সময়ের দাবী আত্মুউপলব্ধি-১৩
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৯ মে, ২০১৫, ১১:৩৭:৫০ সকাল
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মহান আল্লাহ বলেছেন- যাদের কাছে আমরা কিতাবখানী দিয়েছি তারা তা এমনভাবে তিলাওয়াত করে যেমন তিলাওয়াত করা উচিত।তারাই হচ্ছে সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা সেটাতে বিশ্বাস করে,আর যে কেউ এতে অবিশ্বাস করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
সূরা বাকারাঃ১২১
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা)বলেন,যার হাতে আমার জীবন,তাঁর শপথ। সঠিক তিলাওয়াত করা হচ্ছে-
“যা কিছু এটা বৈধ বলে ঘোষনা করে সেটাকে বৈধ মনে করা।
যা কিছুকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা দেয়,সেটাকে নিষিদ্ধ বলে গন্য করা।
আল্লাহ যেভাবে নাযিল করেছেন সেভাবে একে আবৃত্তি করা,
সঠিক অর্থ থেকে কোন শব্দকে বিচ্যুত করে কোন বিকৃত অর্থ না নেয়া এবং এমনভাবে ব্যাখ্যা না করা যে ভাবে ব্যাখ্যা করা অনুচিত”।
আল্লাহ সর্বোত্তম বানী নাযিল করেছেন। এমন একটি গ্রন্থ যার সমস্ত অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার মধ্যে বিভিন্ন জিনিষের পুনরাবৃত্তি হয়েছে।এসব শুনে সে সব লোকদের লোম শিউরে ওঠে যারা তাদের রবকে ভয় করে। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।এটাই হচ্ছে আল্লাহর হেদায়েত।
সূরা আয যুমারঃ২৩
আমাদের বর্তমান অবস্থা কী???
একজন স্ত্রী যখন একটি পরিবারে আসেন,তখন স্ত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে এবং স্বামীর সাথে পরামর্শ করে মেনে নেয়ার ও করনীয়ের জন্য অন্তরকে প্রস্তুত করে নিতে হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর খাস বান্দা হওয়ার জন্য।
আরেকটি বিষয় আমরা হাদীসের শিক্ষাকে অমান্য করি বলেই অনেক অঘটন ঘটে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে,সে অন্য নারীর সাথে মিলিত হয়ে তার সৌন্দর্যের বর্ণনা তার স্বামীর সামনে এমনভাবে দেয় যেন তার স্বামী ঐ নারীকে স্বয়ং দেখতে পেরেছে।
সহীহ আল বুখারী
গায়ের মাহরাম নারীর বর্ণনাই দেয়াটা নিষেধ করা আছে সেখানে দেখারতো প্রশ্নই থাকতে পারে না। গল্প করতে করতে দেখা গেছে সেই নারীর প্রতি একটি আকর্ষণ তৈরী হয়ে যায়। সমাজে এই ভাবে অনেক সংসারে অশান্তিও বিরাজ করছে।
মূলত পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তি যার যার নিজ স্থানে থেকেই শরীয়তের বিধান মেনে চলার জন্য চেষ্টা ও পরস্পরকে সাহায্য করলেই সম্ভব এই সমাজে কিছুটা শান্তি ফিরিয়ে আনা। ঠিক এই জিনিষের অভাবেই দেখা যায় যেখানে ধর্মীয় অনুশাসন আপাত দৃষ্টিতে মেনে চলছে দেখা যায় সেখানেই সবামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়ন।
আর এই সুযোগটাই যারা অনুশাসন মেনে চলেন না তারা উদাহরন হিসেবে দেখান যে, সংকীর্ণমনা বলেই তাদের পরিবারে শান্তিতে নেই। আমরা এতো নিয়ম কানুন মানি না- ভালো আছি তবু।এইভাবেই আমরা শয়তানকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে দিচ্ছি।
আমার এক জুনিয়র কলিগ সে খুব আমলদার ও পুরু হিজাব মেনে চলতো,কিন্তু তার স্বামী কর্মক্ষেত্রে নারী কলিগদের সাথে শরীয়তের নিয়ম মেনে চলতেন না আবার স্ত্রীকেও হিজাব না করে শুধুমাত্র সতর ঢাকার মধ্যেই থাকতে বলতেন। এইভাবে প্রতিনিয়ত অশান্তির মাঝেই সন্তানরা জন্ম নেয়। একসময় স্ত্রী জিদ করে হিজাব খুলে ফেলেন এবং সাধারন সতরটুকুও ছেড়ে দেন, তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো সে উত্তর দেয়, সে খুব মজা করবে অন্য নারীদের সাথে এর আমি কেন এতো ঝামেলায় থাকবো । আমিও আমার মতো সবার সাথে মজা করবো...। কয়েক বছর পর জানলাম স্বামী খুব আমলদার হয়ে গিয়েছেন কিন্তু সেই কলিগ আগের মতো ভুল পথেই অটল আছে। স্বামী এখন স্ত্রীকে বুঝান কিন্তু তার সেই জিদ থেকে আগের কষ্টের কথা মনে করে কথা শুনতে চায় না। আল্লাহ সেই বোনটিকে সহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।
সেই অনেক আমলদার জিনটিও অহংকার করে মহান আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে চলে গেলো এবং জিদের কারনে আর তওবা করার সুযোগটিও হারালো। এইভাবে হয়ে গেলো চির অভিশপ্ত শয়তান।
আমাদের চরিত্র থেকে এই মনোভাব দূর করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-
কোন ব্যক্তি অন্য কারোর গোনাহের বোঝা মাথায় নিবে না,যদি কারো উপর গুনাহের বড় বোঝা চেপে থাকে এবং সে সাহায্যের হাত প্রসারিত করার জন্য কাউকে ডাকে,তবে সে তার বোঝার কোন অংশই নিজের মাথায় তুলে নিবে না-সে আত্মীয় স্বজনই হোক না কেন।
সুরা আল ফাতেরঃ১৮
“তোমাদের কি তোমাদের আমল চাড়া অন্য কোন জিনিষের দৃষ্টিতে প্রতিফল দেয়া হবে”?
সূরা আন নমলঃ৯০
নেককার স্ত্রীর গুনাবলী সংক্ষেপে বলে শেষ করছি, আগামীতে ইনশা’আল্লাহ স্বামীর অবস্থান থেকে ত্রুটিকে জানাবো সংশোধনের উদ্দেশ্যে ।মহান আল্লাহ আমাদের আন্দোলনীসহ সাধারন প্রতিটি পরিবারে কোর’আনের আলো দিয়ে আলোকিত করে দিন আমীন।
শায়খ ইবনু জুবাইলান স্বামীর ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ
১) বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।
২) স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা।
৩) সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।
৪) স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন)। রান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
৫) সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।
৬) স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরের পোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।
৭) স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা। নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।
৮) সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।
৯) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।
১০) সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
১১) কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, ((ولا تجسسوا)) “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না। (সূরা হুজুরাত -১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।
১২) স্বামী কখনো রাগম্বিত হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।
১৩) স্বামীর মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।
১৪) সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
১৫) স্বামীর নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বামীর সামনে বান্ধবীর প্রশংসা আত্মঘাতী কাজ, যা সমাজে প্রমাণিত।
পর্দা মেইন্টেইন করে চলা আল্লাহ্ তায়ালার বিধান মেনে চলা এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য খাস হবে, স্বামী অথবা অন্য কারও জন্য নয়, এই জন্যই আপনার বান্ধবীর মনে প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করেছে! আর অন্যায় কাজতো এমন এক অপ্রতিরোধ্য টান, যে টানে একবার ভেসে গেলে পুনরায় ফিসে বেজায় কঠিন!
আমরা পুরুষরা সাধারণত স্ত্রীদের পর্দা নিয়ে খুব টেনশনে থাকি, অথচ নিজেরা কলিগদের ছুটিয়ে আড্ডা দেই, ঘরে এসে মহাসাধু পুরুষ!!!!! আল্লাহর বাণী কখনো মিথ্যে হয় না! যেসব পুরুষ স্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে নস্টামি করে বেড়ায়, স্ত্রী স্বামীর সামনে সীতা সেজে তার অবর্তমানে পরকীয়ায় লিপ্ত হবেই! কেননা আল্লাহ্ বলেছেন, ব্যভিচারী পুরুষের সাথে ব্যভিচারী স্ত্রী!!!!
ধন্যবাদ সুন্দর গঠনমূলক লেখাটি শেয়ার করার জন্য।
বেশির ভাগ মহিলাদের দেখেছি স্বামীর কাছে গিয়ে অন্য বান্ধবীর দৈহিক সৌন্দর্যের বর্ননা করতে এই টুকু বোঝার মতো কমন সেন্সটুকু বোনেরা হারিয়ে ফেলেন!
যতাহযথ কোরান-হাদীসের উপস্থাপন এবং যৌক্তিক কিছু উদাহরন ও পরামর্শে সব মিলিয়ে অতুলনীয় পোস্টটি খুব ভালো লাগলো!
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন। আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন