জামায়াতের নারী কর্মী গ্রেফতারঃ অজানা ঝড়ের আশনি সংকেত !!! !!! ভাবতে হবে অনেক কিছু …………!!!
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ বিন সিরাজ ০৬ জুলাই, ২০১৫, ১০:৫৫:৫৮ রাত
গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক পর্দানশীল মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এসেছে তারা সবাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের কর্মী । ইতোপূর্বে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন ইসলামপন্থিকে গ্রেফতারের পর যে ধরণের নাটক মঞ্চয়ন করা হয় তাদের বেলায়ও একই ধরনের নাটক মঞ্চয়ন করা হয়েছে । অর্থাৎ বোমা এবং জেহাদী বই উদ্ধার নাটক ! যে সকল মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দেখলে জঙ্গীতো দূরের কথা তারা জোরে কথা বলতে পারে কি তা ধারনা করা যায় না । সাধারণ ভাবে তাদের অপরাধ তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের এক অর্থে ‘রাজনৈতিক কর্মী’ । ইসলামপন্থী রাজনীতিকেরা এটাকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে মনে করছে । জেল-জুলুম, শাহাদাত ইত্যাদি ইসলামী আন্দোলনের অংশ । তাই পার্টির পক্ষ থেকে একে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি, ছোট পরিসরে বিক্ষোভ এবং ভার্চ্যুয়াল জগতে কিছু আবেগ পুর্ণ কথার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে । তারপর এক সময় সবাই চুপ হয়ে যাবেন এবং গেছেন ।
জেল-জুলুম, শাহাদাত ইত্যাদি অবশ্যই ইসলামী আন্দলনের অংশ, ইসলামী আন্দোলনের উপর আঘাত আসলে অবশ্যই রাজপথে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করতে হবে । সেখানে জেল-জুলুম আসবে, শাহাদাত আসবে । কিন্তু এগুলোর বেকগ্রাউন্ড না ঘেটে যাদের পক্ষ থেকে এ জুলুম গুলো আসছে তাদের চিন্তা-চেতনা বিশ্লেষন না করে শুধু ত্যাগ কুরবানীর চিন্তা করাটা কি একটু বোকামী নয় ? ধরুন, নাস্তিক লতিফ সিদ্দিকী কিংবা বেয়াদপ আ গা চৌ ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছে, মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে । এর প্রতিবাদে আমরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরুলাম, পুলিশ গুলি করল, আর আমরা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয়ে গেলাম । ইসলামের জন্য এই আবেগপূর্ণ শাহাদাতের কি মূল্য থাকতে পারে ? রাসূল (স) এর সাহাবীরা এবং পরবর্তীতে যারা ইসলামকে বিজয়ী করার আন্দলন করেছেন তারা কি এভাবে আবেগের বশে শহীদ হয়েছেন ? ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাসূল (স), তাঁর সাহাবীগণ এবং যুগে যুগে ইসলাম বিজয়ের মহান নেতৃবৃন্দের কেউই আবেগকে প্রশ্র্য় দেননি । তাদের প্রতিটি কাজ ছিল বাস্তবতার নিরিখে এবং বিরোধীদের কার্যক্রমকে বিশ্লেষন করে সেই পরিকল্পনার আলোকে । আন্দোলনের কর্মীদের ত্যাগ কুরবানীর আবেগ দিয়ে উত্তেজিত করে রাস্তায় নামিয়েই ইসলামী আন্দোলনের কাজ শেষ করলে হবে না । রাজপথের আন্দলন যেমন অব্যাহত রাখতে হবে তেমনি বাতিলকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সেই আলোকেই এ্যাকশন প্লান নিতে হবে ।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থি মহিলা কর্মী তথা জামায়াতের মহিলা কর্মীদের গ্রেফতারের সংস্কৃতি খুবই কম ছিল বা ছিল না বললেই চলে । কিন্তু ইদানিং এটা খুব বেশী ঘন ঘন হচ্ছে । এ গুলো কি শুধুমাত্র একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমনের উদ্দেশ্যে ? (যেমনটা আ’লীগ ও বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে উভয় উভয়কে করে থাকে) নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে ? উল্লেখ্য বাংলাদেশে এখন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে দুটি শক্তির চরম লড়াই চলছে, একটি হল ধর্মনিরপেক্ষ বাম শক্তি অন্যটি হল ইসলামী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তি । যদিও জাতীয়তাবাদী শক্তির একাডেমিক কোন ব্যাখ্যা নেই । যাহোক বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষ বামদের সাথেই ঐক্য করেছে এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজও তারাই করে থাকে । অনেকে বলে থাকেন, আ’লীগের সাথে যদি ধর্মনিরপেক্ষ বামরা না থাকত তবে আ’লীগ জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিতে পারত না এবং জামায়াতের উপর এত কঠিন ঝড়ও বয়ে যেত না এবং বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতি এতটা আহতও হত না । এই দিক বিবেচনা করলে জামায়াতের মহিলা কর্মীদের গ্রেফতার নিছক একটি বিরোধী রাজনৈতিক দল দমনের মত সাধারণ ব্যাপার নয় বলেই মনে হয় ।
কয়েকটি বই এবং নিবন্ধের উল্লেখ করছি যেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টিকে একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করার সুযোগ পাওয়া যাবে । যেমন মিশরের সাবা মাহমুদের ‘পলিটিক্স অব পাইয়েটিঃ দি ইসলামিক রিভাইভেল অ্যান্ড দ্যা ফেমিনিস্ট সাবজেক্ট’, লেবাননের লারা দিবের ‘অ্যান এনচানটেড মর্ডান জেন্ডার’ এবং ‘পাবলিক পাইয়েটি ইন শিয়া লেবানন’, ড আলী রিয়াজের ‘দ্যা পলিটিক্স অব ইসলামাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘বাংলাদেশে নতুন ইসলামপন্থি জনপরিমন্ডল’ নামক নিবন্ধ ।
তাদের গবেষণায় তারা বুঝাতে চাচ্ছেন, সাম্প্রতিক কালে নারী বিষয়ক গবেষণায় গবেষকদের দুটি বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষিত হয়েছে । প্রথমত নারী অধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং এ ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভংগি । দ্বিতীয়ত মুসলিম সংখ্যাগুরু ও মুসলিম সংখ্যালঘু উভয় সমাজেই মুসলিম নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধ্যমান ধর্মপরায়ণতার মত বিষয় । প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে সমসাময়িক দৃষ্টিভংগী সমূহ, বিশেষত সমতার সেক্যুলারপন্থী লিবারেল ব্যাখ্যা এবং নারীর ক্ষমতায়নের কথিত পথরেখা অসম্পূর্ণ এবং এগুলো নিবিড় ভাবে পর্যালোনা করতে হবে । সমালোচকেরা বলছেন যে আধুনিক এবং ধর্মের মধ্যে কঠোর দ্বিমূলক বিভাজন এবং তার ভিত্তিতে ইসলাম ও নারীর সম্পর্ককে পশ্চাৎমূখী ও সেকেলে বলে ব্যাখ্যা নারীর আত্মনিষ্ঠা, কর্তৃত্ব এবং আধুনিকতা বোঝার ক্ষেত্রে মোটেও সহায়ক নয় । ধর্মপরায়ণতাকে ধর্মীয় কুসংস্কার বা পশ্চাৎপদতার সংগে এক করে দেখার যে প্রবনতা সেক্যুলার দৃষ্টিভংগিতে স্পস্ট, তা শুধু তীব্র সমালোচনার মুখেই পড়েছে তা নয়, বরং তার বিপরীতে ‘ইসলামী নারীবাদ’ এবং ‘ইসলামপন্থীদের দৃষ্টিভংগি’ হিসেবে দুটি নারীবাদী চিন্তাধারাও গত এক দশকে গড়ে উঠেছে । এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের সংগে জড়িত এবং তাদের যুক্তি গুলোকেই হাজির করে, যদিও এগুলোর প্রচারক হচ্ছেন নারীরাই । অন্যদিকে প্রথমোক্তটি উপস্থাপন করে নারীদের দৃষ্টিভংগি থেকে ইসলামী টেক্সটের সমালোচনা ও পূনর্ব্যাখ্যা । উল্লিখিত দুটি দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও নারী ক্ষমতায়ন ও আত্মনিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনার আরেকটি ধারা গড়ে উঠেছে যাকে বলা যেতে পারে ধর্মানুরাগ বা ‘পাইয়েটি’ ধারা । মুসলিম বিশ্বে নারীদের বিরাট একটি অংশ এমন একটি ব্যবস্থাকে সমর্থন জোগাচ্ছে, যা তাদের নিজেদের স্বার্থের পরিপন্থী, বিশেষত বর্তমান সময়ে যেখানে তাদের সামনে বন্ধনমুক্তির বিভিন্ন রকমের বিকল্প সুযোগ রয়েছে (সেক্যুলার দৃষ্টিতে)। তদুপরি তারা বৃত্তের বাইরে একটি ভিন্ন মাত্রার (ইসলামী) জনপরিমন্ডল তৈরীতে আত্মনিয়োগ করছে ।
বাংলাদেশে ঐতিহাসিক ভাবেই শক্তিশালি, গতিশীল এবং দেশীয় সংস্কৃতির সংগে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত একটি জনপরিমন্ডলব্যবস্থা বা পাবলিক স্ফেয়ার উপস্থিত থেকেছে । সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ এবং জনমানস সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ধারণাকে কেন্দ্র করেই এ দেশে এই জনপরিমন্ডল ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । ড রিয়াজের মতে, “এ যাবৎ জনপরিমন্ডলব্যবস্থার ভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ যৌক্তিকতা বা ধর্মীয় উদারনৈতিকতা । কিন্তু এখন একটি ইসলামি বা ইসলামপন্থি জনপরিমন্ডলব্যবস্থা তৈরির প্রক্রিয়া বাংলাদেশে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে” । আর এই কাজ গুলো করার পেছনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে ঐ সকল ‘ধর্মানুরাগী মুসলিম মহিলারা’ । এ সকল ধর্মানুরাগী মুসলিম নারীরা তাদের এমন আন্দোলন যে পদ্ধতিতে পরিচালনা করে তাদের নিবন্ধে তারা যে কৌশলটির কথা উল্লেখ করেছেন তা হল, এসব ধর্মানুরাগী আন্দোলন সাধারনত আনুষ্ঠানিক ছোট ছোট গ্রুপ বৈঠকের আকারে সংগঠিত হয়, এদের বলা হয়ে থাকে ‘হালাকা, তালিম বা পাঠচক্র’ ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ড আলী রিয়াজ সহ আরো কয়েকজন বাম ঘরানার গবেষক এ ধরনের কার্যক্রমের উপর গবেষণা চালিয়েছেন । ড রিয়াজ তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, “২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আমি ব্রাক্ষণবাড়িরায় গ্রামীণ এলাকায় এরকম একটি দলের সাথে দেখা করেছিলাম । তারা তাদের পরিচয় দেয় ‘তালিম গ্রুপ’ হিসেবে । আমাদের কথোপকথনে মহিলারা জানায় যে, তারা একটি দলের সদস্য, সেখানে একজন শিক্ষিত কিন্তু ‘সাধারণ’ নারী ব্রাক্ষনবাড়িয়া শহর থেকে প্রতি মাসে আসেন । তারা ইসলাম ও নারীদের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ওই মহিলা সে আলোচনা চক্রের নেতৃত্ব দেন । ২০১০ সালের শুরুর দিকে ঢাকায় আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষিত মহিলার সাথে কথা বলি, এদের সবারই পরিবার আছে । এসব মহিলা আমাকে জানান যে তারা নিয়মিত একটি পাঠচক্রে অংশ গ্রহণ করেন । এই পাঠচক্র মাসে কমপক্ষে একবার মিলিত হয় , কখনো কখনো দুইবারও বৈঠক হয় । একজন ‘জ্ঞানী মহিলা’ তাদের আলোচনা ‘এগিয়ে নেন’ । আরো যাদের সাথে কথা বলি তাদের মধ্যে ছিল ঢাকার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা । তাদের ভিন্ন একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে একত্র হন, যারা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা বাংলাদেশের মত সমাজে কি ভূমিকা রাখতে পারেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা ও আলোচনা করেন । তারা জানান এটি শুধু স্রেফ প্রশ্ন-উত্তরের বৈঠক নয়, বরং অংশগ্রহনকারীরা কোরআন, হাদিস ও ইসলামী চিন্তাবীদদের টেক্সট পড়ে তাদের মতামত দেন ও আলোচনায় অংশ নেন । তাদের পাঠ্যসূচীতে আবুল আলা মওদূদী, সাইয়্যেদ কুতুব, কারযাভির বইও রয়েছে ।”
তাদের লেখাগুলো পড়লে আরো বুঝা যায় তারা বুঝাতে চাচ্ছেন, প্রাথমিকভাবে সমাজের মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত শ্রেণীর কাছে পৌছানোর জন্য এধরনের গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয় । তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রান্তিক এবং সাক্ষরতাহীন গ্রামীণ নারী সমাজের মধ্যেও এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রম চোখে পড়ে ।
বর্তমান প্রবণতা ২০০০ দশকের দিকে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে এবং পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের গোষ্ঠীভিত্তিক কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে । ২০০৯ সালের ২৪শে এপ্রিল তারিখে প্রথমআলোর একজন সাংবাদিকের সাথে তার কথা হয় । ওই সাংবাদিকও তাকে এই ধরনের তথ্য দেন । তিনি জানান, “এসব পাঠচক্র বর্তমান সময়ে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে । গ্রামীন জনসমাজে এ ধরনের অধ্যয়নগোষ্ঠির কার্যক্রমকে তালিম নামে অভিহিত করেছেন ।” তিনি মায়মুনা হক নামে একজন গবেষকের বরাত দিয়ে লিখেছেন, “এসব পাঠচক্রের আয়োজক জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থা । এসব পাঠচক্রের কিছু সংগঠিত হয় ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা । রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আর কিছু গড়ে উঠে জামায়াতের আদর্শে প্রভাবিত ব্যাক্তিগত উদ্যোগে । কিন্তু মোটা দাগে দেখলে বলা যায় যে, মহিলাদের মধ্যে এসব পাঠচক্রের সূত্রপাত হয়েছে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর মহিলা কর্মীদের দ্বারা । তবে নারীদের জন্য আয়োজিত এসব চক্র দলের সদস্য বৃদ্ধির চেয়ে ‘ধর্মানুরাগ’ চর্চা হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে ।”
তাদের কনসার্নের বিষয় হল, এসব পাঠচক্রে দলগত আলোচনার চেয়ে একজন গোষ্ঠী নেত্রী পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা প্রদান করেন । অংশগ্রহণকারীদের ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা তৃণমূল পর্যায়ের এ ধরণের চক্রের প্রধান বিষয় নয়, বরং তাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট কোন এলাকায় (এবং নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠীর) ব্যক্তি ও পরিবারে নৈতিকতার পূনর্জাগরণ তৈরী করা । সেটা হয় কোরানে বর্ণিত করণীয় বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান প্রদানের মধ্য দিয়ে এবং তার জন্য (বিংশ শতাব্দীর দেওবন্দী আলেম আশরাফ আলী থানভী রচিত) ‘বেহেশতী জেওর’ এর মত সাধারণ পরামর্শ মূলক বই নয়, গুরুত্ব দেয়া হয় মূল উৎসে, অর্থাৎ কোরানের প্রত্যাবর্তনকে এবং ওগুলোর সহায়তায় আধুনিক ইসলামী তাত্বিকদের টেক্সট সমুহকে । এ ধরনের পাঠচক্র বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের টিকে থাকা এবং বিকাশের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে । এটা তারা করে কর্মীদের আত্মবোধ, ধর্মীয় দায়িত্ব এবং অন্যদের সম্পর্কে তাদের ধ্যানধারণাকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে । এই ঢেলে সাজানোর কাজ সম্পাদিত হয় কথা বার্তার একটি ধরণ ব্যবহার করে, আর এখানে ধার্মিকতা ও ধর্মীয় পরিচয়, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, বিশ্ব মুসলিম সমাজ বা উম্মাহ এবং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একধরনের চিন্তা তুলে ধরা হয় । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান ইসলামী জনপরিমন্ডলব্যবস্থায় যেখানে ইসলামের একটি ব্যাখ্যাই গৃহীত হচ্ছে, সেখানে প্রথাগত মূল্যবোধ ও চিন্তাধারা মাওলানা মওদূদী, সাইয়্যেদ কুতুবের মত বিভিন্ন ইসলামপন্থী চিন্তাবীদদের মতবাদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশে সার্বিক ইসলামীকরণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যে ইসলামীকরণের ধারণা তৈরী হয়েছে তাদের হাতে যারা বিদ্যমান সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ বদলে দেয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচী দ্বারা পরিচালিত ।
