সময়ের দাবী-আত্মউপলব্ধিঃ১২
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৭ মে, ২০১৫, ১২:২৬:২২ দুপুর
আসসালামু’আলাইকুম।
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর, তা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না ৷”
(সূরা আত তাওবাহঃ২৪)
ভালোবাসা যেমন মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরে দিয়েছেন তেমনি তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ জানতে চান আমাদের মধ্যে কে সাচ্চা ঈমানদার এর কে মোনাফিক।
উপরের আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারছি ভালোবাসার ক্ষেত্রে স্থান দিতে হবে- মহান আল্লাহ সুবহান,তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পথে টিকে থাকার ও অনুসরন ও জীবনের সবক্ষেত্রে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, এরপর পিতা মাতা,স্ত্রী,সন্তান,ভাই-বোন ও অন্যান্য দুনিয়ার চলার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষ।
আমরা অনেকেই মহান আল্লাহর এই নির্দেশনাকে আবেগের আতিশয্যে অবস্থান থেকে সরে আসি বা শয়তান যখন দেখে আমাদের দ্বারা কাজ বন্ধ করা যাবে না তখন এই অবস্থা সৃষ্টি করে আমাদের ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত করার অপপ্রয়াস চালায়।
স্বামীর প্রতি অতি ভালোবাসা বা আনুগত্যের ক্ষেত্রে অনেক বোনেরা এই অবস্থায় পড়ে যান যার ভালোবাসা শিরকের দিকে নিয়ে যায়। স্বামী পর্দা করা পছন্দ করেন না তার খুশীর জন্য পর্দা করতে চান না। আবার অনেক স্ত্রী স্বামীর ব্যবসায়ের উন্নতি হবে মনে করে স্বামীর কথামতো ব্যবসায়ী বন্ধু পার্টনারের সাথে শরীয়তের সীমার বাইরে সম্পর্ক করে।
আমাদের মনে রাখা দরকার স্রষ্টার আনুগত্যের বাইরে সৃষ্টির আনুগত্য চলে না। মহান রবের কাছে আমাদের একাকী যেতে হবে। যে স্ত্রী আমি আজ এতো সুন্দর, এতো গুরুত্বপূর্ণ ভালোবাসার অবস্থান,মনে হয় একটি রাতও আলাদা থাকা অসম্ভব,সেই আমি স্ত্রী যখন আত্মাটা থাকবেনা আমাকে সেই মুহূর্ত থেকে লাশ বা মূর্দা বলে সম্বোধন করে কত তাড়াতাড়ি কবরে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে দিয়ে আসবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে পরিবারের মূল ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবাই এবং আজ লাশের ঘরে থাকতেও প্রিয় মানুষেরা ভয় পাবে অথচ এই প্রিয় মানুষের গায়ের সাথে লেগে থাকাটাই একসময় ভালো লাগা ছিল।
মনে পড়ে যায় সেই গানটি-আমি চোখ বুজে দেখি আমারই লাশ কাফন হয়েছে সারা,সেই লাশ থেকে ভাসে আতরের ঘ্রাণ কাঁদিছে আপন যারা-----।
এটাই বাস্তব সত্য যদিও শুনতে কষ্ট লাগে কিন্তু তাঁর চেয়ে কষ্ট লাগানো উচিৎ যেই স্রষ্টা আমাকে ৯৯ গুন ভালোবাসেন তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান কি ভাবে মূল্যায়ন করছি?? সেই ভালোবাসার জন্য আনুগত্য কতটুকু করছি?? তাঁর ভালোবাসাকে আমার জীবনের পাথেয় হিসেবে নিতে পরিশ্রমী হচ্ছি কি না?
স্ত্রী ও স্বামী পরস্পরের পোশাক বলে কোর’আনে উল্লেখিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমরা স্ত্রীরা অনেকেই আমল করি না। পোশাকের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়:
১। দেহকে আবৃত করে বা অন্তরালে রাখে।
২। সৌন্দর্য বিধান করে।
৩। বিশ্বাস বা আদর্শের পরিচয় বহন করে। (তাকওয়া উত্তম )
৪। দেহকে সুরক্ষিত রাখে। খুঁত বা ত্রুটিকে ঢেকে রাখে।
৫। আভিজাত্যের প্রকাশ (নি’আমতের শুকরিয়া হবে
কিন্তু দেখা যায় অনেক স্ত্রী তাঁর স্বামীর ত্রুটি নিয়ে নিজ আত্মীয় বা অন্য কারো সাথে অকপটে বলে বেড়াচ্ছে। অন্যের সামনে স্বামীকে অপমানিত করতে দ্বিধা করে না। অভিযোগের মাত্রা এতো বেশী করে ফেলে যে এই বিয়ে হওয়াটাই যেন ভুল।
একজন স্ত্রী হিকমাতের সাথে মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নিজেদের মধ্যে সমস্যাগুলো নিজেরা সমাধানের পদক্ষেপ নিলে সেটাই কল্যানকর। কল্যানকামী হয়ে স্বামীর ত্রুটিকে সংশোধন করার দায়িত্বও পালন করতে হবে। আমরা যতটা যত্নের সহিত,সুন্দর আচরন দিয়ে ধৈর্য সহকারে বাইরের লোকদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করে এগিয়ে আনতে চেষ্টা করি, নিজ স্বামীর বা পরিবারের ব্যপারে কি সেই রকম সময় দেই??? নিজের আচরন সুন্দর করে, বেশী বেশি ইবাদাত ও দোয়া করেই অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যায় আল্লাহর রহমতে। একান্তই যখন না হয় তখন কোর’আনের বিধান অনুযায়ী দুই পক্ষের একজন করে মুরুব্বীর সাথে পরামর্শ করা।
একবার আমার এক বান্ধবীর সাথে কথা বলার জন্য বাসায় ফোন দিয়েছিলাম। ফোনটি রিসিভ করলেন বান্ধবীর স্বামী। আমি আমার বান্ধবী কোথায় জানতে চাওয়ার সাথে সাথে অনেকগুলো অভিযোগ শুরু করে দিলেন –আপনার বান্ধবীতো বড় ডাক্তার হবে তার স্বামীর খবর নেয়ার সময় নেই। সারাদিন লাইব্রেরী হাসপাতাল নিয়ে থাকে ইত্যাদি। আমার সেই বান্ধবীটি আসলে এফ সি পি এস কোর্সে ছিলেন। বাসায় দুটো সন্তান রেখে তার এক ভাগ্নীকে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালে যেতেন সকালে এবং সন্ধ্যা হয়ে যেতো বাসায় ফিরতে। সে যাই হোক কয়েক বছর পর শুনলাম বান্ধবী প্রফেসর হয়েছেন কিন্তু স্বামী সেই কথিত ভাগ্নীকে বিয়ে করে দিন পার করছেন। সেই বান্ধবী সন্তান দুটো নিয়ে আলাদা জীবন পার করছেন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
ক্যারিয়ার ও চাকরী যদি এই রকম অবস্থায় নেয়া সম্ভাবনা থাকে সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পরিবারের হককে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা নেয়া দরকার। পারস্পরিক পরামর্শ দিতে পারে সুন্দর ভাবে সমাধানের পথ।
আরেকজন কলিগের এফ সি পি এস করার ক্ষেত্রে স্বামীর ত্যাগএর নমুনা শুনুন। যমজ দুটি সন্তানকে স্বামী নিজের কাছে রেখে স্ত্রীকে বললেন, তুমি হলে যেয়ে পড়াশুনা করো তাহলে তাড়াতাড়ি পাশ হবে। শুক্রবার একদিন তুমি এসে বাসায় থেকো। দিনে শাশুড়ি গৃহ পরিচারিকার সাহায্যে এবং রাতে স্বামী একাই সন্তান দুটোকে ফিডার ও ড্রেস ছেঞ্জ সবই করতেন, আবার সকালে অফিসে চলে যেতেন। সেই পরিবারের স্ত্রীও প্রফেসর হয়েছেন এবং স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
এই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে ভুমিকা রাখতে হবে বুঝতে হবে অবস্থাকে, আখেরাতের জবাদিহীকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে যত আখেরাতের প্রত্যাশী সে তত সহজেই জীবনের অবস্থানকে সহজ করে সাজাতে পারেন। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সব কিছু পাওয়ার জন্য নয় কারন জান্নাতের জন্য অনেক কিছু কে রেখে দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
আর তাদের সবরের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোষাক দান করবেন।
সূরা আদ দাহরঃ১২
বিষয়: বিবিধ
১১৪১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বান্ধবীর জীবনের কথা জেনে খুব খারাপ লাগলো! মেয়েরা অনেক সময় ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটতে গিয়ে সংসারের চরম ক্ষতি করে বসে!
ত্যাগী স্বামীর বিবরন জেনে ভালো লাগলো! উনি সহায়তার মানসিকতা দেখিয়েছেন বলেই স্ত্রীর পক্ষে পথ পাড়ি দেয় আসম্ভব হয়েছে!
কোরআনের চমৎকার আয়াত এবং বাস্তব সম্মত উদাহরেনের মাধ্যমে লিখা পোস্ট পড়ে ভালো লগালো!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
আপু আপনি কি ডক্তর?
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে ডাক্তার হয়ে মানুষের মাঝে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। জাযাকাল্লাহী খাইরান ফিদদুনিয়া ও আখেরাত আমার সুপ্রিয় আপু।
আল্লাহ সবাইকে বুঝতে সাহায্য করুন।
আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যি এরকম হতে মন যায় ।কিন্তু দুনিয়ার লোভ ও যে পিছু ছাড়ে না ।
জাজাকাল্লাহ খারান আপু ।
আমার সুপ্রিয় বোন, দুনিয়ার জীবনকে যদি আমরা, মহান আল্লাহ যে ভাবে ভাবতে বলেছেন সে ভাবেই দেখি তাহলেই শয়তান ও নফস আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না ইনশা’আল্লাহ। তাই আমাদের রুহ বা বিবেককে শক্তিশালী করতে হবে আর তা সম্ভব নিজের জীবনে আয়াতের বাস্তবায়ন করে করে ।মহান আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন এবং ক্ষমা করে কবুল করে নিন মোমিনা হিসেবে। জাযাকাল্লাহী খাইর।
কুপি লাগিয়ে আপনাকে খুজতে খুজতে আমি হয়রান হয়ে গেছি
মন্তব্য করতে লগইন করুন