সময়ের দাবী- আত্মউপলব্ধি-৯

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০২ মে, ২০১৫, ১০:০১:১৯ সকাল

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

এই পর্বে নারী হিসেবে আমরা নিজেদের উপর কিভাবে যুলুম করছি বা সুন্দর সুন্দর দায়িত্ব কিভাবে আমরা হেলায় নষ্ট করে ফেলছি তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশা’আল্লাহ।

যে নারী দুনিয়ার জীবনেই সব পেতে চান আখেরাতে যার চাওয়ার বা পাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই তাদের কথা এখানে বলছি না কিন্তু আমরা যে নারীরা মহান আল্লাহ’তালার সন্তুষ্টি নিয়ে দুনিয়া তে শান্তি ও আখেরাতে উচ্চতর জান্নাত পেতে আগ্রহী আমাদের জন্যই এই দিকগুলো তুলে ধরা যেন সংশোধিত হতে পারি মহান আল্লাহর পথে থাকার জন্যই। আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরকে খুলে দিন বুঝার জন্য এবং কোরআনকে এই অন্তরে বসিয়ে দিন।

আমরা পরিবারে কেউ বোন,কেউ স্ত্রী কেউ বা কন্যা এবং কেউ বা সম্মানিতা মায়ের পদে অবস্থান করছি। অনেক ক্ষেত্রে সবগুলো জায়গাতেই আমাদের বিচরন করতে হয়। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবেছি এই পদগুলো মহান আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন কেন? আবার অনেকে রিযিকের প্রয়োজনে অথবা যোগ্যতার সঠিক ব্যবহারের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে থাকেন, একভাবে বলা যায় প্রফেশনাল একটি পদ লাভ করেন।

নারী পুরুষ প্রত্যেককেই মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিগতভাবে দুটি পদ দিয়েছেন তা হলো ----

আমি জীন ও মানুষকে আমার দাসত্ব করা ছাড়া আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই।

সূরা যারিয়াতঃ৫৬

সেই আল্লাহই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদের ভেতর থেকে কাউকে কারোর চেয়ে উচুঁ মর্যাদা দিয়েছেন,যেন তোমাদেরকে তিনি যা কিছু দান করেছেন তার ভেতর তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন।

সুরা আন’আম ১৬৬

মহান আল্লাহর বান্দা বা দাস এবং অন্যটি আল্লাহ সুবহান তায়ালার খলিফা।

একদিকে সর্বনিম্ন অধ্যায় দাসত্ব এবং অন্য দিকে উচ্চতর মর্যাদা মহান রবের খলিফা বা প্রতিনিধি। আমরা কি আমাদের জীবনের প্রতিটি সময়ে এই অবস্থানে নিজেকে রাখতে সচেষ্ট হচ্ছি??????

এই দুটি পদে অবস্থান করে মহান রবের সাথে যে চুক্তি করতে পারে যে, তার জান মাল যা আল্লাহই দিয়েছেন তা বিক্রি করবে আল্লাহর কাছে জান্নাতের বিনিময়ে অর্থাৎ মূল চেতনা হলো আমাকে এই কথাতে আসতে হবে যে-

নিশ্চয়ই আমার নামাজ আমার জীবন আমার কুরবানী সবকিছুই সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি সমস্ত জাহানের প্রভু যার কোন শরীক নেই।

সূরা আন’আমঃ ১৬২

আর এই চেতনা বিশ্বাসকে দৃঢ় ভাবে ধারন করে একনিষ্ঠ ভাবে দুনিয়ার জীবনে যে যে পদে আছি তার সঠিক দায়িত্বের আঞ্জাম দিয়ে যেতে হবে।

ভারসাম্য পুর্ণ ভাবে কাজকে সময়ের সাথে সমন্বয় করে চললে বেহুদা সময় থাকার কোন সুযোগ নেই। যার যার দায়িত্ব পালন করতে হলে অনেক পরিশ্রমী হতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

আর যে ব্যক্তি কোন সৎকাজ করবে, সে পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন , তবে যদি সে মুমিন হয় , তাহলে এই ধরনের লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের এক অণুপরিমাণ অধিকারও হরণ করা হবে না ৷

সেই ব্যক্তির চাইতে ভালো আর কার জীবনধারা হতে পারে, যে আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে, সৎনীতি অবলম্বন করেছে এবং একনিষ্ট হয়ে ইবরাহীমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে ? সেই ইবরাহীমের পদ্ধতি যাকে আল্লাহ নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন ৷

—সূরা নিসা ১২৪-১২৫

ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত। নবী সা: বলেন: তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল (অভিভাবক) এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে সে দায়ী। শাসক একজন অভিভাবক এবং কোন ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের অভিভাবক (দায়িত্বশীল)। কোন মহিলা তার স্বামী-গৃহের ও তার সন্তানদের অভিভাবক (রক্ষক)। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে।

বুখারী: ৪৮১৮

হজ্জে যখন মক্কায় হেরেম শরীফে যেতাম প্রতিবারই দরজা দিয়ে ঢুকার সময় খেয়াল করলাম প্রতিটা দরজার নাম বিশেষ সাহাব(রা) দের নামানুসারে এবং পবিত্র মদিনাতেউ তাই। অথচ আমার তখন মনে হলো, আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল(সঃ) এর কাছে বিবি খাদিজা(রাঃ) আয়েশা(রাঃ) উনারাতো অনেক সম্মানিতা,তাহলে উনাদের নামে তো কোন দরজায় নাম দেয়া হয় নি।কোন নারীর নামেই দেয়া হয় নাই। আমি মূল উদ্দেশ্য কি জানি না। তবে আমার মনে হয়েছে সম্মানীতা নারীরা মর্যাদায় থাকেন তাদের কাজের ধারায়, যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। হতে পারে এটাও শরীয়তে পর্দার কোন নমুনা। আল্লাহই ভালো জানেন।

মদিনায় উহুদ যুদ্ধেও আমরা দেখি কুরাঈশ কাফির নারীরা যেখানে নাচ গান বাদ্য কবিতা দিয়ে তাদের দলকে ইন্ধন যোগাচ্ছে সেখানে মুসলিম নারীরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়ায় মগ্ন থেকেছেন আবার প্রয়োজনে ময়দানে বের হয় আহতদের সেবা এমনকি অস্ত্র ধরতেও সক্ষম হয়েছিলেন প্রয়োজনে।

মিসরের সেই সংগ্রামী নারী জয়নাব আল গাজালী- তিনিও তাঁর কাজের ত্যাগের ও অটল অবিচল থাকার যে উদাহরন রেখে গিয়েছেন তা কিন্তু আজো অনুসরনীয়।

আগামীতে আরো সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের অবহেলা ও করনীয় তুলে ধরবো ইনশা’আল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

317708
০২ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ! অনেক সুন্দর লিখেছেন !
০২ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:১৪
258875
মিশু লিখেছেন : মহান আল্লাহ তোমাকে আমাকে মহিলা সাহাবী(রা)দের মতো উন্নত আমল করার তৌফিক দান করুন। ধন্যবাদ প্রিয় বোন তোমাকে।
317772
০২ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৫
পুস্পিতা লিখেছেন : হুমম... অনেক ধন্যবাদ। আগের পর্বগুলোও সময় নিয়ে পড়ব।
০৫ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৩৮
259528
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File