আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু, জানাজা ও বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ বিন সিরাজ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৪৮:৪২ রাত
দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই পুত্র আরাফাত রহমান কোকো গত শনিবার ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন .....) । আমরা তাঁর জন্য দুয়া করছি এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি ।
২০০৮ সালের ১৯ জুলাই। শনিবার। দুপুর ১টা ২৯ মিনিট। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন অসুস্থ আরাফাত রহমান কোকো। তারপর একে একে কেটে গেছে সাতটি বছর। নানা আইনী জটিলতা আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সুস্থ হয়ে প্রিয় মায়ের সান্নিধ্যে ফেরা হয়নি তার। প্রিয় দেশ, প্রিয় মানুষদের ছেড়ে নির্বাসনেই থাকতে হয়েছে বিদেশের মাটিতে। অবশেষে প্রিয় সেই মাটি, পরম প্রিয় মমতাময়ী সেই মায়ের কোলো ফিরে আসার স্বপ্নপূরণ হচ্ছে তার। তবে সেই ফিরে আসা আর জীবিত নয়, প্রিয় স্বদেশের মাটিতে তিনি ফিরে আসছেন লাশ হয়ে।
গত শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নয়ন মনি কোকো। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়।
বিগত ১/১১ পট পরিবর্তনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয় জিয়া পরিবার । শারিরিক , মানসিক ও অর্থনৈতিক ভাবেই তারা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েন । বিশেষত তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত কোকো সাহেবের উপর যে নির্মম শারীরিক নির্যাতন হয় তা এ জাতি প্রত্যক্ষ করেছে । মায়ের চোখের সামনে দুই সন্তানকে অজ্ঞান অবস্থায় পাজা কোলে করে আদালতে উপস্থিত করা হত , এ দৃশ্য অবলোকন করা একজন মায়ের পক্ষে কতটা কঠিন তা শুধু ঐ মা-ই বোঝেন । সেই সময় মরহুম কোকো সাহেবের হার্ট এটাক অবস্থায় বুকের ব্যাথা নিয়ে হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে পাজা কোলে করে তাকে আদালতে হাজিরা করা হয় । বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন দৃশ্য গুলো খুবই নির্মম এবং অমানবিক । অথচ পরবর্তিতে আদালত তারেক ও কোকো সাহেবদ্বয়ের সেই সকল তথাকথিত দুর্নীতির মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছে । সুতরাং তাদের উপর ঐগুলো ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত তা আজ প্রমানিত হয়েছে । তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মনে রাখা উচিত্ আজ যারা ক্ষমতাসীন তারা চিরস্থায়ী নয় বরং সময়ে ব্যবধানে তারাও বিদায় নিতে বাধ্য হন এবং হবেন । আর এই দুনিয়া অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী । এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় একটি আনসার্টেইন রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে এতটা দাম্ভিকতা ও নির্মমতা দেখানো এবং প্রতিহিংসা দেখানো উচিত্ নয় । তাই বিগত সময়ে মরহুম কোকো সাহেবের সাথে যে আচরণ করা হয়েছ তা অত্যন্ত নির্মম ও নিন্দনীয় । আজকে তাঁর মত এই মজলুম মানুষের বিদায়ে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত ।
মানুষ মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক । আল্লাহপাক কার কখন কিভাবে মৃত্য লিখে রেখেছেন তা আমরা কেউ জানি না । তাই মরহুম কোকো সাহেবের চলে যাওয়াটা হয়ত একটি স্বাভাবিক বিষয় তারপরেও বলছি তিনি বড্ড অসময়ে চলে গেলেন । কারণ মানুষ তার মানবিক দুর্বলতা গুলোকে অধিকাংশ সময়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না । যে যেভাবেই বলুক কোকো সাহেবের মৃত্যু বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর একটি প্রভাব ফেলবে । আবার বেগম খালেদা জিয়া যেমন একজন আপোষহীন নেত্রী তেমনি একজন মা-ও বটে । তাই এ বিষয়গুলো চলমান আন্দোলনের ভাটার সৃষ্টি করে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয় । তবে সাময়িক এই দুঃখ ও শোককে কাটিয়ে নেতৃবৃন্দ আবারো রাজপথেই ফিরবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা । সবাইকে এখন মনে রাখতে হবে এখন শোকে পাথর হওয়ার সময় নয় বরং এখন সময় কেবলই আন্দোলনের । এই শোক যেন চলমান দুর্বার আন্দোলনে কোনরূপ প্রভাব না ফেলে সেদিকে দৃষ্টি রাখাটাই এখন দূরদর্শীতার কাজ ।
বিএনপি এখন এমন একটি কাজ করতে পারে । তাদের দলের চেয়ারপারসন দীর্ঘ প্রায় ২০দিন যাবত্ অবরুদ্ধ । দলের শীর্ষ নেতারাও অধিকাংশ আত্মগোপনে । কর্মীরাও প্রায় স্থবির । বিশেষত ঢাকায় উল্লেখ করার মত কোন আন্দোলন হয় নাই । কোকোর জানাজা উপলক্ষে নেত্রীসহ সবাই বের হওয়ার সুযোগ পাবেন । জানাজা নামাজ পড়ার জন্য নেতা কর্মীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও অংশ নিবে । সেই সাথে বিএনপি ঢাকায় ঘটাতে পারেন ব্যাপক জনসমাবেশ । দাফন শেষ হওয়ায় সাথে সাথেই নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছে সবাই ঢাকার রাজপথে নেমে যাবে । পুলিশ বাঁধা দিবে , লাঠি চার্জ করবে , টিয়ারশেল নিক্ষেপ করবে , গুলি ছুড়বে । হয়ত কয়েকজন মারাও যাবে ! কিন্তু এভাবে তারা কতজনকে হত্যা করবে ? আর এভাবে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেই হয়ত বিজয় পতাকা উড়তে পারে ! কিন্তু এমন দুঃসাহসিক কাজ করার সাহস কি ২০দলের হবে ?!
যাইহোক , এটা দেখতে একটু খারাপ দেখা গেলেও ভবিষ্যতে হয়ত ভালো ফলাফল আসতে পারে । আপতত কথা হল , দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনে বিএনপির স্টেমিনা কতটুকু আছে এবং বারাক ওবামার ভারত সফর এদুটি বিষয় এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এটির দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই ...
পরিশেষে বলছি , ভালো থাকুক আরাফাত রহমান কোকো । স্বর্গই হোক তাঁর ঠিকানা ......
বিষয়: বিবিধ
১২৬৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শোক কে শক্তিতে রুপান্তরিত করেই সব অন্যায়-নির্যাতনের যথার্থ বদলা নিতেই হবে!
শোকে মুহ্যমান হয়ে স্বৈরাচার বিরোধী এই আন্দোলন থেকে পিছু হটলে স্বৈরাচার আরো পোক্ত হয়ে বসবে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন