কাউকে বের করে দেয়া সমাধান নয়, ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে হবে সবাইকে
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ বিন সিরাজ ০২ মে, ২০১৬, ১২:৪৬:১৫ দুপুর
কোন সত্যকে সত্য দিয়ে আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত করেই সত্যে পরিনত করতে হয়। কিন্তু কোন ব্যাপারে খুব দ্রুত ইন্ডিং টানাটা যেন আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আমরা সব কিছুতে কেন যেন খারিজে বিশ্বাসী। একজন অন্যজনকে খারিজ করে দিয়ে তুষ্ট হই। এটি এখন আমাদের কাছে অনেক প্রেসটিজিয়াজ কাজও বটে। আমরা যেন এটি করার জন্যই দুই এক পাতা কুরান হাদিস চর্চা করছি। মতের সাথে মিলেনি বলে তুমি কোথাকার কে হুট করেই বলে দিই তুমি মূল ধারায় নেই। যাকে বললাম সে আবার ভাবে আমি কখন মূলধারা থেকে ছুটলাম বরং তুমিই কোন ধারাতে নেই। এভাবে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেককে বের করে দিচ্ছি। তাহলে কথা হল ইসলামের মধ্যে আছে কে ?
ইসলাম দেড় হাজার বছর আগে একটি উম্মাহর কনসেপ্ট দিয়েছিল। এটি ছিল অত্যন্ত স্মার্ট একটি কনসেপ্ট। যার মূলে রয়েছে একজন প্রফেট মুহাম্মদের পার্সোনালিটি। যে পার্সোনালিটি একটি সিভিলাইজেশন তৈরী করেছিল। নিরেট মনুষ্য সভ্যতা। সেটি অপ্রাকৃতিক ছিল না। একটি পার্সোনালিটি গোটা বিক্ষিপ্ত অসভ্যতাকে সভ্যতার চাদরে মুড়ে দিয়েছিল। সেই সভ্যতার চাদরে বিভিন্ন মতের বিভিন্ন আচরনের বিভিন্ন পথের মানুষ ছিল কিন্তু কেউ চাদরের বাইরে যায়নি বা কেউ কাউকে বাইরে ঠেলে দেয়নি। অর্থাৎ বর্ডার লাইনের একটি মার্জিনাল পয়েন্ট ছিল যার বাইরে কেউ যাওয়ার সাহস করেনি। তিনি কথা বলেছেন সকলে তা মেনেছে আবার তার কথাকে বিশ্লেষণ করে ইজতিহাদ করেছে কিন্তু সকলের নযর ছিল ঐ মার্জিনাল লাইনের দিকে। আর ঐ মার্জিনাল লাইনই হল ইসলাম। কিন্তু নদীর ধারা বইতে বইতে যখন সেই সভ্যতা আমাদের পর্যন্ত এলো তখন আমরা কেবল তার পার্সোনালিটি ও সভ্যতাকে জেনেছি তবে আত্মস্থ করতে পারি নাই। একটু বাড়িয়ে বললে বলা যায় আমরা বর্ডার লাইনটাই দাড় করাতে পারি নাই। মূলত ইসলাম চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে কিন্তু আদর্শিক বিভাজনকে কখনো সমর্থন করেনি। প্রকৃত অপ্রকৃত কন্ঠের ভীড়ে চিন্তাশীল ও কার্যকর কন্ঠ হারিয়ে যাবে এটা ত সমর্থন যোগ্য নয়।
প্রতি যুগেই ইসলাম একটি বর্ডার ক্রস করেছে। সেটি শুরু হয়েছে নিজস্ব বর্ডার লাইনের মার্জিনাল পয়েন্টের শেষ বিন্দু থেকে। অর্থাৎ ইসলামী সভ্যতার চাদরের মধ্যে যারা আছে তাদের একমাত্র কাজ হল বাইরের বর্ডার লাইনকে ভাঙ্গা। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু এই সভ্যতার একমাত্র ফোকাস পয়েন্ট হবে ঐ দেয়াল ভাঙ্গা। ওপারের সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করা। বাইরের দুনিয়ায় নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করা। এই কাজটি কিভাবে সম্পন্ন হবে সেটি নিয়েই চিন্তা করা উচিৎ। এটি করেছিল বলেই খোলাফায়ে রাশেদা থেকে মুসলমানদের সর্বশেষ পলিটিকো উসমানি খেলাফত পর্যন্ত ইসলাম দুনিয়ার সুপার পাওয়ার হতে পেরেছিল। আমাদের পর্যন্ত পৌছতে পেরেছিল। দুনিয়ার তাবৎ সভ্যতাকে শাসন করতে পেরেছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা মুসলমানদের কাছ থেকে সাড়ে আটশত বছরের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের উপর নির্যাতন চালালো। বিভিন্ন থিওরীর অবতারনা করল। মুসলমানরা কিছুকাল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। তারপর অস্ত্রের যুদ্ধে হেরে গিয়ে হারাম ফতোয়া দিয়ে সব কিছু থেকে সম্পর্ক চুকিয়ে মসজিদে ঢুকে গেল।কিন্তু মাদার তেরেসারা মানব সেবার নামে বিভিন্ন মিশনারীর মাধ্যমে খৃস্ট ধর্ম প্রচার করতে লাগল। আধুনিক শিক্ষার নামে কিছু মিশনারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করল। সাংস্কৃতিক ভাবে একটি আলাদা ইউরোপিয়ান ধারা নিয়ে আসল। এতে কিছু মুসলমান ষড়যন্ত্র ভেবে হুজরা মুখি হল আর কিছু মুসলমান তাদের দেয়া আধুনিক দুনিয়ার আধুনিক থিওরী কবুল করে নিজেদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি শুরু করল। যারা মসজিদে ঢুকে আছেন তাদের অসূর্যস্পশ্যা উপাধি দিলেন। আর অসূর্যস্পশ্যারা এই আধুনিকদের কাফের বা ইহুদি নাসারাদের দালাল উপাধি দিলেন। মাঝ থেকে ইসলাম মডারেট ইসলাম, আধুনিক ইসলাম, পলিটিক্যাল ইসলাম, জেহাদি ইসলাম, সালাফি ইসলাম, মাজহাবি ইসলাম ইত্যাদি ভাগে ভাগ হয়ে গেল।
আমরা বিভাজনে এতটাই মেতে উঠলাম যে ঐ বর্ডারের দিকে তাকানোর সুযোগই পেলাম না। আমাদের নিজেদের রেষারেষিতে আমাদের সভ্যতার চাদর ক্ষতবিক্ষত হল। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের মহাপবিত্র গ্রন্থ আল কুরানের বঙ্গানুবাদ একজন হিন্দুকে করতে হল! আমাদের আলেমরা একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে কাফির ফতোয়া দিয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে। একটি গ্রুপ অন্য গ্রুপকে পরাস্ত করতে ব্যস্ত। আমাদের আলেমদের ত এমন হওয়া উচিৎ ছিল না। তারা ত জাতিকে পথ দেখাবেন। জাতিকে সেই পার্সোনালিটির সভ্যতার অধীনে একটি চাদরে মুড়ে দিবেন।
আমাদের উপর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। আমরা আপাতত বর্ডার ক্রস করতে চাই না। আমরা আমাদের আদর্শকে বাঁচাতে চাই। আমরা সেই নবী মুহাম্মদের চাদর চাই। আমরা গলা ধাক্কা দিয়ে কাউকে বের করে দিতে চাই না বরং ভালোবেসে সবাইকে বুকে টেনে নিতে চাই। অন্তত সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অনুসারী আমরা যারা......
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাঝ থেকে ইসলাম মডারেট ইসলাম, আধুনিক ইসলাম, পলিটিক্যাল ইসলাম, জেহাদি ইসলাম, সালাফি ইসলাম, মাজহাবি ইসলাম [b]ইত্যাদি ভাগে ভাগ হয়ে গেল।
অন্তত সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অনুসারী আমরা যারা...... [/b]
শূণ্যস্থানে কি????
হক কথা বলেছিস। তোর কথায় দ্বিমত করা কঠিন। কথাগুলো আমারও।
কমেন্টগুলোর জবাব দিয়ে দে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন