সময়ের দাবী-আত্মউপলব্ধি

লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৩৮:১৯ সকাল

আসসালামু’আলাইকুম।

মহান আল্লাহতা’আলার নামে।

একদিন আমার এক কলিগ বলছিলেন যে, ক হাসপাতালে একজন ডাক্তার খুব নামাজী এবং সুন্নাতী দাঁড়ী এবং লেবাস খুব ভদ্র এবং সে একটি ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত অথচ সে সকালে হাসপাতালে হাজিরা কোন দিন সবার আগে দিয়ে চলে যান অন্য জায়গায় প্র্যাকটিস করতে আবার বেলা ২টার দিকে চলে আসেন,এর মাঝে তাকে কাজের জন্য পাওয়া যায় না।

ডাক্তার প্রফেশন অত্যন্ত গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় যা একদিকে মানুষের শারীরিক মানসিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এত বড় একটি মহান হালাল পেশা যা অনেকের জীবনে আয়ের খাত হারাম হয়ে যাচ্ছে ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

অনেকেই আমার কলিগের দেয়া তথ্যের আলোকে রোজগার করে যাচ্ছেন আর মাসের শেষে হারাম টাকা নিয়ে খুব খুশী থাকছেন। একটুও কি তাদের জবাবদীহিতার কথা মনে পড়ে না?

আবার অনেক ডাক্তার চুক্তিবদ্ধ সময়ে রোগীর ইতিহাস শুনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই কিছু কমন ঔষধ দিয়ে দেন, দেখা যায় এন্টিবায়োটিক লাগবে না কিন্তু এতো সময় না দিয়ে প্রেশক্রিপশন লিখে ছেড়ে দেন। তাহলে এই রোগীর পরবর্তী জটিলতার জন্য কে দায়ী। আবার জেনেশুনে ঔষধ কোম্পানীদের কাছ থেকে কিছু কমিশন বা উপহার পাওয়ার জন্য নিম্নমানের ঔষধ লিখে দিচ্ছেন। একবারও কি মনে হয় না এই রোগীটি যদি আমারই আপন কেউ হতো তাহলে কি আমি এই কাজটি করতে পারতাম???

রাসূল(সঃ) এর সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে নিজের জন্য যা পছন্দ করেন অপরের জন্য তা না করলে সে পূর্ণ ঈমানদার না।

বিশেষ করে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক বা হাসপাতালে মিথ্যা বা প্রতারনা করে টাকা নিচ্ছেন। এক রোগী একবার ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য তখন আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হলো। যখন সনোলজিষ্ট বললো আপনার পিত্ত ভালো আছে,তখন রোগী শুনে বলে- আমিতো ৬মাস আগে অপারেশন করেছি,আমার পিত্তে নাকি পাথর ছিলো তাই ওটা ফেলে দিয়েছে। তখন সেই রোগী কাগজ পত্র দেখালো, কিন্তু তাতে কি অপারেশন করেছে তা লেখা নেই। কিন্তু তার শরীরে অপারেশনে কাটা দাগ আছে। এইভাবে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।

আবার অনেকে চারিত্রিক অশ্লীলতার শিকার হোন। একজন পুরুষ ডাক্তারের কাছে নারী রোগী তখনই যাবে যখন কোন মহিলা ডাক্তার না থাকেন। যদি বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতেই হয় তবে শরীয়ত যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু শরীরের অংশ দেখাবে এবং অবশ্যই সেখানে রোগীর মাহরাম বা নার্স থাকতে হবে। আবার কথা বলার ক্ষেত্রেও অপ্রাসঙ্গিক গল্প করে দেখা যায় অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

আসলে সবসময় যদি নিজের অন্তরে আল্লাহভীতি নিয়ে কেউ চলে তাহলেই কখন কোথায় কতটুকু করা আমার জন্য শরীয়ত অনুমোদন করে তা স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসে। যে কাজ বা কথা কেউ দেখে ফেলুক বা জানুক তা নিয়ে বিচলিত হতে হয় বুঝতে হবে সেই কাজ বা কথা গুনাহের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল(সঃ)-কে দু’টি বিষয়ের কোন একটি গ্রহনের এখতিয়ার দেয়া হলে এবং তা গোনাহের কাজ না হলে যেটি সহজতর তিনি সেটি গ্রহন করতেন। যদি গোনাহের কাজ হতো তবে তিনি তা থেকে সবার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করতেন। রাসূল(সঃ) কোন ব্যপারে নিজ স্বার্থে কখনো প্রতিশোধ গ্রহন করেননি। তবে আল্লাহর কোন নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্য লংঘন হলে তিনি তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ নিতেন।–বুখারী-কিতাবুল আদাব—৫৬৮৬

রাসূল(সঃ) বলেছেন-লজ্জার অধিকার আদায় করে আল্লাহর কাছে যথার্থভাবে লজ্জিত হও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর প্রতি আমাদের লজ্জাবোধ আছে। নবী (সঃ) বলেন, লজ্জা বলতে তা বুঝায়না। আল্লাহর কাছে লজ্জাবোধের মানে হলো “ মাথা-মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি এবং পেটকে হেফাজত করা, মৃত্যু ও ধ্বংসের কথা স্মরন করা এবং পরকালের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তি দুনিয়ার সৌন্দর্যকে ত্যাগ করে আখেরাতকে ইহকালের উপর অগ্রাধিকারই আল্লাহর প্রতি যথার্থ লজ্জাবোধ (তিরমিযী)

মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর নির্দেশনার উপর আমল করার দৃঢ় অন্তর দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

312387
০২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৩৩
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক সুন্দর ও শিক্ষণীয় আলোচনা। ডাক্তার মহোদয়গণের বোধোদয় হোক। আপনার মত সেবা ও নৈতিকতার মানসিকতা সকল ডাক্তার এর মাঝে বিরাজ করুক- এই কামনা করি। জাযাকাল্লাহ খাইরান।

এতদিন ডুব মেরে ছিলেন কোথায়? অনেকদিন কোন খবর নেই।

312390
০২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অনেক গুরুত্বপুর্ণ পোষ্ট, সংশ্লিষ্ট সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। জাযাকাল্লাহ খাইর।
312404
০২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
এটা স্বিকার করতেই হবে বাংলাদেশে এখন ডাক্তারি পেশায় তুলনামূলক নৈতিকতা কমে গেছে।
312414
০২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩২
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
312418
০২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৪০
egypt12 লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর নির্দেশনার উপর আমল করার দৃঢ় অন্তর দান করুন। আমীন Rose
312592
০৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৪৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : দায়িত্ববোধ সৃষ্টির জন্য এইরকম লেখা সত্যিই দরকার, আপনার লেখাটি মানুষকে ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে সাহায্য করবে! ধন্যবাদ
314218
১১ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:২৮
মিশু লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে নিয়ে যান। সবাইকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File