মানবিক মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ বিন সিরাজ ০২ মে, ২০১৬, ১১:১৮:০৯ রাত
মহান আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের এই মর্যাদার কথা সব চেয়ে বেশি নযরে এনেছে ইসলাম। মানুষের মার্যাদাহানীকর এতটুকু কাজ ইসলাম সমর্থন করেনি। ইমাম আবু হানিফা তার মুসনাদে একটি চমৎকার হাদীস উল্লেখ করেছেন। ইসলাম মানুষের মানবিক মর্যাদা রক্ষায় কতটা যত্নবান তা ফুটে উঠেছে।
হযরত আতা (রা) কয়েকজন সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা) এর একজন দাসী ছিল। সে তার বকরী চরাত এবং সেবা করত। তিনি তাকে আরো একটি বকরী লালন পালনের জন্য প্রদান করেন। ধীরে ধীরে এটা খুব মোটা তাজা হয়ে উঠল। একদিন মেয়েটি অন্যান্য বকরী গুলো দেখছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে ঐ বকরীটি নিয়ে মেরে ফেলল। আব্দুল্লাহ এসে ঘটনা জানতে পেরে ক্রোধান্বিত হয়ে মেয়েটিকে প্রহার করলেন। অত:পর তিনি নিজেই অনুতপ্ত হলেন এবং রাসূল (স) এর নিকট এসে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। রাসূল (স) বিষয়টিকে খুব গুরুতর অপরাধ মনে করে বললেন, তুমি একটি নিরপরাধ মেয়েকে মেরেছো। রাসূল মেয়েটিকে আযাদ করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-৪)
আলোচ্য হাদিসে যে ব্যাপারটি খুবই ভালো লাগল সেটি হল, ইসলাম একজন মানুষকে দুই দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে চলার শিক্ষা দিয়েছে। এক. মানবিক দিক। দুই. ধর্মীয় দিক। সাহাবী একজন নিরপরাধ মেয়েকে আঘাত করে যেমন একজন মানুষের মানবিক মর্যাদায় আঘাত করেছেন তেমনি এর জন্য অনুতপ্তও হয়েছেন। আবার একটি ধর্মের অনুসারী হিসেবে সেই ধর্মের সর্বোচ্চ অথরিটির নিকট নিজেকে সমর্পন করেছেন এবং ন্যায্য ফয়সালাকে দিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়েছেন। ইসলাম মানুষের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে যেমন মানবিক মর্যাদাকে রক্ষা করেছে তেমনি একটি মহান আদর্শের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে সেই আদর্শের ভিত্তিতেই সমাজে সকল সমস্যার সমাধানের কথা বলেছে।
হাদীসে আরো যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হল মানবাধিকার। মানবধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবাধিকার বলতে বুঝায় মানুষের সহজাত অধিকারকে। বর্তমান দুনিয়ার প্রায় সবখানেই আজ মানবধিকারের চিৎকার শোনা যায়। মানুষ তার বৈধ অধিকার ভোগ করতে না পেরে এ চিৎকার করছে। মানুষ সব সময় তার এ সহজাত অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সে কখনই তার অধিকার নিয়ে বাঁচার সুযোগ পায়নি। যুগেযুগে দেশে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। শক্তিধর লোকেরা দুর্বলের দাবীকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছে। মানুষ তার অধিকারের কথা বলতে গিয়ে জালিমের বুলেটে লাশ হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে কত জনপদ। দুর্বলের ওপর সবলের এ জুলুম কখনও সমাজের নামে, কখনও দেশের নামে, কখনও কোন জালিম তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে স্বৈরাচারী আবরণে চালিয়েছে। মানবতার এ লাঞ্ছনা ও অবমাননা যুগে যুগে মানুষের মৌলিক অধিকারকে করেছে পর্যুদস্ত।
কিন্তু মানবতার মুক্তিদূত মহানবী মুহাম্মদ (স) মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে নতুন কথা শুনিয়ে বিশ্ববাসীকে সম্মানিত করেন। তিনি বলেন যে, মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা এবং মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ মানুষ হল আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের এ ঘোষণা এক ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোন জীবন ব্যবস্থায়ই লক্ষ্য করা যায়নি । ধর্ম, বর্ন, উচু,নিচু সকলকে এক কাতারে দাড় করিয়েছে। ইসলামে কোন শ্রেনীবাদ নাই। সকলেই এক আল্লাহর বান্দাহ। প্রত্যেককেই তাদের নিজ নিজ মর্যাদায় ভূষিত করেছে। মানুষের সকল অধিকারের সব কিছুই ইসলাম সংরক্ষণ করেছে। জাতিসংঘের যে সার্বজনিন মানবাধিকারের ঘোষনা তা আল্লাহর রাসূল দেড় হাজার বছর আগেই দিয়ে গেছেন।
পৃথিবীতে এত এত মানবাধিকার সংগঠন। প্রতিদিন মানবাধিকার নিয়ে কতশত সভা সেমিনার হয় কিন্তু মানুষ তার অধিকার পায়নি আজো। আজো মানুষকে তার অধিকার আদায়ের জন্য অস্ত্র তুলে নিতে হয়। রাজপথে শাহরগ দেখিয়ে চিৎকার করতে হয়। সুন্দরের পৃথিবীতে নব্য মানবাধিকারের দগদগে ঘা প্রতিনিয়ত সংক্রামক ব্যাধি ছড়াচ্ছে। মানুষ উদ্ভ্রান্তের মত দিকবিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আহত পাখির মত ছটফট করছে। একটু শান্তিই তাদের কাম্য।
কেবল ইসলামী আদর্শই দিতে পারে সে কাংখিত শান্তি। এই আদর্শের নেতা মুহাম্মদ (স) আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগেই বলে গেছেন, "পূর্নাঙ্গ মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত হতে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে....... "
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার এবং সত্য উপলব্দি।
তুই এখন থেকে ব্লগেও লিখবি। এটা আমার অনুরোধ নয়, প্রত্যাশাও।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লিখার জন্য ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন