জামায়াত নেতাদের অন্তরীনকালীন সময়ে শিবিরের সাবেক সেক্রেটারী ফরীদ আহমদ রেজা সাহেবের ইতিহাস চর্চা!

লিখেছেন লিখেছেন কমরেড মাহমুদ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১৩:৫৩ দুপুর

১৯৮২ সালে শিবির বিভক্তির ঘটনা প্রবাহ নিয়ে সাবেক সেক্রেটারী ফরীদ আহমদ রেজা সাহেবের "শিবিরের ক্রান্তিকালঃ ১৯৮২ সালের কথকতা" লেখাগুলো পড়লাম। আজ থেকে ৩৩ বছর আগের ঘটনা গুলো অতি চমৎকার লিখনী শক্তি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে দুঃখজনক হলো সেই ব্যাক্তি গুলো সব জালিমের কারাগারে বন্দী। এতদিন কিছু না বলে ৩৩ বছর পরে কেন আজ ইতিহাস চর্চায় নেমে পড়লেন আমি সে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাইনা। কারন জামায়াতের আওতার বাইরে আরেকটা দল করার জন্য প্রথম ধাপ যুব শিবির প্রতিষ্ঠার খায়েশ তাদের আগে থেকে ছিলো। তবে জামায়াত নেতাদের সচেতন করে, স্বাভাবিক অবস্থায় ওইসব করতে গেলে তারা ইসলামপন্থী জনগনের সমর্থন পাবেন এমন আত্মবিশ্বাস তাঁদের ছিলোনা। তাই জামায়াতকে অন্ধকারে রেখে তারা সেই কাজটা করতে গিয়েই পদচ্যুত হন।

বর্তমানে মূল নেতৃত্বের অন্তরীন অবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগের ঘাটতির কারনে ময়দানের বাইরে থাকা কিছু হুজুগে ছেলেরা সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করার উৎসাহ পাচ্ছেন বলে মনে হয়। আর কামারুজ্জামান ভাইয়ের মজলিসে শুরাকে লেখা পরামর্শ্ মূলক চিঠি ফাঁস করে আগে থেকেই এসব প্রেক্ষাপট তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুরাকে লেখা চিঠি কিভাবে সংবাদ মাধ্যমে যায় এটা চিন্তা করলে প্রি প্ল্যান ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। এখানেও একতরফা মতামতকেই ভিত্তি করা হয়েছে। কারো একক চিন্তা চেতনায় সংগঠন বা ইসলাম পরিচালিত হয়না। মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠন তাঁর পরিকল্পনা গ্রহন করেন। প্রস্তাব বিভিন্নজন বিভিন্ন রকম দিবে আর শুরা আলোচনা করে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। এর বাহিরে পরিকল্পনা প্রণয়নের কোন সিস্টেম সংগঠনে নেই। আমরা চিঠির বিষয়ে সবাই জেনেছি কিন্তু চিঠি প্রাপ্তির পরবর্তী আলোচনা, স্বীদ্ধান্ত, মতামত এবং সর্বপরি শুরার মুভমেন্টের ব্যাপারে জনগণ অন্ধকারে থেকেছেন। কারন শুরার যেকোন সিদ্ধান্ত আলোচনা গোপন থাকার কৌশলী বাধ্যবাধকতা আছে। আর এই ব্যাপারটিকে অপব্যবহার করে কল্পিত অবিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। অথচ যে কামারুজ্জামান স্যার জামায়াতে থেকেই শাহাদাত গ্রহণ করেছেন, সেই কামারুজ্জামান স্যারকেই জামায়াত ভাঙ্গার ও সংগঠন থেকে ভাগানোর অস্ত্র হিসেবে নির্লজ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে! ঠিক যেমন করা হয় শিশির মনির ভাইকে নিয়েও!

আসলে ৮২ সালে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হলে এতদিন পরে ফাঁকা মাঠে খেলার সুযোগ নিতে নতুন করে আলোচনাটি সামনে আনা হলো। যেহুতু এখন তাদের সাথে ডিবেট করার বা জামায়াতের রুট লেভেলের সমর্থক শ্রেনীকে তথ্য দেয়ার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই বলেই তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

এই শ্রেনীটি মূলত প্রথম থেকেই নিস্ক্রীয় এবং উস্কানি দাতাদের নিয়ে মুখরিত। নিজেরা নিজেদের জ্ঞাণের আলোকে আলাদা শুদ্ধ প্লাটফর্ম বানাতে নিজেদের নৈতিক শক্তিমান ভাবতে পারেনি। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জনতার সামনে শক্তিশালী দাবি নিয়ে যাবার যোগ্যতম তাঁরা নিজেরাও নিজেদেরকে মনে করেন না। সেই মানসিক শক্তিও তাঁদের নেই। ফলে জামায়াতের হাজার দোষ বর্ণনা করলেও শুদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের প্লাটফর্ম গঠনে তারা হাত দেয়নি।

তাঁদের আচরণ, কথাবার্তা খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে তাদের কাজ গুলো নেগেটিভ। তাঁরা এই কাজ গুলো করছে শুদ্ধতার জন্য নয়, ভালোভাবে গড়া নয়, দেখে মনে হয় তাঁদের কাজ ভাঙ্গা, উস্কানি দেয়া, অবিশ্বাস তৈরি করা, নিস্ক্রিয়দের প্রবোধ দেয়া, অপবাদ আরোপ করা এবং সংগঠনের জনশক্তিকে ভাগিয়ে নিজ পছন্দের একটি প্লাটফর্ম গঠনের অপকৌশল। অথচ স্বয়ং ৮২ এর বহিস্কৃত কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমেদ আব্দুল কাদের বাচ্চু ভাইও আলাদা প্লাটফর্মে করে সেটাকে জামায়াত-শিবিরের চেয়ে অধিক শুদ্ধ, রুহানিয়াত সম্পন্ন ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যার্থ হয়েছেন। তিনি নিজেও তাঁর দল নিয়ে নতুন কিছু দিতে পারেন নি। তাঁর গড়া ছাত্রমজলিশের সকল কিছুই শিবিরের পেটেন্ট। এমনকি বছরের সদস্য সম্মেলনের পোস্টারও শিবিরের পোস্টারের নকল করে করা হয়।

আফসোস হয় এসব জনশক্তিদের জন্য। তাঁরা কি চায় সেটাই আজ পর্যন্ত বলতে পারেনি। তাঁরা পারে শুধু অপেনলি সমালোচনা করতে, কিন্তু পারেনি সমাধানের পথ দেখিয়ে দিতে। এখনকার পলিসির চেয়ে যদি বেটার কোন পলিসি থেকে থাকে সেটা তাঁরা উপস্থাপন করতে পারতো। ফোরামে না পারলে এখনকার মত ওপেনভাবেই দিতে পারে। সেদিকে যাওয়ার শক্তি এখনও কারো আছে বলে প্রমান দিতে পারেনি। সত্য বলতে কি, শুধু মাত্র কিছু ব্যাপারে নিজের চিন্তার ভিন্নতা মেনে নিতে না পেরে আবেগী ছাত্রদের সংগঠনটাকে অবিভাবকহীন করতে চায়, তারা কি করে গণমানুষের সংগঠন তৈরি করবে? ইসলামের দেখানো মজলিশে শুরাকে যারা ছুড়ে ফেলে দেয় তাঁরা আবার কোণ ধরনের শুরা গঠন করবেন?

বিষয়: বিবিধ

৫৯৫৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341838
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৫
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : ধন্যবাদ জনাব, আমি চেয়েছিলাম উনার কথাগুলোর ব্যাপারে কিছু একটা আসুক। কারণ মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম ইন্তেকাল করার পূর্বে কথাগুলো বলারমত সৎসাহস উনাদের হয়নি। বর্তমানে জটিল পরীক্ষায় ব্যস্ত জামায়াত-শিবির নিয়েই উনার কথা। শেখ হাসিনাও ছাত্রশিবিরকে পরামর্শ দেয়, আর উনিও দিচ্ছেন (প্রকারান্তরে)। নেটে অনেক আগে আলবদর বলছি একটি বই পড়েছিলাম। ঘটনাগুলো একই রকম মনে হয়। জামায়াত উনার পছন্দ ছিলনা তাই জামায়াতে যোগদেননাই; ভাল কথা কিন্তু সংগঠন থেকে দূরে থাকার বৈধতা তিনি কোথা থেকে পেলেন তা বলেননি। জামায়াতও কাউকে জামায়াত করতে বাধ্য করেননা। শুধুমাত্র পরিপূর্ণ ইসলামী সংগঠনে যোগ দেয়ার আহবান জানায়।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০১
283158
কমরেড মাহমুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ, সুন্দর কথা বলেছেন
341839
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৬
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : No comments
341854
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
341871
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : একটি ট্রেন ততক্ষনই লাইনে থাকে যতক্ষন ইঞ্জিল সামনে থাকে, ইনশাআল্লাহ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামী চলবে তার আপন গতিতে, কোন চক্রান্তই তাদেরকে তাদের ঐক্য থেকে এক পাও দুরে ঠেলে দিতে পারবেনা।
341874
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৯
নূর আল আমিন লিখেছেন : মাহমুদ ভাই// ইসলামের দেখানোমজলিশে শুরাকে যারা ছুড়ে ফেলে দেয় তাঁরা
আবার কোণ ধরনের
শুরা গঠন করবেন?? এটা শুধু আপনার প্ৰশ্ন না। প্ৰতিটা মুসলমানে, ধন্যবাদ জানাই আপনাক। আমাদের হয়ে, মুনাফিকদের প্ৰতি প্ৰশ্নটা ছুড়ে দেওয়ার জন্য
341879
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:২১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভাল নিয়তে সংস্কারের উদ্দেশ্য সমালোচনা পরার্মশ যে কেউ দিতে পারেন। কিন্তু দেখতে হবে তিনি সাংগঠনিক ভাবে কোন র্পযায়ে আছেন।। কাউকে আমরা মুনাফেক বলবো না। কিন্তু সংগঠন ছাড়াতো ইসলামই হয়না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
341898
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উনি উনার নিজের পক্ষের বক্তব্য দিয়েছেন। এতে সমস্যার কিছু আমি মনে করি না।
341948
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০১
ফকীহে মুজতাহিদ লিখেছেন : খুব ভাল লাগলো।
341951
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৪৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

"ক্বুলিল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি আলিমাল গ্বয়বি ওয়াশশাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বায়না ইবাদিকা ফী মা কানু ফীহি ইয়াখতালিফুন"

"আল্লাহুম্মাহদিনী লিমাখতালাফু ফীহি মিনাল হাক্বি বি ইজনিকা ইন্নাকা তাহদী মাইঁইয়াশাউ ইলা সীরাতিম মুস্তাক্বীম"

"আল্লাহুম্মাগ্বফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজীনা সাবাক্বুনা বিল ঈমান, ওয়া তাজআল ফী ক্বুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজীনা আমানু, রব্বানা ইন্নাকা রউফুর রহীম"
আমীন ইয়া রব্বুল আরশিল কারীম
১০
341966
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:১১
কাহাফ লিখেছেন : জামাত-শিবিরের সাথে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে শুধু বিরোধীতার জন্যে সমালোচনা শুনলে আমরা সাধারণরা(যারা জামত-শিবির কে ভাল হিসেবে সমর্থন করি,ভোট দেই) আশাহত হই! স্বীয় দুর্বলতা সত্বেও কাংখিত বিষয় জামাত-শিবিরের মাধ্যমে হাসিল হবে বলে শান্তনা খুজতে চেষ্টা করি আমরা সাধারণরা!
সাধারণ আমাদের ক্ষণিকের স্বপ্ন হলেও তা যেন অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে যেন তা ভংগ করা না হয়-এই মিনতী সবার কাছে!!
১১
341995
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৭
মোঃ মাকছুদুর রহমান লিখেছেন : ধন্যবাদ,নব্য মুনাফিক দের চেনার জন্য এই লেখাটি যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে আশা করছি!
১২
342059
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৫০
মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান লিখেছেন : ১৯৮২ সালে সক্রিয় রাজনীতির ধারা না বুঝলেও শিবিরের নাম তখনই শুনেছি। একই সময়ে দুই শিবিরের মিছিল দেখেছি। একই দিনে একই ক্যাম্পাসে ৬ ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আলাদাভাবে পালন করতে দেখেছি। কিন্তু ছাত্র শিবির+যুব শিবির পরিচয়ে যারা নতুন কিছু করতে চেয়েছিল তারা কালের গর্ভে হাড়িয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী একটি রাস্ট্রের দুতাবাস এবং তখনকার সরকার এ কাজে ইন্ধন দিয়েছে। টার্গেট ছিল শিবিরের দ্রুত বিকাশমান ধারাকে নিঃশেষ করে দেয়া। তখন শিবির এবং জামায়াতের প্রবীন নেতৃত্ব এ সংকট মোকাবেলা করেছে অত্যন্ত শক্ত হাতে। ইতিহাসের নির্মম সত্য ঐ সময়ে যারা শিবিরের সাথী সদস্য নতুন শিবিরে চলে গিয়েছিল তাদের অনেকেই এখন জামায়াতে ইসলামী করে, এমনকি সেই সময়ে যুব শিবিরের ধারার নতুন যে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিল সেই সুলতান আহমদ এখন জামায়াতের রুকন। আবার অনেকেই দেখা যায় ইসলামী আন্দোলনের রাস্তা থেকে ছিটকে পড়েছে, কেউ কেউ এখন কোন ইসলামী সংগঠনে নেই। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনি মুহুর্তে নতুন করে সুযোগ সন্ধানীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। এটা সে ধরনের কাজ ব্যতীত আর কিছুই নয়।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩২
283451
কমরেড মাহমুদ লিখেছেন : সব থেকে মজার বিষয় হলো যারা যুবশিবির করতে চেয়ে ভাগ হলো সেই বাচ্চু ভাইয়ের খেলাফলে মজলিশ আজও কেন যুব মজলিশ বানানোর কথা চিন্তা করলেন না!! তিনি ঠিকই ছাত্র মজলিশ বানিয়েছেন কিন্তু যুব মজলিশের ধারের কাছে যান নাই.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File