাবে মানুষকে আসল ফরজ ও ওয়াজীবের ব্যপারে যত্নশীল না হয়ে, যা রাসূল(সঃ) করেন নি তা করতে খুব যত্নশীল করিয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত বানানোর অপচেষ্টা। আবার অনেকে এভাবে যুক্তি দেন যে এই দিনের অসিলায় গরীবদের একটু খাওয়ানো এবং প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হয়।
আমরা তো যে কোন দিন কে ঐ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে পারি।তবে এই দিন কে নির্দিষ্ট করে হাদীসের কথা বলে এভাবে পালন করাটা বিদয়াত বলে আমাদের আমলনামায় চলে আসবে। আপনি আমি এটা না করলে এক সময় সমাজ থেকে এটা উচ্ছেদ করা সম্ভব ইনশাল্লাহ, পাশাপাশি কেন এটা করা উচিত না সেটা অন্যদের জানানো দরকার।
মহান আল্লাহসুবহান আমাদেরসহ এই জাতিকে শিরক ও বিদয়াত থেকে হেফাজত করুন।
তবে শা’বান মাসের গুরুত্ব বলা হয়েছে এই ভাবে-
আয়েশা(রাঃ) বলেছেন, নবী(সঃ) শা’বান মাসের ন্যায় এত অধিক (নফল) রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি শা’বান মাসের প্রায় পুরোটাই রোযা রাখতেন। তিনি সকলকে এই আদেশ দিতেন যে, তোমরা যতদূর আমলের শক্তি রাখ, ঠিক ততটুকুই কর। আল্লাহ(সওয়াব দানে) অপারগ নন যতক্ষন না তোমরা অক্ষম হয়ে পড়। নবী(সঃ)-এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হল এমন নামায-যা অব্যাহতভাবে আদায় করা হয়-পরিমানে তা যত কমই হোক না কেন। নবী(সঃ) এর অভ্যাস ছিল-যখন তিনি কোন (নফল) নামায পড়তেন পরবর্তীতে তা অব্যাহত রাখতেন।
সহীহ বুখারী
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূল(সঃ) বলেছেন—শাবান মাসে অর্ধাংশ যখন অবশিষ্ট থাকে তখন তোমরা আর রোযা রেখনা।
সহীহ জামে আত তিরমিযী
এই সময়ে যাদের পূর্ববর্তী ফরয রোযা বাকী আছে সেগুলো আদায় করার সুযোগ নিতে হবে।পাশাপাশি রামাদান মাসের জন্য প্রস্তুতি চলবে। মহান আল্লাহ আমাদের সচেতনভাবে সময়কে কাজে লাগানোর সুমতি দান করুন।
এটি এক বহু বরকতসম্পন্ন কিতাব যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন লোকেরা এর আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন লোকেরা তা হতে সতর্কবানী গ্রহন করে।
সূরা সা’দঃ ২৯
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরক বিদাত থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন।
যারা এই বরাত পালন করে তারা আসলে মুশরিকদের অনুসারী..আর কিছু বলার নাই।।
আর আল্ হামদুলিল্লাহ আমার এ কলম সবর্দা শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে চলবে।
আমার একটি লিখা আছে এ সম্পর্কে-যথাসময়ে তার পোস্ট করা হবে।। আশাকরি নজর রাখবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
এটি এক বহু বরকতসম্পন্ন কিতাব যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন লোকেরা এর আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন লোকেরা তা হতে সতর্কবানী গ্রহন করে।
সূরা আস সা’দঃ ২৯
আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে! জাযাকাল্লাহু খাইর।
জাযাকাল্লাহী খাইরান বিল আখেরাত ওয়া ফিদ দুনিয়া।
ভাল্লাক্সে ট্রপিক্সটি
মন্তব্য করতে লগইন করুন