ইসলামিকরণ বলতে কেবল ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে বোঝায় না, বরং সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং তৎসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় এই প্রক্রিয়ার অংশ । ইসলামপন্থিদের বিবেচনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের প্রশ্ন আসে সমাজে ইসলামীকরণের পরে । সুতরাং এই ‘মহিলা অংশটি’ ইসলামী বিপ্লবের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিনত হয়েছে । তারাই বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ইসলামী জনপরিমন্ডল তৈরীতে সমাজের গুরুত্বপূর্ন অংশে কাজ করছে ।
উপরের এই কথাগুলো ইসলামী আন্দোলনের ছোট একটি কাজের উপর ওদের গবেষণার সার কথা । আমি এখানে অনেক সংক্ষেপে আলোচনা করেছি মাত্র । উল্লেখিত বই ও নিবন্ধ গুলোতে আরো বিস্তারিত অনেক কথা লেখা আছে । ওরা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সকল মুসলিম রাষ্ট্রের ইসলামী আন্দোলন গুলোর উপরেই নযর রাখে । তাদের এই বিষয়ের গবেষণা গুলো দেখলে বোঝা যায় ইসলামী আন্দোলনের সকল বিষয়ের উপরেই তারা রীতিমত গবেষণা করছে এবং করবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী তথা ইসলামী আন্দোলনের সবলতা ও দুর্বলতার বিষয়গুলো তারা হয়ত ইন্ডিকেট করে ফেলেছে । আন্দোলনের কার্যক্রমের পুঙ্খানুপুঙ্খ স্টাডিও হয়ত তাদের কাছে আছে ।অথচ ইসলামপন্থিরা এর সিকিভাগের এক ভাগও কি তাদের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তা বা গবেষণা করছে? সুতরাং এখনই সতর্ক হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় এবং এই বিষয়ে ইসলামপন্থিদের গভীর ভাবে পর্যবেক্ষনে সচেষ্ট হওয়া অতীব জরুরী।
সংখ্যাধিক্য দিয়ে বিচার করলে ইসলামী আন্দোলন করা যাবে না । চার দলীয় জোট সরকারের সময় জামায়াত-শিবিরের মিছিল গুলোতে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে অনেক নেতাকে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে দেখেছি, জনশক্তির আধিক্য নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে দেখেছি । অথচ এই সংখ্যধিক্য নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে আল্লাহর রাসূল (স) নিষেধ করেছেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন কিংবা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাম ছাত্র সংগঠন গুলোর ৬/৭ জনের মিছিল দেখে আমরা হাসি ঠাট্টা করি । কিন্তু আমরা কত বোকা ঐ ৬/৭ জনই আমাদের সকল ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি করছে আমরা তা বুঝতে পারছি না । অথচ কাজের কাজ তারাই করছে, আমরা শুধু বিশাল সংখ্যার নিয়ে আবেগে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখছি।
তাই জামায়াতের মহিলা কর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া দরকার বলেই মনে হয় । আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে । আমরা আর ক্ষতি দেখতে চাই না । ওদের কর্মকান্ডকেও আমাদের গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করতে হবে । ওদের পাতানো ফাঁদগুলো খুঁজে বের করতে হবে । ইসলামী রাজনীতি নিছক ‘পলিটিক্যাল’ উদ্দেশ্যে নয়, বরং ইসলামী সমাজ বিনির্মানের উদ্দেশ্যেই হওয়া উচিত । সকল চিন্তা ও কাজের সমন্বয় করে চোখ কান খোলা রেখে দূরদৃষ্টি বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সাথে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও শহীদ কামারুজ্জামানের রেখে যাওয়া কাজ তথা ইসলামী আন্দোলনের কাজকে এই দেশের মাটিতে আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক আল্লাহ তা’য়ালা ইসলামপন্থিদের দান করুন ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন